নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.

ইতিহাসের পাতিহাঁস

ইতিহাসের পাতিহাঁস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডেস্টিনি ডিসরাপ্টেড- মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব ইতিহাস (০০৮)

১৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪

হিজরত- শুন্য বছর
(৬২২ খৃস্টাব্দ)

খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষদিকে আরব উপকূল বরাবর কয়েকটি শহর ব্যাবসা-বানিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে সমৃদ্ধি লাভ করে। সেখানকার আরবরা লোহিত সাগরতীরবর্তী বন্দরগুলোতে মসলা, কাপড় এবং অন্যান্য বিবিধ আমদানীপণ্য নামাতো এবং উটের কাফেলায় সেগুলো নিয়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে নিয়ে বিক্রি করত। ব্যাবসা করতে তারা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম সবদিকেই যেত। তাই পশ্চিমের খৃস্টান বিশ্বের মতবাদ এবং পুবে পারস্যের জরথুষ্ট্রের মতবাদ দুটো সম্পর্কেই তাদের জানাশোনা ছিল। এখানে তখন আরবদের মাঝে কিছু ইহুদি গোত্রও বসবাস করত। রোমানরা এদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করার পর এরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। আরব এবং ইহুদিরা উভয়ই নৃতাত্ত্বিকভাবে সেমিটিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তারা উভয়েই নিজেদেরকে ইব্রাহীম (আঃ) [এবং সবার শুরুতে আদম (আঃ)-এর] বংশধর হিসাবে পরিচয় দিত। আরবরা নিজেদেরকে মনে করত ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাঈল ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরার বংশধর। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট এর অনেক কাহিনীই আরব ঐতিহ্যেরও অংশ ছিল, যেমন আদম-হাওয়া, হাবিল-কাবিল, নুহ ও তার নৌকা, মিশরের ইউসুফ, মূসা ও ফেরাউনের বৃত্তান্ত ইত্যাদি। যদিও ততদিনে অধিকাংশ আরবই বহু দেবতার পুজারি পৌত্তলিকে পরিনত হয়েছিল। অন্যদিকে ইহুদিরা শক্তভাবে একেশ্বরবাদিই রয়ে গিয়েছিল। এইটুকু বাদ দিলে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে সংস্কৃতি ও জীবনধারার দিক দিয়ে তেমন আর কোন পার্থক্য করা যেত না। ওই এলাকার ইহুদিরা আরবিতেই কথা বলত এবং তাদের গোত্র ভিত্তিক সমাজ কাঠামোও ছিল আরবদের মতই। আরবদের মধ্যে কিছু ছিল যাযাবর বেদুইন কিন্তু বাকিরা ছিল শহরের বাসিন্দা। মোহাম্মদ (সঃ), ইসলামের নবী, জন্মেছিলেন এবং বড় হয়েছিলেন লোহিত সাগরের কাছের এরকম একটি অত্যন্ত কসমোপলিটান শহর মক্কায়।

মক্কার লোকজন ছিল নানা ধরনের বণিক ও ব্যবসায়ী, কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসা ছিল ধর্ম। মক্কায় অন্তত একশটি পৌত্তলিক দেবতার উপাসনালয় ছিল, যাদের নাম ছিল- হুবাল, মানাত, আল-উজ্জা, ফাল ইত্যাদি। দূর দুরান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা এসে এসব জায়গায় ভিড় জমাত, পুজা করত আর রথ দেখা ও কলা বেচার মতো, একটু সাইড বিজনেস ও করে নিত। মক্কায় তাই ছিল এক সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প, ছিল সরাইখানা, পানশালা, দোকানপাট এবং পর্যটকদের সেবাপ্রদানকারী নানান ধরনের ব্যাবসা।

মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম আনুমানিক ৫৭০ খৃস্টীয় সনের দিকে। সঠিক তারিখ জানা যায় না, কারণ ওই সময় তাঁর দিকে গুরুত্ব দেয়ার কারো তেমন একটা কারণ ছিল না। তাঁর পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র মানুষ যিনি মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্মের আগেই মারা যান। মোহাম্মদ (সঃ) এর মা তখন প্রায় কপর্দকশূন্য হয়ে যান। তারপর মোহাম্মদ (সঃ) যখন ছয় বছরের, তাঁর মা ও মারা যান। যদিও মোহাম্মদ (সঃ) মক্কার সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী কুরাইশ-এর একজন সদস্য ছিলেন, তিনি এর থেকে কোন আলাদা স্ট্যাটাস অর্জন করেননি। কারণ তিনি ছিলেন কুরাইশদের মধ্যের দরিদ্র এক গোত্রের মানুষ, যাদের নাম ছিল বানু ("গোত্রের" বা "ঘর") হাশিম। আমাদের মনে হতে পারে যে এই ছেলেটি বেড়ে উঠার সময় একজন অনাথ হিসাবে তাঁর অনিশ্চিত অবস্থাটি বেশ গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। তিনি অবশ্য একেবারে পরিত্যক্ত ছিলেন না, তাঁর নিকটাত্মীয়রা তাঁকে কাছে রেখেছিলেন। প্রথমে তিনি তাঁর বৃদ্ধ পিতামহের সঙ্গে বসবাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি চাচা আবু তালিবের কাছে থাকেন। আবু তালিব তাঁকে নিজের পুত্রের মতো করে বড় করেছিলেন। কিন্তু সব কিছুর পর সেই সমাজে মোহাম্মদ (সঃ) কেউকেটা কেউ ছিলেন না। নিজের ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা সম্ভবত মোহাম্মদ (সঃ) কে জীবনভর বিধবা এবং অনাথদের আর্তির প্রতি বিশেষ যত্নবান করে তোলে।

মোহাম্মদ (সঃ) এর বয়স যখন পঁচিশ, খাদিজা (র) নামে এক ধনী বিধবা ব্যবসায়ী নিজের কাফেলা পরিচালনা এবং ব্যবসা দেখাশোনা করতে তাঁকে চাকরি দেন। আরব সমাজ নারীদের জন্য সহজ ছিল না। খাদিজা তাঁর স্বামীর সম্পদ উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছিলেন। ওই সমাজে খাদিজা যে এই সম্পত্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তা থেকে আমরা ধারনা পাই তিনি কিরকম শক্তিশালী এবং সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং স্নেহ মোহাম্মদ (সঃ) এবং খাদিজাকে বিবাহবন্ধনের দিকে নিয়ে যায়। এটি ছিল উষ্ণ একটি সম্পর্ক যা পঁচিশ বছর স্থায়ী হয়, খাদিজার মৃত্যু পর্যন্ত। তখনকার আরব ছিল এক বহুগামি সমাজ, একজন মাত্র স্ত্রী থাকাটা বেশ বিরলই ছিল। কিন্তু যতদিন খাদিজা (র) জীবিত ছিলেন ততদিন মোহাম্মদ (সঃ) অন্য বিবাহ করেননি।

পরিনত বয়সে এই অনাথ মানুষটি এরপর বেশ সফল এক ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক জীবন গড়ে তোলেন। তাঁর ডিপ্লোম্যাটিক গুনের বেশ সুখ্যাতি তৈরি হয়। ঝগড়াঝাটি হলে লোকজন মধ্যস্ততাকারী হিসাবে প্রায়ই তাঁর কাছে আসতো।.......

------------------------------------------------------
এই অধ্যায়ের বাকিটা আমি অনুবাদ করব না, চলে যাবো পরের অধ্যায়ে- মহানবীর মৃত্যুর পরের সময়ে, খুলাফায়ে রাশিদীনি এর যুগে। আমার কাছে মনে হয়েছে ডেস্টিনি ডিসরাপ্টেড বইটি মুসলিমদের ইতিহাসকে সংক্ষেপে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছে, বর্ণনাটাও অনেকটা ‘গল্পের বই’য়ের মত, সহজ। কিন্তু ইসলাম ধর্ম বোঝানো এই বইয়ের লক্ষ্যও না এবং লেখকের উদ্দেশ্যও সম্ভবত না। আমার মতে নবীজির জীবনী ইসলাম ধর্মকে বোঝার মৌলিক উপাদান। মুসলিমরা মহানবীর (সঃ) জীবন কাহিনী কিছুটা হলেও জানেন। আরও ভালো করে জানতে চাইলে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জেনে নিবেন। মুসলিম লেখকদের কাছ থেকে, যারা নিজের ধর্ম এবং নবীজীকে নিয়ে গর্ব করেছেন, মুসলিম সমাজ যাদেরকে ভালো/ নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসাবে মেনে নিয়েছে। স্বঘোষিত সেকুল্যার লেখকের লেখা আর নাম পরিচয়হীন ব্লগারের করা অনুবাদ থেকে নবীজীর (সঃ) জীবনীর মতো আপনার ধর্মের মৌলিক উপাদানটি গ্রহণ করবেন কেনো? আর পড়ার জন্য পড়তে চাইলে মূল বই পড়ে নিতে পারেন।
----------------------------------------------------
অধ্যায় সমাপ্ত///
শুরুর পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আগের পর্ব এখানে
পরের পর্ব এখানে

[তামিম আনসারী’র Destiny Disrupted: A History of the World Through Islamic Eyes বইয়ের অনুবাদ।
https://www.goodreads.com/book/show/6240926-destiny-disrupted
https://www.amazon.com এ প্রিভিউ এবং রিভিউ দেখতে।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.