নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সব সময় সুন্দর ■ www.facebook.com/niazuddin.sumon

নিয়াজ সুমন

ভালোলাগে ভ্রমন করতে। প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে ছবির ফ্রেমে নিজেকে আবদ্ধ করতে। অবসর কাটে সাহিত্যের আঙিনায় পদচারনা করে। ব্যস্তময় যান্ত্রিক জীবনের মাঝেও চেষ্টা করি নিজের অব্যক্ত কথামালা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।

নিয়াজ সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

⌂ প্যারাবন ■ নীল টেংরাকাঁটা জলাভূমি ও সমুদ্র সৈকতের গুল্মজাতীয় গৌন প্যারাগাছ

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৫


হরগজা বা হরকচ ফুলের সৌন্দর্য নান্দনিক। সবুজ বনে নীল রঙের ফুল দূর থেকে সবার নজরে আসে। দেখতে অসাধারণ এই হরকচ ফুল। গাছের শাখা থেকে বের হওয়া ছোট্ট শীষের মাথায় ফুল ফোটে। ফুলের রঙ নীল ও হালকা সাদা। হরকচের পাতা গাঢ় সবুজ। হরকুচ বা নীল টেংরাকাঁটা প্যারাবন বা বাদাবনের ঝোপ ধরনের গুল্মজাতীয় গৌণ প্যারাগাছ । বেড়ে ওঠার পরিবেশ বিবেচনায় নীল টেংরাকাঁটাকে লালবাদার অন্তুর্ভুক্ত করা হয়। লালবাদার অর্থ হলো যে উদ্ভিদ প্রজাতিটি অতিরিক্ত লবণাক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে।

সাধারণ নাম: Sea Holly বা Holy Mangrove বা Shore Purslane বা Holly-Leaved Acanthus
বাংলা নাম: নীল টেংরাকাঁটা বা টেংরাকাঁটা বা নীল হরগজা বা হরকুচ-কাঁটা, কটকি।
বৈজ্ঞানিক নাম: Acanthus illcifolius।


বিবরণ:
এই গুল্ম ১ থেকে 2.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটির হালকা অগভীর শেকড় জন্মায় এবং মাঝে মাঝে ভারসাম্য রাখার জন্য শুষ্ক শেকড় [Stilt Root] জন্মায়। এর কাণ্ড শক্ত নয়। ফলে এ গাছ কিছুটা সোজা হয়ে, লতানো পদ্ধতিতে বা চারপাশে নিজেকে বিস্তৃত করে উঠতে পারে। গাছটি সাধারণত উপকূলীয় ডোবা, জলাভূমি ও সমুদ্র সৈকতে জন্মায়। বাংলাদেশে হরকচের দুটো প্রজাতি পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Acanthus illcifolius । হরকচ একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। লবণাক্ত জলের চলাচল আছে এমন খাল-বিল-নদী-নালার পাশে গাছটি চোখে পড়ে। অতিরিক্ত লবণাক্ততায় গাছটি বেড়ে উঠতে ও টিকে থাকতে পারে।
নীল টেংরাকাঁটার ফুল ফোটে এর শাখা থেকে বেরোনো ছোট্ট শীষের মাথায়। ফুলের রঙ হতে পারে নীল এবং পাতা হয় গাঢ় সবুজ। এদের পাতা খুব শক্ত। নিজেকে রক্ষা করার জন্য গাছগুলোর পাতার গোড়ায় ও অগ্রভাগে কাঁটা থাকে। টেংরাকাঁটার ফুল থেকে ক্যাপসুলের মতো ফল হয়। প্রত্যকটি ফলে চারটি করে বীজ থাকে। এর কাঁটা যথেষ্ট শক্ত। ফলের বীজগুলো চ্যাপ্টা ও সাদাটে। ফল পাকার পর শুকিয়ে গেলে শব্দ করে ফেটে যায়। এতে ফলের বীজ ছুটে প্রায় 2 মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এভাবে নীল টেংরাকাঁটা বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি বসতির এলাকা বাড়ায়।

হরকচ ফুলে প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের মধু পাওয়া যায়। তাই মৌমাছির আনাগোনা চেখে পড়ার মত। নিজেকে রক্ষা করার জন্য গাছগুলোর পাতার গোড়ায় ও অগ্রভাগে কাঁটা থাকে। ফুল থেকে সবুজ রঙের ফল হয়। ফুল ও ফল মিলিয়ে দেখতে কিছুটা রজনীগন্ধা ফুলের স্টিকের মত লাগে। হরকচ গাছের কাটা অনেক শক্ত হয়। হরকচ একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। সমুদ্র উপকূলে খালে নালায় লোনা পানির ধারে গাছটির জন্ম হয়। হরকচ গাছ লাগাতে দেখা যায় না। নিজে জন্মে ফুল, ফল দিয়ে অনেক দিন পর মারা যায়।


ব্যবহার:
হরকচ ফুলে প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের মধু হয়। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বনজীবীরা হরগজার অল্পবয়স্ক কচিপাতাকে শাক হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও ভারত ও চীনের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নীল টেংরাকাঁটার ব্যবহার রয়েছে। হাঁপানি, প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত ও পঙ্গুত্বের চিকিৎসায় টেংরাকাঁটার মূল ব্যবহৃত হয। কফ, কাশি, সন্ধিবাত ও স্মায়ুশুলের উপশমে টেংরাকাঁটার পাতা ব্যবহারের নজির আছে। অল্পবয়স্ক কচি কাণ্ড ও পাতা সাপে কাঁটার নিরাময়েও ব্যবহার করা হয। টেংরাকাঁটার মূলের ক্বাথ গড়হড়া করলে দাঁতব্যাথা ও মুখের ঘায়ের উপকার হয়। পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় হরগজার সিদ্ধ মূলের সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে সুন্দরবনের আদিবাসীরা ব্যবহার করে।


প্রাপ্তিস্থান:
নীল টেংরাকাঁটা সাধারণত উপকূলের নোনা বালু ও পানিতে জম্মে থাকে। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ হয়ে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত। মাটির ক্ষয়রোধে এদের ভূমিকা অনন্য । এছাড়াও এই গাছটি হরকচ কেবল ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় প্রায় প্রতিটি দেশে বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ম্যাকাও, মায়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, তাইওয়ান, তিমুর, ভিয়েতনাম এবং প্যাসিফিক দ্বীপের নোনা এলাকায় পাওয়া যায়।


স্বভাব:
এ গাছটি লোনা পানির ধারে হয় এবং দীর্ঘকাল লোনা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকলে বা প্রতিদিন জোয়ার-ভাটায় ডুবে এবং জেগে উঠলেও গাছের কোন ক্ষতি হয় না। সে কারণে অযত্নসম্ভূত এ গাছও মাঝে মধ্যে ভাঙন এড়ানোর জন্য নদী বা খালের ধারে লাগানো হয়। এর খাদ্যমান [Calorific Value] অধিক বলে ফুল ফোটার আগে গাছ থেকে কাঁটা ফেলে দিয়ে গবাদি পশুকে খেতে দেয়া হয়।


সংরক্ষণ:
আইউসিএন নির্ধারিত বিপন্ প্রজাতির তালিকায় (IUCN Red List) টেংরাকাঁটাকে ন্যুনতম বিপদাপন্ন (Least Concern) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গোটা দুনিয়ায় এই প্রজাতির ঘনত্ব ও সংখ্যাগত কোনো উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা না হলেও এটুকু বলা যায় , প্যারবন বা বাদাবনের আয়তন ও ঘনত্ব যে হারে কমছে তাতে টেংরাকাঁটার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র:
https://www.roddure.com
https://bn.wikipedia.org
https://www.greennewsbd.com
https://www.herbal-organic.com

ছবি তোলার স্থান:
বাশঁবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত

বৃক্ষ ও ফুল নিয়ে আরো ব্লগ:
অচেনা অবহেলিত বন্ধুবৃক্ষ করচ
মিষ্টি হলুদ রঙের মায়াবতী সূর্যমুখী
সকাল বিকাল রং বদলায় যে সমুদ্র জবা ফুল
চিরসবুজ সুগন্ধি কুন্দ বা মেঘ মল্লিকা ফুল
ঐ শিউলি ফুলের সুবাসে মন করে আকুল
দৃষ্টিনন্দন বুনো ফুলের সন্ধানে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২৮

ইসিয়াক বলেছেন:




নীল টেংরাকাঁটা ফুল বা গাছ আগে কখনও দেখিনি । এই গাছ সস্পর্কে এই প্রথম জানলাম। গাছে যদিও কাঁটা আছে কিন্তু ফুলগুলো অপূর্ব।
পোস্ট ভালো লাগলো।

শুভকামনা রইলো।
শুভ সকাল।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৫

নিয়াজ সুমন বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনার জন্যও ইসিয়াক ভাই,
ভালো থাকবেন আপনিও।..।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এর ঝোপ বেশ কয়েকবার দেখলেও ফুল দেখার সুযোগ হয়েছে মাত্র একবার। এবং সেই সময় খুব তাড়ার মধ্যে থাকার কারণে ভালো ছবি তুলতে পারি নাই।
আপনার লেখা ও ছবি চমৎকার হয়েছে।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৫৬

নিয়াজ সুমন বলেছেন: আপনার প্রংশসায় উৎসাহ যোগায় সবসময় ।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: উদ্ভিদ জগত সম্পর্কে আমি একেবারে অজ্ঞ। যখন কেউ সামুতে পোষ্ট দেয়- আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৬

নিয়াজ সুমন বলেছেন: উদ্ভিদ বাদে বাকি বিষয়ে কিন্তু আপনি বেশ অভিজ্ঞ যা আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানার সুযোগ হয়।
ভালো থাকুন সবসময়।

৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১৭

কাছের-মানুষ বলেছেন: আমার কাছে ছবিগুলো চমৎকার লাগল। তথ্য সমৃদ্ধ এবং পরিশ্রমি পোষ্ট।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২০

নিয়াজ সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ , শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.