নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিবির-হেফাজতের দিন শেষঃ ISIS-এর বাংলাদেশ

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

আইসা পড়ছে!

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর, অমানবিক, দুর্ধর্ষ, নরপশুদের সন্ত্রাসী বাহিনী, আইএসআইএস বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তা দিয়ে তারা বাংলাদেশে তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে।



আইএসআইএস এতো বেশি উগ্র একটা সংগঠন যারা সামান্যতম কোন বিরুদ্ধ মতকেও সহ্য করতে পারে না। শত্রু বা মিত্র যেই হোক না কেন আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে টু শব্দটি করলেই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধে। আইএসআইএসের মতবাদই তাদের মূল ধর্ম। তাদের মতবাদের বাইরে সবাই কাফের, মুশরিক। আর কাফের-মুশরিকদের হত্যা করা তো ইসলামে জায়েজ! শিয়া মুসলমানরা আইএসআইএস-এর কাছে মোটেও মুসলমান নয়। কুর্দীরা তো নয়ই! তবে ঘটনা হচ্ছে, ইয়াজিদি ও খৃষ্টান ধর্মের মানুষ তাদের কাছে বেঁচে থাকার কিছুটা সময় পাচ্ছে। আইএসআইএস ইয়াজিদি এবং খৃষ্টানদের শর্ত দিয়েছে-

(১) ইসলাম গ্রহণ করতে হবে! ইসলাম গ্রহণ অর্থ হচ্ছে, অন্য কোন ইসলাম হলে হবে না! ‘আইএসআইএস ইসলাম’ গ্রহণ করতে হবে। আবু বকর আল বাগদাদীর সাগরেদ হতে হবে।

(২)‘আইএসআইএস ইসলাম’ গ্রহণ না করলে বেঁধে দেয়া সময়ের পূর্বে এলাকা ছাড়তে হবে।

(৩) উপরের দুইটি শর্ত না মানলে নির্বিচারে এবং স্বপরিবারে হত্যা করা হবে।

শর্তপূরণের জন্য সাধারণত তিন দিন সময় দেয়া হয়েছে ইয়াজিদি ও খৃষ্টানদেরকে।যেহেতু ইরাক এবং সিরিয়ায় বৌদ্ধ, হিন্দু বা অন্য ধর্মের লোকের সংখ্যা খুবই কম, তাই তাদের অবস্থা তেমন জানা যাচ্ছে না।

আশংকার বিষয় হচ্ছে, অন্য ধর্মের লোকদের খুনের শিকার হতে তিন দিন সময় দিলেও, মুসলমানদেরকে মোটেও সময় দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে শিয়া এবং কুর্দি মুসলমানদের পাওয়ার সাথে সাথেই বিনা শর্তে কচুকাটা করা হচ্ছে। সুন্নি পুরুষদেরও আবু বকর আল বাগদাদীর নীতি গ্রহণ করে যুদ্ধে যোগ দিতে নির্দেশ হচ্ছে।সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করলেই নির্বিচারে কোতল করা হচ্ছে।



আইএসআইএস এ পর্যন্ত সিরিয়া এবং ইরাকে যতগুলো মসজিদ ধ্বংস করেছে, ইহুদিরা কেনো? পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এত অল্প সময়ে এত মসজিদ কোথাও ধ্বংস হয়েছে বলে জানা যায় না। আইএসআইএস-এর দখলকৃত এলাকায় নবী ইউনুস মসজিদসহ শিয়া এবং কুর্দিদের বেশিরভাগ মসজিদ-মাজার বোমা মেরে, কামান দেগে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সৌদি আরবের শাসকদেরও আইএসআইএস মোটেও মুসলমান মনে করে না। তারা সৌদি বাদশাকে মনে করে ইহুদিদের সাগরেদ। আর কাবাকে মনে করে সৌদি বাদশার ব্যবসা ক্ষেত্র। তাই তো আইএসআইএস কাবা শরীফ ধ্বংসেরও হুমকি দিয়ে রেখেছে।



আইএসআইএস মসজিদ ধ্বংস করলেও, তেল শোধনাগার বা তেলের খনি এলাকা কিন্তু ধ্বংস করছে না। বরং সেগুলোকে রক্ষা করে তেলের ব্যবসাটা নিজেদের করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ভালভাবেই বোঝে, মসজিদের চেয়ে তেলের খনি অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।আইএসআইএস-এর অস্ত্রভান্ডারও যথেষ্ট সমৃদ্ধ।শোনা যায় শিরিয়ার আসাদ সরকার সিরিয়া থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরাতে আইএসআইএস-এর উপর একদিকে হামলা থেকে বিরত থেকেছে এবং অন্যদিকে গোপনে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে ইরাকের দিকে চালিত করেছে। তবে প্রাথমিক অস্ত্রভান্ডার তারা পেয়েছিলো আফগানিস্তানের আল-কায়দার কাছ থেকে বলেই জানা যায়। আর সম্প্রতি তারা ইরাকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর মুসল ও তিকরিতসহ বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে। আইএসআইএস-এর দখলকৃত এলাকাসমুহ মূলত সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ট। সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকেই সুন্নী মুসলমানদের উপর চলতে থাকে নানান অত্যাচার ও নির্যাতন। তাই সাদ্দাম জামানার বেঁচে থাকা সৈন্যরা আইএসআইএস-এর জন্যই প্রস্তুত হয়ে ছিলো। হাজার হাজার প্রাক্তন সৈন্য তাদের গোপন অস্ত্রভান্ডার সহ যোগ দিয়েছে আইএসআইএস-এ। যোগ হওয়া বিশাল এই শক্তি নিয়ে তাই আইএসআইএস দখল করে নেয় বিশাল এলাকা। আর এলাকা দখলের সাথে সাথে তারা দখল করেছে আমেরিকান সেনাবাহিনীর রেখে যাওয়া ট্যাঙ্ক সহ অসংখ্য অত্যাধুনিক অস্ত্র। আইএসআইএস আসছে শুনেই আমেরিকান অস্ত্রধারী ইরাকি সেনাবাহিনী যুদ্ধ না করেই অস্ত্র ফেলে পালিয়েছে। তাই সামরিক শক্তিতে আইএসআইএস ইতিপূর্বের যে কোন জঙ্গীগোষ্ঠীকে ছাড়িয়ে গেছে বহুগুণে। সাদ্দামের প্রশিক্ষিত অসংখ্য সামরিক অফিসার আর আমেরিকার অত্যাধুনিক অস্ত্র, সব মিলিয়ে সামরিক শক্তিমত্তায় আইএসআইএস তালেবান বা আল-কায়দারও অনেক উপরে। আর অর্থনৈতিক দিক দিয়েও তারা এখন অনেক শক্তিশালী। শোনা যাচ্ছে আইএসআইএস ইতিমধ্যে তেল বিক্রি এবং লুটপাটের মাধ্যমে ৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গড়ে তুলেছে।



আইএসআইএস-এর প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী গোটা মুসিলিম বিশ্বে তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। ইরাক ও সিরিয়ার দখলী অংশকে ইতিমধ্যেই ইসলামিক স্টেট হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। খেলাফত বিস্তার করছেন বলেও দাবি করছেন তিনি। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। মহানবী (সঃ) এর পর তার অনুসারীরা ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে একেকজন খলিফার নেতৃত্বে দল গঠন করেন। এই ইসলামের প্রচার নিয়ে খলিফারা ভারতবর্ষেও আসেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১০০ বছর আগেই। তাই সুন্নি মুসলমানরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করেন না, খেলাফত আবার ফিরে আসতে পারে। বরং তারা মনে করেন আইএসআইএস ইসলামের মূল ও বৈধ ধারার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সাদ্দামের প্রাক্তন সেনারা অন্য কোন উপায় না পেয়েই আইএসআইএস-এ যোগ দিয়েছে। আইএসআইএস আজ যে খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তা একসময় বিন লাদেনেরও স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু বিন লাদেনের সামর্থ ছিলো অনেক কম।



বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইএসআইএস হতে পারে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। গোড়া মৌলবাদী বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী মনে মনে বেশ আত্মতৃপ্তি লাভ করছে এই ভেবে যে, আইএসআইএস তো আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে ভালই খেলা দেখাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণও আইএসআইএস-এর গুণকীর্তন করতে ব্যস্ত। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আইএসআইএস কিন্তু মোটেও জেএমবি নয়? মোটেও হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরির নয়। হেফাজত বা শিবিরের সাথেও এদের জঙ্গিবাদের তুলনা করা কঠিন! আইএসআইএস এতটাই উগ্র ও গোঁড়া যে অন্য কোন মথ-পথ কে তারা তোয়াক্কাই করে না। তাই আইএসআইএস বাংলাদেশে শক্তিশালী হলে অন্য কোন ইসলামিক সংগঠনেরও অস্তিত্ব তারা রাখবে না- এটাই বাস্তবতা। ইরাকের আইএসআইএস-এর নিয়ম-নীতি দেখে অন্তত এটুকু বলা যায় যে, বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য হলেও দু’এক দিন সময় পাবেন। কিন্তু হেফাজত-জামাত-চরমোনাই-দেওয়ানবাগী-আটরশি-মাইজভান্ডারী সহ নানান মতের-পথের ইসলামী গ্রুপগুলোকে পালানোর কোন সুযোগও দেয়ার নিয়ম আইএসআইএস-এর নেই। গান্ধীবাদী তাবলীগ জামাত যেখানে জামাত-শিবিরসহ অনেক ইসলামিক গ্রুপের কাছেই না-জায়েজ। সেখানে আইএসআইএস-এর কাছে তারা শিয়া মুসলমানদের মতো মুশরিক ঘোষিত হলেও কিছু করার থাকবে না।



বাংলাদেশের অনেক মুসলমান গর্বে একেবারে পেট মোটা করে ফেলেন আইএসআইএসকে নিয়ে। এর মূল কারণ বোধ হয় আইএসআইএস-এর বাংলাদেশী যোদ্ধা রাকিবসহ অন্যান্যরা। বৃটিশ-বাংলাদেশী রাকিবও বাংলাদেশের একটি মাদ্রাসায় মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে যান। আর তারপর যোগ দেন আইএসআইএস-এর সাথে। আইএসআইএস বহুদিন পর্যন্ত আল-কায়দার শাখা হিসাবে কাজ করলেও পরবর্তীতে নীতি বিরুদ্ধ কাজ করায় আল-কায়দা আইএসআইএস-এর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে মিডিয়ায় অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশী রাকিব এখন আইএসআইএস-এর একজন শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধা বলেই জানা যাচ্ছে। তাই সস্তা ধর্মীয় আবেগ- মুসলমানের ব্যাটা মুসলমান- বাংলাদেশী মুসলমান ইত্যাদিই এখনও বাংলাদেশের মুসলমানদের গর্বিত করে চলেছে।



আইএসআইএস-কে এখনই প্রতিরোধ করার সময়। একবার শক্তি সংগ্রহ করে ফেললে তাদেরকে প্রতিরোধ করাটা অসম্ভবও হয়ে যেতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আইএসআইএস-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভূক্ত করে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। যারা বাংলাদেশে আইএসআইএস-এর নামে কার্যক্রম শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে রেডএলার্ট জারি করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। সাথে সাথে আইএসআইএস, আল-কায়দা বা তালেবানের সাথে যোগসূত্র আছে বা জঙ্গী সরবরাহের উদ্দেশ্যে মগজধোলাইয়ে নিয়োজিত মাদ্রাসাগুলোকেও অতিদ্রুত আইনের নজরদারীতে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ইরাকের মতোই অনেক বড় মাসুল দিতে হবে আমাদেরও।



পাঠক লাল গোলদার

১০ আগষ্ট ২০১৪

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

অচেনা নীড় বলেছেন: গান্ধীবাদী তাবলীগ জামাত ।

daronata bul

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.