নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতদিন লেখার ক্ষমতা থাকবে ততদিনই লিখব, একটুও বেশি না

বঙ্গতনয়

ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি।

বঙ্গতনয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

সকাল আর শুকনো বকুল ফুলের মালা পর্ব-১

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:৩০



কাশিমপুর কারাগার থেকে ফিরছি, দীর্ঘ ছ'মাসের কারাবাসের পর ফিরে আসছি মুক্ত আলোয়। ঢাকাতে আত্মীয়স্বজন বলতে দূরতমও কেউ নেই রিসিভ করার মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কেউ কেউ প্রথম প্রথম খোজ নিয়েছিলো যখন কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম। পনের দিনের মাথায় কাশিমপুর চালান করে দিলো মেঘনা-৫ সেল থেকে। সেই থেকে একা।

দু চারদিন কষ্ট হলেও সয়ে এসেছিলো পরে। নিয়তিকে মেনে নিয়েছিলাম। বাড়িতে কেউ নেই ঢাকা আসার মত, তদবির করে ছাড়িয়ে নেবে। থানা থেকে বলেছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে, শুনে মনে মনে হেসেছিলাম যার দুবেলার খাবার টাকাই ঠিকমত পকেটে থাকেনা তার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা।

চুপচাপ থাকায় মিন্টো রোডে পাঠিয়ে দেয় ডিবি অফিসে। হাজার পাওয়ারের বাল্বের নিচে ছোট্ট একটা টেবিলের ওপাশে ষণ্ডামার্কা চেহারার পুলিশ, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলো সাথে আর কারা ছিল। আমি কোন পদে আছি, বোমা বানাতে পারি কিনা। তাদের প্রশ্নের জবাবে হতভম্ব হয়ে যাই।
কিছুই বুঝতে না পেরে যখন চুপ থাকি। তখন সিনেমার পুলিশ অফিসারের মত নয় বাস্তবের মত চড়, কিল ঘুষি, কখনো রশি দিয়ে ঝুলিয়ে পায়ের তলায় পেটাত। আবার ইচ্ছে হলে উলটো করেও ঝুলিয়ে রাখত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দুদিন পার হবার পর হাল ছেড়ে দিয়ে আমাকে চালান করে দিলো কোর্টে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে কাশিমপুরে এলাম তা আর মনে পড়েনা।

দেখতে দেখতে ৬টা মাস পার হয়ে গেলো। এর মধ্যে বাইরের পৃথিবীতে কত পরিবর্তন হয়েছে কে জানে? ছ’মাসের পুরনো জামা-কাপড় পরে বের হয়ে এলাম। সাথে আরও কয়েকজনের জামিন হয়েছিলো তাদের মধ্যে আমিন ভাই নামে ৩০-৩৫ বছরের একজনের সাথে ভিতরে বেশ গল্পের সম্পর্ক হয়ে গেছিলো। আমার মেসে ফেরার মত টাকা সাথে নাই বুঝে উনি তিনটা একশ টাকার নোট গুজে দিলেন পকেটে আর একটা মোবাইল নাম্বার দিলেন যোগাযোগ করতে।

বাসে চড়ে রওনা হলাম। চৌরাস্তা পার হয়ে সামনে এসে ভি আই পি ২০৭ নং বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। । স্টপেজে দাঁড়িয়ে। সিরিয়ালে টিকিট নিতে হবে। আমার আগে তিনজন বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও পেছনে একজন তরুণী। তরুণীর বয়স পঁচিশ কি ত্রিশ তা ঠাহর করতে পারলাম না।

মেয়েদের দুটো ব্যাপারে আমি খুব দুর্বল প্রথমত, তাদের বয়স নির্ণয় করতে পারিনা, অনেক সময় চল্লিশে পা দেয়া মহিলাকেও মেয়ে মনে হয়, দ্বিতীয়ত গড়পড়তা যেকোনো বাঙালী মেয়েকেই আমার সুন্দরী মনে হয়। সামনে দাঁড়ানো তরুণী আহামরি সুন্দরি না হলেও চেয়ে থাকা ।

মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা কোথায় যাবো, মেসে সিট আছে কিনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন যাওয়া হয়নি। পরীক্ষা দিতে দিবে না নিশ্চয়ই
ভাবতে ভাবতে গাড়ি চলে আসলো। সুপারভাইজার বলে দিলেন মাত্র ৫ টা সিট আছে। টিকিট কাটা ছেলেটা গুনে পাঁচজনকেই টিকিট দিলো।

টিকিট নিয়ে সিটে বসতে গিয়ে দেখা দিলো বিপত্তি। প্রথমত সিট আছে চারটি। তার মানে পঞ্চম জনকে নেমে যেতে হবে। আমি ততক্ষণে একটা সিটে বসে গেছি। তরুণীটি হা হুতাশ করতে লাগলো। তার গাড়ি মিস হয়ে গেছে, এই গাড়িতে যেতে না পারলে কিভাবে যাবে এতদূর, সন্ধ্যাও হয়ে আসছে।
বিকালের আলোয় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে শ্যামলা মুখের মধ্যে এক ধরণের মায়াবী আভা দেখলাম।
এর আগে পেছনে থাকায় ভালভাবে খেয়াল করিনি । এবার মেয়েটিকে যেভাবে লক্ষ্য করলাম তা আনাড়ি বর্ণনায় শ্যামলা বরণ, লম্বা খুব বেশি নয়, আবার কম ও নয়। পরনে সালওয়ার, ইরানী শর্ট বোরকা, মাথায় হিজাব পরা ও মুখ খোলা। হাতে একটি মেয়েলী ব্যাগ অপর হাতে ট্রাভেলার্স ট্রলি।
আমি তাকে সাহায্য করতে চাইলাম। দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোনও স্বর বেরুচ্ছিলো না। কেশে নিয়ে সুপারভাইজারকে ডাকলাম। প্রথমে পাত্তা না দিলেও ভরাট বড় গলার আওয়াজে বিশুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা শুনে সুপারভাইজার সহ অনেকেই আমার দিকে তাকাল সেই সাথে তরুণীও।
সবাই আমাকে একদৃষ্টে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। পুরনো আমলের ঢিলা পাঞ্জাবির নিচে রঙচটা জিন্সের সাথে দেড়শ টাকার চপ্পল। মাথায় একগাদা চুল গালে কদম ফুলের মত খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বললাম টিকিট যেহেতু কাটা হয়েই গেছে তাহলে পাঁচজনকেই নিয়ে নাও, আমি না হয় সিট খালি হলে বসব। সুপারভাইজার একবার আমার দিকে আরেকবার তরুণীর দিকে তাকাল। তারপর জানালো সিটের অতিরিক্ত যাত্রী নিলে মালিক তাকে জরিমানা করবে, এটা সে কোনোভাবেই করতে পারবেনা। বললাম তাহলে আমি নেমে যাচ্ছি আমার জায়গায় ইনি বসুন।
তরুণীটি ঃ না না, আপনি কেন খামাখা কষ্ট করবেন, আমিই না হয় পরের বাসে যাবো ইত্যাদি বলতে লাগলো । আমি আর কথা না বাড়িয়ে শুধু বললাম যার গন্তব্য স্থির নেই তার এত তাড়া কিসে?
আপনি বসুন। বলেই নেমে এলাম জবাবের অপেক্ষা না করে। গাড়ি ছেড়ে দিলো।
চলবে.।.।.।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: চলুক সাথে আছি। ধন্যবাদ

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪

বঙ্গতনয় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.