নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তনুদের মৃত্যুটাই ওদের জন্মের পূর্ণতা !

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

বোন তনু ! ঘুমাচ্ছিস ? শান্তির ঘুম ঘুমাও । তোমার দেহটা নিঁখোজ অবস্থায় ড্রেণে পঁচে-গলে নোংরা পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার চেয়ে অন্তত মাটির আশ্রয় পেয়েছো-এটাও বা কম কীসে ! তোমার পূর্বসূরীর অনেকের লাশের খোঁজ যে আজও মেলেনি । তাই তোমাকে ভাগ্যবতী বলা চলে ! শুধু তুমি নও, তোমার স্বজনেরাও ভাগ্যবানদের কাতারে । কেননা তারা তোমার লাশের পাশে বসে কাঁদতে পারছে ! এমন কথা বলতে পারছি কেন বোন জানিস ? গোটাটাতেই যে অমানুষ হয়ে আছি । এরচেয়ে স্বান্তনা দেয়ার ক্ষমতা আজ আর বেশি কিছু অবশিষ্ট থাকেনি । তোকে বোন ডাকছি বলে তুই থু থু দিচ্ছিস । যত পারিস দে । একটুকুনও রাগ করবো না । রাগ করার অধিকার আর রইল । তোর থুথু পাওয়ার যোগ্যও যে আমরা আর নইরে । মনুষ্যত্ব হারিয়েছে । বিবেক মরে গেছে । এখন শুধু পশুত্ব প্রভূত্ব করেছে আমাদের চারপাশে । পাশবিকতা হয়েছে কর্মের ধর্ম । মানুষ হিসেবে, পুরুষ হিসেবে গর্ব করার মত আর কোন অধিকার বাকী রাখতে পারলাম না । আমরা শিখেছি, পুতুলের মত মুখগুলো থেকে রক্ত জড়াতে । যেমন হায়েনারা তার শিকার পেয়ে তা খুবলে ছিঁড়ে রক্ত জড়ায় । এবার থুতুর নিচে ঢেকে ফেল, গোটা সভ্যতা । তবে শুধু বলে যা, তোর গলার নিচে, থুতনিতে, কপালে. মুখের চারপাশে, গালে, দু’হাত জুড়ে এবং আরও নানা জায়গায় এমন ছোপছোপ রক্তের দাগ কেন ? একবার শুনিয়ে যা, কোন জানোয়ারেরা তোর ওপর এমন পৈশাচিক নির্যাতন করেছে । কোন মা কি ওদের জন্ম দেয়নি ? নাকি নর্দমার কীট হয়েই ওদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ।
…..
বোন ! বিশ্বাস কর, আমি কাঁদতে শিখিনি । তবে আজ কেঁদেছি । তোর ছবিখানা দেখে চোখের পানি জড়েছে অনবরত । তুই ওমন মিষ্টি মুখী ছিলি আর এখন তোর এমন বীভৎস চেহারা যারা বানিয়েছে ওরা কি মানুষ ? ওরা যদি মানুষ হয়, তবে মানুষের সংজ্ঞা কি ? শুধু কাঁদতে পারাই এখন তোর এই অভাগা ভাইদের কাজ । শুধু কাঁদতে পারার শক্তিই যে আজ অবশিষ্ট আছে । তাও তো মানবতার ভাগ্য ভালো..এখনো তোদের এমন বিভৎস মৃত্যু দেখে অট্টহাসি হাসছে না কেউ । বোন ! জেনে রাখ, যে পথে সমাজ চলতে শুরু করেছে তাতে সকল জন্তুর জানোয়ারসূলভ আচরণকে ছাড়িয়ে মানুষের হিংস্রতা, পাষন্ডতা শ্রেষ্ঠত্ব পেয়ে যাবে নিকট আগামীতে । একটি স্বাধীন দেশে, স্বাধীনতার এবং দেশের অন্যতম নিরাপদ আশ্রমের গন্ডিতে নরপশুদের দ্বারা তোর খুবলে খাওয়া দেহটা আমাদের স্বাধীনতার অধিকার জানান দিয়েছে নতুন করে ! পশুরা হয়ত ভেবেছিল, স্বাধীনতার মাসে দেশের মানচিত্রের লাল বৃত্তটার লাল বর্ণটা আরেকটু গাঢ় না করলে চলে না ! তা ওরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ফুলের মত দেহের ওপর ! হায়েনারা আবারও কালিমা লেপন করে দিল আমার সোনার বাংলাতে ।
…..
বোন সোহাগী ! আমি একবারও তোকে ধর্ষিতা বলব না । তুই বীর, তুই জয়তু । কাপুরুষরা দেখুক, জানোয়ারগুলো ওদের মাকে কিভাবে ছিঁড়ে খেয়েছে । ভীরুরা দেখুক, নপুংসকগুলো ওদের বোনের কি হাল করেছে । বোন এতকিছুর পরেও তুই নিশ্চিত করে জেনে রাখ, এ জাতির পুরুষেরাও জাগবে না কিংবা জাগবে না নারীরাও ! বিকল হয়েছে, আমাদের প্রতিটি সুস্থ অনুভূতির সৃষ্টিকারী কোষ । আজ আমাদের গোটা সত্ত্বাটাই অথর্বতার চির উন্নত শিখরে পৌঁছে গেছে ! তোর ছবিটা যদি এ ভূমির মানচিত্র হয়ে থাকে তবে এ জাতির অন্য মানুষ গুলো কাক, শকুন আর কুকুর হয়ে তা ছিঁড়ে খাবার প্রতিযোগিতা করছে নিত্যদিন ।
….
বোন ! তুই মরে গিয়ে ‍মুক্তি পেয়েছিস কিন্তু জীবন্ত মানুষগুলোকে যে কতকিছু সহ্য করতে হবে তার নমুনার কিছুটা জেনে যা । কিছু মানুষ তোর পক্ষে কয়েক দিনের জন্য কি-বোর্ডে ঝড় তুলবে, গুটিকয়েক আবার মৌন প্রতিবাদ জানাবে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে দু’তিন বিকেল মাত্র, পত্রিকা আর টিভিগুলো তোকে হত্যা করার রহস্য খুঁজবে কিছুদিন তবে তা সার্থকভাবে ব্যর্থ হয়ে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই তোকে ভুলে যাবে গোটা দেশ, দায়িত্বশীলরা তোকে নিয়ে জাতীয় বক্তৃতা টাইপের কিছু একটা বলবে কিন্তু ওটা কাজের সাথে সঙ্গতি রাখে নাই কখনো, নারীবাদীরা তোর হত্যাকারীদের বিচারের জন্য চিঁৎকার-চেঁচামেচি করে সন্ধ্যার দিকে আবার ধর্ষকদের রক্ষাকারীদের সাথে চা-পানের আড়ালে গল্প গুজবে মাতোয়ারা হবে । কিন্তু যারা তোকে খুন করলো তাদের লাঘাম পাওয়া মোটেই সহজ কাজ হবে না । কেননা জানোয়ারদের রক্ষা করার জন্য বড় বড় জানোয়ারেরা দায়িত্ব নিয়ে আছে রাষ্ট্রজুড়ে । তাই পশুগুলো তোর নিষ্প্রাণ দেহ দেখে, তোর স্বজনদের আহাজারি দেখে মুখ লুকিয়ে হাসবে । আবার কোন এক সোহগীকে নতুন করে খুবলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ওরা দলজুড়ে । এটাই স্বাধীন বাঙলার নারীর চিত্র, চিরাচরিত রূপ । তাই তোদেরকে যত সহজে এবং দ্রুত ভুলতে পারা যায় তত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার প্রতিযোগীতায় এ জাতি ব্যস্ত যেন । স্বাধীনতার মাসে, নারী দিবসের মাসে, মানবাধিকারের স্লোগাগ তোলার দিনে তথা সর্বমাসে তোদের জীবন উৎসর্গ করতেই হবে ! বলতো, জন্মেছিলি কেন ? এভাবে মরার জন্যই কি তোদের জন্ম হয় ? তোর এবং তোর মত যাদের ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে তাদের জানা না থাকলে, নারীবান্ধব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে একটু আমাদের জানা !

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৪

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.