নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে- পর্ব ১২ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:৪৭


গোপনে সে আমায় ভালোবাসে পর্ব ১২ -নুরুন নাহার লিলিয়ান
গোপনে সে আমায় ভালোবাসে-নুরুন নাহার লিলিয়ান
#১২ পর্ব
আমার স্বামী আসাদের সাথে যে মহিলার সম্পর্ক তাকে হয়তো আমিও চিনি। টাকিয়া ভাবি মনেহয় ফাহমিদা ম্যাডামের কথা বলছে।
আসাদ আর ফাহমিদা ম্যাডাম এক সাথেই চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। ফাহমিদার বিয়ে হয়েছিল তিন মাস পর অজানা কারনেই সম্পর্কটা টিকেনি।
আসাদ কখনওই অফিসের কোন কিছুই আমাকে তেমন করে বলেনা। ওর ধারণা আমি চাকরিহীন, ক্ষমতাহীন এক সাধারণ নারী এই সকল অফিস, প্রশাসনের কি বুঝি।
নাহ! আমি হীনমন্যতায় ভুগছি না। আমার জীবনসঙ্গীর মানসিকতা তো আমারই বোঝার কথা।আমার যতোই বোঝার শক্তি থাকুক। আমি যতোই ব্যক্তিত্ববান হই না কেন আসাদের কাছে তা কোন ভাবেই মুল্যবান নয়। কিছু মানুষই থাকে সে চায় তাকে কিছু মানুষ মুনিব মানুক। তাঁকে সব সময় ভয় পেয়ে সংকুচিত হয়ে থাকুক।
মানুষের মধ্যে রাজত্ব করা, শাসন করা, অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার স্পৃহা প্রাচীনকাল থেকেই।
তাই বলে যে সব পুরুষ এক তা তো নয়। টাকিয়া ভাবি আর তাঁর স্বামী কতো সুন্দর সুখী দম্পতি!
তাদেরও আশেপাশে অনেক কাটা আছে ফুলের মতো সংসারে আগুন লাগাতে। কিন্তু তাঁরা দু'জন দু'জনের কাছে কতো বিশ্বস্ত আর আপন। তাঁদের দেখেও সুখ। তাঁদের গল্প শুনেও সুখ।
আসলে ফাহমিদার কথা আমি জেনেছি অফিসের এক পিয়ন টাইপ মহিলার কাছে।কোন এক কাজে আমার বাসায় এসেছিল। অফিস নিয়ে টুকটাক কথা বলার এক ফাঁকে ফাহমিদার গল্পটাও চলে আসে।
তারপরও আরও ডিটেইলস জেনেছি আমার ছোট ননদের কাছে।
ফাহমিদা একটি ছেলে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে একা। তিনি উচ্চ শিক্ষিত৷ পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। সামাজিক ভাল অবস্থান আছে। তাঁর মতো নারীর জন্য উপযুক্ত পাত্র পাওয়া ও কঠিন। আর মহিলা নিজেও ভীষণ সৌখিন।সবার রুচিবোধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা আর মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা এক নয়।
যে কোন একটা পাত্রের সাথে তাকে মানাবেও না। তিনি যে আহামরি খুব সুন্দর তা কিন্তু নয়। তবে তাঁর শিক্ষা, টাকা আর সামাজিক অবস্থান তাঁকে ভিন্ন গ্লামার এনে দিয়েছে।এটাই স্বাভাবিক। লোকের তাঁর প্রতি একটা আকর্ষণ থাকবেই।
আমার ননদের ডিভোর্সী ভাসুরের সাথে তাঁর বিয়ে কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু ফাহমিদা ম্যাডামের চাহিদা আরও উপরে। তাই আর বিয়েটা হয়নি।
টাকিয়া ভাবির বর্ণনা শুনে তাই মনেহল। ফাহমিদার সাথে আসাদের ভাল বন্ধুত্বের কিংবা তাঁর চেয়েও বেশি কিছু থাকতেই পারে।ফাহমিদাকে বিয়ে করার মতো মানসিকতা আসাদের নেই।
আমি জানি আসাদের অন্তর বাহির আর ক্ষমতা।
আর ফাহমিদার মতো মহিলারা বেশিরভাগ সময়েই আসাদদের ভাল সহকর্মী আর বন্ধুই হয়। জীবন সঙ্গী হওয়ার মতো না। তাঁরা জানে এই লোক বাইরে আচল ধরে ঘুরলেও ঘরে বউ হয়ে গেলে অন্য রূপ দেখাবে।
আসাদ নিজে খুবই স্বেচ্ছাচারী। ফাহমিদার মতো মহিলাদের প্রতি খুব বেশি দুর্বল না হলে প্রেম বিয়ের মতো বিষয় ঘটবে না। তাছাড়া আসাদ খুবই মিচকে চালাক ও সে সামাজিক ইমেজটা সহজে নষ্ট হতে দিবেনা। সে তাঁর ক্যারিয়ার ও সামাজিক অবস্থানের ব্যাপারে খুবই সচেতন।
তারপরও টাকিয়া ভাবির চোখে কেমনে পড়ল জানি না।
যেটা বলছিলাম সময় যেতে থাকে।পেটের মধ্যে
নুশমা পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গেলো। আমার ছোট বোনেরা আর মা বাবা সবাই চলে এলো।
আমার জন্য সে সময়টায় পরিবারকে কাছে পাওয়া খুব জরুরি ছিল।
হঠাৎ করে শুনলাম অভিনন্দন ও ঢাকায়।আমার সাথে বেশ অনেক দিন দেখা হয়নি। কেন জানি আমার ও ছাদে বা বাইরে যাওয়া হতো না। আর অফিসের কারও সাথে দেখা ও হতো না। আসাদ তো এমনিতেই নিজের মধ্যে ডুবে থাকে৷
আমাকে কোন রকম ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে আসাদ লৌহজং চলে গেলো। আমার বাবাকে দেখে যেন আসাদ আরও হাফ ছেড়ে বাঁচল!
সত্যি বলতে আমি কখনওই আসাদের কাছ থেকে কোন সহানুভূতি বা ভালোবাসা চাইনি। তবে মানুষ তো।
আমি একটা মানুষ হয়ে আরও একটা মানব শিশু জন্ম দিচ্ছি। আমার শরীরের ভেতরে আরেকটা জীবন্ত মানুষ!
মৃত্যুর ভয় কাজ করছিল! খুব বাঁচতে ইচ্ছে করতো!
মা হওয়ার অনুভূতিটা বলে বোঝানো সম্ভব না।
পৃথিবীতে মহান আল্লাহ কতো রহস্যময় ও মায়াময়
করে একটি শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া ও গল্প লিখেছেন।
আসাদ অফিসের দায়িত্ব পালন করতে চলে গেলো। নদী ভাঙ্গনের পর প্রথমবার কোন মন্ত্রী অফিস ভিজিট করতে যাচ্ছে । সব কর্মকর্তা ,কর্মচারীকে উপস্থিত থাকতে হবে। আসাদকে আটকানোর কোন পথ নেই। মেয়ের মা বাবা হলে বিপদের সময়ে তাঁদেরই আগে পাশে থাকতে হয়।
আমি একাকি হাসপাতালে।একজন শক্ত সামর্থ্যবান
পুরুষ পাশে থাকা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু তেমন কেউই ছিল না। একমাত্র পুরুষ আমার বাবা।
বাচ্চা পৃথিবীতে আসার আগেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো। রক্তশুণ্যতায় আমি সাদা হয়ে গেলাম।
আমার রক্ত লাগবে। রক্ত সঠিক সময়ে না দিতে পারলে মা ও শিশু দু'জনের জীবনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আমার রাগী বাবাটা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে মাটি হয়ে গেল । আসাদের উপর রাগ হলেও মেয়ের বাবা হিসেবে নীরব পৃথিবী হয়ে গেল।
মেয়ের জামাই ইঞ্জিনিয়ার। ভাল জায়গায় চাকরি করে। একজন সরকারি কর্মকর্তার ও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাঁর পেশাগত জীবনে অনেক জটিলতা থাকে। সেসব জটিলতা পরিবারের মানুষ জনকে বুঝতে হয়।
এসব বলে বলে বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল।
যেকোন গর্ভবতী মায়ের মা হওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় বেশ কঠিন এবং আনন্দদায়ক। একজন নারী মা হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের পূর্ণতা পায় । শিশু জন্মদানের মধ্য দিয়ে সে নিজে ও নতুন করে জন্মগ্রহন করে ।
যে কোন গর্ভবতী মায়ের প্রথম ও শেষ তিন মাস ভীষণ রকম ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। মা ও পেটের অনাগত শিশুর জীবন সুন্দর সুস্থ রাখতে বিশেষ যত্নে থাকতে হয়। শেষ তিন মাস বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে গর্ভের বাচ্চার বিকাশ ঘটে ।
এই সময়ে শিশুর চুল ও হাতের নখ দ্রুত বড় হয় । শারীরিক গঠন পৃথিবী দেখার প্রস্তুতি নেয়। নুশমার জন্মের কথা মনে হলে আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে যাই । আমার জান বাচ্চাটা কতোটা যুদ্ধ করে পৃথিবীতে এসেছে!
আমার সেই বাচ্চাটাকে আসাদ মাঝে মাঝেই মারে। আসাদ পিতার শাসন বুঝে কিন্তু ভালবাসাটা বুঝে না। মমতা বুঝে না।
এদিকে আমি আমার সমগ্র অনুভূতি দিয়ে অনুভব করতেছি নুশমা পেটে প্রস্তুতি নিচ্ছে এই পৃথিবী দেখার। আমি গভীর ভাবে টের পাচ্ছি। এদিকে আমার "এ্যামনিওটিক স্যাক" সমস্যা হয়ে গেল ।
প্রসবের সময়ে সব নারীরই পানি ভাঙ্গে । অনেকের আগেই পানি ভেঙ্গে যায় ।
গর্ভবতী মায়েদের জরায়ুর ভেতরে এ্যামনিওটিক স্যাক নামে একটি থলেতে বাচ্চা বড় হতে থাকে। বাচ্চা প্রসবের সময়ে এই থলে ভেঙ্গে যায় । এই থলে থেকে এ্যামনিওটিক পানি বের হয়ে আসে । কখনও এই পানিটা চুইয়ে বের হয় । আবার অনেকের একসাথে অনেক পানি বের হয় । এই অবস্থাকে প্রচলিত কথায় বলে পানি ভাঙ্গা।
এই পানি ভাঙ্গার আগেই সবার প্রসব বেদনা শুরু হয় । কিন্তু অনেকে পানি ভাঙ্গার কিছুক্ষণ পরই প্রসব বেদনা উঠে ।ব্যথা না উঠলেও ডাক্তার কৃত্রিম ভাবে ব্যথা তুলে দেয়। যেন থলেটার সুরক্ষা ছাড়াই পেটের বাচ্চাটা নিরাপদ থাকে । কোন রকম জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত না হয় ।
ডাক্তারদের কৃত্রিম ভাবে ব্যথা তুলে দেওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় Induced Labour বলে । আমার পানি ভেঙ্গে গেলে ও অনেক সময় পর্যন্ত ব্যথা উঠছিল না । আর ডাক্তারেরা ও আমার Induced Labour তুলে দিতে তেমন কোন তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন না।
এমন অবস্থায় পেটের শিশুর জীবন অনেক অনিরাপদ হয়ে যায় । আমার মা খুব ভয় পাচ্ছিলেন । সবাই আমার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।
গর্ভবতী মায়দের তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের সময়ে অনেক ধরনের টেস্ট করাতে হয় । যেমন হৃদযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কিনা এবং শরীরের পেশি গুলো সবলতা কতোটুকু তা নির্ধারণের জন্য CTG Cardiotocography করাতে হয় । এগুলোর কিছুই করানো হয়নি । কোন রকমে অনেক খারাপ লাগলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতো । কোন টেস্ট করাতে দিলে আসাদ মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হতো !
যাইহোক সেসময় হঠাৎ অভিনন্দন এসে হাজির । আমার বাবার সাথে কথা বলে রক্তের ব্যবস্থা, আমার পেটের বাচ্চা সিজারিয়ান করে পৃথিবীতে স্বাগত জানানো সব কিছুই অভিনন্দের দায়িত্বে হয় ।
এক সময়ের এলাকার ছেলে । আমার একই কলেজের স্যারের ছেলে । আমার ও আসাদের পরিচিত ।আমার বাবা ও কেমন পরিস্থিতির চাপে উদারতা দেখালেন ।
মেয়ের এমন দুঃসময়ে কেউ এসেছে সাহায্যের হাত বাড়াতে তাকে কে বা এড়িয়ে যেতে পারে। বাবা ও অভিনন্দনের সাথে আন্তরিক হলেন।
পরে জানতে পেরেছিলাম সে সময় ও দ্বিতীয় বারের মতো অভিনন্দন আমাকে রক্ত দেয় । আমার দ্বিতীয় জীবন ! বুকের শিশু সহ নতুন করে পৃথিবী দেখি ।
প্রায় সাড়ে তিন কেজি হলে একটা বাচ্চাকে সুস্থ বলা হয় । নুশমা আড়াই কেজি ওজন নিয়ে কোলে এল । ফুটফুটে শিশু কন্যা আমার পুরো অন্ধকার দুনিয়ায় এক টুকরো আলো !আমার নতুন করে বেঁচে থাকা৷
তিন দিন পর একজন অতিথির মতো আসাদ আমার নবাগত শিশু কন্যাকে দেখতে এল ।
তাঁর হাতে আমার জন্য যে কিছু থাকবে না আমি তা জানি । কিন্তু আমার নবাগত কন্যার জন্য যে কিছু থাকবে না আমি আজ ও বিশ্বাস করতে পারি না ।
অথচ আমাকে ওটি থেকে বের করার পর প্রথম মা বাবার সাথে অভিনন্দন কে ও দেখেছিলাম। আমি সাদা রজনীগন্ধা খুব পছন্দ করতাম । আমার জন্য এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা আনতে অভিনন্দন ভুল করেনি।
আমার বাচ্চার জন্য নতুন জামা , খেলনা আর প্রয়োজনীয় সব । এতো বছর পর মনে ও পড়ছে না । অনেক কিছুই ভুলে গেছি ।
সংসার আর সময়ের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে । শুধু একটা চিরকুট রয়ে গেছে । নুশমার একটা পুতুলের ভেতরে ছিল ।
"আমার গায়ের রক্ত আবার ও তোমার শরীরে
আমাদের ভালোবাসা রবে মরণের ও পরে ...।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:২০

অক্পটে বলেছেন: কন্যা সন্তানদের বাবারা খুবই ভালোসেন জানি। কিন্তু এখানে আসাদ ব্যাতিক্রম। অভিনন্দনকে অভিনন্দন! বুদ্ধিদীপ্ত এবং কেয়ারিং মেন।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হুম আসাদ এর বৈশিষ্ট্য একটু জটিল । কখন ও ভাল । কখন ও খারাপ । লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: বোন আমি পড়তে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলেছি। আগের পর্ব পরে পড়েদছি। পরেরটা আগে পড়েছি। আউলা লাগছে।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হা হা হা রাজিব ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.