নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল রুদ্র

Rasel Rudro is a shadow of truth.(সত্যর প্রতিচ্ছবিই রাসেল রুদ্র)

রাসেল রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক বিংশ শতাব্দীতে পুরুষ বান্ধব সমাজ !

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে বেগম রোকেয়া যখন নারীকে নিছক যৌনদাসী না ভেবে Better Half বা অর্ধাঙ্গী; বলার দাবী তুলেছিলেন, সেখানে ২০১৪ সালে যখন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। দেশের ও পরিবারের বোঝা না হয়ে উন্নয়নের বোঝা বহন করে আনছে দেশ ও পরিবারের জন্য। ঠিক তখনি আবারো নারীকে সেই চার দেয়ালে আটকানোর নতুন ফন্দি ফিকির শুরু হয়েছে। নারীর প্রতি যেখানে সারা বিশ্বের প্রাচীন বিশ্বাস শেষ হয়েছে, সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশ সেই আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। যেখানকার নেতারা বলেন,ধর্ষণের প্রতিকার যেখানে অসম্ভব সেখানে তা উপভোগই শ্রেয়। আবার কেউ তো নারীকে একেবারে তেতুলে পরিনত করে ছাড়েন। কেউ তো আবার শরীর ঢাকতে কাপড় কয়েক হাত বাড়ানোর কথা বলে থাকেন। এই তো আমাদের পুরুষ শাষিত সমাজে নারীকে উপস্থাপনের দৃষ্টান্ত। আসলে তারা নারীকে কচি মাংসের টুকরাই মনে করে যা অনেক আগেই তসলিমা নাসরিন বলেছেন। তখন তো আবার তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। অন্য ভাষ্যকারদের ভাগ্য কিনা জানি না শুধু জানি তারা পুরুষ তাই তদের কে তসলিমা নাসরিনের ভাগ্য বরণ করতে হয়নি।



প্রাচীনকালের বিভিন্ন মিথলজিতে আমরা দেখতে পাই, নারীর অবস্থান কত নিচে ছিল। হোক সে ভারতীয় কিংবা গ্রিক মিথলজি। নারীকে কেইবা ভোগ্য পণ্য কেউবা যৌন দাসী, ডাইনী আখ্যা দিয়েছে। আরেক ধাপ এগিয়ে গ্রিকরা নারীকে আত্নাহীন মনে করত। প্রাচীন কাল থেকে সেই আইয়্যামে জাহেলিয়াত- নারীর অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া, তালা চাবি দিয়ে রাখা, কন্যা সন্তানকে জীবিত প্রেথিতকরণ এসব কিছু ছিল নিত্য নৈমান্তিক ব্যাপার।



সর্ব প্রথম মহানবী (সাঃ) নারীর মর্যাদা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিজের দুধমাতা হালিমা (রাঃ) কে নিজের স্থান ছেড়ে বসতে দেন তা তখনকার সময়ের নেতৃস্থানীয়দের জন্য ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তিনি স্ত্রীদের সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। সকল সফরে স্ত্রীদের সাথে নিতেন এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও স্ত্রীরা তার সফর সঙ্গী হয়েছে।



ভারতীয় সমাজে তো নারীর অবস্থা ছিল খুবই করুন। এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ীরা সব সময় পৃথিবীর বুকে ছিল। যাদের কর্মকান্ড যতটা ধর্ম কেন্দ্রিক তার চেয়ে বেশী তাদের আগ্রহ ছিল কিভাবে নারীকে আরো নিচে নামানো যায়। পুরুষ একের পর একটা বিয়ে করুক, তালাক দিক সবকিছুতেই তাদের সাত খুন মাফ। আর কোন নারীর স্বামী মারা গেলেই তাকে স্বামীর চিতায়ই জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত ! এ সময় ঐসব পুরুত ঠাকুরেরা বলত,স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীর সাথে স্বর্গে যাচ্ছে ! যদি তাই হবে তবে কেন চিতায় তোলার আগেই কড়া মদসহ অন্যান্য চেতনা নাশক পান করানো হতো ? এখানে সবাই নিরব। তবে মজার ব্যাপার সতীদাহ যদি এত পূণ্যময় কর্ম হয়ে থাকে তখন তো কোন ঠাকুর মশায় পতিদাহ ( স্বামীকে স্ত্রীর চিতায় তোলা আরকি !) প্রথার চালু করেন নি ? অবশেষে ১৮২৯ সালে রাজা রাম মোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্ঠায় ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেছিল ব্রিটিশ সরকার।



সতীদাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার পরেই নারীর অবস্থা হল আরো করুণ। বিধবাদের ভালো পোশাক পড়তে নেই, তেল মাথায় দিতে নেই, সাজতে নেই, এরা অলক্ষী এদের ছাড়াও মাড়িও না অমঙ্গল হবে। এরকম হাজারটা সংষ্কার সমাজে আনা হলো। যতে ঐসব বিধবা নারীরা এমনিতেই মারা যায়। এরপর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের ছেলেকে একজন বিধবা নারীর সাথে বিবাহ দিয়ে ১৮৭০ সালে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেছিলেন। নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন বেগম রোকেয়া। মাত্র ৫জন ছাত্রী নিয়ে চালু করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল।যা ছিল এ উপমহাদেশের ইতিহাসে নারীদের জন্য প্রথম কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানেই থেমে থাকা নয়। জোহরা বেগম কাজী (উপমহাদেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক), নূর জাহান বেগম(বেগম পত্রিকার সম্পাদিকা), সুফিয়া কামাল( প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক), জাহানারা ইমাম( শহীদ জননী, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার বর্তমানে হচ্ছে তার প্রথম উদ্যোক্তা ও গণ আদালতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা )। এদের হাত ধরে আজ নারীরা স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।



যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, ২০১৪ সালে এসে হঠাৎ করেই আমাদের সব নীতিনির্ধারকদের মনে এক কাব্যিক ঝড় বয়ে গেল। যেমন-

ষোড়শী রুপের জাদুতে আমায় করল পাগল

তোরা দেখে যা।

ভাবতে অবাক লাগে যখন অনেক আগেই আমরা স্লোগান দিচ্ছি নারীদের নিয়ে- কুড়িতেই বুড়ি নয় , বিশের আগে বিয়ে নয়। সেখানে আমাদের কি হল যে, আমরা পশ্চাৎপদ হয়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর করতে যাচ্ছি। অনেকে যুক্তিদ দেখাচ্ছেন এতে বাল্য বিবাহ রোধ করা যাবে। তারা কি জানেন না যেখানে পাঁচ বছর পরপর একটি ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জিত হয় ১৮ বছরে। সেখানে কীভাবে ১৬ বছরের একটা মেয়ের কাধে সংসারের সমস্ত দায়িক্ত তুলে দেওয়া যায় ? একটা পরিবার রাষ্ট্রের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। পরিবারের ধারণা থেকেই রাষ্ট্রের ধারণা তৈরি হয়েছে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন।



এখন পর্যন্ত এদেশে বিয়ের পর অধিকাংশ নারীদের পড়ালেখার সমস্ত দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। একজন ছাত্র/ছাত্রীকে এস.এস.সি পাশ করতে হলে অন্তত ১৫/১৬ বছর বয়স্ক হতে হয়। সেখানে বিবাহের বয়স কীভাবে ১৬ হতে পারে ? বেগম রোকেয়া তৎকালীন নারীদের লেখাপড়ার বিবরণ দিয়েছেন এই ভাবে, তাহাদের বিদ্যার দৌড় বড় জোর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বোধদয়( তৎকালীন শিশুপাঠ্য) পর্যন্ত।তাহলে কি আমরা সেই রকম ভাবে নারীদের এস.এস.সিতেই থামাতে বদ্ধপরিকর। আমার তো মনে হয়, নারীদের নিছক বোকা বানানোর জন্যই পি.এস.সি আর জে.এস.সি নামে দুইটা পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। যা বিয়ের আগে মেয়ের যোগ্যতা হিসাবে কাজে লাগবে।

এমনিতেই অল্প বয়সে গর্ভধারণের কারণে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি আছে। অল্প বয়সে গর্ভে ধারণকৃত বাচ্চা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী হয়। আর এসব নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে প্রায় ৮০%। তাহলে কি আমরা মা-শিশুকেই নয় গোটা জাতিকেই অনিশ্চয়তার মাঝে ছেড়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছি !



পরিশেষে বলি দিন বদলিয়েছে। এদেশের রাষ্ট্রীয় সব উচ্চ পদে নারীরা থেকেও এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চুপ। তবে যখন দেখি গ্রামে গ্রামে মেয়েরা শিশুদলগঠন করে, প্রচারণা চালিয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সচেষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের মেয়ে বহিঃবিশ্বে তার বাল্য বিবাহ ঠেকানোর গল্প শোনাচ্ছে। এসব দেখে শুনে আশান্বিত হই। নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে নেবে, কোন অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


শুভেচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.