নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ৭ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:২৬


আগের পর্বের লিঙ্কঃ গোপনে সে আমায় ভালোবাসে পর্ব ৬- নুরুন নাহার লিলিয়ান

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
পর্ব-৭
নুরুন নাহার লিলিয়ান

বিশ বছর ধরে একটা গোপন জগতে আমার অহর্নিশ বেঁচে থাকা। আমার ভেতরে লেপ্টে থাকা সত্য। একটা মানুষের অবয়ব অস্তিত্ব আমার মস্তিস্কের নিউরনে গভীর ভাবে লেগে আছে।
অথচ কতো সুন্দর চলছে আমার বাহ্যিক জীবনের প্রয়োজন। নুশমা পেটে আসার প্রথম দুই তিন মাস আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ থাকতো। কিন্তু অভিনন্দনের পোস্টিং এর পর আমার মনোজগৎ এতোটা স্বপ্ন ঘোরে থাকতো যে আমি বাইরের পৃথিবীর কোন নিষ্ঠুরতায় মন হারাতাম না।
যে মন সর্বদা প্রেমে মুগ্ধ থাকে তাঁকে পৃথিবীর কোন কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না।আমাকেও পারতো না।
প্রেমবোধ মানুষকে সৌন্দর্য বিলাসি করে তোলে। আমাকেও সৌন্দর্য পিপাসী করে তুলেছিল। তখন আমার বেঁচে থাকায় ছন্দ ফিরে আসে। মনেহতো পৃথিবীটাতো সুন্দরই। বেঁচে থাকাটা আরও বেশি সুন্দর। একটা গভীর ভালোবাসা না হয় অন্তরের বেঁচে থাকার সৌন্দর্য হয়ে থাকুক খুব গোপনে।
জীবনের হাজারও যুদ্ধ জলোচ্ছ্বাসের মাঝে অভিনন্দন ছিল একফোঁটা শান্তির শিশির। সুবিশাল সমুদ্রের জলের চেয়ে এক ফোঁটা শিশির আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতো স্বপ্নের দেশে।
কাউকে ভালোবাসতে হলে যত্নশীল একটা মন প্রয়োজন হয়। অন্য কাউকে সম্মান করার মতো শক্তি থাকতে হয়। যতোটুকু সময় অভিনন্দন আমার জীবনে ছিল সে ভীষণ রকম যত্নবান ছিল ।
সব মানুষের মধ্যেই একটা একলা মানুষ থাকে। সেই একলা মানুষটা নিজের জীবনের আশ্রয় খুঁজতে আরেকটা মানুষকে খোঁজে। সে মানুষটার ভেতর নিজের ছায়াকে দেখতে পায়।
যার জন্য রাতের পর রাত জাগা যায়, দিনের পর দিন অপেক্ষা করা যায়। অন্ধকারে তাঁর হাতটি ধরে হারিয়ে যাওয়া যায়। যার কাছে নিজের ভেতরের সমস্ত অনুভূতি অবলীলায় প্রকাশ করা যায়। যে মনের কথা পড়তে পারে। প্রিয় মানুষটার চোখের জলে ভাসতে পারে।
আমি জানি অভিনন্দন কোনদিন প্রকাশ করবে না সে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেও আমাদের আচমকা বিচ্ছেদে তছনছ হয়ে গেছে। তাঁর ও বুকের ভেতর একটা নদী বয়ে চলেছে গোপন গহীনে।
কিন্তু সে নিজের জন্য কখনওই আমার জীবনে কাটা ছড়াবে না। বরং আমার ভাল থাকায় সব সময় ব্যস্ত থাকতো। অভিনন্দনের ব্যবহার, কথা আর জীবনবোধ যেকোন মানুষকে মুগ্ধ করবে।
ওর প্রতিটি কাজ ছিল মনে রাখার মতো।
যেকোন সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে ধৈর্য্য ও সহ্য দুটো বিষয় সমান ভাবে থাকতে হয়। অধিকাংশ মানুষেরই তা থাকেনা।
সহ্য করতে পারাটাও যোগ্যতা। সহ্যশক্তির সার্টিফিকেট সবার থাকে না।
আসাদের চিন্তা ভাবনার বৈকল্যতা আর তাঁর পরিবারের মানুষ গুলোর সেচ্ছাচারিতা যেকোন মানুষকে হতাশ করবে।আসাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যগুলো শুধু নিজেদেরটা বুঝে।
নিজের ভাল থাকা, কর্তৃত্ব আর স্বার্থপরতা ছাড়া আসাদের ভেতরে আমি তেমন কিছুই পেতাম না। তারপরও সব কিছুই কেমন সয়ে যাচ্ছিল। একটা অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ক কেমন করে যেন সুখী রূপ ধারণ করে খুব সুন্দর বয়ে চলছিল আপন নিয়মে।
অভিনন্দন আমার বিয়ে করা স্বামী ছিল না। আমাদের মধ্যে তেমন কোন গভীর কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি। লোকে আক্ষরিক অর্থে সম্পর্ক বলতে যা বোঝে। কিন্তু অভিনন্দন ছিল আমার জীবনের অংশ। আমার অনুপ্রেরণা, স্বপ্ন আর বেঁচে থাকা।
এই যে আজকে দু'টো সন্তান নিয়ে আসাদের সাথে আমার দীর্ঘ এক সংসার জীবনের গল্প রচিত হয়েছে সেটার পেছনেও অভিনন্দনের অবদান আছে।
এই যে আমি বেঁচে আছি সেটা নাও থাকতে পারতাম।
লোকে বলবে বিয়ে করা স্বামীকে বাদ দিয়ে ছোটবেলার প্রেমিককে নিয়ে মেতে আছি। লোকে আরও অনেক কিছু বলবে। লোকে সব সময় বলে। যে যেমন সে তেমন করেই বলে।
যতোদূর মনেহয় আমি তখন তিন মাসের প্র‍্যাগনেন্ট। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। বর্ষার মৌসুম। ঝড় বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাস লেগেই থাকে৷ আমার শরীরটাও ভাল যাচ্ছিল না।
বারান্দা থেকে বানভাসী পদ্মার অথৈজল কেমন বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে তোলে। কী যে ভয়ংকর আর প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা কখনও এক বাক্যে প্রকাশ সম্ভব না।
কোন কোন জায়গায় পদ্মার জোয়ার এসে পাড় ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন বলাবলি করছে। বাসার কাজের মহিলা দু'দিন আগেও এসে বলে গেছে।।কোয়াটারের সামনের ঘৌড় দৌড় বাজারটা একটু একটু করে খালি হয়ে যাচ্ছে। লোকজন দোকান সরিয়ে নিচ্ছে।
পদ্মার বুকে গভীর নোনাজল ভয়ংকর ভাবে ফুলে উঠেছে। বাজারের দোকান গুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মসজিদেও লোকজন কম আসা শুরু করেছে। স্কুলে ছেলে মেয়েরা ভয়ে আসে না। প্রশাসন থেকে কমিটি করে দেখভাল হচ্ছে। নদীপাড়ের বাঁধ নির্মান আর নদী ভাঙন রোধে আলোচনা হচ্ছে।
কিছু কিছু বিল্ডিংয়ের অনেকেই আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু আসাদের ভেতর এই প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে তেমন কোন টেনশন নেই। সে অফিসে যায়। বাসায় আসে ভাত খায়। বারান্দায় গিয়ে পদ্মার বুক চিড়ে ধেয়ে চলা স্রোত গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে। বেশ কিছুটা সময় কি যেন ভাবে। তারপর আবার অফিসে চলে যায়।
আমার কাছে তখন আসাদকে পৃথিবীর সবচেয়ে আলাদা ও আশ্চর্যজনক মানুষ মনে হতো।
আমি ভাবতাম কিভাবে সে এতো স্বাভাবিক আছে!
আমার শ্বশুর ভীষণ রকম ধর্মপ্রাণ, জ্ঞানী, সচেতন ও দায়িত্ববান ব্যক্তি। তিনি অনেক দিন ধরেই এই যে নদীর পাড় ভেঙে নিচ্ছে সেটা নিয়ে উদগ্রীব হয়ে থাকতো। কিন্তু সেখানকার প্রশাসন আসাদের মতোই কেমন জানি নির্বিকার থাকতো।
একদিন তো আমার শ্বশুর এসে পুরো বিল্ডিং সুরা পড়ে বেঁধে দিলেন। এটা মুসলিম ধর্মের বিশ্বাস!
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর! তিনি খুবই টেনশন করতো। আসাদকে বলতো বাসা দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব হলে যেন করে নেয়।
কী এক অদ্ভুত কারনে আসাদ তেমন ভ্রুক্ষেপ করতো না।
কিন্তু সেদিন আচমকাই চারিদিকে আতংক আর কান্নার কোলাহল শুরু হয়।নদীর পাড়ে আর কোয়াটার এলাকায় মানুষের ছুটাছুটি।। মুহুর্তে পুলিশ, ডুবুরি ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসনের কর্মকর্তা আর সাধারণ কৌতুহলী লোকজনে মহাজমায়েতের সৃষ্টি করল।
মানুষের আর্তনাদে আকাশ পাতাল কাপতে থাকে। আমি শুয়ে ছিলাম। আসাদ তখন কি যেন একটা কাজে নীচে নেমেছে। আমার শরীরটাও বেশ দূর্বল ছিল। বেশ কিছুদিন যাবৎ খেতে পারছিলাম না। খাওয়ায় রুচি ছিল না।
আমি মানুষের চিৎকারে আতংকিত হয়ে যাই। মনেহচ্ছিল আমি একলা রুমেই সব নিয়ে ডুবে যাব। কারন আমার পুরো সংসারটার কিছুই সরানো হয়নি। অন্যদিকে আমার পেটে এক নতুন প্রাণের স্পন্দন। আসাদ নেই বাসায়। ভয়াবহ এক অস্থিরতা আমাকে আবিষ্ট করে ফেলল মুহুর্তে। মৃত্যু আতংক বাড়তে থাকল।
কি করব ঠিক কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বুকের ভেতরটা কেমন মোচর দিয়ে উঠল।আমি ক্রমশ আমার ভেতরকার শক্তি হারাতে শুরু করলাম।পুরো শরীর হীম হয়ে গেলো।
কতোক্ষণ আমি এমন ভয়াবহ মুহুর্তের সাথে কাটিয়েছি জানিনা। তখন খুব সম্ভবত কলিং বেল বাজছিল। আমি দরজা খুলতেই ঢলে পড়ি। কেউ একজন আমাকে আড় কোলে নিয়ে নিচে নামছে। আমি তাঁর শার্টে বোতাম অংশের জায়গাটা খাবলে ধরে ভয়ে আতংকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পেছনে আসাদের কন্ঠ।
অভিনন্দন সাবধানে, সাবধানে।
তারপর কী হয়েছিল মনে নেই।
তছনছের এক ভিন্ন অধ্যায় রচিত হল। চোখের নিমিষে ভেসে গেলো বহুদিনের একটা আবাসিক এরিয়া। মানুষের জীবনে যাপনের গল্প। ইট পাথরে তৈরি বিল্ডিং গুলো খেলনা পুতুলের মতো স্রোতের মতো ডুবে গেল।
পরের দিন প্রায় মধ্য দুপুরে আমার জ্ঞান ফিরে এল। আমি তখনও ঘোরের মধ্যে।।আসাদ পাশে বসে কি কাগজপত্র গুছাচ্ছে।
আমার কানের মধ্যে তখনও লোকজনের আর্তচিৎকারের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! আমার চোখ দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।থর থর কাপছে।
আসাদ আমার দিকে তাকায়, " অল্পের জন্য আমাদের বিল্ডিংটা সহ চারটা বিল্ডিং বেঁচে যায়।বাকি গুলো নদীগর্ভে বিলীন।"
আমার তখন আমার শ্বশুরের কথা মনেহল। তিনি কয়েকমাস আগে এসে নদীর দিকে তাকিয়ে বলতেন," বউমা নামাজ পড়ে দুআ করবে যেন মহান আল্লাহ সকল বিপদে নিরাপদে রাখেন।"
কথাটা বলতে বলতে তিনি পুরো বাসায় পায়চারি করতেন আর সুরা পড়ে ফু দিতেন।তারপর জিজ্ঞেস করতেন কি রান্না করেছি। আমি অসুস্থ এই কথাটা বলবার সাহস আমি পেতাম না। আমি যতোই অসুস্থ থাকিনা শ্বশুর বাবা কখনও ভাবতেই পারেন না যে কোন ঘরের বউ অসুস্থ হতে পারে। তাঁরা থাকবে ঘরে সব সময় কাজে ব্যস্ত আর ভাল স্বাস্থ্যের।
আমি পাশ ফিরে শুই। পেছন থেকে আসাদ বলে, " এই ভাড়া বাসায় আমরা কিছুদিন থাকব। কোয়াটারের বাসা তালা দেওয়া। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আনা হয়েছে। অভিনন্দন সাথে না থাকলে তো তোমাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যেতো। "
আমি ফুপরে কেঁদে উঠি।
আসাদ কাগজপত্র গুছাতে গুছাতে বলে, " উফ স্টাফরা আর অভিনন্দন না থাকলে যে আমাদের কি হতো! ভাবতেই পারছি না।"
আমি জিজ্ঞেস করি, " তুমি কিছু খেয়েছো? "
আসাদ বলল," নাহ! যাই বাসাটা দেখে আসি। আর হোটেলে থেকে খাবার নিয়ে আসি। "
চলবে .।
ঘরে বসে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন
রকমারী ডট কম - 09609-616297
Durbiin.com -01307-452110
Book Express- 01614-321421
Book mark - 01775-619592
Book line - 01717 418226
Book Fiesta - 01674-919250
Book Hut -01839-061857

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২৩

অক্পটে বলেছেন: জীবনের খুঁটিনাটি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনার অগ্রযাত্রা আরো সুন্দর হোক। ৮ম এর অপেক্ষায়।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। পোষ্ট করেছি

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৩:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: সাথেই আছি।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.