নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্যাতিত সংখ্যালঘু বাউল সম্প্রদায়!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

আমার মতে বাউল সম্প্রদায় একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাই তারাও নিয়মিত শিকার হচ্ছে মৌলবাদী আক্রমণের। যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু? অনেক পার্থক্য সত্ত্বেও বাউলরাও তেমনই একটি সম্প্রদায়! এক্ষেত্রে মূল পার্থক্য হচ্ছে, বাউল সম্প্রদায় অনেক বেশি প্রগতিশীল। ধর্মীয় অনেক গোঁড়ামী এবং কুসংস্কার থেকেও তারা মুক্ত বা নিজেদের মুক্ত করতে তারা সর্বদা সচেষ্ট। অনেকে জন্মগতভাবে মুসলমান হলেও বাউল বলে তাদের ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে গণ্য করা হয় না। আরো বড় কারণ সামনে নিয়ে আসা হয়। বলা হয়, বাউলদের গান-বাজনা,নৃত্য, পোশাক-আশাক, নারী-পুরষ সমন্বয়ে অবস্থান বা গঞ্জিকা সেবন কোনটাই ইসলামী জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।তবে মাইজভান্ডারীদের নিয়ে ইসলামে বেশ বিতর্ক আছে। সুফিবাদের সাথে ভান্ডারীর মতবাদের অনেক সামঞ্জস্য থাকায় এই বিতর্কের সৃষ্টি। বাউলদের মতো ভান্ডারীর মুরিদরাও লম্বা চুল রেখে গান-বাজনা ও গঞ্জিকায় মত্ত্ব থাকে। কিন্তু বাউলদের সাথে ভান্ডারীর মতবাদেরও পার্থক্য ওই একই যায়গায়। বাউলরা প্রগতিশীল, কুসংস্কার মুক্ত, আর ভান্ডারীদের সহবাস ওই কুসংস্কার ও মৌলবাদের সাথেই।তাই কেউ কেউ ভান্ডারীর মতবাদকে সহি ইসলামী মতবাদ হিসাবে মনে না করলেও তাদেরকে বাউলদের মতো আলাদা সম্প্রদায়ে ঠেলে ফেলে দেয়া যায়নি। আর সেই একই কারণে ভান্ডারীরা সহিংস হামলা থেকে মুক্ত।

হিন্দু ধর্মেও বাউলদেরকে যথাযথ ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসাবে গণ্য করা হয় না। জন্মগতভাবে হিন্দু বাউলদের আস্তানা যেমন ভিন্ন ধরণের মঠ,মন্দির বা আশ্রমে হয়ে থাকে, তেমনি বাউলদের ধর্মচর্চা এবং সনাতন ধর্মীয় রীতির মধ্যেও অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বাউলদেরকে বরং দেহতাত্ত্বিক ভাববাদী বা ধর্মীয় গানের দল হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। বাস্তবে লালন না মুসলমানের, না হিন্দুর। তাইতো বিমানবন্দরের প্রবেশপথের লালন ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছিলো মুসলমান মৌলবাদীরা। সরকারও তার প্রতিবাদ করেনি। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সন্তুষ্ট করতে সেখানে এখন আল্লা লেখা ভাস্কর্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করেই একজন বিদেশী মানুষ যাতে সহজেই বুঝতে পারে বাংলাদেশ একটি মৌলবাদী মুসলমানের দেশ। এটা জারি-সারি-বাউল-ভাটিয়ালীর দেশ কক্ষোনই নয়!

বাংলাদেশে বাউলদের উপর যে নিয়মিত হামলা হচ্ছে এর মূল কারণটা বোধ হয় এখানেই। বাউলরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সংখ্যার হিসাবে হয়তো সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়। দেশে এখনও বাউলদের সংখ্যা হাতে গোনা। উদার, মানবিক, ভাবুক অথচ প্রগতিশীল এই সম্প্রদায়ের উপর সরকারী বাহিনীর বর্বোরোচিত হামলাও আমরা দেখেছি। ছেউড়িয়ার বাৎসরিক লালন আখড়া পন্ড করতে সেদিন কাঠমোল্লাদের সাথে যোগ দিয়েছিলো সরকারী পুলিশও। আমরা দেখেছি রাজবাড়ির র্বরোচিত বাউল নির্যাতন। এবার যশোরে হত্যা করা হলো বাউলকে!

প্রশ্ন হচ্ছে বাউলদের উপর মৌলবাদী বর্বরোচিত এই হামলা কি বন্ধ করা সম্ভব? সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জঙ্গিবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠদের পাশবিক হামলা কি বন্ধ হবে কখনও?? উত্তর একটাই! হ্যা! কিন্তু এখনও অনেক পথ যেতে হবে! যেদিন বাংলাদেশ একটা মানুষের দেশে পরিণত হবে! সত্যিকারের মানবিক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে পরিণত হবে, সেদিন সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা তো দুরের কথা, হামলার কথা কেউ কল্পনাও করবে না!

মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, হিন্দুর সংখ্যাও বাড়ছে, যদিও দেশত্যাগের কারণে সেই সংখ্যাটা হিসাবের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। মুসলমানের মতো না হলেও বেশ দ্রুতহারেই বাড়ছে বৌদ্ধ এবং খৃষ্ঠানের সংখ্যাও। কিন্তু মানুষের সংখ্যাটা তেমন বাড়ছে না। যাও বাড়ছে, তার বেশিরভাগ কেবল থেকে যাচ্ছে গোপনে, চুপিচুপি। ‘আমি মানুষ’- এই পরিচয়টা সামনে নিয়ে আসার শক্তি বা সাহসও নেই বেশিরভাগ মানুষের।কিন্তু আশার কথা, ধীরে হলেও মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

সত্যিকারে যেদিন দেশে মানুষের সংখ্যাটা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে? ‍মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যেদিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হবে? নিশ্চয়ই হবে একদিন! সেদিন মানুষেরা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নয় ‘মানুষ’ হিসাবে পরিচয় দেয়ার সাহস পাবে। সেদিন ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা করতেও কেউ আর সাহস পাবে না। মানুষের মতোই বাঁচতে পারবে মানুষ এমনকি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ধর্মগাধারাও!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩

মোঃ সাবিকুল ইসলাম (হৃদয়) বলেছেন: এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিই এবং দুষীদের শাস্তি কামনা করি ।মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে সকল সজাগ থাকতে হবে

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩

শাহ আজিজ বলেছেন: বাউলদের সন্মন্ধে খুব ভালো তথ্য পেয়ে ছিলাম গানের ইতিহাস শুনতে গিয়ে । সুফিবাদের প্রভাবে বিতাড়িত বৌদ্ধরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল । পরবর্তীতে এদেরই একটি দল সুফিবাদের মুক্ত আচরনে মুগ্ধ হয়ে ভিন্ন পথ বেছে নিল । এরাই বাউল । যাহোক েই ইতিহাস বেশ লম্বা ,েই লিঙ্ক দেখে নেবেন http://en.wikipedia.org/wiki/Baul পরবর্তীতে আমি ঢাবির অধ্যাপকের কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে পোস্ট দেবো । সাম্প্রতিক সময়ে যুবা, বৃদ্ধ অনেকেই দেহতত্ত্ব ও লালন দর্শনের দিকে অস্বাভাবিক ভাবে ঝুকে পড়ার কারনে গোঁড়া সুন্নিরা আতঙ্কিত । কোন নবী ও নবুওত ছাড়াই এই মত সম্প্রসারিত হওয়ায় তারা আরবিও অর্থে এর বিনাশ চাইছে । তাই অহরহ আক্রমন । লাভ নেই কারন আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আমরাও হাতে তুলে নিতে পারি প্রতিরোধের হাতিয়ার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.