নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যান্ড দেন ইট হ্যাপেন্ড

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩০


শেখ সাদী সাহেব উদ্ধার করলেন। পোশাকের কারণে সম্ভবতঃ বেঁচে গেলাম। তবে আরেকটা ধারণার জন্ম দিলাম, আর তা হচ্ছে, উই আর কাপল। যদিও আমরা মুখে কিছু বলিনি, তারপরও ডাইনিং রুমের সবাই ধরে নিল আমরা হানিমুন টাইপ কাপল। ওদেরও দোষ দেয়া যায় না। একসাথে আছি, আর সাথে ঐ ধরনের বই, এমন একটা পরিস্থিতি আমার সামনে দেয়া হলে, আমিও ধরে নিতাম, এদের জাস্ট বিয়ে হয়েছে আর এখন ওসবের জন্য মন সারাক্ষণ ছটফট করছে।
ব্যাপারটা খুব নেগেটিভ বলছি না, বিবাহিত কাপলের জন্য বেজায় স্বাভাবিক, বাট বাংলাদেশে ওটা প্রকাশ করাটা অস্বাভাবিক। কিছুটা অশালীনও।
যাই হোক। একরাশ সন্দিগ্ধ চোখের সামনে খাওয়া দাওয়া নির্বিঘ্নেই শেষ হল। অপরূপা বেশ নির্বিকার ছিল। যা সংকোচ, তা আমার ভেতরেই কাজ করছিল। মাঝে মাঝেই আড়চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম, ওরা কি ভাবছে। প্রস নিয়ে ফুর্তি করতে বেরিয়েছি, না বেহায়া কাপল। মনে হল, পরেরটাই ভাবছে। যদিও এদের ভাবায় আমার তেমন কিছু যায় আসে না, তারপরও, বাঙ্গালী তো, দুনিয়ার কাছে ভদ্র সেজে থাকার একটা উদ্ভট ইচ্ছা সব সময় কাজ করে।
খাওয়া শেষ, হাত ধোঁয়া পর্বও শেষ। এখন? দুটো অপশান। এরপরের সময়টা এখানেই কাটানো যায়, আবার তিনতলায়ও যাওয়া যায়। এখানে আর বসতে ইচ্ছে করছে না। কিছুটা ‘বই ইফেক্ট’ আর কিছুটা তিনতলা প্রীতি। সিদ্ধান্ত অবশ্য অনেকটাই নির্ভর করছে, অপরূপা কি চায়। জানতে চাইলাম
— এখন?
— অপশান?
মেয়েটার এই একটা গুণ। খুব ছোট্ট করে কথা বলতে পারে। মাঝে মাঝে চোখে মুখে থাকে দুষ্টামির ঝলকানি। আমি যে ওর সঙ্গ বেশ এঞ্জয় করছি, ব্যাপারটা ও ভালোই বুঝেছে। সম্ভবতঃ আমার সাথে সময় কাটাতে ওর তেমন আপত্তিও নেই। বাট… ঘটনা কি এপর্যন্তই থাকবে? হু নোজ। আপাততঃ আমার কাজ, চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। দারুণ ভদ্র, সভ্য এক বাঙ্গালীর চরিত্রে অভিনয় করা। এমন কিছু না করা, যা দেখে মনে হতে পারে, আমি গায়ে পড়া টাইপ। তারপরও শেষ রক্ষা হবে, এমন না। এনিওয়ে, আলাপে ফেরা যাক। জানালাম
— এখানে বসা যায়, আবার তিনতলায়ও যাওয়া যায়।
— আর আপনি তিনতলায় যেতে চাইছেন।
এধরনের মেয়ের প্রেমে না পড়ে পারা যায় না। হয়তো কাহিনীর হ্যাপি এন্ডিং হবে না, বাট সময়টা দারুণ কাটে। ওর এই চট করে ধরে ফেলা ব্যাপারটা রিয়েলি এঞ্জয়িং। মুখ দেখে আর নয়তো আমার শব্দ চয়ন থেকেই বুঝে যায়, কি বলতে চাইছি। স্মিত একটা হাসি দিয়ে উত্তর দিলাম
— জ্বি। ওখানকার বাতাস বেশ পুষ্টিকর। রেলিংয়ে ভর দিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকতে দারুণ লাগে।
— ওকে, চলুন।
রওয়ানা দিলাম। এখন আটটা দশ। ডেক আর সিঁড়িতে আলো আছে। আলোর পরিমাণ খুব খারাপ না। সেই আলোতে লোহার সরু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসলাম। এলাকাটা একেবারে খালি বলা যায় না। চেয়ারগুলো অর্ধেক ভর্তি, অর্ধেক খালি। রেলিঙে বেশ কিছু লোক দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে। একটা ছেলে চা কফি বিক্রি করছে। কিছু আছে ঝালমুড়ি ওয়ালা। সিগারেট আর চকলেট ওয়ালাও আছে।
এখানে আসলে কয়েক ধরনের মানুষ থাকে। বেশ কিছু থাকে যারা এখানে রাখা চেয়ারগুলোতে বসে থাকে। ফেরিতে বাস ওঠার পরেই ওপরে চলে আসে। পত্রিকা ফত্রিকা কিছু থাকলে তা সামনে মেলে ধরে। হয়তো পড়েও। এরপরে মাঝে মাঝে নদী দর্শন। বাথরুম পেলে গেল, আর নয়তো পুরোটা সময় এখানে বসে কাটিয়ে দেয়। কিছু থাকে রেলিঙে পার্টি। দুই বন্ধু আর নয়তো কপোত, কপোতী। হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নদী দেখেই পুরো সময়টা পার করে দেয়। আর বন্ধু বান্ধবের গ্রুপ থাকলে চলে আড্ডা। কখনো পেপার বিছিয়ে গোল করে বসে আর কখনো রেলিঙে হেলান দিয়ে।
ফেরির চালক থাকেন তিনিতলায়। তাঁর রুমের দুই পাশ দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর নদী দেখা যায়। ওখানে যাওয়া সাধারনতঃ বারণ। তারপরও, কেউ কেউ চলে যায়। এদেশে ম্যানেজ সিস্টেমে সবই সম্ভব।
অপরূপা ঠিক কোন টাইপ, জানি না। বসে বসে বই পড়া টাইপ? না রেলিঙে দাঁড়ানো টাইপ? আগে কি ফেরিতে কখনও গিয়েছে? দূর, এতোসব ভেবে কি লাভ, সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই হবে। বাই দ্যা ওয়ে, উনার নামই তো জানা হয়নি। জিজ্ঞেস করব? নামের চেয়ে অন্য একটা ব্যাপার আমার বেশি জানতে মন চাইছে। ইজ শী ইন্টেরেস্টেড? প্রেম না… ইউ নো...। এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার জানতে না পারলে মনে একটা খচখচে ভাব থেকে যাবে, লাইক... একা কেন? ফ্যামিলি কোথায়? আরও একটা তথ্য, যদিও জরুরী না, তারপরও জানতে পারলে ভাল হয়। ইজ শী এনগেনজড?
— রেলিঙে?
কথাটা শুনে নতুন করে পর্যবেক্ষণ করলাম। দেখা গেল দুজন কপোত কপোতী রেলিঙে দাঁড়িয়ে আছে। আর তিনটে গ্রুপ মনে হচ্ছে বন্ধু। ফাঁকা দেখে একটা জায়গার দিকে ধীরে ধীরে একটা জায়গায় এগিয়ে গেলাম। যদিও অনেকক্ষণ ধরে একসাথে আছি, তারপরও একে অপরকে তেমন কোন প্রশ্ন করিনি। কিছুটা সময় তো গেল ভদ্রতার ঝামেলায়। আর এখন পারছি না, কোন কথায় কি ভাবে?
এখনও মনে হয় আকাশ বাতাস নিয়েই কথা হবে। চাঁদ উঠেছে। ওটা নিয়েও কাব্য করা যায়। নামটা জানতে পারলে ভাল হত। জিজ্ঞেস করব কি না ভাবছি, এমন সময় প্রশ্নটা আসল
— আপনি কি করেন?
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ব্যক্তিগত টাইপ আলাপ শুরু করা যায় তার মানে। সামনের নদীর দিকে তাকিয়ে বললাম
— ডাক্তার।
— ব্যাস?
— মানে?
— মানে সিম্পল ডাক্তার? না…
হেসে ফেললাম। একসময় ডাক্তার ব্যাপারটা বেশ বড়সড় যোগ্যতা হলেও এখন আর তা নেই। এখন এর সাথে আরও কিছু যুক্ত হলে, তবেই তা যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। স্মিত হেসে বললাম
— আপাততঃ সিম্পল ডাক্তার।
— মানে কমপ্লিকেটেড হওয়ার পথে?
— জ্বি। কার্ডিওলজিতে স্পেশালাইজেশান করছি।
— ওয়াও। অ্যান্ড দেন?
প্রশ্নটার মানে বুঝলাম না। ব্যক্তিগত লাইফে কি করব? না পেশাগত জীবনে? মনে তো হচ্ছে দ্বিতীয়টা। আর সেটা নিয়ে আলাপ করতে এখন একদম ইচ্ছে করছে না। কোনদিকে কাহিনী ঘোরাবো? বল ঐ কোর্টে পাঠাই।
— দেন, অ্যাজ ইউজুয়াল। জীবন যুদ্ধ।
স্মিত একটা হাসি দিল। ভদ্রতা টাইপ। এবার আমার পালা। যেহেতু আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে প্রশ্ন করেছে, সো, আই ক্যান প্রসিড। বললাম
— আপনার সম্পর্কে বলুন।
— আমি রিয়া।
— ব্যাস?
দুষ্টুমির একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল। বলল
— আর কি জানতে চান বলুন?
— সে তো বিশাল লিস্ট। কি করেন, বাংলাদেশে কেন? আই মিন, বেড়াতে? না…
— এখানে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছি। বাংলাদেশে কেন? নট সিওর। বলতে পারেন আমার ওপর এক্সপেরিমেন্ট চলছে।
কাহিনী বেশ রহস্যময় টার্ন নিচ্ছে মনে হচ্ছে। পুরোটা জানতে ইচ্ছে করছে, অ্যান্ড আই থিংক, জিজ্ঞেস করলে মাইন্ড করবে না। তবে মনে হচ্ছে কাহিনীতে সেন্টিমেন্টাল কোন টাচ আছে। তাই জানতে চাওয়াটা খুব সাবধানে করতে হবে। অপেক্ষা করাটা বেটার, বাট রিস্কিও। তাই একটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে রিয়ার দিকে তাকালাম। জায়গাটা খুব অন্ধকার না। রাত হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু লাইট জ্বালানো হয়েছে, তবে তেমন আলো হচ্ছে না। সেই আলো আধারিতে আমরা দুজন বেশ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গল্প করছি। কিছুটা মুখে বলছি, কিছুটা চেহারা বলে দিচ্ছে। আমার চেহারায় তখন বোল্ড লেটারে একটা প্রশ্ন লেখা ছিল। ‘কি এক্সপেরিমেন্ট?’ মনে হয় আমার চেহারা পড়া যাচ্ছে। বলল
— আমাকে বাঙ্গালী বানানোর এক্সপেরিমেন্ট চলছে।
— আরেকটু পরিষ্কার করে বলা যায়?
এতক্ষণ সামনের দিকে নদী দেখতে দেখতে কথা বলছিল রিয়া। এবার রেলিঙে হেলান দিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাল। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে। বলতে থাকল
— আমার বাবা এবং মা দুজনেই বাঙ্গালী। মা ডাক্তার, বাবা ইঞ্জিনিয়ার। প্রেম করে বিয়ে এরপরে আমেরিকায় প্রবাস জীবন। সেটাও ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। উনারা ওখানে সেটল করেছেন ঠিকই, বাট, আমেরিকান হতে পারেননি। যাওয়ার সময় বাঙ্গালী ভ্যালু সাথে করে নিয়ে গেছেন। সো, বাংলায় কথা বলতে হবে, বাঙ্গালী ড্রেস পড়তে হবে, ফ্রেন্ডও পারলে বাঙ্গালী জোগাড় করতে হবে অ্যান্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, সাদা চামড়ার কারো সাথে, নো ইটিস পিটিস।
হেসে ফেললাম। বললাম
— আর সেটাই করে ফেললেন, আই গেস।
— ঠিক তা না। আসলে ওখানকার প্রেম তো ঠিক এখানকার প্রেমের মত না। সো… এখানকার প্রেমকে স্ট্যান্ডার্ড ধরলে, ওটা অনেকটা হ্যাং আউট টাইপ ব্যাপার বলতে পারেন। ভাল লাগল, ঘুরলাম ফিরলাম, দেন...
— দেন?
— দেন… ইউ নো… উই…ডেটেড।
চলবে

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এন্ড দেন হোয়াট হ্যাপেনিং স্টির ইন ডার্ক ;) হা হাহা

চলছে মজায় গতিময়তায়

++++

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: পরবর্তী পর্ব দিলাম

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

নিউ সিস্টেম বলেছেন: দারুন লিখেছন ভাই।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এরপর অপেক্ষা আবার নতুন কোন পর্বের। প্রশংসা একটু করে যাই। অনেক ভাল লাগল লিখাটি।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এসে গেছে পরবর্তী পর্ব। সাথে থাকবার জন্য ধন্যবাদ

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯

রুহুল আমিন খান বলেছেন: waiting.........................

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ওয়েটিং ওভার

৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:০৮

শুভ_ঢাকা বলেছেন: ভাই আমি আপনার লেখার fan. এই সিরিজটিও অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। অনেক দিন হয় পরবর্তী পর্ব দিচ্ছেন না। আশা করি সময় সুযোগ করে লেখা দিবেন।

আপনার মঙ্গল কামনা করি।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দিলাম পরবর্তী পর্ব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.