নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালোত্তীর্ণ ইংরেজ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক জর্জ অরওয়েলের ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩


এরিক আর্থার ব্লেয়ার বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে ছদ্মনামে যিনি জর্জ অরওয়েল নামে সমধিক পরিচিত। আজীবন তিনি স্বৈরাচার ও একদলীয় মতবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জর্জ অরওয়েল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে লেখালেখি থেকে শুরু করে উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা রচনা করেছেন। তবে তার বেশিরভাগ লেখাই ছিল সংবাদপত্রের জন্য লেখা সভ্যতা ও রাজনৈতিক সমালোচনামূলক নিবন্ধ। তার দুটি উপন্যাস - এনিমেল ফার্ম ও নাইন্টিন এইটি-ফোর্‌ - বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের তালিকায় স্থান পেয়েছে। অরওয়েল মাত্র ১৯৫০ সালের আজকের দিনে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী। কালোত্তীর্ণ ইংরেজ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক জর্জ অরওয়েলের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এরিক আর্থার ব্লেয়ার ১৯০৩ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত ভারতের বাংলা প্রদেশের মতিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রিচার্ড ওয়ামেসলে ব্লেয়ার এবং মাতা ইদা মাবেল লিমুজিন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান অরওয়েল। তাঁর বাবা ভারতের সিভিল সার্ভিসে চাকরি করতেন। ১৯০৭ সালে সপরিবারে ইংল্যান্ডে চলে যান তারা। ১৯১৭ সালে ইটনে পড়াশোনা করার সময় সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে জর্জ অরওয়েলের। এ সময় বিভিন্ন কলেজ ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতে থাকেন তিনি। ১৯২২ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় পুলিশ বিভাগের হয়ে বার্মায় কাজ করেন অরওয়েল। চাকরির এই অভিজ্ঞতা তাঁকে প্রথম উপন্যাস লিখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর 'বার্মিজ ডেজ'। পরবর্তীতে ক’টা বছর দারিদ্র্যের কষ্ট পোহাতে হয় অরওয়েলকে। ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগে দুটো বছর প্যারিসে কাটান তিনি। এ সময় জীবিকার জন্য বিভিন্ন কাজ করতে হয় তাকে। কখনো গৃহশিক্ষক ছিলেন, কখনো স্কুলে পড়াতেন, কখনো বা বইয়ের দোকানে বই বিক্রি করতেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে লেখালেখিও চালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন সাময়িকীতে তখন তার বেশ কিছু লেখা ছাপা হয়। ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয় জর্জ অরওয়েলের ‘ডাউন অ্যান্ড আউট ইন প্যারিস অ্যান্ড লন্ডন’। ১৯৩৬ সালে ভিক্টর গোলাঙ্কজের কাজ নিয়ে তিনি পরিদর্শন করতে যান ল্যাঙ্কাশায়ার এবং ইয়র্কশায়ারের বেকারত্বপূর্ণ এলাকাগুলো। এই অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তীতে লেখেন 'দ্য রোড টু উইগান পায়্যার'। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে জর্জের নিজ চোখে দেখা দারিদ্র্যের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে নিখুঁত বর্ণনার মাধ্যমে।

১৯৩৬ সালের শেষ দিকে প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে যুদ্ধ করতে অরওয়েল স্পেন চলে যান । যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি আহত হন। গৃহযুদ্ধের এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লেখেন 'হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া' বইটি। ১৯৩৮ সালে তাঁকে শারীরিক অসুস্থতায় পেয়ে বসে। একটি স্যানাটোরিয়ামে কিছুদিন থাকতে হয় তাঁকে। এরপর থেকে কখনো পুরোপুরি সুস্থ হন নি তিনি। মরক্কোতে মাস ছয়েক ছিলেন অরওয়েল। এ সময় লেখেন 'কামিং আপ ফর এয়ার'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হোম গার্ড এবং বিবিসির ইস্টার্ন সার্ভিসে কাজ করেন তিনি। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ওই কাজেই নিয়োজিত ছিলেন অরওয়েল। পরে সাহিত্যসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন 'ট্রিবিউন' পত্রিকায়। এ সময় রাজনীতি এবং সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত লিখতে থাকেন তিনি। একই সঙ্গে অবজারভার’ এবং ‘ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজ’ পত্রিকায়ও লিখেছেন। তাঁর রূপকধৰ্মী চমৎকার রাজনৈতিক উপন্যাস 'অ্যানিমেল ফার্ম' প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এখানে তিনি একটি পশুখামারের ভেতর একটি রাজনৈতিক পটভূমি সৃষ্টি করেছেন। এটা মূলত রাশিয়ান রেভুলেশনের স্টেনের বিদ্রোহের উপর ভিত্তি করে লেখা। গ্রন্থটি অরওয়েলের জন্য খ্যাতি নিয়ে আসে।জীবনে প্রথমবারের মত তিনি আর্থিকভাবে সন্তুষ্ট হন।

১৯৪৯ সালে 'নাইনটিন এইটি ফোর' গ্রন্থটি লেখা শেষ করেন জর্জ অরওয়েল। ততদিনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে, হিটলারের পতন হয়েছে এবং পৃথিবী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক দুই পরাশক্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তিনি ইতোমধ্যে হিটলারের জার্মানিকে দেখেছেন। সেদেশে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান দেখেছেন। একই সময় দেখেছেন স্তালিন নামক এক চূড়ান্ত একনায়ক ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক আরেক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বগ্রাসী জয়রথ। এদের সবাইকে ছাপিয়ে মহাসমুদ্রের ওপারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্বের প্রথম উত্তর-পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজীবন সমাজতন্ত্রী আদর্শে বিশ্বাসী অরওয়েল এই ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলেন, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে অতিক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর লাগামহীন উত্থানের ফলে রাষ্ট্র হয়ে পড়বে নিষ্পেষণের হাতিয়ার, ব্যক্তি হারাবে মতপ্রকাশের যাবতীয় স্বাধীনতা। শুধু তাই নয়, একসময় স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলবে ব্যক্তি। ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপ নজরদারির ক্ষমতা থাকবে সরকারের। এর পরও যদি ভিন্নমতের কোনো চেষ্টা হয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে যে অফুরন্ত ক্ষমতা রয়েছে, যে-কোনো ব্যক্তি অথবা দলকে পিষে ফেলতে সে-শক্তি ব্যবহারে সে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। স্বৈরতন্ত্রের বিপদ সম্বন্ধে পৃথিবীর মানুষকে সাবধান করে দিতেই লেখা হয়েছিল 'নাইনটিন এইটি ফোর' গ্রন্থটি। গ্রন্থের কাহিনি-বিস্তার হয়েছে লন্ডনের পটভূমিতে। রক্ষণশীল অথবা আধা-উদারনৈতিক লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন ব্রিটেনেও স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়, অরওয়েল এমন ধারণাও পোষণ করতেন। অরওয়েল কেবল সাবধান করেই পার পেয়েছিলেন, ১৯৫০ সালে মৃত্যু হওয়ায় তাঁকে মাওবাদী চীন দেখতে হয়নি, কম্বোডিয়ার খেমাররুজকে দেখতে হয়নি, দেখতে হয়নি পিনোসে, সাদ্দাম ও ইয়াহিয়াকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক লক্ষণ তাঁর কাছে ধরা পড়েছিল, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প নামক বিপদ তাঁকে দেখতে হয়নি। যে-স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তিনি কল্পনার চোখে দেখেছিলেন, আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত হওয়ার প্রকৃত আশঙ্কার মুখোমুখি। ঠিক সে-কারণে এ-গ্রন্থ প্রকাশের অর্ধশতক অতিবাহিত হওয়ার পরও অরওয়েলের কল্পকাহিনি ১৯৮৪ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তখন যা ছিল কল্পকাহিনি, এখন তা মোটেই কল্পকাহিনি নয়।১৯৯৫ সালে এই বইটি ডাব্লিউ. এইচ. স্মিথ এবং পেঙ্গুইন বুকস থেকে 'শতাব্দীর সেরা গ্রন্থ'-এর পুরস্কার অর্জন করে। মূলত ‘অ্যানিমেল ফার্ম এবং ‘নাইনটিন এইটি-ফোর’ -এই দুটি বইয়ের জন্যই জর্জ অরওয়েল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। ‘নাইনটিন এইটি-ফোর’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৫০ সালের ২১ জানুয়ারি মাত্র ৪৬ বছরবয়সে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই খ্যাতিমান লেখক। আজ তার ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী। কালোত্তীর্ণ ইংরেজ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক জর্জ অরওয়েলের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনি সমাজতন্ত্র বুঝতেন না

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি সব বোঝেন !!
পন্ডিত !!

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: এই লোক মোচ গুলো নিয়ে বিলাসিতা করেছেন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

যার যা আছে তা নিয়ে বিলাসিতা করতে দোষ নাই।
আপনিওতো করেন!! চাকুরী নাই তাই চাকুরী নিয়ে
দারুন বিলাসিতা আপনার। পর্কে বসে বই পড়েন !!
বই বিলাসিতা !!

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: আমার প্রিয় লেখকদের একজন !

এনিমেল ফার্ম অনবদ্য ! সকল পাঁঠার জন্য অবশ্যপাঠ্য ! তবে এনিমেল ফার্মে তিনি পাঁঠাদের অন্তর্ভুক্ত না করার তেব্র পরতিবাদ জানাই !

১৯৮৪ অবশ্যই প্রাসঙ্গিক ! নিবর্তনমূলক সরকারগুলো সামনে নিরাপত্তার অজুহাতে মানুষের বেডরুমে এমনকি শরীরের ভেতরেও নিয়ন্ত্রনমূলক ব্যবস্থা স্থাপন করিবে, মগজ ধোলাই করিবে ! উহা দূরে নয় !

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমিও তিব্র প্রতিবাদ জানাই !!
এনিমেল ফার্মে কেন টারজানদের
বাদ দেওয়া হল। তারাওতো বন্য
এনিমেলের পর্যােয়েই পরে কি বলেন।

বিবর্তনমূলক সরকার নিরাপত্তার জন্য
আরো আধুনিক হবে ঘর বাহির এক করে
ফেলবে। ঘরের দরজা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মজাই মজা !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.