নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রায়আন৫৬৩

আবু রায়আন

ছাত্র

আবু রায়আন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উল্টো ইঁদুর

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯

উল্টো ইঁদুর
রোয়ালল্ড ডাল
অনুবাদ: মাহফুজ রহমান

লোকটার নাম ছিলো ল্যাবোন। বয়স ৮৭। স্বভাবে চুপ-চাপ আর শান্তি প্রিয়। ল্যাবোন ছিলোন ভীষণ গরিব কিন্তু দারুণ সুখী। ল্যাবোন একদিন টের পেলেন, ঘরে ইঁদুরের আনাগোনা শুরু হয়েছে। প্রথম প্রথম তাতে মোটেও মাথা ঘামালেন না। তবে দিন দিন ইঁদুরের সংখ্যা বাড়তেই লাগলো। শুরু হলো মহা উৎপাত। শেষমেশ এমন হলো, ল্যাবোন আর ঘরে দাঁড়াতেই পারেন না।
যথেষ্ট হয়েছে, 'ল্যাবোন বিড়বিড় করে বললেন,'ইঁদুরগুলো খুব বাড় বেড়েছে।' বলেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলে গেলেন দোকানে। কিনে ফেললেন কয়েকটা ইঁদুর ধরার ফাঁদ, একটা পনিরের টুকরা আর কিছু আঠা।
ঘরে ফিরে ফাঁদগুলোর নিচে আঠা লাগালেন ল্যাবোন। আটকে রাখলেন ঘরের ছাদে। টোপ হিসেবে ফাঁদে রেখে দিলেন পনিরের টুকরা।
রাত হলো। ইঁদুরের দল গর্ত থেকে বেড়িয়েই দেখে, ছাদে কতকগুলো ফাঁদ ঝুলছে। সেটা দেখে এরা হেঁসেই বাঁচে না! মেঝেতে হাটতে হাটতে এরা ফাঁদগুলো দেখে, এক-ওকে ডেকে এনে আঙ্গুল তুলো দেখায়, আর হো হো করে হাসে। আসলেই তো, দৃশ্যটা ভীষণ হাস্যকর! ঘরের ছাদে কিনা ঝুলে আছে কতকগুলো ইঁদুর ধরার ফাঁদ!
সকাল হলো ল্যাবোন এলেন দেখতে, ফাঁদে ইঁদুর আটকালো কিনা। হতাশ হলেন, একটা ইঁদুরও ধরা পড়েনি! ল্যাবোন কিছু না বলে মুখটিপে হাসলেন। একটা চেয়ারের নিচে আঠা লাগিয়ে উল্টো কের আটকে রাখলেন ছাদে, ঠিক ফাঁদের পাশেই। কেবল চেয়ারই নয় ঘরের টেবিল, টেলিভিশনে সেট, ল্যাম্প আর বাকি সব একই ভাবে আঠা লাগিয়ে উল্টো করে আটকে রাখলেন একে একে। এমনকি একাট কার্পেট সেঁটে দিলেন ছাদে।
পরের রাতেও ইঁদুরের দল গর্ত থেকে বেড়িয়ে এল। তখনো এরা গতোরারতে দেখা ছাদে ঝুলে থাকা ফাঁদ নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছিলো। কিন্তু যেই না ছাদের দিকে তাকিয়েছে, ওমনি ওদের আক্কেলগুড়ুম! হাসাহাসি ভুলে একবারে স্পিকটি নট হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে।
'সর্বনাশ!' একটা ইঁদুর প্রায় কেঁদেই ফেলল,'ওপরে তাকাও। মেঝেটা ওখানে চলে গেছে।'
আরেকটা ইঁদুে চিৎকার করে উঠল,'আমাদের অবশ্যই মেঝেতে দাড়ানো উচিৎ।'
আরেকটা ইঁদুর বলল,'আমার মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে!'
আরেকটা ইঁদুর বলল,'শরীরের রক্ত সব মাথায় উঠতে শুরু করেছে!'
'এটা ভয়ানক!'লম্বা গোফওয়ালা সবচেয়ে বুড়ো ইঁদুর বলল,'সত্যিই এটা ভয়ানক।'
পুঁচকে একটা ইঁদুর চেঁচিয়ে উঠল,'এভাবে মাথা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি জ্ঞান হারাবো!'
'আমিও!'
'আমি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না!'
'বাঁচাও আমাদের! কেউ কিছু একটা করো, দ্রুত!'
ইঁদুরের দল পাগলপ্রায়। 'আমি জানি, আমাদের কি করা উচিৎ!' বুড়ো ইঁদুর বলল, 'মাথায় ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে আমাদের, তাহলেই ছাদে পা রাখা যাবে।'
বুড়োর কথায় একান্ত বাধ্যগতের মতো সবাই নিজের মাথায় ভর দিয়ে দাঁড়াল। এবং বেশ লম্বা একটা সময়ের পর সব ইঁদুরের মাথায় রক্ত ওঠে গেল, এক এক করে জ্ঞান হারাল সবাই।
পরদিন সাকলে ল্যাবোন এলেন দেখতে। ঘরে ঢুকেই দেখেন, মেঝেটা ইঁদুরে সয়লাব। দেরি না করে সবগুলোকে জড় করে একটা ঝুড়িতে ভরে ফেললেন তিনি।
অতএব একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, পৃথিবীটাকে যখন ভয়নক ভাবে উল্টো-পাল্টো লাগবে, তখন পা দুটি যেন মেঝের ওপর ঠিক-টাক ভাবে থাকে।

রোয়াল্ড ডাল: ব্রিটিশ লেখক
শিশুসহিত্যিক হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। জন্ম ১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, মারা গেছেন ১৯৯০ সালের ২৩ নভেম্বর।
(প্রথম আলো; শুক্রবার ৮ জানুয়ারি ২০১৬-ম্যাগাজিন: গোল্লাছুট।।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.