নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবর্ন স্বপ্নাবলী নিয়ে অর্ধ জীবন্ত এক অস্তিত্ব আমি। খুব সতর্ক পায়ে হেটে চলি এই ভূমন্ডলে ও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শূন্য পানে নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা খুঁজতে।

সাকিব শাহরিয়ার

আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।

সাকিব শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্তিত্বের অন্তরালে: ২

৩০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৪

- এই টাওয়েলটা দাও না।

- পারবো না।

- দাও না আমার সারা শরীর ভেজা, দাও।

- পারবো না ভিজে বসে থাক।

- আফিসের লেট......

- এই নাও, এত যন্ত্রনা কর তুমি। টাওয়েলটাও নিয়ে নিতে পারো না?

- মনে ছিলো না তো মনি। আস।

- যাও আর দুষ্টুমি করতে হবে না। অনেক দুষ্টু হচ্ছো দিন দিন। আমার হাতের কাজ পরে আছে। তোমার খাবার দিতে হবে, কাপড় গুলো তো সব ময়লা করে ফেলেছো। বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে হাটতে থাকে সে। কাপড় এতো ময়লা করতে পারো তুমি। অফিসে কি চেয়ার নাই? ফ্লোরে বসতে দেয়? নাকি পার্ট টাইম বিক্সা চালানো শুরু করেছো? রিক্সাওয়ালার কাপড় ও এতো ময়লা হয় না। নিশ্চিত মেথরের দলে যোগ দিয়েছো। একটা অকর্মার ঢেকি। এত অকর্মা মানুষ হয় কিভাবে? নিজের কাপড়টা ও পরিস্কার করতে জানে না। হাত পা বুকে নিয়ে বড় হয়েছে। রুচি বলতে তো কিছুই নেই। কাপড় পরিস্কার না করে দিলে তো নোংরা কাপড় পড়েই অফিস করা শুরু করবে। তখন হবে আমার বদনাম। কেমন বউ তোমার দেখে না, তোমার কাপড় ময়লা? নিজেতো একটা ছেদারের হাড্ডি, মানুষ আমাকে ও একটা ছেদারে বলবে সাথে। ওফ! ঘর মুছতে হবে, রাতে তো হাড়ি পাতিল সব ময়লা করে রেখেছো, সে সব পরিস্কার করতে হবে। সে খেয়াল কি আছে কারো? সারাদিন খালি কাজ আর কাজ। এত কাজের কাজির বিয়ে করার দরকার কি? বালিশ নিয়ে ঘুমালেই হয়। আমি কি বউ নাকি, আমি তো একটা ফার্নিচার, একটা ড্রেসিং টেবিল- সকাল বিকেল চেহারা দেখার জন্য বিয়ে করেছে আমাকে।

বক বক করেই যাচ্ছে ঋতু। তার একঘেয়ে গ্রৃহিনী জীবনের অনেক গুলো বিনোদনের মাঝে এটা অন্যতম। প্রতিদিন সকালে লাবিব সাহেবের জন্য খাবার তৈরি করার সময় সে খুব সচেতন ভাবে বক বক করতে থাকে, উদ্দেশ্য খুব সরল, ল্যাবিবের জীবনে ঋতু নামক সত্ত্বাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা যাতে সে বুঝতে পারে। ল্যাবিব ও জানে ঋতুর সরল উদ্দেশ্যটা। তাই সে ও শুরু করে দেয় ঋতুর সাথে। ফাকা মাঠে গোল দিয়ে মজা নাই, ঋতু বিরক্ত হতে পারে। কারন মেয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষেপে, তার বর যখন তার বকা খেয়ে ও ভোদাই এর মত হাসে। মেয়ে মানুষ তেজি পুরুষ পছন্দ করে। এটা আগের ও করত, আজো করে আর আগামীতেও করবে। জেদ না থাকলে আবার কিসের পুরুষ মানুষ। রাগলে পুরুষ বাদশা আর রাগের নারী বেশ্যা। বিদেশি পারফিউম মাখানো প্যান্টের ভিতর শার্ট ঢুকাতে ঢুকাতে সে ও বলতে থাকে।

- শুরু হয়ে গেছে এফম বকবকানি শো। এবার বক বক চলতে থাকবে সারাদিন, ননস্টপ বিনোদন।

- এএই আমি কিন্তু শুনতে পাচ্ছি।

- হুম, আমি তো তোমাকে শুনিয়েই বলছি।আমি কি তোমাকে ভয় পাই নাকি?

- গুন্ডার আবার ভয় কিসের? শুধু তো আমার সাথেই পার। আর কোথাও তো দেখি না বাহাদুরি।

- ব্রাজিল তো ওয়ার্ল্ড কাপেই খেলে তাই না? যার তার সাথে বাহাদুরি দেখিয়ে লাভ আছে? শক্তির অপচয়।

- অসারের তর্জন গর্জন সা্র থাকে। তোমার হয়েছে তাই।

- হুম গোবরে ফোটা পদ্মের ভাব থাকেই কিন্তু সমস্যাটা কি জানো, গোবরের গন্ধ যায় না।

- কি আমি গোবরে পদ্মফুল তাই না? সাবধান বাপ মা তোলে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।

- তোমার বাপ আমার শ্বশুর আর শ্বশুর বাপের মত। আমার যদি না জ্বলে তো তোমার এত জ্বলে কেন?

- পরের পোলা, বনের ওলা। কথার যা শ্রী। নিজের বাপ হলে কখনো বলতে পারতে এমন কথা?

প্রত্যেকটা মেয়েরই সবচেয়ে বড় দূর্বল পয়েন্ট তার বাপ। পরেরটা তার ভাই। এদুটা ধরে কথা বললে কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারে না। ঋতুও পারবে না নিশ্চিত। লক্ষী মেয়ে, সংসারই তার বেহেশত। এই সংসারটা নিয়েই তার স্বপ্ন, ল্যাবিবের এ ছোট্ট সংসারটাই তার প্রৃথিবী। ল্যাবিবের বুকে মাথা রাখতে পারলে সে নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করে, তার সবচেয়ে প্রিয় গন্ধ ল্যাবিবের উৎকট ঘামের গন্ধ। তাইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও পাক্কা গিন্নি ঋতু। খুব ভালো গান ও গাইতো এক সময় কিন্তু ল্যাবিব পছন্দ করে না বলেই ছেড়ে আসা। এমন লক্ষী মেয়েকে কষ্ট দিলে আল্লাহ নারাজ হবে। তাই ল্াবিব থেমে যায়।

- এই টাই টা বেধে দিয়ে যাও না।

- পারব না।

- দাও না লক্ষী মনি।

- আয়না আছে বেধে নাও।

- তুমি জান না আমি টাই বাধতে জানি না?

- তুমি কি করতে জান শুনি?

- কেন ঝগড়া, এটা আমি খুব ভালো পারি না?

- আবার জিগায়, নবেল দেয়া উচিত। বলতে বলতে শাড়ির আচল গুজে আসতে থাকে ঋতু। বুকের উপর ঝুলে থাকা আধো বাধা টাইটা এক হাতে ধরে বলে, আচ্ছা তোমাকে এরম মেয়ে মানুষের মত ঝগড়া করা কে শিখিয়েছে বলো তো?

- মেয়ে মানুষের সাথে থাকলে তো মেয়েলি স্বভাব ই আসবে ভিতরে তাই না?

- তোমার সব কথায় খালি হেয়ালি। হুম বাধা শেষ দেখো তো কেমন হয়েছে?

- তুমি বেধে দিয়েছো সেটাই তো অনেক কিছু

- তার মানে ভালো হয়নি?

- তুমি বাধবে আর ভালো হবে না তা কি হয়?

- তাহলে এত পেচিয়ে কথা বল কেন তুমি? মানুষ ও একটা, পেটে পেটে খালি শয়তানি বুদ্ধি। জিলা্পির প্যাচ এ ঠাসা ভিতটা। মাথায় সারাদিন এক একটা শয়তানির চিন্তা ঘুরে। কি, কি মতলব? এমন ফিচকে মার্কা হাসি দিচ্ছো কেন? আবার কি বজ্জাতি করবে? দিন দিন তো হচ্ছো একটা বদের হাড্ডি।

- আম্মা কোথায়?

- হাটতে বের হয়েছে। তুমি কোনো কিছুর খোজ খবর রাখো? মার সুগার হাই ইন্সুলিন শেষ হয়ে গেছে অবশ্যই নিয়ে আসবে।

- তোমার নাকটা ঘেমে আছে মুছে দেই?

- থাক আর ন্যাকামি করতে হবে না অফিস লেইট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

- না অফিস যাবো না।

- এই বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

- তুমি সব কিছুতে এতো শাষণ করো কেন?

বলে ল্াবিব এক ঝাপটায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিল ঋতুকে। ঋতু ও বাধ্য মেয়ের মত চুপ করে অনুভব করছে ল্াবিবের হূদ স্পন্দনের উন্মাদনা। এটা ল্াবিবের অভ্যাস, অফিসে যাওয়ার আগে সে ঋতুর গায়ের গন্ধ সারা গায়ে মাখিয়ে যায় আবার অফিস থেকে ফেরার পর তার ঘাম ঋতুর গায়ে মাখায়। কারন এ ঘাম তো ঋতুর জন্যই। কয়েক মিনিট পরে ঋতু বলে, “আই এবার ছাড় তো, অনেক হয়েছে!উহু ছাড় না মা দেখবে তো”। ল্যাবিব একটু সরে আসে। তারপর দুই হাতে ঋতুর কাধে ধরে এক বার সূরা ফাতিহা আর তিনবার সূরা ইখলাস পরে ফু দেয় ঋতুর মুখে। এটা ল্াবিবে প্রতিদিনের অভ্যাস। আর ঋতুর মুখে থাকে একটা মিষ্টি হাসি। ল্াবিব ঋতুর হাসির সমাঝদার। বিশেষ করে ঋতুর বাম পাশের গালে যখন টোল পরে তখন ল্যাবিবের মনে হয় টোলটা তার গালে না পড়েছে ল্াবিবের মনে। এমন হাসির কাছে ক্রীতদাস হয়ে যায় ল্যাবিবের মন।

(চলবে)







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: লক্ষি বউয়ের কাহিনী, ভালো লাগল পড়ে

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪১

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: আনন্দিত আপনাকে একটু ভালোলাগা উপহার দিতে পারলাম বলে...।

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৪৬

আর.হক বলেছেন: ধুর ......... আপনি তো এটাকে টেনে নিবেন না ... করবেন হাবিজিবি চিন্তা ৩ । অপেক্ষায়...........

০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:১৯

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: অপেক্ষা করে হাবিজাবি চিন্তা গুলোকে এক হতে দিন একটা অর্থ দাঁড়াবে নিশ্চিত...।। তখন টানা যাবে । মূলত ামাদের জীবনটাই ত হাবিজাবি তাই ামার চিনতা গুলো ও হাবিজাবি.।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: সুন্দর।
এ ধরণের গল্পে ছেদারি শব্দটা শুনতে ভাল লাগেছে না।

১১ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪০

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: হা হা হা এই শব্দটা আমার অনেক স্ম্রৃতি মাখা শব্দ। অনেকবার শুনতাম একজনের মুখে। যাই হোক ভাই এই শব্দটা আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি আমার এ লেখায়। আমি এই শব্দটার প্রতি ইমোশনাল। ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.