নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ১১ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১৪


গোপনে সে আমায় ভালোবাসে ১১ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

#গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
#১১
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
প্রথম বার বাচ্চা হওয়ার সময় অনেকেরই শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। আমারও কিছু জটিলতা দেখা দিয়ে ছিল।সে সময়টায় অভিনন্দনের অবদান আজীবন মনে থাকবে।
যাইহোক মাঝে মাঝে মনেহয় এতো কিছুর মধ্যে নুশমা কেমনে বেঁচে থাকল। কিভাবে সম্ভব হয়েছিল! পেটের মধ্যে থাকতে আমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন পুরোটা সময় জুড়েই আমাকে দেখতে হয়েছে জীবনের কঠিন ও কালো অধ্যায়।
মেয়েটা জন্মগতই অনেক ধৈর্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। আমার মাঝে মাঝে মনেহয় আচ্ছা নুশমা তো তখন পেটে ছিল ! ও কি আমার আর অভিনন্দের কথা জানে ?
আমার দগ্ধ হৃদয়ের আর্তনাদ! আমার হৃদয়ের অনবদ্য সুখানুভূতি! আমার হৃদয়ের গোপন গহীন অন্ধকার! আমার অব্যক্ত কষ্ট আর তীব্র যন্ত্রণার দংশন! তীলে তীলে শেষ হয়ে যাওয়া একটা জীবন গল্প। একান্ত গোপন ডায়েরি! কিংবা আমার একান্ত গভীর আলোকিত জগত!
জানি না কেউ জানলে হয়তো আমাকেই অপরাধী করা হবে! সামাজিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় কিংবা আইনের নিয়মে আমার গোপন গল্পটা ভীষণ দোষী!
কিন্তু ভালোবাসা যে অপ্রতিরোধ্য! ভালোবাসা যে অমিমাংসিত প্রশ্নের উত্তর!
ভালোবাসা যে অদমনীয় অন্ধকারে হঠাৎ জোনাকির আগমন!সে ভালোবাসাকে অস্বীকার করে কি জীবন চলে।
আসাদের সাথে আমার যে জীবন চলছে সেটা তো সমাজ নির্ধারিত প্রয়োজনের জীবন। যে জীবন আমাকে কোন স্বপ্ন দেখায় না। যে জীবন আমাকে আলোড়িত করে না।
আমার মনকে স্পর্শ করে না। আমাকে এগিয়ে যেতে গতিশীল করে না।সে জীবন থেকে যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই যে নেই!
আসাদের উপর একটা সময়ে আমার খুব রাগ হতো। জীবন চলতে চলতে সে রাগ এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
পৃথিবীতে সবাই তো এক না। আসাদ ও তাঁর নিজের মতো।
তবে আসাদের সাথে আমার মন মানসিকতা কখনও মিলেনি। অভিবাবকেরা মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মাত্র।শুনেছি এক সাথে থাকতে থাকতে দু'টো মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। দু'টো মানুষের মধ্যে দূরত্ব থাকলে সেটা কমে যায়।
কিন্তু আর কিছু বছর পর প্রায় দুই যুগ হয়ে যাবে আমার আর আসাদের দাম্পত্য । আজও আমাদের মধ্যে একটা গোপন মানসিক দূরত্ব রয়েই গেছে।
আমি যেমন আসাদকে চিনতে পারিনি তেমনি আসাদ আমাকে চিনতে পেড়েছে কিনা জানারও চেষ্টা করিনি।
আমার ও প্রায়ই মনে হয় আসাদ ও কি আমার মতো মনে মনে অন্যে কাউকে ভালোবাসে। যদি ভালোবেসেই থাকে তাহলে আমার সাথেই কেন ঘর সংসার করছে। কী জানি হয়তো তাঁর সাথে ঘর সংসার করা সম্ভব হয়নি। আমার মনে এমন ভাবনা উঁকি দেওয়ার পেছনে অবশ্য কয়েকটা কারন ও আছে।
একদিন বিকেল বেলা আমি বারান্দায় বসে ছিলাম। আর অবাক বিস্ময়ে নদীর তীর ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা আমাদের বিল্ডিংটা দেখছিলাম। কী অদ্ভুত ভাবে পাড় ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা পুরো গ্রামটা গ্রাস করে নিল। কিন্তু আমাদের বিল্ডিংটা কিভাবে মাটি আঁকড়ে ঝুলে আছে। মাটির উপরে তাঁর কতোটা ভরসা!
মাত্র চারটা বিল্ডিং কী অদ্ভুত ভাবে টিকে আছে! নদী তীরে ঝুলে আছে। আমি সত্যি ভীষণ রকম বিস্মিত হয়ে যাই।
আমি গভীরভাবে পদ্মার অথৈজল দেখছিলাম। আমার শরীরের অবয়বটা অনেকখানি পাল্টে গেছে। মুখে রুচিও নেই। ততোদিনে পদ্মার অপর পাড়ে ছোট ছোট চর ও দেখা দিয়েছে। সেখানে সবুজ দূর্বা ঘাস জন্মেছে। কেউ কেউ নৌকা দিয়ে সে পাড়ে যায়। জেগে উঠা চর গুলোর স্পর্শ নেয়।কোন কোন বিষন্ন বিকেলে কেউ কেউ মাটি চাপড়ে হাউ মাউ আর্তনাদ করে। গগনবিদারী চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী করে তোলে।
আমি দেখি কতোটা হাহাকার বুকে ধারণ করে মানুষ তবুও বেঁচে থাকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা মনেহল।সে এই লৌহজং পদ্মার ধারে থাকলে কতো কী রচনা করে ফেলতো।বাংলা সাহিত্যের এমন কোন দিক নেই যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা নেই। ছোটবেলায় আমরা ভাই বোনেরা কবিতা মুখস্থ প্রতিযোগীতা করতাম। এখনকার সময়ে ছোট শিশুরা ডিজিটাল সরঞ্জামে বেশি আসক্ত হয় একজন কবির কবিতা বা ছড়া থেকেও। এমন কী স্কুল কলেজে ও এসব চর্চা কমে গেছে।
মানুষের সুপ্ত প্রতিভা, মানবিক মুল্যবোধ, মননশীলতা আর সৃজনশীলতার চর্চাটা কেন যেন অনেকের কাছেই অমুলক মনেহয়। কিন্তু আমি তো সেকেলে এখনও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির প্রেমেই পড়ি।
হে বিরাট নদী,
অদৃশ্য নিঃশব্দ তব জল
অবিচ্ছিন্ন অবিরল
চলে নিরবধি।
স্পন্দনে শিহরে শূন্য তব রুদ্র কায়াহীন বেগে;
বস্তুহীন প্রবাহের প্রচণ্ড আঘাত লেগে
পুঞ্জ পুঞ্জ বস্তুফেনা উঠে জেগে;
ক্রন্দসী কাঁদিয়া ওঠে বহ্নিভরা মেঘে।
আলোকের তীব্রচ্ছটা বিচ্ছুরিয়া উঠে বর্ণস্রোতে
ধাবমান অন্ধকার হতে;
ঘুর্ণাচক্রে ঘুরে ঘুরে মরে
স্তরে স্তরে
সুর্যচন্দ্রতারা যত
বুদ্‌বুদের মতো।
হে ভৈরবী, ওগো বৈরাগিণী,
চলেছ যে নিরুদ্দেশ সেই চলা তোমার রাগিণী,
শব্দহীন সুর।
অন্তহীন দূর
তোমারে কি নিরন্তর দেয় সাড়া।
সর্বনাশা প্রেমে তার নিত্য তাই তুমি ঘরছাড়া।
উন্মত্ত সে-অভিসারে
তব বক্ষোহারে
ঘন ঘন লাগে দোলা--ছড়ায় অমনি
নক্ষত্রের মণি;
আঁধারিয়া ওড়ে শূন্যে ঝোড়ো এলোচুল;
দুলে উঠে বিদ্যুতের দুল;
অঞ্চল আকুল
গড়ায় কম্পিত তৃণে,
চঞ্চল পল্লবপুঞ্জে বিপিনে বিপিনে;
বারম্বার ঝরে ঝরে পড়ে ফুল
জুঁই চাঁপা বকুল পারুল
পথে পথে
তোমার ঋতুর থালি হতে।
শুধু ধাও, শুধু ধাও, শুধু বেগে ধাও
উদ্দাম উধাও;
ফিরে নাহি চাও,
যা কিছু তোমার সব দুই হাতে ফেলে ফেলে যাও।
কুড়ায়ে লও না কিছু, কর না সঞ্চয়;
নাই শোক, নাই ভয়,
পথের আনন্দবেগে অবাধে পাথেয় করো ক্ষয়।
যে মুহূর্তে পূর্ণ তুমি সে মুহূর্তে কিছু তব নাই,
তুমি তাই
পবিত্র সদাই।
তোমার চরণস্পর্শে বিশ্বধূলি
মলিনতা যায় ভুলি
পলকে পলকে--
মৃত্যু ওঠে প্রাণ হয়ে ঝলকে ঝলকে।
যদি তুমি মুহূর্তের তরে
ক্লান্তিভরে
দাঁড়াও থমকি,
তখনি চমকি
উচ্ছ্রিয়া উঠিবে বিশ্ব পুঞ্জ পুঞ্জ বস্তুর পর্বতে;
পঙ্গু মুক কবন্ধ বধির আঁধা
স্থুলতনু ভয়ংকরী বাধা
সবারে ঠেকায়ে দিয়ে দাঁড়াইবে পথে;
অণুতম পরমাণু আপনার ভারে
সঞ্চয়ের অচল বিকারে
বিদ্ধ হবে আকাশের মর্মমূলে
কলুষের বেদনার শূলে।
ওগো নটী, চঞ্চল অপ্সরী,
অলক্ষ্য সুন্দরী
তব নৃত্যমন্দাকিনী নিত্য ঝরি ঝরি
তুলিতেছে শুচি করি
মৃত্যস্নানে বিশ্বের জীবন।
নিঃশেষে নির্মল নীলে বিকাশিছে নিখিল গগন।
ওরে কবি, তোরে আজ করেছে উতলা
ঝংকারমুখরা এই ভুবনমেখলা,
অলক্ষিত চরণের অকারণ অবারণ চলা।
নাড়ীতে নাড়ীতে তোর চঞ্চলের শুনি পদধ্বনি,
বক্ষ তোর উঠে রনরনি।
নাহি জানে কেউ
রক্তে তোর নাচে আজি সমুদ্রের ঢেউ,
কাঁপে আজি অরণ্যের ব্যাকুলতা;
মনে আজি পড়ে সেই কথা--
যুগে যুগে এসেছি চলিয়া,
স্খলিয়া স্খলিয়া
চুপে চুপে
রূপ হতে রূপে
প্রাণ হতে প্রাণে।
নিশীথে প্রভাতে
যা কিছু পেয়েছি হাতে
এসেছি করিয়া ক্ষয় দান হতে দানে,
গান হতে গানে।
ওরে দেখ্‌ সেই স্রোত হয়েছে মুখর,
তরণী কাঁপিছে থরথর।
তীরের সঞ্চয় তোর পড়ে থাক্‌ তীরে,
তাকাস নে ফিরে।
সম্মুখের বাণী
নিক তোরে টানি
মহাস্রোতে
পশ্চাতের কোলাহল হতে
অতল আঁধারে -- অকূল আলোতে।
নিজের সাথে নিজেরই একটা স্মৃতি মনে করার প্রতিযোগীতা। সামনের নদী থেকে ফুরফুরে বাতাস এসে আমাকে অন্য রকম করে দেয়।আমি জোরে একটা নিঃশ্বাস দেই। পেটের বাচ্চাটা নড়ে চড়ে উঠে। এতোক্ষণ কেমন দম বন্ধ লাগছিল। আমার জীবনে হাজারও সমস্যা থাকুক কিন্তু প্রকৃতির আর্শীবাদ আর স্পর্শ ছিল বলে হয়তো আজও নিজ অস্তিত্ব খুঁজে পাই।
এই বয়সে ও সেই কবিতাটি আমার মস্তিস্ক মনে রেখেছে আমার কেমন জানি বিশ্বাসই হয় না।
আমরা হয়তো নিজেরাও জানি না আমাদের মগজ কতো কী ধরে রাখে আমাদেরই অজান্তে!
একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে পড়ল!
সেদিন হঠাৎ করেই টাকিয়া ভাবি এল। সে নাকি সামনের ঘৌড়দৌড় বাজারে গিয়েছিল। আসাদকে নাকি অফিসের গাড়িতেই একটা মহিলার সাথে দেখেছে। মহিলাটা তথাকথিত স্মার্ট ! কর্ম ক্ষেত্রে একজন দায়িত্বশীল পদে থাকা নারীদের যেমন অবয়ব। আসাদের সাথে আন্তরিক অন্তরঙগ অবস্থায় আরও কয়েকদিন দেখেছে।
কথাটা শোনার পর আমার অনেক রাগ করার কথা ছিল। ভীষণ মন খারাপ হওয়ার ছিল। কিন্তু কেন জানি আমার অনুভূতিতে কোন ক্রিয়াই হয়নি।
মনোবিজ্ঞানীদের মতো "প্রাকৃতিকগত ভাবে কেউই মনোগামী বা একগামী নয়। বহুগামিতা সবার মধ্যেই থাকে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। "
এছাড়া ও Evolutionary Psychology বা
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মতে বহুগামিতা প্রাচীনকাল থেকেই পুরুষের শরীরে ও মনে বসবাস করা সহজাত প্রবৃত্তি। এসব নিয়ে অনেক লেখাই আমি পড়েছি। তবে সব পুরুষ যে এক হবে তাও কিন্তু নয়। এই বহুগামিতা পুরুষেরই ধারণা আধুনিক সংস্কৃতির আবিষ্কার!
বহু বছর ধরেই নারী পুরুষের আকর্ষণের নানা রকম বিতর্কিত ব্যাখ্যা আছে।
যেখানে রক্ষনশীল একটা পরিবারে জন্ম নিয়ে, বিবাহিতা একজন নারী হয়ে অন্য এক পুরুষের প্রতি আমার গোপন আকর্ষণ আছে। তেমনি আসাদের ও থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯

অক্পটে বলেছেন: ভাল লাগল, শেষ দিক দিয়ে প্রাকৃতিগত ভাবে মানব-মানবী যে মনোগামী বা একগামী নয় এই সত্যটি জেনে কিছুটা আস্বস্থ হলাম।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:৪৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হা হা আন্তরিক ধন্যবাদ

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো এই পর্বটি।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.