নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"মস্তিষ্ক বিকৃত, কিন্তু বিক্রীত নয়\" (never care for what they say......)

পুরোনো পাপী

"তোমার মনের মইধ্যে আলেকের বাস, সে না কাউরে শোনে, না কাউরে বোঝে। তুমি যা বোঝাও সে তাই বোঝে।"

পুরোনো পাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

~ তবু কেন মন এত বাসনা ~

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯

ছোট কয়েকটা গল্প দিয়ে শুরু করি। প্রত্যেকটাই মহাভারতের অংশ বলে সেই সম্পর্কে বিশদ জ্ঞানের অধিকারী আমি নই। বেশ কিছু ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক।

//যে করে কালার চরণের আশা
জানোনারে মন তার কী দুর্দশা
ভক্তবলী রাজা ছিল, সর্বস্ব ধন নিল
বামুন রূপে বিধি করে ছলনা//



কালা বা কৃষ্ণের চরণ পাবার আশা করা ব্যাপারটা আসলে আমাদের প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে রাঁধা কৃষ্ণের প্রেমের কথা মনে হলেও যদি পরমাত্মা বা জীবাত্মার দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করি সেক্ষেত্রে সেই ব্যাপার অর্জন খুব বেশি সহজ নয় অবশ্যই বরং সেই পথ দূর্গমই, যেমন সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য পাওয়া। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে সকলকে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতেই হয়। এইখানে আরেকটা ছোট গল্প, আসলে ছোট করেই বলতে চাইছি, বিশদ কোন বর্ণনায় যাব না। ভক্তবলী রাজা একজন অত্যাচারী রাজা ছিলেন যার একটা বর ছিল তাকে মর্ত্যে হত্যা করা যাবে না। তার অত্যাচার হতে রক্ষার কারণেই বিধি বামুনের রূপ ধরে তার কাছে আসে এবং তাকে ছলচাতুরীর মাধ্যমে তার কাছ থেকে তার রাজ্যের তিনটা অংশ চায়। বামুন হলেন দশ অবতারের একজন। বামুনরূপী বিধাতা তার সর্বস্ব হরণ করার আগে পর্যন্ত রাজ্যের অত্যাচারিত সকলকে তেমনই ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়, সেই ধৈর্য্যের ফলশ্রুতিতেই রাজার পতন।




//প্রহ্লাদ চরিত্র দেখ দৈত্যধামে
কত কষ্ট হল তার সেই হরিনামে
তারে অগ্নিতে জ্বালালো জলেতে ডুবালো
তবু না ছাড়িল সে শ্রীনাম সাধনা//


এইখানে আরেকটা গল্পের সুন্দর উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রহ্লাদ, বিপুশিক্যের পুত্র কায়ুদ তার মা। তার চাচা হিরণ্যকশিপু রাক্ষসরাজ এবং হোলিকা তার ফুপু। সম্পর্ক গুলো স্বাভাবিক ভাষায় বলার কারণ যাতে সহজে বোধগম্য হয় সবার কাছে। প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর উপাসক থাকেন আর তার বাবা ব্রক্ষ্মার উপাসক। এতে তার পরিবারের সকলেই তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে হোলিকাকে নির্দেশ দেয় যাতে করে তাকে বিষ্ণুর উপাসনা মুক্ত করার জন্যে তাকে অগ্নি আর জলের সাহায্য নেয়া হয়। কিন্তু জলে ডোবানো কিংবা আগুনে পোড়ানোর কোনকিছুই তাকে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা থেকে মুক্ত করতে পারে নি। তিনি ঠিকই ধৈর্য্য ধারণ করেন সেই কষ্টের সময়টুকু এবং তার ফল তিনি পরবর্তিতে ঠিকই ভোগ করেন।



//কর্ণরাজা ভবে বড় দাতা ছিল
অতিথিরূপে তার সবংশ নাশিল
তবু কর্ণ অনুরাগী, না হইল দুখী
অতিথির মন করল সান্ত্বনা//


কর্ণ মহাভারতের মোটামুটি সকলেরই পরিচিত এক চরিত্র। কুন্তির পুত্র ছিলেন কর্ণ। কর্ণের জন্ম হয় কুন্তির অবিবাহিত অবস্থায়। মহাভারতের উল্লেখযোগ্য বীরপুরুষদের মধ্যে কর্ণ অন্য তম। তিনি জীবদ্দশায় দুইবার অভিশপ্ত হন। একবার পশুরামের কাছ থেকে আরেকবার এক বাক্ষ্মণের কাছ থেকে। দূর্বাশা নামক একজন ঋষি অতিথি রূপে কর্ণের রাজ্যে আসেন। দূর্বাশাকে আসলে কর্ণের বায়োলজিক্যাল বাবা বলে ধারণা করা হয়। তিনিই কর্ণ রাজা কে অভিশম্পাত করেন তার সেই অভিশাপে পঞ্চপান্ডবের এক পান্ডব অর্জুন কুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের ৯ পুত্রকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে অবশ্য কর্ণের অবশিষ্ট্য আরেক পুত্র ভৃষ্কেতু অর্জুনের শরণাপন্ন হয় যুদ্ধশেষে। সেই গল্পের দিকে আর নাহয় নাই গেলাম। আপাতত যা বলতে চাইছিলাম অতিথিরূপী ঋষির অভিশম্পাতের পরেও কর্ণ তার প্রতি বিন্দুমাত্র মনঃক্ষুণ্ণ হন নি, তিনি তার মানবীয় গুণাবলী ঠিকই জাহির করেন ধৈর্য্য ধারণ করে।

এইবার আসা যাক শেষ ও সবচাইতে মজার গল্পে।

//রামের ভক্ত লক্ষণ ছিল সর্বকালে
শক্তিশেল হানিল তার বক্ষস্হলে
তবু রামচন্দ্রের প্রতি, লক্ষণ না ভুলিল ভক্তি
লালন বলে কর এ বিবেচনা//

সীতা হরণের কাহিনী নিশ্চয়ই সকলের অল্প বিস্তর জানা আছে। ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র, রামায়নের অন্যতম প্রধান চরিত্র রাম বাবার ইচ্ছায় ১২ বছরের জন্য বনবাসে যান।সাথে ছিলেন পত্নী সীতা আর ভাই লক্ষন। বছর দশেক এদিক সেদিক ঘুরে এক বনে আসলেন, বনের নাম পন্চবটি। বনটি সীতার খুব পছন্দ হওয়াতে তারা আপাতত সেখানেই থাকতে সিদ্ধান্ত নিল। ভালই দিন কাটছলি তাদের। হঠাৎ ঘুরতে ঘুরতে সেখানে এলেন লংকা অধিপতি মহাবীর রাবনের বোন শুর্পনখা। জংগলের মধ্যে সুদর্শন রামকে দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমেই পড়ে গেলেন আর তাকে বিয়ে করতে বললেন। রাম তাকে বুঝিয়ে বললেন যে তিনি বিবাহিত আর তার দ্বিতীয় বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই নেই্। কিন্তু শুর্পনখা তাতে প্রবোধ মানলেননা। তখন রাম পাশে ভাই লক্ষনকে দেখিয়ে বললেন 'তাহলে তুমি তাকে বিয়ে কর'। কিন্তু লক্ষনও রাজি হলেননা। এতে শুর্পনখা রেগে মেগে সীতাকেই আক্রমন করলেন। তখন লক্ষন তার নাক কেটে তাকে লংকায় পাঠিয়ে দিলেন।শুর্পনখা তখন তার ভাই 'খর' আর ১২০০০ সৈন্য পাঠাল রামকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু দুই ভাই রাম আর লক্ষনের হাতে তারা সবাই নিহত হল। অবশেষে শুর্পনখা তার ভাই লংকার রাজা বিশ্রবা মুনির পুত্র রাবনের কাছে গিয়ে বলল সীতার অসাধারণ রুপের কথা আর বলল তাকে বিয়ে করার কথা। রাবন অসাধারণ বুদ্ধিমান আর অনেক বড় বীর ছিলেন। তিনি অবশ্য রাম লক্ষনের বীরত্ব সম্পর্কে ভালই জানতেন। তাই রণ কৌশল হিসেবে তিনি তার ভাই মারীচকে বললেন মায়া হরিণের ছদ্মবেশে গিয়ে রাম লক্ষনকে ভুলিয়ে দুরে নিয়ে যেতে, যাতে সীতাকে হরণ করা যায়। মারীচ পন্ডিত ছিলেন। তিনি রাবনকে সদুপেশই দিলেন আর বললেন এসব না করার জন্য, তাতে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, রাবন মারীচকে হরিনের বেশে পাঠিয়ে নিজে গেলেন ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে রামের এলাকায়।এদিকে মায়া হরিন বেশে মারীচকে দেখে সীতা বলল তার ঐ হরিন চাই। রাম গেলেন ঐ হরিন ধরতে আর ভাই লক্ষনকে রেখে গেলেন সীতার পাহারায়।

রাম হরিনকে তীর ছুড়লেন, হরিন বেশে মারীচ মারা যাবার আগে 'হা লক্ষন' বলে চিৎকার করল। ওদিকে সীতা এই শব্দ পেয়ে লক্ষনকে বলল রামের সাহায্যে যাবার জন্য। লক্ষন সীতাকে অরক্ষিত রেখে যেতে রাজি হলনা তবে সীতার বারবার অনুরোধের পর তার কুটিরের বাইরে একটা রেখা টেনে বলল এই 'লক্ষনরেখা'র বাইরে না যেতে। এই সুযোগে রাবন এসে সীতার ভিক্ষা চাইবার ছল করে সীতার কুটিরে আসে। সীতা লক্ষনরেখার বাইরে না আসতে চাইলে ভিক্ষুকরুপী রাবন রেগে যায়, তখন সীতা বাধ্য হয়ে লক্ষনরেখা পার হয়ে বাইরে এলেই রাবন তাকে নিয়ে লংকায় রওয়ানা দেয়।
এইটুকু ছিল সীতা হরণের কাহিনী। কিন্তু সীতা হৃত হবার পর রাম ফিরে এসে যখন সীতাকে না দেখেন তিনি ক্ষোভ প্রকাশের জন্যে নিজের ধনুক ছুড়ে মারেন তা কোন উদ্দেশ্যমূলক ছিল না কিন্তু সেই ধনুক লক্ষণের বুকেই লাগে। এখন আসে আসল ব্যাপারটিতে। সর্বকালেই লক্ষণ যেমন রামের ভক্ত ছিলেন তার উপরে অনিচ্ছাকৃত আঘাতের পরেও তিনি রামের সহচর্য্য ছাড়েন নি। ধৈর্য্য ধারণ করেন। এবং এতক্ষনে আশা করি বুঝতেই পারছেন এই কথা গুলো কি উদ্দেশ্যে বলা। লালনের একটা গানের চরণ এই সব গুলো গল্পের মূল।



গানের শুরুটা ছিল এইরকম

//একবার সবুরের দেশে
বয় দেখি মন কষে
উঠিস নারে ভেসে পেয়ে যন্ত্রণা
রবে না এ ধন জীবন যৌবন
তবে কেন এত বাসনা//

সবুর অর্থ ধৈর্য্য। সকলেই জানার কথা। সবুরের দেশ বলতে নিজের মন কেই বুঝানো হয় সাধারণত। মনেই ধৈর্য্যকে ধারণ করতে হয়, অন্যত্র সম্ভব নয়। যন্ত্রণা পেয়ে সেই সবুরের কথা অর্থাৎ ধৈর্য্য ভুলে ভেসে উঠে যদি সাধারণ মানুষের মতই আবার পৃথিবীর মোহে আচ্ছন্ন হয় তবে তার কোন অর্থ থাকে না সাধারণত। কারণ মানব জনম অল্প সময়ের। ধন সম্পদ, জীবন বা যৌবন সকল কিছুই ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী মায়ার মোহে ধৈর্য্যচ্যুতি কতটুকু ক্ষিতির কারণ হতে পারে তা ছোট ছোট গল্প গুলোর সাহায্যে লালন বিশ্লেষণের চেষ্টাই হয়তো করেছিলেন। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে তাই বুঝি।

মহাত্মা লালন সাঁই এর গানের কথার বিশ্লেষণ করার অপচেষ্টা মাত্র। আগেও বলেছি, আবারো বলি; লালন সাঁইয়ের গানের কথাগুলোর অর্থ তরজমা করার সামর্থ্য আমার নাই, চেষ্টা মাত্র। আমি যা বুঝি ততটুকুর চেষ্টা। মাঝে মাঝে মানসিক বিকার ঘটলেই এই কাজ করি। কোথাও ভুল থাকলে যে কেউ সংশোধনের জন্যে এগিয়ে আসলে খুশি হব। ভুল ভ্রান্তি হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই না। কারো এর চাইতে ভাল কোন সোর্স এবং তথ্য থাকলে জানানোর অনুরোধ করছি।


মূল পোষ্টঃ তবু কেন মন এত বাসনা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.