নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যান্ড দেন ইট হ্যাপেন্ড

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৩১


সাঙ্ঘাতিক মেয়ে তো? কলেজ লাইফে অনেক মেয়ের সাথেই আদি রসামত্মক গল্প গুজব করেছি, বাট এতোটা? বাস ভর্তি লোকের সামনে কেনা? এসব ট্রেড মার্ক বই তো মলাট দেখেই পাবলিক চিনে ফেলে। চ্যাংড়া টাইপ ছেলেরা কিনলেই পাবলিক কানাকানি করে, আর এ তো মেয়ে। এদিক ওদিক তাকালাম। ইয়াং টাইপ দুটো ছেলে ছিল আমাদের জাস্ট সামনের সিটে। ঘুরে মেয়েটাকে দেখল।
সবার কথা কেন বলছি, আমি নিজেই তো অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখছিলাম। বইটা পড়তে চাই কি না অফারটায় কোথায় যেন একটা শ্লেষ ছিল। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া, ‘বি ব্রেভ’। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ টাইপ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। পড়তে ইচ্ছে না করলে, পড়বেন না। আর করলে, একসেপ্ট ইট। মনে ইচ্ছে আছে, আর বলার সাহস নাই, এটাকে বলে ভণ্ডামি।
— আর কতক্ষণ স্টেয়ার করবেন?
কথাটা যে আমার উদ্দেশ্যে বলা, ব্যাপারটা প্রথমটায় বুঝতে পারিনি। ও কথা বলছিল বইটার দিকে তাকিয়ে। গলার আওয়াজ খুব উঁচু না। শুনতে পেলে কেবল আমি আর বড়জোর আমার সামনের আর পেছনের সিটের যাত্রীরা পাবে। তাই প্রথমে ভেবেছিলাম বইয়ের লেখা জোরে পড়ছে। দ্রুতই বুঝে গেলাম, আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলা।
বেঠিক বলেনি। বাসে ওঠার পর থেকেই তো আমি মাঝে মাঝেই ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম। সেটা বেশ অনেকটাই বেড়ে যায় বই কেনার পর থেকে। সেটাই জিজ্ঞেস করল। ব্যাপারটায় অপমানিত বোধ করব? না উৎসাহিত? এই মেয়ের দিকে স্টেয়ার করে না কে? সবাইকেই কি ও এভাবে প্রশ্ন করে? এর একটা মানে হতে পারে, শী ইজ ইন্টেরেস্টেড। প্রেমের জন্য, তা বলছি না, বলছি অ্যাট লিস্ট আলাপ করতে ইন্টারেস্টেড। বললাম
— আমি জীবনে আপনার মত সাহসী মেয়ে দেখিনি।
মেয়েটা বইটা পড়ছিল। এবার সেটা থেকে চোখ তুলল। আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল
— তাই?
— আপনার কাজকর্ম দেখলে সবাই ভাববে, দেশটা আমেরিকা হতে আর দেরী নাই।
মেয়েটা স্মিত হাসল। এরপরে বলল
— দেশ আমেরিকা হবে কি না জানি না, তবে আমি আমেরিকার।
— তাই?
— হ্যাঁ। ওখানে বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ।
— ও
— ও, মানে? সেজন্য এতো সাহস?
এই মেয়ে কি ঝগড়ার মুডে আছে নাকি? নারীবাদী লেকচার দিতে চায়? একটু সমঝে চলা উচিত। রক্ষণাত্মক অবস্থান নিলাম
— বললাম। ঠিক সেটা না, এদেশে বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ হলে, এভাবে সবার সামনে অন্ততঃ কিনতেন না।
মেয়েটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকাল। এরপরে বলল
— আর সেটাই আপনারা চান, তাই না?
এই নারী পুরুষ মার্কা বিতর্ক করবার ইচ্ছা এখন একদমই নাই। আমি মহা রক্ষণশীল নই, তাই বলে আবার এতোটা উদারও নই। তবে এই মুহূর্তে আমি প্রাণপণে একটা জিনিসই চাইছি, আর তা হচ্ছে, টপিক চেঞ্জ। সেটাই ট্রাই করলাম
— রাজশাহীতে কোথায় যাচ্ছেন?
— মামার বাসায়।
— বেড়াতে?
— না, মামাতো বোনের বিয়ে।
অবাক হলাম। বিয়েতে যাওয়া মানে তো পুরো ফ্যামিলি যাওয়া। এভাবে একা যাচ্ছে কেন? ফ্যামিলি প্রবলেম নাকি? এসব শুনতেও ইচ্ছে করছে না। টপিক আর কোনদিকে ঘোরাই?
— আমার বাসা রাজশাহী। বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ সহ।
মেয়েটা এবার হেসে ফেলল। হাসিটা বেশ সুন্দর। তবে কথা আর বলল না। উত্তর তো দেয়া উচিত। অ্যাট লিস্ট, ‘তাই? কোথায়?’ টাইপ কিছু একটা। কিংবা বাবা কি করেন, আমি কি করি। এভাবে থেমে গেলে আলাপ জমাবো কিভাবে?
— হাসলেন যে?
মেয়েটা বইয়ের দিকেই তাকিয়ে কথা বলল
— আপনার 'বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ কথাটা প্যারডি করা' দেখে হাসলাম।
— মাইন্ড করলেন?
— নাহ, মাইন্ড করব কেন?
মেয়েটার সাবলীল চালচলন বেশ ভাল লাগছে। এরমধ্যে বাস চলতে শুরু করেছে। আমরা ফেরিতে উঠে গেলাম। বাস প্লেস হল। একে একে অনেকেই বাস থেকে নামল। আমি নামব কি না ভাবছি। ক্ষুধা লেগেছে। আর তার চেয়ে বড় কথা, এসব রাস্তার খাবার আমার বেজায় ফেভারেট। ফেরিতে যে কন্টাক্ট সিস্টেমের খাওয়া থাকে, ওঠা বেশ এঞ্জয় করি। কিন্তু এই মেয়ে ঐ খাবার হজম করতে পারবে না। নির্ঘাত ডায়রিয়া।
— নামবেন না?
অবাক হলাম। এই মেয়ে তো দেখি একেবারে ছেলেদের মত। বললাম
— আমি তো নামব। আপনার জন্যই ভাবছিলাম। আপনি কি করবেন।
— আর আমি উল্টোটা। আপনার হাবভাব অনেকটা এদেশের মেয়েদের মত। বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না।
মনে হল গালে চটাস করে একটা চড় পড়ল। বলে কি এই মেয়ে। আমি যে ভদ্র আচরণ করছি, তা তো সামনে একজন মেয়ে বসে আছে বলেই। একজন ছেলে পাশের সিটে থাকলে কি এমন করতাম? হয়তো ওসব বই নিজেই কিনতাম। মেজাজ খারাপ হতে যাচ্ছিল, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম। বললাম
— বেশ চলুন।
দুজনে বাস থেকে নামলাম। বৃষ্টির কারণে ফেরির ফ্লোর মোটামুটি কর্দমাক্ত। প্যান্ট অনেকটা ওপরে তুলে সাবধানে হাঁটছি। বাস গুলোর ফাঁক দিয়ে কোন রকমে সিঁড়ির কাছে পৌঁছলাম। দোতলায় খাবার জায়গা। আর তিনতলায় বসবার। মেয়েটার খোঁচা খেয়ে অনেকটা ডেস্পারেট ভাব চলে এসেছে আমার মধ্যে। কে কি ভাবল, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি আমার ইচ্ছেমত কাজ করব।
সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে কথা শুরু করলাম
— দোতলায় খাবার ব্যাবস্থা আছে। এখানে কন্টাক্ট সিস্টেম খাওয়া। এটাকে বলে পেট চুক্তি।
— বুফে টাইপ?
— নাহ, একটু পার্থক্য আছে। মাছ বা মাংস যেটা মেনুতে থাকবে, সেটা একবারই পাবেন। তবে ভাত আর ডাল যত খাইতে পারেন।
মেয়েটা স্মিত হাসল। বলল
— মডিফাইড বুফে?
স্মিত হাসি দিয়ে সম্মতি জানালাম। এরপরে দোতলায় উঠলাম। এখানে খাবারের দুটো আরেঞ্জমেন্ট। একটি সাধারণ জনতার জন্য। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে চেয়ারটেবিল বসানো। খুব ভিড় নেই। ফলে বেশ অনেকগুলো চেয়ারটেবিলই ফাঁকা। আড়াই তলায়। মানে তিনতলায় উঠতে যে দুই সেট সিঁড়ি পেরোতে হয়, তার প্রথম সেট শেষ হওয়ার পরে আরেকটা রুম রয়েছে। এটা কিঞ্চিৎ অসাধারণ। মানে এর খাবারের আরেঞ্জমেন্ট একটু উন্নত। দামও উন্নত। তবে সুবিধা হচ্ছে, এখানে ভিড় কম।
আমরা এখানে ঢুকলাম। এখানে টয়লেটও আছে। অপরূপাকে কি তথ্যটা জানানো দরকার? নাকি নিজে গিয়ে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিব, এখানে ব্যাবস্থা আছে? সেটাই ঠিক হবে।
— আপনি বসুন। আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি। কতক্ষণের জার্নি যে হবে, কে জানে।
মেয়েটি বসল আমি সোজা টয়লেটে ঢুকলাম। খুব যে পেয়েছিল, তা না, তারপরও সেরে ফেললাম। মুখ হাত ঢুয়ে একেবারে খাবারের প্রিপারেশান নিয়েই বেরোলাম। বেরিয়ে হোঁচটটা খেলাম। মেয়েটা যে বইটা সাথে করে নিয়ে এসেছে, সেটা লক্ষ্য করিনি। করলে আগেই বারণ করে যেতাম। যাই হোক, বুঝতেই পারছেন, বেরিয়ে কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম।
একটা চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে মেয়েটা বইটা পড়ছে। মলাটের মজাদার ছবিটা সামনের লোকজন বেশ মজা নিয়েই দেখছে। লোকজন বলতে তো শুধু বয়গুলো। ওরা ফিসফিস করে কথা বলছে আর হাসছে। খাবার যে সার্ভ করে, সে লোকটা মধ্য বয়সী। তার অবস্থা বেশ বিভ্রান্ত। বুঝে উঠতে পারছে না এ মেয়ে কি টাইপের মেয়ে।
আমি বেরিয়েই দ্রুত মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম। হাত থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করলাম। মেয়েটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকাল। চোখে জিজ্ঞাসা, এমন কেন করলেন। ওকে কোন প্রশ্ন করবার সুযোগ না দিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
— প্লিজ, এখানে এই বই পড়বেন না।
— কেন?
— কারণ এখানে, সবার সামনে এই বই পড়লে, সবাই আপনাকে অন্য চোখে দেখছে।
— কি চোখে?
এই মেয়ে কি বলদ নাকি? সব কি ভেঙ্গে বলা যায়? আমেরিকা থেকে কবে দেশে এসেছে? রাগ সামলে নিয়ে শান্ত স্বরে বেশ স্পষ্ট করে বললাম
— সবাই আপনাকে কল গার্ল ভাবছে।
চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:০১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আসলে আমার ভাবনায় কেউই নেই।। কারন ফে্নড তালিকার ১৫০ জনের মাঝে কেউ নেই!!

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ইজ্জত কা সাোয়াল হয়ে দাড়িয়েছে ;) ডেসপারেট না হয়ে উপায় আেছ? হা হা হা

++++++++

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

হা হা হা..... চলুক....

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৫

সোহানী বলেছেন: আম্রিকার মেয়েরা এ ধরনের বই রাস্তায় কেনে............. !!!!! এখনো টের পাইনি অবশ্য.........

যাহোক চলুক..........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.