নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াই।

মোঃ রাফিদ

বই পড়তে আর গান শুনতে ভালোবাসি

মোঃ রাফিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুকুর এবং অদ্ভুত আগন্তুক

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪


-স্যার, স্যার, একটু কিছু খেতে দিন, আমার স্ত্রীটা গর্ভবতী, অনেক দিন ভাল কিছু খাওয়া হয় না। দয়া করুন।
সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের লোকটা কুকুরটাকে কষে একটা লাথি বসিয়ে দিল।
- আহ। বলে কুকুরটা সরে গেল। চোখে পানি এসে গেলো, তবুও গড়াতে দিল না প্রাণীটা।
- কেন তুমি মানুষের কাছে চাইতে যাও? জানোই তো ওরা কিছু দেবে না। প্রতিবারই মার খাও আমার জন্য। দরকার কি চাওয়ার? রেগে গিয়ে বললো স্ত্রী কুকুরটা।
- চাইবো না? ওরা যদি একটু ভাল কিছু খেতে দেয়! তোমার গর্ভে আমাদের সন্তান। এখন তো একটু ভালো কিছু খাওয়া দরকার তোমার।
- লাগবে না আমার অত ভালো খাবার। ডাস্টবিনের ওই ময়লা নোংরা খেয়েই তো বেঁচে রইলাম আজ পর্যন্ত। ওগুলোই খাব এখনও। ভাল কিছুর দরকার নাই।
- আহা, রেগে যাচ্ছো কেন? দেখিই না আরেকটু চেষ্টা করে।
- না, লাগবে না বলছি না? ওই দেখ, ছোট মেয়েটা ডাস্টবিনে ভাত ফেলে দিল, গিয়ে দেখো উচ্ছিষ্ট মাংস কিংবা হাড্ডির টুকরো পাও কিনা।
-হুম, যাচ্ছি।
হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা কিশোর ছেলে এসে পুরুষ কুকুরটাকে আদরের ভঙ্গিতে মুখ দিয়ে অদ্ভূত শব্দ করে বলল, কিরে রে? কেমন আছিস?
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যেতে শুরু করলো।
কুকুরদুটো বড্ড আবেগে আপ্লুত হয়ে পরলো। এমন আদর মাখা সুরে কেও তাদের ডাকে নি। বুঝ আসার পর থেকে কেবল তো মানুষের লাথি আর বারি খেয়েই বড় হয়েছে।
পুরুষ কুকুরটা কি জানি মনে করে ছেলেটার পিছু পিছু লেজ নাড়তে নাড়তে ছুটা শুরু করলো।
- এই, কোথায় যাও? দাঁড়াও, আমাকে ফেলে কোথায় চললে? ধ্যাৎ!
বিরক্তিতে বলে উঠলো স্ত্রী কুকুরটা।
- তুমি ওখানেই দাঁড়াও, আমি আসছি। বলে পুরুষ কুকুরটা ছুটলো ছেলেটার পিছে।
- এই দাঁড়াও, আমিও আসছি। একটু আস্তে হাঁটো না, এই শরীর নিয়ে আমার দৌঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎ করে কিশোর ছেলেটা একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পরে দোকানদার কে বললো, মামা, একটা কেক দিন তো ছোট দেখে।
পুরুষ কুকুরটা থমকে গিয়ে তাকিয়ে থাকলো। তারপর দেখলো কিশোরটা কেকের প্যাকেটটি খুলে তার দিকে কেকটি এগিয়ে ধরলো। আর কুকুরটা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকলো কিশোর ছেলেটির দিকে। স্ত্রী কুকুরটা ইতোমধ্যে এসে পরেছে ওদের কাছে। সেও অবাক এই দৃশ্য দেখে। প্রথমে পুরুষ কুকুরটা কেকের একাংশ কামড়ে নিয়ে দেখলো যদি এর মধ্যে মানুষটা বিষ-টিশ মিষিয়ে থাকে? বলা তো যায় না, মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। ওহ, না তো, কোন বিষ নেই, কি সুস্বাদু কেকটা। খেয়ে নিয়ে মনে মনে বললো কুকুরটা। তারপর 'হাউফ' করে বলে উঠলো তার স্ত্রীকে, কই গো, খেয়ে দেখো, কি মজা। নিশ্চিন্তে খাও, মানুষটা খুব ভালো, খেতে দিচ্ছে।
ছেলেটা স্ত্রী কুকুরটাকে দেখে বললো, কিরে, তুই প্র‍্যাগনেন্ট? আচ্ছা দাড়া, আরও কেক খাওয়াচ্ছি তোদের। বলেই আরও চার-পাঁচটা কেক কিনে খাওয়াতে শুরু করলো কুকুর দুইটাকে। কুকুর দুইটা ছেলেটাকে বার বার ধন্যবাদ জানাচ্ছে, কিন্তু সেই ভাষা হয়তো ছেলেটার অন্তরে পৌঁছুচ্ছে না।
ছেলেটা স্ত্রী কুকুরটার দিকে চেয়ে বললো, কি রে? তোর নাম কি? নাম বল তো।
স্ত্রী কুকুরটা ছেলেটার পায়ের কাছে মুখখানা এনে জুলু জুলু চোখে বললো, আমার নাম লীলা। কিন্তু এবারও সেই ভাষা ছেলেটার অন্তরে স্পর্শ করলো না।
ছেলেটা বললো, কি রে নাম বলিস না কেন? নাম নাই তোর?
কুকুরটা ডুকরে উঠলো আর মনে মনে বললো, হে সৃষ্টিকর্তা, আজ তুমি আমাকে কথা বলার শক্তি দাও, আমরা কৃতজ্ঞ এই মানুষটার প্রতি, কৃতজ্ঞ তোমার প্রতিও যে তুমি আমাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য এই ভাল মানুষটাকে উপলক্ষ হিসেবে পাঠিয়েছো, তুমি অসীম দয়ালু।

কিন্তু এসবের কিছুই ছেলেটা বুঝলো না। কুকুরগুলোকে খাইয়ে ছেলেটা উঠতে উঠতে বলল, থাক তোরা, ভাল থাকিস, আমি চললাম, আবার দেখা হবে, ঠিক আছে?
কুকুর দুইটা মনে মনে বললো, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জীবনে যদি আপনার কখনও কাজে লাগতে পারি তবে আপনাকে রক্ষা করবো।

যেরকম অদ্ভুত ভাবে এসেছগল , সেরকম অদ্ভুত ভাবেই চলে যেতে থাকলো ছেলেটা কি যেন এক বেদনার সুর গলায় তুলতে তুলতে। না জানি কি কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে ভেতরে ভেতরে...........

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০১

নাগরিক কবি বলেছেন: মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। - সত্য। ভাল ছিল।

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মোঃ রাফিদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: মোঃ রাফিদ ,



খুব সুন্দর লিখেছেন । বক্তব্য চমৎকার ।

মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন হলেও কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হয় !!!!!!!!!!!!

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

মোঃ রাফিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.