নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্বের বিশালতা, স্রষ্টার উদারতা, মানবতার মহিমা ....., সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ।

প্লাবন২০০৩

জীবনের সবচেয়ে বড় সুবিধা জীবনকে কখনো চালাতে হয় না, এ চলতেই থাকে, চলতেই থাক...

প্লাবন২০০৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার ফুলগুলো কখনো ঝরে পড়েনা-১

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:২৫


কষ্টের পাথরটা কোথা থেকে এসে বুকের ওপর চেপে বসে
ব্যংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল এর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়ির কাটায় সকাল ৯:১২। এখানে আসার উদ্দেশ্য গত ১৫ই জুলাই এই হাসপাতালের ক্যান্সার ডিপার্টমেন্ট এর ডাঃ নারিন এর কাছ থেকে পাওয়া একটা ই-মেইল। বিষয়বস্তু মোটামুটি এরকম –

Dear Mr. Rakib,
Hope you are fine with all your beings. We hereby request you to meet us at 10:00 am on next 2nd Aug. There are critical issues regarding your wife’s Life Support System and which to be settled at an earliest.
Thank you in anticipation.

মেইলটা দেখার পর প্রথম কিছুক্ষণ মাথা কাজ করছিল না। বার বার মনে হচ্ছিল আমার স্ত্রীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের মেশিনে বোধহয় কোন রকম সমস্যা হয়েছে, আমাকে তাড়াতাড়ি ডেকে পাঠিয়েছে মেশিনটার ব্যপারে কোন জটিল সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাই। হয়ত মেশিনটা সারতে হবে, অথবা হয়ত মেশিনটা বদলে অন্য মেশিন লাগাতে হবে। কিন্তু এ জন্য আমাকে কেন? আমিতো কোন ইঞ্জিনিয়ার না!

আবার মেইলের শেষে আমাকে ধন্যবাদ কেন? ধন্যবাদ জানানোর তো কিছু হয় নাই। গত ৬ই মার্চ থেকে হাসপাতালের খরচও আমি দিতে পারছি না, ওটা এখন ওর ভাই বোনরাই দিচ্ছে। তাহলে কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন ভুল করছে? ওরা কি ভাবছে আমি এখনও আমার স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছি? নাহ্‌, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ওদের এই ভুলটাও ভাঙানো দরকার।

সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিল আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই। গত এক বছর ধরে আমার ব্যবসাপাতি সব বন্ধ। আর মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার অভাবে নতুন ব্যবসাটাও চালু করতে পারছিনা। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ আর বাকি নেই টাকা পয়সা ধার করা থেকে। মা মারা যাবার সময় ছোট বোনটার বিয়ের জন্য যে কিছু গয়নাগাটি রেখে গিয়েছিলেন তার থেকে শেষ চারটা বালা বিক্রী করা হয়ে গেছে গত জুন মাসেই। এই অবস্থায় ছোট বোন আর আমি সারাদিন চিন্তা করতে থাকি- কি করা যায়, কি করা যায়।

এমন সময় হঠাৎ করে ছোট বোনের মাথায় একটা অদ্ভুৎ আইডিয়া আসল- “প্লাবন ভাইয়া, ষ্টিলের আলমিরা দুইটা, কাঠের আলমিরাটা, সোফা সেট, একটা খাট, এই সব বিক্রী করে দে”।

“তাহলে কাপড় রাখব কোথায়? মানুষ আসলে বসবে কোথায়? আর খাট বিক্রী করলে শুবোইবা কোথায়, মাটিতে?” বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করি আমি।

“আরে সে সব দেখা যাবে, এগুলো ছাড়া কি মানুষ চলতে পারেনা? এটা কোন সমস্যাই না। আমি কালকেই কাষ্টমার দেখি। তোর যে করেই হোক যাওয়া দরকার। ওরা কি কারণে ডেকেছে আল্লাহ্‌ই জানে। হয়ত কোন সুসংবাদও থাকতে পারে।” “সুসংবাদ” শব্দটা শরীরে যেন নতুন প্রাণ নিয়ে আসে আমার। পরদিনই দুই ভাইবোন কাষ্টমার খুজতে লেগে যাই। ফলাফল- এক সপ্তাহেই সব বিক্রী! প্রাপ্তিও খুব একটা কম না, মোটামুটি উনপঞ্চাশ হাজার টাকা! খরচের জন্য যথেষ্ট।

২রা আগষ্ট সকালে হাসপাতালে ঢুকেই ইনফর্মেশন ডেস্কে ডাঃ নারিনের ই-মেইল কপিটা দেখালাম। বললাম, আমাকে উনি আসতে বলেছেন, কাইন্ডলি সকাল দশটার সময় উনাকে যাতে একটু মনে করিয়ে দেয়া হয়, আমি উনার ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করব।

হাতে এখনও মোটামুটি এক ঘন্টা সময় আছে। ওকে একপলক দেখার জন্য আই সি ইউর দিকে হাঁটা শুরু করলাম। গেটের সামনে পৌঁছে একবার ঘড়ির দিকে তাকাই, দেখি সকাল ৯:১২।

এবার তাকিয়ে থাকি আই সি ইউর দরজার হাতলের দিকে, দরজা খোলার আর সাহস হয়না আমার। আমি জানি দরজা খুললে কি হবে। ওকে দেখার সাথে সাথে কষ্টের পাথরটা কোথা থেকে এসে বুকের ওপর চেপে বসবে, এ শুধু একজন প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট না, এ কষ্ট বোঝানো যায় না।

হাতলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আমার স্ত্রীর নার্স বের হয়ে আসল। “তুমি এসেছো তাহলে? জানো, আমি জানতাম তুমি আজকে আসবেই। আমি ভোর থেকেই পনের মিনিট পর পর বের হয়ে দেখে যাচ্ছিলাম তুমি এসেছো কিনা।”

আমি বুঝে উঠতে পারিনা কি বলব। অনেক কষ্টে বললাম “নার্স, ওকে কি আজকে একটু দেখতে পারব? প্লিজ তুমি না বোল না, শুধু দূর থেকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখেই চলে যাব।”

নার্স কিছুক্ষণ চিন্তা করল, হয়ত কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। “দেখ, আমি তোমার কষ্টটা বুঝি। আমি এটাও বুঝি গত ছয় মাসের বেশী আমি তোমার স্ত্রীর সাথে আছি, ও তোমাকে কতখানি ভালোবাসত তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। সারাক্ষণ ও আমার সাথে তোমার বিষয় নিয়ে কথা বলত, এমনকি মাথার যন্ত্রণায় ও যখন চিৎকার করে উঠত তখনও ও তোমার নাম নিয়ে চিৎকার করত, আমরা যখন ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন পুশ করতাম তখনও ও তোমার নাম নিতে নিতেই ঘুমিয়ে পড়ত। তুমি হয়ত ওর কাছে শুধু স্বামী ছিলে না, তুমি হয়ত ওর গড’ই ছিলে। ও সারাক্ষণ চাইত তুমি ওর পাশে বসে থাক। কিন্তু তুমি পারতে না। আমরা জানতাম তুমি কেন সবসময় ওর পাশে থাকতে না। তোমার আর্থিক সমস্যার বিষয়টা আমরা সবাই বুঝতাম। নিজ দেশ ছেড়ে এত দূরে এত কঠিন রোগের চিকিৎসা করানো আসলেই খুব কষ্টসাধ্য ব্যপার। আমি একটা সময় সহ্য করতে না পেরে আমার হাজব্যান্ড এর সাথে তোমাদের বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেছিলাম। ও আর আমি খুশী মনেই প্ল্যান করেছিলাম তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে রাখব, এতে অন্তত তোমার হোটেল আর খাওয়া দাওয়ার খরচ বেঁচে যাবে, তুমি আরও কিছুদিন ওর সাথে থাকতে পারবে। কিন্তু এর আগেই তোমার স্ত্রী তোমাকে এখানে ঢুকতে দিতে নিষেধ করে দিল। জানো? ও যখন প্রথম বলেছিল তোমাকে যাতে এখানে আর ঢুকতে না দেয়া হয়, তখন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, এমনকি এ্যাডমিনিষ্ট্রেটরও তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের মুখোশ খুলে বলে ফেলেছিলেন যে, প্লিজ এরকম অমানবিক আচরণ করবেন না। তোমার স্ত্রী তখন বলেছিল তুমি আসলে নাকি তার মাথার যন্ত্রণাটা বেড়ে যায়। তোমার স্ত্রীর মুখে এ কথা শুনে ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম ও মিথ্যা কথা বলছে। ও আসলে ওর নিজের না, তোমার কষ্টটা সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু তুমিই বল, এরপর এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর আর কি করতে পারে? তাই তোমার এখানে ঢোকা নিষেধ হয়ে গেল। আমি আরও বুঝি গতবার যখন তোমাকে এখানে ঢুকতে দেয়া হোল না, তুমি দুইদিন চেষ্টা করার পর কি কষ্ট নিয়ে দেশে ফিরে গেলে। এই দুইদিন তুমি গেটের পাশে চুপচাপ বসে থাকতে আর তোমার স্ত্রী আমাদের কাছে বারবার খবর নিত তুমি কি করছ। তৃতীয় দিন যখন সারাদিন তোমাকে আর দেখলাম না, তখন তোমার স্ত্রীকে বললাম তুমি হয়ত দেশে ফিরে গেছ। এর পরদিন তোমার স্ত্রীও কোমায় চলে গেল। ও চাইছিল না তুমি আর কষ্ট পাও, সে জন্যেই হয়ত কোমায় চলে গেল। যাই হোক তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা কোর, আমি তোমাকে ওর কাছে যেতে দিতে পারব না।”

“কিন্তু নার্স, ও তো এখন লাইফ সাপোর্টে আছে! ও কি আসলেই জীবিত? আমি ওর কাছে গেলে ও কি বুঝতে পারবে? আর এত কাছে এসে ওকে না দেখতে পাওয়াটা কত কষ্টের তা কি তুমি বোঝ?”- আমি আর সহ্য করতে পারিনা।

এবার নার্সের চোখ ছল ছল করে উঠল। কি মনে করে হঠাৎ বলে উঠে- “ঠিক আছে যাও, শুধু তোমার জন্য আমি আমার চাকরীর রিস্ক নিচ্ছি। আর এছাড়াও আমি তোমার স্ত্রীর কাছে কমিটমেন্ট করেছিলাম তার অনুরোধ রক্ষা করব, এর জন্য হয়ত গড আমাকে মাফ করবে না। তারপরও, তুমি যাও। আরেকটা কথা, বেশী কাছে যাবে না আর ওর শরীরে টাচ্‌ করবে না। লাইফ সাপোর্টে থাকলেও অনেক সময় রোগী এসব অনুভব করতে পারে। তখন ওর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।”

আমি পা বাড়াই ভেতরের দিকে। ঐ যে ওর কেবিন দেখা যাচ্ছে, আরেকটু আগাই সামনের দিকে। ঐ তো দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ অনুভব করি আমার ভেতরের শুন্যতাগুলো যেন আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। ভালোবাসার শক্তি কত অসীম তা অনুভব করতে পারছি। এ শক্তি দিয়ে শুধু বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নয়, সৃষ্টিকর্তাকেও জয় করা যায়!

জীবনে হার মানতে হবেই, একবার হলেও হার মনতে হবে। অন্ততঃ তোমার মৃত্যুর সময় হলেও।
সকাল ১০:১৫ বাজে। ডাক্তারদের মিটিঙ রুমে বসে আছি। ডাঃ নারিনের চেম্বার থেকে আমাকে এখানে বসতে বলা হয়েছে। মিটিং রুমে ঢুকে আমার স্ত্রীর ভাই আর বড় বোনকেও দেখতে পেলাম। ওরা যে ব্যাংকক এসেছে বা এই মিটিঙয়ে থাকবে তা আমাকে জানায়নি। এমনিতেও ওদের সাথে আমার কখনোই কোন সম্পর্ক ছিলোনা, আর কোনদিন হবেওনা। ওদের আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি। তবে এখন আমি ওদের ওপর কৃতজ্ঞ, কারণ গত মার্চ মাস থেকে ওরাই আমার স্ত্রীর সব চিকিৎসা খরচ দিচ্ছে।

ওদের সাথে অস্বস্তি নিয়ে মিটিং রুমে বসে আছি। কোনটা আমার জন্য বেশী কষ্টকর বুঝতে পারছি না। আমার স্ত্রীর এই অবস্থা, না ওদের সাথে একই টেবিলে বসে থাকা, কোনটা? বেশিক্ষণ এই অস্বস্তিভাব নিয়ে থাকতে হোলনা, ডাঃ নারিন সাথে আরও তিনজন ডাক্তার নিয়ে ঢুকল মিটিং রুমে।

রাকিব, “কেমন আছ তুমি”? “ভালো”। আর কোন ভান ভনিতার মধ্য দিয়ে যায় না ডাক্তার। “রাকিব, তোমাকে খুব দুঃখিত হয়ে জানাচ্ছি যে, তোমার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ। ওর আর সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার কোন সুযোগই নেই। ওর যে অবস্থা, যেখানে টিউমারগুলো হয়েছে সেখানে অপারেশন করারও কোন সুযোগ নেই। এ শুধু আমাদের হাসপাতালে না, পৃথিবীর কোন হাসপাতালেই সম্ভব না। বিশ্বাস কর, বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকলেও আমরা চেষ্টার কোন কমতি করতাম না। আমরা আরও দুঃখিত আর বিস্মিত হয়ে জানাচ্ছি যে, তুমি তোমার স্ত্রীর যে ভাই আর বোনের সাথে বসে আছ, তারা গত ১৩ই জুলাই আমাদের অফিসে এসেছিল। তারা বলেছিল যে, তারা তোমার স্ত্রীর এই অসুখ হবার পর থেকেই তার সমস্ত খরচ দিয়ে যাচ্ছে। এ খরচের ভারে তারা আজ আর্থিক ভাবে পথে বসতে চলেছে। তুমি তার স্বামী হিসাবে তোমার স্ত্রীর প্রতি কোন দায়িত্বই পালন কর নাই। তাই তারা আর পনের দিনের মত তাদের বোনের এই খরচ চালাতে পারবে, এর মধ্যে যদি ওর অবস্থা ভালোর দিকে না যায় তাহলে যেন লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। আর আগামীকাল এই পনের দিন শেষ হতে চলেছে। এখন তুমি যদি তোমার স্ত্রীর লাইফ সাপোর্টের খরচ দিতে পার তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই, আমরা ওকে এভাবেই রাখব, হয়ত এর মধ্যে কোন মিরাকল্‌ ঘটতে পারে। তুমি হয়ত জানোনা, আমরা ডাক্তাররাও রোগীর একটা পর্যায়ে গিয়ে এই মিরাকল্‌ আশা করি, কোন কোন সময়ে যে মিরাকল্‌ ঘটে না, তা না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটে না। আমরা হতাশ হই। এখন তুমি যদি চাও তোমার স্ত্রী এভাবেই থাকুক তাহলে কালকের ভেতর তোমাকে আরও ২০,০০০ বাথ জমা করতে হবে, আর যদি তা না পার তাহলে আমাদের আর কিছু করার নেই তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা ছাড়া। তোমরা তার লাশ দেশে নিয়ে যাবার যে খরচ তা আমরা হাসপাতাল থেকে বহন করব, কিন্তু এর বেশী আর কিছু করতে পারব না, এখন তুমি ডিশিসন দাও। কারণ তার স্বামী হিসাবে তোমার লিখিত অনুমতি লাগবে”।

কথাগুলি আমি বুঝতে পারি না। খরচের জন্য ওর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হবে? এ কিভাবে সম্ভব? ডাক্তারকে বলব?-ডাক্তার সাহেব, আপনি যা শুনেছেন আপনি যা জানেন তা সত্যি না। ওর ভাই বোনরা কত বড় মিথ্যাবাদী আপনি জানেন না, ওদের কি পরিমান লোভ আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার স্ত্রী কি পরিমাণ পৈত্রিক সম্পত্তির মালিক আপনি জানেন? পৈত্রিক সম্পত্তিতে ওর ভাগে যতটুকু অংশ পড়ে তা শুধু ভাড়া দিলেই ওর আজীবন লাইফ সাপোর্টের খরচ উঠে চলে আসবে তা কি আপনি জানেন? আপনি জানেন না, ওর যেদিন এই অসুখ ধরা পড়ল সেদিনই ওর ভাই ওর উত্তরার গার্মেন্টস্‌ এর ভাড়া পাওয়া বন্ধ করিয়ে দিল? ওর চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে আমি আজকে মানুষজন থেকে পালিয়ে বেড়াই। টাকার অভাবে আমার ছোট বোনের বিয়ে মাসের পর মাস পেছাই। আর ওরা সব খরচ চালাচ্ছে? খরচ তো দিচ্ছে এই মার্চ মাস থেকে! আর এর আগের দুই বছরের খরচ কে দিল?

এসব কি বলা যায়? বলে তো শেষ করা যায় না। আমার কিডনি দুটা বেঁচে দিব? তাতে আর কত টাকাই পাওয়া যাবে? আর সেই টাকায় কত দিনই লাইফ সাপোর্ট চলবে? তারপরতো যা হবার তাই হবে। মাথায় কত ধরণের উত্তর আসতে থাকে।

আমি এসব কিছুই বলতে পারি না, এসব বলা যায় না। শুধু আস্তে আস্তে করে বলি, “ঠিক আছে কোথায় সাইন করতে হবে দিন, আমি সাইন করে দিচ্ছি”।

কাগজ পত্র এগিয়ে দিল ডাক্তার। একগাদা কাগজ। “এতগুলো কাগজ সাইন করতে হবে”? “না শুধু শেষের কাগজটা, উপরের কাগজ গুলো সব টার্মস, ওগুলো পড়ে দেখতে পার”-ডাক্তার বলে।

ওপরের কাগজগুলো পড়ার কোন প্রয়োজন অনুভব করি না। নীচের কাগজটা হাতে নেই। পরিস্কার বুঝতে পারি, আমি হেরে গেছি, হেরে গেছে আমার স্ত্রীও। কাগজটায় সাইন করি, দেখি আমার হাত কাঁপছে।

“ডাক্তার, আমার দুইটা অনুরোধ আছে। তুমি মানতে না চাইলেও বলব, কারণ আমি ভালো করেই জানি তোমার মানতে হবেই। প্রথমতঃ এই কলমটা আমি নিয়ে যাব। দ্বিতীয়তঃ আমি এখন আমার স্ত্রীর কাছে যাব। তুমি আই সি ইউ তে ফোন করে বলে দাও আমাকে যেন ঢুকতে দেয় আর একটা চেয়ার এনে দেয়। কারণ আমি সেখানে গিয়ে আমার স্ত্রীর বেডের পাশে বসব। ঠিক এখন থেকে কালকে ১২:০০ টা পর্যন্ত আমার স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকব। এ সময় পর্যন্ত আমি তার কাছ থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও নড়ব না। তোমার হাসপাতালের কি নিয়ম আছে না আছে তা আমি মানব না। যদি আমাকে মানাতে চাও তাহলে জেনে রাখ আমাকে শুধুমাত্র মেরে ফেলা ছাড়া কোনভাবেই তা সম্ভব না। আর এটা আমি করবই- বাই ডাক্তার”।

সারা জীবনের ভালোবাসা, এক দিনেই সম্ভব?
আচ্ছা, সারা জীবনের ভালোবাসা কি এক দিনেই সম্ভব? আমিতো বলব, সম্ভব। ২০১৫ইং সালের ২রা আগষ্ট দূপুর ১২টা থেকে ৩রা আগষ্ট দূপুর ১২টা পর্যন্ত আমি আমার স্ত্রীর হাত ধরেই বসে ছিলাম। এই এক দিন আমার কোন খাওয়া বা বাথরুমের প্রয়োজন হয়নি। ৩রা আগষ্ট দূপুর ১২:০০ টায় যখন ওরা লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে আসল, তখন আমি ওর হাত ছাড়লাম। ওর হাত তখনও গরম ছিল। আমার মনে হোল আমার মধ্যে আর কোন কষ্ট নেই। শুধু শেষবারের মত ও যেন আমাকে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি অনন্ত কাল তোমার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না”।

ফিরে আসা
ওর হাত ছেড়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসি। এর পর কিভাবে দেশে ফিরে আসলাম তা আমার কিছুই মনে নেই। শুধু মাঝখানের একটু কথা মনে আসে- আমি প্লেনে জানালার পাশে বসে আসি, স্টুয়ার্ডেস এসে জানতে চাইছে আমি কিছু খাব কিনা। যখন পুরোপুরি হুশ ফিরল তখন দেখি আমি ঢাকা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি। ইমিগ্রেশন চেক করে বাইরে বেরিয়ে দেখি কতগুলো সিএনজি, এর মধ্যে একটাকে বললাম-“ভাই, নারিন্দা যাবেন”?

পুনশ্চঃ
আমার স্ত্রীর ডাক নাম দিপালী। ওর সাথে আমার বিয়ে হয় ২০১০ইং সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। এর আড়াই বছর পর ওর ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। তাও একটা না, তিনটা। এর মধ্যে শেষেরটা ব্রেইনের ঠিক মাঝখানে। ওগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। রাতের পর রাত ও কষ্টে চিৎকার করে উঠত। তখন ডাক্তাররা কষ্ট কমানোর জন্য ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিত। আমি রাত জেগে বসে থাকতাম, ঘুমাতে পারতাম না। একা একা রাত জেগে থাকতে আমার কষ্ট হোত বলে আমি ওর পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করতাম। সকালে ও ঘুম থেকে উঠে বলত “এখনও কাজ করছ”?

এভাবে রাতের পর রাত কাটতে থাকে। এক সময় আমার আর কোন কাজ ভালো লাগেনা। আমি বিভিন্ন ব্লগ পড়তে থাকি, সবচাইতে ভালো লাগে সামহোয়্যারইন ব্লগ। হতাশার এ সময়টাতে ব্লগটি আমার সঙ্গী হয়ে থাকত। ও যখন সুস্থ থাকত, আমি ব্লগ থেকে নানা মজাদার পোষ্ট ওকে পড়ে শোনাতাম। ও হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়ত। মাঝে মাঝে ব্লগারদের দুই একটা কষ্টের কথা পড়ে শোনাতাম, দেখতাম ওর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে। এভাবে আমাদের সময়গুলো কোনমতে কেটে যাচ্ছিল।

একদিন ও আমাকে খুব সিরিয়াস ভঙ্গীতে বলল, “তোমাকে একটা অনুরোধ করব, তুমি রাখবে”? কথাটি শুনে আমি মোটেই আতংকিত হই না। ওর মত স্ত্রীর অনুরোধ রক্ষা করতে গেলে আতংকিত হওয়ার কিছু নাই। আপনারাই বলেন, যার এ পর্যন্ত আমার কাছে সবচাইতে বড় অনুরোধ ছিল- আমাকে দাঁড়ি রাখতে হবে, তাতে নাকি আমাকে হুজুর হুজুর লাগে আর এতে ওর খুব হাসি পায়। এমন মানুষের আর কি অনুরোধ থাকতে পারে? আমি হাসতে হাসতে বলি- “একশ বার রাখব, তুমি যদি সাত সমুদ্র তের নদী পারি দিতে বল তাও পারব, তুমি শুধু বল”।

“তুমি তাহলে ব্লগে লেখালিখি কর”। এ কথা শুনে রীতিমত ভিড়মি খাই আমি। এ কথা তো আমার সহজ সরল স্ত্রীর কথা হতে পারে না! নিশ্চয়ই এর মধ্যে অন্য কিছু আছে। “তা, এ অনুরোধ কেন পরী?” আমি জিজ্ঞাসা করি। ওর কোন কাজে বিস্মিত হলে ওকে আমি পরী বলে ডাকতাম।

“আমি চাই তুমি ব্লগার হও, খুব নামকরা ব্লগার। আমার এই কষ্টের সময় আমি যখন অন্য ব্লগারদের লেখা শুনে হাসি, যখন কাঁদি, তখন আমারো মনে হয় আহারে আজকে যদি আমার স্বামীর লেখা থাকত এখানে? আমার কাছে কত ভালো লাগত! আমার যে অসুখ তাতে তো আমি বেশিদিন বাঁচব না, আমি চাই আমার মতই আরেকজন তোমার লেখা পড়ে এভাবেই হাসুক, এভাবেই কাঁদুক। না না, কাঁদুক না, শুধু হাসুক এমন লেখা লিখ”।

-এই ছিল আমার ব্লগে আসার, লিখালিখি শুরু করার মূল কারণ।

ও এখন না ফেরার দেশে। এদিকে আমার আবার লেখা শুরু করতে হবে। সবচাইতে আগে যেটা শুরু করতে হবে সেটা হচ্ছে, আমার আর দিপালীর সব কথা লিখে ফেলতে হবে। আমাদের ছেলেটা যাতে বড় হয়ে সব জানতে পারে। ওর মা কেমন ছিল, আমাকে কতখানি ভালোবাসত, ওকে কতখানি ভালোবাসত, ভালোবাসা কেমন হয়, ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত। ও একদিন বড় হবে, বিয়ে করবে, হয়ত আমার লেখাগুলো পড়বে। আমি দোয়া করি বর্তমান ভালোবাসার কুৎসিত শিক্ষাগুলো থেকে যাতে ও মুক্ত থাকে। এ শুধুই আমাদের ভালোবাসার গল্প।


-চলবে

আরেকটা কথা, যেটা না বলা অন্যায় হবে। আমি হয়ত এ ধারাবাহিক গল্পটা শুরু করতে পারতাম না, যদি না সামহোয়্যারইন ব্লগের “বোকা মানুষ বলতে চায়” এর সাথে পরিচয় না ঘটত। উনার দুটি লেখা- মিরা'র মিরাকল (একটি অনুগল্প এবং বাস্তবের মিরার জন্য দোয়া প্রার্থনা) লিঙ্ক- view this link এবং মিরা'দের জীবনে মিরাকল ঘটেনা, লিঙ্ক- view this link আমার এই লেখাটা শুরু করার মূল উৎসাহয়ক। এ ছাড়াও আমার কষ্টের সময়গুলোতে উনার এবং অন্যান্য ব্লগারদের সহমর্মিতার জন্য আমি সারাজীবনের কৃতজ্ঞ।

মন্তব্য ৭২ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৭২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২৬

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: কি মন্তব্য করবো? আপনার এই লেখাটা পড়তে পড়তে হাউমাউ করে কেদেছি। এখনো কান্না থামাতে পারছিনা। ভাইয়া, সারাজীবন আপনারা থাকতে পারলেননা তবে এই ভালোবাসাটা কিন্তু হারাবেনা। অন্য কোন জগতে নিশ্চয়ই আপনারা আবার হাত ধরে বসে থাকবেন হাসিমুখে, আমি জানি

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৩১

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: দোয়া করবেন যাতে তাই হয়। ছেলেটা যাতে তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলানোর মত বড় হয়ে যেতে পারে। শেষ সময়ে ও বলেছিল আমার জন্য অপেক্ষা করবে।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেক কস্টের কথা; অনেক কস্টের, যার কোন সীমা নেই

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২১

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ভাই, উত্তর দিতে দেরী হোল। বারবার করে আপনাদের কমেন্ট গুলো দেখি, কি উত্তর দিব বুঝে উঠতে পারি না।

দোয়া করবেন ভাই। ও আমাকে তিনটা কাজ দিয়ে গেছে, জানি ওগুলো শেষ করতে করতেই আমারও সময় চলে আসবে। কাজগুলো যাতে শুরু করতে পারি।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫৭

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: অনেক কস্ট অনেক কস্ট অনেক কস্ট অনেক কস্ট :( :(( :( :((

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: কষ্ট তো না ভাই, এ যেন শুন্যতা। এক অসীম শুন্যতা।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬

রিকি বলেছেন: কিছু কিছু সম্পর্ক সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেলেও, তাদেরকে নিজেদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। হয়ত পার্থিব জগত থেকে সে চলে গেছে, কিন্তু আপনার মধ্যে এবং আপনার মাধ্যমে সে আরও কিছু বছর বেঁচে থাকতে পারবে। তাকে বাঁচিয়ে রাখুন অন্যভাবে, তাকে ঘিরেই বেঁচে থাকুন নতুন কোন পন্থায়। নতুন ভাবে জীবনটা গড়ে তুলুন আপনার সন্তানটিকে নিয়ে।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ভাই, আমি খুব সাধারণ মানুষ। অন্যান্য আর দশটা সাধারণ মানুষের মতই উথাল পাথাল ভালো বেসেছিলাম বউকে। বন্ধুরা, আত্মীয়স্বজনরা সবাই বলত বউকে এত ভালোবাসতে নাই, এতে নাকি ফলাফল ভালো হয়না।

আমি হেসে বলতাম "আমি অত অসাধারণ না, আমি বউ পাগল"।

বিশ্বাস করেন, আমি কোন অসাধারণ মানুষ হতে চাইনি। কিন্তু ওই আমাকে অসাধারণ বানিয়ে দিল। ওর স্মৃতি, সন্তান আর অার ওর কাছে করা ওয়াদাগুলোই এখন আমার সবকিছু।

দোয়া করবেন যাতে এই সব নিয়েই বাঁচতে পারি।

৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: মানুষের জীবন এত ছোট, তারপরেও এত বিশাল কষ্টের ভার কেন তাকে বইতে হয়? পরীদের বাস এই জগতে না। সে হয়তো বা তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, আর অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে। এইখানে না হলেও অন্য কোথাও, এই সময়ে না হলেও অন্য সময়ে আপনি আপনার পরীকে খুঁজে পাবেনই, এ আমার প্রার্থনা।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমি খুঁজে পাবই, কারণ খুঁজে বের করবই।

আমি বুঝে গিয়েছি ভালোবাসার ক্ষমতা ক্ষমতা অসীম, এতে সৃষ্টিকর্তাও হার মানতে বাধ্য হয়।

৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫০

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: আপনাকে সান্ত্বনা দেবার বা কোন সহানুভূতি জানাবার ভাষা আমার জানা নেই!!
আপনার কষ্ট আপনি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন!!
দোয়া রইল, বিধাতা আপনাকে সইবার ক্ষমতা দিন!!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪২

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: দোয়া করবেন আপু, হঠাৎ করে যেন সব শুণ্য হয়ে গেল। ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, সব কিছু যেন শুন্য হয়ে গেল।

এই শুন্যতা টাকে যেন শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারি। ধ্বংসের শক্তি না, সৃষ্টির শক্তি।

৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

ফ্লাইং সসার বলেছেন: কি লিখব বুঝতে পারছি না।
আপনি আকাশসম বড় লেখক হোন।
দিপালী ভাবির জন্য প্রার্থনা।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪৯

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ভাই, জানিনা কি হতে পারব বা কি করতে পারব।
তিনটা কাজ হাতে দিয়ে গেছে, ওগুলো করতে করতেই বাকী টুকু জীবন পার করতে পারব।

ওকে আমি খুব সহজ সরল আর বোকা মনে করতাম, এখন বুঝতে পারি ও কতটা বুদ্ধিমতী ছিল। ওর জন্য দোয়া করবেন ভাই, ওখানে ওর অপেক্ষার সময়গুলো যেন কষ্টকর না হয়।

৮| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: জীবনটা যেভাবে কল্পনা করা থাকে তার বিপরীতে গেলে কীরকম অনুভুতি হয় এটা ভাই কাউকে বলে বোঝানো যাবেনা। আমার নিজের কথাই বলি ভাই। মরেই গছি বলে দেয়ার পরেও আমার পরিবার, বন্ধু, কলিগ অনেকে মানতে চায়নাই। শেষ চেস্টা কিংবা সর্বোচ্চ চেস্টা করে। আমার সেইসব স্মৃতি কিছুই নাই, আমার দুরঘটোনার আধাঘন্টা আগের মেমোরী আছে, এর পরের কিছুই মনে নাই। জাস্ট জেগে ওঠার মেমোরী আছে। সিঙ্গাপুরের কোন এক হসপিটালে বেশ কয় মাস পর যখন কোমা থেকে জাগি, আর অপরিচিত যায়গা দেখে জিজ্ঞেস করি আমি এখানে কেন, তখন অল্প কিছু বলে। বলে যে আমি অসুস্থ্য, তাই সেখানে। আমি সময় জানতে চাই। অবাক হয়ে জানতে পারি বেশ কয়মাস চলে গেছে। আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা আসলো, আমার মা আর প্রিয় মানুষটা কি করতেছে? আমার জন্য নিশ্চয়ই টেনশন করতেছে? আমি পাগলের মত বলি আমাকে একটা ফোন দিতে। কিন্তু তখন আমার হাতের একটা আঙ্গুল নাড়ানোরও সামর্থ্য ছিলোনা। আমার মামাতো ভাই জেগে ওঠার খবর পেয়ে চলে আসলে আমি আম্মুর সাথে কথা বলি। এরপর আমার প্রিয় মানুষটাকে কল দেই। যার সাথে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে একেবারে রাত পর্যন্ত একটূ পর পর কথা হইতো, তাকে এতোদিন ফোন দেয়া হয়নাই, কিছু জানে কিনা জানা নাই ভেবে রাগ করলো নাকি, কিংবা কিরকম মানসিক অবস্থায় আছে ভেবে ভয় লাগছিলো। জেগে ওঠার পর ঘন্টাখানেক আমি ফোন ফোন বলে চিল্লাইছি। এরপর কি কথা বলছিলাম সেইভাবে মনে নাই। ঘোরের মধ্যে ছিলাম। মনে হয় বলছিলো আমি জানতাম তুমি জ্ঞান ফিরলে সেকেন্ড কলটা আমাকেই করবা কিংবা এমন কিছু। আমি আপনার মত এতো গভীর ভালোবাসতে পারছি নাকি জানিনা, কিন্তু এখন যখন এইসব ভাবি, তখন মনে হয় আমার এই আবেগে মনে হয় খাদ নাই।

ভাই, ভালোবাসার গল্পের, সাহসী গল্পের প্রতিযগিতা হয়। ওইসব বালছাল ভালোবাসার সাহসী গল্প না। সাহসী গল্প হইলো এইযে আপনি শেষ ১২ ঘন্টা ভাবীর হাত ধরে বসে ছিলেন ওইটা। এমন করতে সাহস লাগে। কতটা সাহস লাগে কেউ বুঝবেনা।

একটা জীবনের স্বপ্ন আপনারা একসাথে দেখছিলেন, ওই স্বপ্নটা কিন্তু মারা যায়নাই। যেই স্বপ্ন দুইজনের ছিলো ওইটা এখন আপনার একার বহন করতে হবে। ভাবী তো বলেই গেছেন যে আপনার জন্য অপেক্ষা করবেন। এই অপেক্ষায় শেষটা ভালো হবে। জেনে রাখেন, ভালোই হবে।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: শতদ্রু ভাই, কি বলব? সময়টা আসলে ১২ ঘণ্টা ছিল না, ২৪ ঘন্টা ছিল।
আপনি সহসের কথা বলছেন, ওটাতো সাহস ছিল না। ওটা শক্তি ছিল। এই ২৪ ঘন্টা আমার শক্তির কাছে সব কিছু পরাজিত ছিল। ডাক্তাররা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তাদের নিয়ম কানুন, আমার শারীরক চাহিদাগুলি, কোন কিছুই এক সেকেন্ডের জন্যও বিরক্ত করতে পারেনি আমাদের। আমরা দুজন শুধু হাত ধরে বসেছিলাম। ওটা সাহস ছিল না। ওটা ঐশ্বরিক শক্তি ছিল।

সৃষ্টিকর্তা কোন কিছু শুধু কেড়েই নেন না, সাথে সাথে প্রতিদানও দিয়ে দেন, আমরাই শুধু প্রতিদানটুকু আইডেন্টিফাই করতে পারি না।

৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮

এস কাজী বলেছেন: ভাই, ভাবি তো আমাদের হাঁসাতে বলেছিলেন। কিন্তু আপনি তো কাঁদিয়ে দিলেন। খুব খারাপ লাগলো ভাই :(

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৫

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমি তো কাঁদাতে চাইনি ভাই, সত্যিই কাঁদাতে চাইনি।

আমি কিন্তু লিখতে পারি না, আসলেই লিখতে পারি না। ওকে একবার বলেছিলাম কথাটা।

ও আমাকে বলেছিল, "তোমার মনের অনুভবগুলোকে ঠিক যেভাবে আসে, সেভাবেই ওগুলোকে একটার পর একটা সাজিয়ে তোমার কাগজে বসিয়ে যাও। আর কিছু চিন্তা করার দরকার নেই"।

ও অনেক ভালো লেখক ছিল। কোন প্রতিষ্ঠিত লেখিকা না। ও শুধু আমাকে চিঠি লিখত। প্রায় প্রতিদিন আমাকে চিঠি লিখত। আমি বাসায় ফিরলে আমাকে নাটকীয় ভঙ্গীতে চিঠিগুলো দিত। ও বুঝত কিভাবে লিখতে হয়।

আমি সেটাই করছি। কাঁদবেন না প্লিজ। আমি যতদিন বাঁচি এভাবেই লিখতে থাকব।

১০| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭

প্রামানিক বলেছেন: কষ্টের কাহিনী পড়ে নিজেও কষ্ট অনুভব করলাম। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু কষ্ট। কি দিয়ে যে সান্তনা দিব ভাষা খুঁজে পাইনা।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৭

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: সান্ত্বনা পেয়ে গেছি ভাই। আপনাদের মত মানুষদের পাশে পেয়েছি, এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা আর আছে?

১১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮

জামান শেখ বলেছেন: !!!!, আপনি শেষ পর্যন্ত কাদালেন!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমি তো কাঁদাতে চাইনি ভাই, সত্যিই কাঁদাতে চাইনি। আমি শুধু আমার মনের কথাগুলোকে শব্দাকারে বসিয়ে গেছি।

১২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

অপু তানভীর বলেছেন: আপনি তো মানুষ মোটেই ভাল না !
মোটেই না ! আপনার নানে মানুষকে কাঁদানোর জন্য কেইস করা উচিৎ !

আমি মানষিক ভাবে খুব শক্ত মনের মানুষ ! নিজের দুঃখ কষ্ট বাদে অন্য মানুষের দুঃখ কষ্ট আমাকে খুব একটা স্পর্শ করে না ! কোন লেখা দিয়ে তো নয়ই ! কিন্তু সত্যি কথা বলছি যখন এই মন্তব্য লিখছি তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । কেন পড়ছে আমি জানি মা! কেবল বুকের ভেতরে দিপালী আর রাকিবের জন্য কষ্ট হচ্ছে । এই কষ্টের উৎস কোথায়, আমার জানা নাই !

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৮

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: জীবনে হার মানতেই হয়, কেন মানতে হয় আমার জানা নেই।

১৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

সুমন কর বলেছেন: লেখাটি পড়ার সময় চোখ ঘোলা এবং গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। খুব কষ্ট পেলাম। আমি এমনিতেই একটু স্পর্শকাতর মানুষ। মা'কে হারিয়ে একদম একা হয়ে গেছি। কিছুই ভালো লাগেনা।

সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে যেটা বুঝায়, আপনার লেখার প্রতিটি শব্দে তার বহিঃপ্রকাশ। আপনাকে সান্ত্বনা দেবার কোন ভাষা আমার জানা নেই। আপনি শেষ পর্যন্ত ভাবীর হাত ধরে বসে ছিলেন, বেশ সাহস এবং কঠিন ব্যাপার।

ভাবী ভালো থাকুক, না ফেরার দেশ। উনার শেষ ইচ্ছা, আপনি ব্লগার হবেন। আমরাও এটা কামনা করি।

অনেক অনেক ভালো লাগা।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৪৮

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আপনার মায়ের কথা শুনে খুব কষ্ট লাগল।
গত বছর ঠিক এই মাসে (১০ই আগষ্ট) আমার মা ও মারা গেছেন। বাবা মারা গেছেন সেই ছোট বেলায়।

আমার আর দিপালীর বিয়েটা হোত না। আমার মা আর দিপালীর চাপে পড়েই বিয়েটা হয়েছিল। দিপালীর এই অসুখটার কথা জানার পর আমার মা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করত। আমি তখন ভীষণ খারাপ অবস্থায়, মায়ের কাছে আসতে চাইতাম না। আমাকে দেখলেই আমার দিকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলত "বাবারে আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম বাবা"। আমি কিছু বলতে পারতাম না, অভিমান কার ওপর করব?

আমি সব কিছুই বলব। এক এক করে সব কথাগুলোকে শব্দাকারে সাজিয়ে ফেলব আমার কাগজে।

১৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পুরো লেখা কাঁদতে কাঁদতে পড়লাম, এখনো কাঁদছি। কিছু আর বলার নেই :((

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫২

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ভাই আমার, কান্নার কিছুই নাই। আপনার এক এক ফোঁটা চোখের পানি আমার কষ্টগুলোকে শক্তিতে রুপান্তরিত করেছে। আপনার সহমর্মিতা এই জীবনে ভুলবার মত না।
আপনি সারাজীবন ভালো থাকুন, এই কামনাই করি।

১৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৮

আরুশা বলেছেন: দোয়া রইল, বিধাতা আপনাকে সহ্য করার ক্ষমতা দিন ।
ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন ।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: দোয়া করবেন। আমি যেন সহ্য করতে পারি।

আমার সহ্য করা খুব দরকার।

১৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১১

আমিনুর রহমান বলেছেন:



কি লিখবো আর কি সান্তনা দিবো ! তোমাদের ভালোবাসা বেচে থাকুক তোমার মধ্যে আর এই ব্লগে তোমার লিখার মধ্যে।
দীপালী ভাবী তোমাকে তোমার সঙ্গী দিয়ে গেছে । ভালো থাকুক দীপালী ভাবী।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমিনুর রহমান ভাই, দোয়া করবেন। আমি এখন আপনাদের কাছে দোয়াই চাই।

১৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০২

অর্বাচীন পথিক বলেছেন: দু-চোখে নোনাজলে ভিজে গেল আমার কাধঁ আর মাথার বালিশ। এত কিছুর পর ও কিভাবে আমরা এত কস্ট নিয়ে বেঁচে থাকি!!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমরা সবাই কষ্ট নিয়েই বেঁচে থাকি। কেউ প্রকাশ করতে পারে, কেউ পারে না।
কারোটা একের পর এক ঢেউয়ের মত এসে আছড়ে পরতে থাকে, কারোটা অপেক্ষমান আছড়ে পড়ার। আমরা সবাই এক একটা খেলার পুতুল, আমাদের জীবন টা নিয়ে কেউ একজন সারাক্ষণ খেলে যাচ্ছে, খেলেই যাচ্ছে।
এর পরও দোয়া করি, কারও জীবনে কষ্টের ঢেউ গুলো যেন দূরেই ভেঙে পড়ে। কাছে আর আসতে না পারে।

১৮| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: হৃদয়বিদারক । আপনার জন্য সমবেদনা আর শুভকামনা ।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই, দোয়া করবেন।

১৯| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:১৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না| ভাল থাকুন এটুকুই শুধু বলতে পারি

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: বলার কিছুই নেই ভাই, আমি শুনতে পেরেছি।
আপনিও ভালো থাকবেন।

২০| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনাকে সহ ব্লগার হিসেবে পেয়ে গর্বিত ।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু, আপনি ব্লগার হিসাবে আমাকে স্বীকৃতি দিয়ে যাবেন আশা করি।
আমার ব্লগার হওয়া খুব দরকার, ওটাতে অনেক শান্তি পাব।

২১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: পুরোটা পড়ে হতভম্বের মত বসে রইলাম।। প্রত্যাশীমন বরাবরই শুভ কামনা করে কিন্তু তারপরও কিন্তু থেকে যায়।। মনকে শক্ত করার চাইতে আর কিছু বলার নেই।। কাছাকাছি এমন দূর্যোগ আমিও ভুলতে পেরেছি কোন একটা অবলম্বন ধরে।।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৯

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমিও ভুলতে পারব নিশ্চয়ই, নয়তো এতক্ষণে কিছু একটা হয়ে যেত।
সবাই ভুলতে পারলে আমি পারব না কেন? আমিওতো মানুষ।

ধন্যবাদ ভাই, দোয়া করবেন। আমারও দোয়া রইল যাতে আরও অনেক অনেক বছর আপনি আমাদের সাথে থাকতে পারেন।

২২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৩

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: আপনাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু এটুকুই প্রার্থনা করি ভালো থাকুন।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: সান্ত্বনা পেয়ে গেছি ভাই, দোয়া করবেন।
অনেক ধন্যবাদ।

২৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: প্লাবন২০০৩ ,



“ এক শাহেন’শা নে দৌলত কা সাহারা লে ক্যর // হাম গরীবও কো মুহব্বতকা উড়ায়া হায় মজাক // মেরী মেহবুব কঁহী , কাঁহা ঔর মিলা কর মুঝসে ।”
তাজমহলের ঐশ্বর্য্যময় পাথরে পাথরে ভালোবাসার যে অশ্রুজল ফুঁটিয়ে গেছেন শাঁজাহান , নিজ প্রেমকে যেভাবে শাশ্বত করে রেখেছেন পৃথিবীময় তা দেখে এক প্রেমিকের উক্তি ।

আপনার ভালোবাসার এই উপাখ্যান পড়ে এই শেরটিই মনে হলো । আপনার এই অশ্রু উদ্রেককারী ঘটনার মর্মার্থের সাথে সম্ভবত কোথাও মিল আছে । অক্ষমতার ।

এতো এতো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মন্তব্যের ভীড়ে আমি শব্দহারা । তাই আশ্রয় নিলুম শেষের কবিতার -

সব-চেয়ে সত্য মোর , হে মৃত্যুঞ্জয়,
সে আমার প্রেম ।
তারে আমি রাখিয়া এলেম ........

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: সব-চেয়ে সত্য মোর , হে মৃত্যুঞ্জয়,
সে আমার প্রেম ।
তারে আমি রাখিয়া এলেম ........

রাখিয়া এলেম ভাই, সাথে করে আনতে পারলাম না। আমাকে আবার কাঁদালেন আমার অক্ষমতায়

২৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

এম এম করিম বলেছেন: সান্তনা জানানোর ভাষা নেই, কেবল জানবেন পাশে আছি।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: দোয়া করবেন ভাই, আমরা সবাই যাতে সবার পাশে তাকতে পারি, এমন করেই।

২৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

জুন বলেছেন: পোষ্টটি পড়ার পর ভীষন কষ্ট হলো প্লাবন ২০০৩।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: আমি কষ্ট ছড়িয়ে দিতে চাইনি আপু, আমনার কথাগুলোকে শব্দে করে ছেড়ে দিতে চেয়েছি শুধু।
ভালো থাকবেন।

২৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১১

নীল লোহীত বলেছেন: সারাটা লেখা জুড়ে আপনার কষ্টগুলো যেন স্পর্শ করতে পারছিলাম। আপনার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে এল। দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন যেন ভালো থাকুন। যুগ যুগ ধরে জিইয়ে থাকুক আপনাদের এই ভালোবাসা।

পরের পার্ট পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকলাম।

অনেক শুভকামনা ভাই।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১৮

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ @নীল লোহীত ভাই, দোয়া করবেন।
কষ্ট হচ্ছে, তারপরও সব কথা লিখে ফেলব তাড়াতাড়িই, কেন যেন মনে হচ্ছে হাতে সময় খুব কম।

২৭| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: লাইফ স্টোরিগুলো এরকমই হয়, এতে সিনেমার মত কোন মিরাকল থাকে না। থাকে একগাদা কষ্টের অনুভূতি।
ভালো থাকবেন সবসময়।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২১

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: হু, মিরাকল থাকে না।
দোয়া করবেন ভাই।

২৮| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩১

আমিনুর রহমান বলেছেন:


দোয়া সবসময়ই থাকবে। পাশেও থাকার প্রতিশ্রুতিও রইল...

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৩

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আমরা সব ব্লগাররা যাতে এরকমই এক জন আরেক জনের পাশে থাকতে পারি।

২৯| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০৯

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
আপনার লেখাটা পড়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। আপনাকে সহব্লগার হিসেবে পেয়ে গর্বিত।


ব্লগিংটা ছাড়বেন না।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: দোয়া করবেন ভাই, যাতে ব্লগিং টা চালিয়ে যেতে পারি।

৩০| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: খুব কষ্ট লাগল লেখাটা পরে ভাই। দোয়া রইল, ভাল থাকুন।

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৫

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা.... তারপরেও কয়েকটা প্রশ্ন জেগে আছে মনে অনুমতি দিলে করতে পারি

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: অবশ্যই ভাই, আপনি প্রশ্নগুলো করতে পারেন।

যদি খুব ব্যক্তিগত হয় তাহলে আমার মেইল আইডিতে পাঠিয়ে দিতে পারেন, এই ঠিকানায়ঃ
[email protected];

৩২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনিতো দারুন গল্প লিখতে পারেন!

রুদ্ধশ্বাসে পড়ে গেছি! কি অনবদ্য লেখনি! কি সাবলিলতা। কি আবেগ! কি গভীর প্রেম! জীবনের পারিবারিক রুঢ় বাস্তবতা!

গল্পের শেষেও এসে ভাবছি- যাত এমন গল্প লেখে কি করে!!!! দারুন! একেবারে যেন জীবন থেকে নেয়া!!!!

পাঠকের মন্তব্যগুলো পড়েও অবাক! কি ব্যপাার! সবাই গল্পটাকেই সত্যি ভাবছে নাকি!!!

সবগুলো পাগল!!! (লিখতে লিখতে হঠাৎ চোখ ঘোলা হয়ে এলো প্লাবনের জলে) কেন???

জানেন আমিনা এখনো বিশ্বাস করিনি!
মনে হচ্ছে গল্পটা খুব ভাল হয়েছে। হৃদয় ভেজানো! টাচি!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:০৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: এটা গল্প হিসাবেই থাক @ভৃগু ভাই। আমার বাস্তবতা এখন আপনারাই, আমার আত্মায় পরমাত্মীয়।

যে চলে গেছে, সে চলে যাক। আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে সেই আশাতেই আমি বাঁচি।

একদিন বাসায় আসেন, জম্পেশ আড্ডা হবে। আমি আর অন্য কিছু না পারি, আড্ডা জমাতে পারি বেশ। দ্যাওয়াত থাকল।

৩৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: @ লেখক
ভাইরে লেখক হয়েও আমার আবেগটা ধরতে পারলেন না!!!!

এত এত বেশী কষ্ট লাগছিল তাই সব ফু দিয়ে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছিলাম... অবিশ্বাসের তো প্রশ্নই আসে না!

এই লাইনটা মনে হয় গভীর ভাবে ভাবেননি

সবগুলো পাগল!!! (লিখতে লিখতে হঠাৎ চোখ ঘোলা হয়ে এলো প্লাবনের জলে) কেন???

দাওয়াতের জন্য ধন্য বোধ করছি। নিশ্চয়ই একদিন হাজির হয়ে যাব! আমার ভাইয়ের কষ্টের সমুদ্রের এক ফোটা নোনা জরো্ যদি শেয়ার করতে পারি - একজীবনে তাইবা কম কিসে!!!!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৬

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম তবে @ভৃগু ভাই।

৩৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৪

মানবী বলেছেন: তীব্র ভালোবাসা নিয়ে ৫ মাস সংসার করা ভালোবাসাহীন ৫০ বছর ঘর করার চেয়ে শ্রেয়তর, সেক্ষেত্রে আপনি ভাগ্যবান।
স্বজন হারানো তীব্র কষ্টের একটি পোস্টের মধ্যে অসাধারন সুন্দর একটি ব্যাপার চোখে পড়লো! আপনি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ভাইদের একজন। আপনার জন্য আপনার ছোট বোনের ভালোবাসা আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের মতো উদাহরন সচরাচর চোখে পড়েনা।

শেষ সময়ে সকলের সামনে চিকিৎসককে জানানো জরুরী ছিলো গত দুবছরের খরচ আপনার স্ত্রীর বোনরা নয় বরং আপনি বহন করেছিলেন। কোন দোষারোপ বা তর্কবিতর্কের জন্য নয় শুধুমাত্র সত্যকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য।

অনেক অনেক ভালো থাকুন।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৩৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন:
"তীব্র ভালোবাসা নিয়ে ৫ মাস সংসার করা ভালোবাসাহীন ৫০ বছর ঘর করার চেয়ে শ্রেয়তর, সেক্ষেত্রে আপনি ভাগ্যবান।"
-আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন।

আপনার শেষের কথাটায় বলতে চাই, আসলে ঐ সময়টায় আমার রুচি হয়নি তাদের সাথে কোন তর্ক বিতর্কে জড়াবার। আমি তখন একটা ব্যপার বুঝতে পারছিলাম 'আমি হেরে গেছি', অনেক অনেক বড় হেরে যাবার পেছনে ঐ ছোট হার নিয়ে তর্ক করার মানসিকতা টা আমার ছিল না। যারা এরকম কথা বলে জিততে চায়, তাদের জিততে দেয়া উচিত। ওদের কপালে এরকম জিতটাই থাকে, সত্যিকারের জিত থাকে না।

আর আমার ছোট বোনের কথা? আমরা তো ওরকমই।

ধন্যবাদ।

৩৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪৩

অন্তঃপুরবাসিনী বলেছেন: বারবার আপনার এই পোষ্টটাতে কমেন্ট করতে চেয়েছি। কি লিখবো খুজে পাইনি।সামুতে একাউন্ট খোলার আগেই এটি পড়েছি।
শুধু বলবো ভাবী অনেক ভাগ্যবতী। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
ভালো থাকুন সবসময় প্লাবন ভাইয়া।

০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ বোন।
আমি জানিনা ও ভাগ্যবতী ছিল কিনা, বা আমি দূর্ভাগা কিনা। শুধু জানি প্রতিটা মূহুর্তে আমরা কিছু না কিছু হারাই। জন্মের পর থেকে আমরা শুধু হারিয়েই যাই। কৈশর হারাই, যৌবন হারাই, বার্ধক্যে গিয়ে একসময় জীবনটাকেই হারিয়ে ফেলি।
সঙ্গীর দিক দিয়ে একসময় বাবা মাকে হারাই, প্রিয় মানুষটিকে হারাই, একসময় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের সন্তানদের হারিয়ে ফেলি।
সবচেয়ে বড় কথা, জীবনে প্রতিটা সেকেন্ডে আমরা আমাদের জীবন থেকে এক একটি সেকেন্ড হারিয়ে চলেছি।

এই সব হারানোর মাঝেও যদি জীবনে কখনও কোন কিছু পাওয়া যায়, তা সে অল্প কয়েকদিনের জন্যে হলেও। তা নিয়েই সুখী হবার চেস্টা করা উচিত।

৩৬| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭

বিজন রয় বলেছেন: চুপ থাকলাম।

০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০০

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.