নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিথি

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:১৯


নীলাকে আজকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। প্রতিদিনই দেখায়, বাট আজকে কেন যেন একটু বেশি ভাল লাগছে। কথাটা বলব কি না ভাবছি এমন সময় নীলাই জিজ্ঞেস করল
— কি ব্যাপার?
বেশ অবাক হলাম। নীলা এই মুহুর্তে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। আমি পেছনে, বিছানায় আধ শোয়া হয়ে আছি। ঘাড় না ঘুরিয়েই প্রশ্নটা করল নীলা। ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি, ব্যাপারটা এমন না। মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছি, বেশ ক্যাজুয়ালি। তারপরও ধরে ফেলল যে আজ আমার দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে। একটু বেশি আড় চোখে ওকে দেখছি। এই মেয়েকে নিয়ে এই হয়েছে এক সমস্যা। চালাকি করবার উপায় নেই। এনিওয়ে, ব্যাপারটা স্বীকার করে নেয়াই ভাল।
— তোমাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।
— ওটা না।
এবার অবাক হলাম। আরও কিছু কি বলতে চাচ্ছি? স্ট্রেঞ্জ? নিজের অজান্তেই ভ্রু কুচকে গেল। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি, পরে চিন্তাটা বাদ দিলাম। জিজ্ঞেস করলে বড় জোর একটা মিস্টি হাসি দিবে কিন্তু উত্তর দিবে না। বিছানায় বসে এতোক্ষণ পত্রিকা পড়ছিলাম। সেটার দিকে আবার নজর ফিরালাম। এবং বুঝতে পারলাম, অরণ্যে রোদন। লেখাগুলো বাংলাতেই লেখা, পড়েও যাচ্ছি ঠিকঠাকমত, কিন্তু মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বাট কেন? কি নিয়ে এতো ভাবছি? 'আমি নীলাকে কি বলতে চাই’ সেটা নিয়ে? না সেই ব্যাপারটা? পরে ভাবা যাবে। নীলা ঘর থেকে বেরিয়ে যাক, তারপর ভাবব।
নীলা ইজ ডান। ওর সাজগোজ সম্ভবতঃ শেষ। উঠে দাঁড়াল। আয়নায় শেষবারের মত নিজেকে আরেকবার দেখল। এরপরে ধীরে ধীরে বেডরুমের দরজার দিকে এগোল। দরজাটা বিছানার পাশেই, সো আমার পাশ দিয়েই ওকে যেতে হচ্ছে। দরজার হাতলে হাত রেখে আমার দিকে তাকাল। যদিও আমি নীলার দিকে তাকিয়ে নেই, তারপরও বুঝতে পারছি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা ওর নিয়ম। বাইরে যাওয়ার সময় দরজায় এসে আমার দিকে তাকিয়ে ‘আসি' বলে তারপরে বেরোয়। সেই সময়টা আমিও ওর দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিই। কি করব? তাকাব ওর দিকে?
নীলা এখনও দাড়িয়ে আছে। সো, আই হ্যাভ নো অপশান। বিছানায় উঠে বসলাম। ধীরে ধীরে নীলার দিকে তাকালাম। ভ্রু নাচিয়ে সেই একই প্রশ্ন আবার করল, ‘কি ব্যাপার?’ আমিও কিছুটা স্মার্ট সাজবার চেস্টা করলাম। ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্নটা ফেরত দিলাম, ‘কি ব্যাপার?’

আই থিঙ্ক আপনাদের বুঝতে খানিকটা সমস্যা হচ্ছে। ওকে। লেটস ইন্ট্রোডিউজ আওয়ারসেলভস। আমি ইমরান। পেশায় ডাক্তার। একটা প্রাইভেট হাসপাতালে কনসাল্টেন্ট হিসেবে আছি। ইনকাম মন্দ না। দেখেতেও মামদো ভুতের মত না। ইন অ্যা নাট শেল, বিয়ের বাজারে পাত্র হিসেবে জিপিএ ফাইভ টাইপ বলতে পারেন। বিয়ের বাজার কেন বললাম? একটু পরে বলছি।
আপাততঃ নীলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। নীলা আমার স্ত্রী। সুন্দরী, শিক্ষিতা, গুণবতী, অ্যানাদার জিপিএ ফাইভ। বছর খানেক হল আমাদের বিয়ে হয়েছে। অ্যান্ড ইট ওয়াজ নট অ্যা লাভ ম্যারেজ। যথারীতি নিয়ম কানুন মেনে হওয়া পিওর সেটল ম্যারেজ। মেয়ে দেখতে যাওয়া, মেয়ের সঙ্গে মৃদু আলাপ, এনগেজমেন্ট, বিয়ে, বৌভাত ইত্যাদি ঘটনা পার করেই এই বিয়ে। আন্ড দ্যাটস ইট, বিবাহ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলবার মত আর তেমন কিছু নেই।
এরপরে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটে। বিয়ের রাতেই নীলা জানায়, শি হ্যাজ অ্যান অ্যাফেয়ার। ইয়েস, হ্যাজ, নট হ্যাড। ছোটবেলায়, আই মিন ক্লাস এইট না নাইনে প্রেমে পড়া। এরপরে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম চলছিল। রিসেন্টলি ব্যাপারটা জানাজানি হয়।
ইদানিং যদিও প্রেম তেমন অপরাধ না, তারপরও নীলার বাবা বিগড়ে বসলেন। আর এরপরের ঘটনাও গতানুগতিক। রক্ষণশীল বাবার ওভার অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠা। ‘ওভার মাই ডেডবডি’ টাইপ মেলোড্রামা। ছেলেটা মন্দ ছিল না। বাট গোয়ার বাবা কিছুতেই সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন না। ঐ পরিবারে এখনও উনার কথাই শেষ কথা। সো, মেয়ের জন্য পাত্র খোজা সাব্যস্ত হল।
নীলাও সেই বাবারই মেয়ে। বেকে বসেছিল। পাত্র যখন একাকী কথা বলতে চায়, তখন সে তার প্রেমের কথা জানিয়ে দেয়। বেশ কয়েকটা বিয়ে ভেঙ্গেও যায়। এভাবেই চলছিল। ছেলেটার সাথে পালিয়ে যে বিয়ে করবে, তার উপায় ছিল না। অ্যাজ ছেলেটা সেই মুহুর্তে ছিল বিদেশে। পড়াশোনা করতে গেছে। তখন ফিরলে পড়াশোনা যেহেতু শিকায় উঠতো, তাই ফেরেনি। অনেকটা জোর করেই নীলাকে বিয়ে দেয়া হয়। অ্যান্ড দ্যাটস ইট।
সো দ্যা বটম লাইন ইজ, নীলার অমতে এই বিয়ে। আর এই তথ্যটা সে আমাকে প্রথম রাতেই জানিয়ে দেয়। আগে কেন বলেনি জানতে চেয়েছিলাম। উত্তর পাইনি, মাথা নিচু করে ছিল। কারনটা আমি খানিকটা গেস করতে পারছি। এর আগে যতজনকেই ও জানিয়েছে, প্রত্যেকেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। এরপরে আরেকজন দেখতে এসেছে। এই ফর্মুলায় বাধ সাথে নীলার বাবার স্বাস্থ্য। মৃদু হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপরে সম্ভবতঃ নীলা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। বা বলা যায় রিস্ক নেয়। ঠিক করে বাবার পছন্দেই বিয়ে করবে, বাট সোহেল ফিরে আসলেই বিয়ে ভেঙ্গে বেরিয়ে যাবে।
তথ্যটা আমাকে বিয়ের রাতেই জানিয়ে দেয়। পুরো ব্যাপারটার জন্য সরি বলে ক্ষমা চায়।
কথাগুলো শোনার পরে যথারীতি মেজাজ বিগড়েছিল, বাট চিতকার চেচামেচি করিনি। এটা আমার বদভ্যাস। রেগে গেলে আমি চুপ হয়ে যাই। নিজেকে শান্ত হওয়ার সময় দিই। মোস্ট ইম্পরটেন্টলি, রাগের মুহুর্তে আমি কোন সিদ্ধান্ত নিই না। রাগ প্রকাশও করি না। রাগ নামবার পরে সিদ্ধান্ত। সেদিন আর তেমন কথাবার্তা হয়নি আমাদের মাঝে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বুঝলাম, আমার হাতে মাত্র তিনটা রাস্তা আছে।
এই মুহুর্তে, প্রথমটা পত্রপাঠ বিদায় টাইপ। পুরো ব্যাপারটা তখন সবাই জানবে। নীলার বাবা বেশ কিছু গালিগালাজ খাবেন। তাতে আমার তেমন কোন লাভ হবে না, বরং নীলা কিছুটা সমস্যায় পড়বে। কপাল খারাপ থাকলে নীলার বাবার আরও একটা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে আই ডোন্ট কেয়ার টাইপ। বিয়ে যখন হয়েই গেছে, ফরগেট দ্যা পাস্ট। এখন তুমি আমার বউ, এটাই শেষ কথা।
আর তৃতীয় অপশান ছিল, সোহেল ফিরে না আসা পর্যন্ত একসঙ্গে কাটান। অ্যান্ড দেন আসল হিরো ফিরে আসবার পরে ডিভোর্স দিয়ে নায়ক নায়িকার মিলনে সাহায্য করা।
প্রথমটা চুজ করতে বিবেকে লাগল। হাজার হলেও সমস্যায় পড়ে একটা মেয়ে হেল্প চাইছে। না করাটা ইনহিউম্যান হয় যেত।
আর সেকেন্ড অ্যান্ড থার্ড অপশান তো একই। পার্থক্য তো শুধু রিলেশানশীপের ধরনে। একটায় পুরোপুরি বায়বীয় আর অন্যটায় শারীরিক তবে অনিচ্ছায়। দ্বিতীয়টা মানতে মন চাইল না। সো?
আই চুজ দ্যা থার্ড অপশান। আর সেই মোতাবেক, গত একবছর আমরা একঘরে থাকি। অ্যান্ড দ্যাটস ইট। ব্যাপারটাকে উদারতা বলেন আর অনোন্যোপায় বলেন, আই হ্যাড নো অপশান। ওয়ান ইয়ার উইথ মাই সো কলড ওয়াইফ উইথ নো রোমান্স অ্যান্ড নো 'ডট ডট’। বাট… সামথিং হ্যাপেন্ড। ঠিক প্রেম না।
প্রথম কিছুদিন শীতল সম্পর্ক থাকলেও দেখতে দেখতে সুন্দর একটা বোঝাপড়া টাইপ রিলেশান তৈরি হয়ে যায় আমাদের মধ্যে। কয়েকদিনের ভেতরেই নীলা বুঝে গেল আমার কি কি পছন্দ। ঠিক কখন চা খাই, কখন পত্রিকা পড়ি, টিভি কখন দেখি, কোন চ্যানেল পছন্দ। এসব আর কি। এতোদিন এসব নিজে থেকেই করেছি। চায়ের জন্য হাঁক দিয়েছি কিংবা রিমোট নিয়ে নিজেই চ্যানেল পাল্টেছি। কিন্তু এখন আর এসব করতে হচ্ছে না।
রিভার্স ইজ অলসো ট্রু। নীলার রুটিনও আমার মুখস্থ। ওর মুখ দেখেই বুঝে যাই, আজ ওর বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে। ঘুরিয়ে আনি। মজা লাগে যখন ওর বাবার বাসায় দাওয়াত খেতে যেতে হয়। মুখ করুণ করে সামনে দাড়ায়। বলতে চায়, 'ওখানে যেয়ে একটু সুখী মানুষের অ্যাক্টিং কোরো প্লিজ।’ আমি করি। বেডরুমের টিভিটার রিমোট আমার হাতেই থাকে। ওর পছন্দের অনুষ্ঠানের সময় আড়চোখে আমার দিকে তাকায়। বুঝে যাই, এখন ওর রিমোট চাই। যদিও খুব সিলি শোনাচ্ছে, বাট বিলিভ মি, ইটস ইঞ্জয়িং। ওর জন্য কিছু করে, ওকে খুশী করতে মন্দ লাগে না। ইজ ইট লাভ? জানি না।
এনিওয়ে, দ্যাটস ইট। কমবেশি এভাবেই আমাদের সময়টা পার হয়েছে। ঝগড়া ঝাটি নেই, চিতকার চেচামেচি নেই। বাইরে থেকে সুখের সংসার মনেই হলেও, ইট ইজ নট। সুখেরও না, সংসারও না।
আসলে নীলা যে ঝগড়া করে না, তার কারণ ও নিজেকে অতিথি ভাবে। কৃতজ্ঞতাও একটা কারণ হতে পারে। আর আমি যে করি না, তার কারণ? আই থিঙ্ক মেইনলি অতিথি ফ্যাক্টর। তারপরও... আই থিঙ্ক কিছু একটা আছে।
গতকাল রাতে নীলা তথ্যটা জানাল। সোহেল আসবে দিন সাতেক পরে। সো, আমাদের এই নাটক শেষ হতে আর দিন সাতেক বাকী আছে। এমন না যে সোহেল আমাদের ভেতরে ছিল না। ছিল, এবং বেশ ভালভাবেই ছিল। সোহেলের সাথে ও রেগুলার কথা বলে। আমিও জানি, আজ হোক কাল হোক নীলা চলে যাবে। সো, ভেবেছিলাম, কথাটা শোনার পরে তেমন কোন রিয়াকশান হবে না।
বাট হল। যতই অস্বীকার করার চেস্টা করি, আমার চোখ আর মুখে স্পস্ট অক্ষরে লেখা আছে সেকথা। নীলা যে একটু আগে জিজ্ঞেস করল ‘কি ব্যাপার?’ ওটা এই কারনেই। আর আমি যে অস্বীকার করার চেস্টা করছিলাম, তার কারণ তো বুঝতেই পারছেন। আত্মসম্মানে লাগছে। যে মেয়ে আর কিছুদিন পরে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, তার জন্য ফিল করছি? ছি।
এনিওয়ে, গল্পে ফিরে আসি। নীলা বাইরে বেরোতে গিয়েও বেরোল না। দরজা থেকে ফিরে এল। বিছানায় বসে আমার হাতটা ধরল। চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল
— এনি প্রবলেম?
অ্যান্ড দেন সামথিং হ্যাপেন্ড। নীলার হাতটা দুহাত দিয়ে জাপটে ধরলাম। বললাম
— আই লাভ ইউ।




আমাদের সো কলড ম্যারিড লাইফ বিয়ের মাস খানেকের ভেতরেই একটা শেপ নিয়ে নেয়। সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি যে সোহেল না ফেরা পর্যন্ত নীলার সাথে থাকছি, তখন ভেবে দেখলাম সময়টা হাসিমুখে কাটানোই বেটার। সো ধীরে ধীরে ঠিক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক না হলেও, পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।। নট ব্যাড। অ্যাটলিস্ট সময়টা বিরক্তকর কাটে না।
বিয়ের কিছুদিনের ভেতরেই বাড়ীর কাছের একটা কিন্ডারগার্ডেনে টিচারের চাকরী যোগাড় করে ফেলে। ক্লাস টু’র ক্লাস টিচার। সো সকাল সকালই বেরোতে হয়। আমার বেরোনো একটু দেরীতে। সাড়ে ন’টা নাগাদ। তাই ছুটির দিন ছাড়া একসাথ ব্রেকফাস্ট ইউজুয়ালি করা হয় না। যদিও বাসায় ফুল টাইম বুয়া আছে, তারপরও সকালে উঠে ব্রেফফাস্ট ও নিজেই রেডি করে। এরপরে আমি ঘুমাচ্ছি দেখলে, আমাকে না জাগিয়ে নীলা একা একা ব্রেকফাস্ট সারে। আমার নাস্তা টেবিলে তৈরি থাকে। ‘এই ওঠো, আর কত ঘুমাবে’ টাইপ কোন সিলি দাম্পত্য টাইপ ব্যাপার নাই। দুজনেই নিজের মত চলি। স্কুলের কাজ দু'টার ভেতরেই শেষ হয়ে যায়। আর স্কুল যেহেতু বাড়ীর কাছেই, তাই দুপুরে বাসায় ফিরে আসে। আর এরপর পুরোটা সময়ের জন্য টিপিক্যাল গৃহিনী। আমার ঠিক নেই। দুপুরে কখনও ফিরি কখনও ফিরি না। না ফিরলে অবশ্য জানিয়ে দিই। রাতেও ফেরার ঠিক নেই। রুগীর ওপর নির্ভর করে। তবে রাতের খাবারের জন্য ইউজুয়ালি ও ওয়েট করে। অ্যাট লিস্ট খুব বেশী দেরী না হলে।
তাই এমন ছাড়া ছাড়া টাইপ রিলেশানশীপের ভেতরে প্রেম কিভাবে আসল, আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না। হাও কুড আই সে সামথিং লাইক দিস? কথাটা শুনে বেশ খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল নীলা। এরপরে ওর অন্য হাতটা আমার হাতের ওপর রাখল। সেই হাত রাখায় কিছু একটা ছিল। সেটা কি, বলতে পারব না, তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলাম। বড় একটা নিশ্বাস টেনে একটা ভ্যাবাচ্যাকা টাইপ হাসি হেসে বললাম
— ডোন্ট ওরি। আই উইল হ্যান্ডল মাইসেলফ।
নীলা ধীরে ধীরে উঠে দাড়াল। ধীর পায়ে দরজা পর্যন্ত গেল। এবার আর না তাকিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।


এদিকে আরেকটা ঝামেলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে দিন পাঁচেক ছুটি নিয়েছিলাম। ছুটিটা আজকে থেকেই শুরু। সো চাইলে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে পারি। বাট সকালে যা ঘটল, এরপরে আর ঘুম আসবে না। পত্রিকা পড়াটাও শিকায় উঠে বসে আছে।টিভি দেখতেও ভাল লাগছে না। ঘুরে ফিরে কেবল সকালের ঘটনাটা মনে পড়ছে আর বিরক্ত লাগছে। হাউ কুড আই ডু ইট?

বিগড়ানো মেজাজ নিয়েই ডাইনিং টেবিলে বসলাম। আমাদের সো কলড দাম্পত্য জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন মোতাবেক ডাইনিং টেবিলে খাবার তৈরি ছিল। খেয়ে ফেললাম। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।ছুটিটার কি করব। ছুটিটা কেন নিয়েছিলাম? সেটা নিয়েও এখন কনফিউজড ফিল করছি। বেশ, খুলেই বলি। সেদিন এক টুরস ট্রাভেলস কোম্পানীর ফোন এসেছিল। অ্যাজ ইউজুয়াল, 'স্যার প্যাসিফিক ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস থেকে আমি পুস্প বলছি। আমাদের একটা প্যাকেজ আছে…’।
এসব প্যাকেজের ডিটেলস সাধারনতঃ আমি শুনি না। সেদিন কি যে হল, রাজী হয়ে গেলাম। কক্সবাজারে চার রাত তিন দিনের ট্যুর প্যাকেজ। কেন কাজটা করলাম? নীলা নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার শখ হয়েছিল? না নীলাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম? যে কারনেই করে থাকি, ব্যাপারটা নিয়ে বেশ লজ্জিত ফিল করছি। কিছুটা বিরক্তও। ইজ ইট অ্যা সাইন অফ লাভ? আই ডোন্ট নো।
ব্যাপারটা নীলার ভাল লাগবে কি না, ভাবিনি। কিংবা হয়তো ভেবেছি। অবচেতন মন হয়তো ভেবেছিল, নীলার ভাল লাগবে। নীলা যদিও ঠিক সেই অর্থে স্ত্রী না, তারপরও একসাথে থাকতে থাকতে হয়তো… আই অ্যাম নট সিওর। মে বি, ওর সাথে একসাথে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম।
এনিওয়ে গতকাল আমাদের টিকিট দুটো নিয়ে সেই ট্যুর কোম্পানী থেকে একজন লোক এসেছিল। জানাল আগামীকাল, দ্যাট ইজ আজকে রাত আটটা থেকে ট্যুর শুরু। সময়মত বাসে পৌছে যাওয়া পর্যন্ত আমার দ্বায়িত্ব। বাকীটা ওদের রেসপনসিবিলিটি। বাসে ওদের কোম্পানীর একজন থাকবে। বাকীটা সে বুঝিয়ে দেবে।
এই মুহুর্তে আমাকে দুটো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কক্সবাজার যাব কি না। গতকালের সোহেলের ফোনের পরে একসাথে যাওয়া তো আউট অফ কোয়েশ্চেন। যদি যাই, একাই যাব। ওর… ক্যান্সেল ইট। আর যদি সেটা ক্যান্সেলই করি, দেন ছুটিটা নেয়ার কোন মানে হয় না। সো সেকেন্ড যে ডিসিশান নিতে হবে, ছুটি ক্যানসেল করব কি না।
আজকের সকালটা হাতে রেখেছিলাম। লাগেজ প্যাক আর কিছু কেনাকাটা থাকলে সেটা সেরে ফেলার জন্য। প্ল্যান ছিল গতকাল রাতে নীলাকে কথাটা জানাব। ব্যাপারটা নীলাকে আগে কেন বলিনি? হয়তো নীলাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, কিংবা হয়তো আনইজি ফিল করছিলাম, কি ভাববে।
যাই হোক গতকাল সোহেলের ফোন সব কিছু ওলট পালট করে দিল। অনেস্টলি স্পীকিং, তথ্যটা শুনে আপসেট হয়েছিলাম, কিন্তু কেন? ও যে চলে যাবে, তা তো আর আমার অজানা ছিল না। আর আজকে সকালে যা করলাম, রিয়েলি বিয়ান্ড মাই ইমাজিনেশান। হাউ কুড আই সে সামথিং লাইক দিস? বিলিভ মি, আমি এমন একটা কথা কেন বললাম সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। কথাটা কি সত্যি? আর সত্যি হয়ে থাকলে প্রেমে পড়লাম কখন?
লিভ ইট। এখন এসব নিয়ে ভাবতে ভাল লাগছে না। মাথা ঠান্ডা করার জন্য হলেও হাসপাতাললে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ছুটির ব্যাপারটা নীলা জানানো না হলেও অফিস জানে। সো ফোন করে জানিয়ে দিলাম, অফিসে আসছি।

প্রথম কয়েকটা রুগী দেখার সময় কিছুটা আন মাইন্ডফুল ছিলাম। এরপরে কাজে ঢুকে গেলাম। দুপুরে বাসায় গেলাম না। হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকেই খেয়ে নিলাম। এখানে আমাদের একটা রেস্টরুম আছে। ওখানে ঢুকলাম। ঘুমানোর চেস্টা করলাম। এক্ষেত্রে আমার একটা অব্যার্থ ওষুঢ আছে। টিভি। টিভি দেখতে বসলেই আমার ঘুম পায়। আজকেও ব্যতিক্রম হল না।
ঘুমটা ভাঙ্গল মোবাইলের আওয়াজে। ট্যুর কোম্পানী থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করলাম। টিপিক্যাল ফাইনাল কল। আটটায় জার্নি শুরু। আমাকে পিক আপ করতে গাড়ী পাঠাবে কি না। বারণ করলাম। জানালাম আমি পৌছে যাব। ফোনটা রাখবার পরে আবিস্কার করলাম, যেতে ইচ্ছে করছে। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। একাই।
সমস্যা হচ্ছে, বাসায় গেলেই এখন নীলাকে ফেস করতে হবে। আর সেটা এখন একেবারেই ইচ্ছে করছে না। সো? বিকেলের সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করতে বলে বেরিয়ে পড়লাম। একটা স্যুটকেস আর কিছু পোশাক কিনলাম। এমন সময় ব্যাপারটা মনে পড়ল। টিকিট বাসায় রেখে এসেছি। শিট। হাতে যদিও এখনও কিছু সময় আছে, তারপরও বাসায় যেতে মন চাইছে না। ট্যুর কোম্পানীকে ফোন করলাম। টিকিক হারিয়ে ফেলেছি টাইপ একটা গল্প ফাদলাম। রিসেপশানিস্ট জানাল, সমস্যা নেই। ট্যুর কো-অর্ডিনেটারেরে কাছে একটা ডুপ্লিকেট কপি আছে। আমাকে শুধু সময়মত পৌছে যেতে হবে।
কেমন রিলিভড ফিল করলাম। কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ টাইপ ফিলিং আসছে। সেই স্টুডেন্ট লাইফে গিয়েছিলাম। এরপরে আর যাওয়া হয়নি। ভালই লাগবে, আই থিঙ্ক। বাট দ্যা ইম্পরট্যান্ট থিং ইজ, সকালের ব্যাপারটা নিয়ে আর এম্ব্যারাস ফিল করছি না।
নীলাকে ফোন করতে হবে। আগামী পাচদিন যে থাকছি না, কথাটা জানাতে হবে। কি এক্সকিউজ দিব? সত্যিটা বলব? কি দরকার?
ট্যাক্সি নিলাম। ফোনটা করতে গিয়েও করতে পারছি না। আসলে এক্সকিউজ ঠিক করে উঠতে পারছি না। ফ্রেন্ডদের সাথে বাইরে যাচ্ছি বলা যায়। নীলাকে যতটা চিনেছি, আমি ডিটেলস বললে শুনবে, না বললে জানতে চাইবে না। কেবল 'ওকে' বলে মেনে নেবে।
এসব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে একসময় দেখলাম বাস স্টপেজে পৌছে গেছি। সিদ্ধান্ত নিলাম রাত দশটার দিকে নীলাকে ফোন দিব।
আমার সবেধন নীলমনি লাগেজটা নিয়ে ধীরে ধীরে বাস কোম্পানীর ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করলাম। অ্যান্ড দেয়ার ওয়েটেড দ্যা সারপ্রাইজ। নীলা।



অবশেষে কিচ্ছুক্ষন আগে কক্সবাজার পৌছালাম। হঠাৎ নীলার আগমনে যেমনটা আশা করেছিলাম, তেমন কিছু হয়নি। ‘আমাকে না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’ টাইপ পথে তেমন কোন মেলোড্রামা হয়নি। বাস কোম্পানীর ওয়েটিং রুমে নীলা বেশ শান্তই ছিল। ব্যাখ্যা দিব কি না এমনটা যখন ভাবছিলাম, তখন নীলাই কথা বলল। সাবলীল ভাবেই বলল।
— রাতে খেয়েছো কিছু?
নীলার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেস্টা করলাম, স্বাভাবিক প্রশ্ন? না আলাপচারিতা শুরুর চেস্টা? । মনে হল নির্দোষ জিজ্ঞাসা। নীলাকে যতটা চিনেছি, এমন পাবলিক প্লেসে ঝগড়া করা টাইপ মেয়ে ও না। কৈফিয়ত ইউজুয়ালি ও চায়নি কখনও, তবে এটাও ঠিক তেমন কোন অনিয়ম আমি করিওনি। এনিওয়ে, উত্তর দিলাম।
— না। ভেবেছিলাম বাস যেখানে থামবে…
— ওকে।
‘ওকে' মানে বোঝার চেস্টা করলাম। নীলাও তখন খাবে? নাকি খেয়ে এসেছে। নিজের অজান্তেই প্রশ্নটা করে ফেললাম।
— তুমি?
মিস্টি একটা হাসি দিল নীলা। এর মানে হচ্ছে খায়নি এবং ক্ষুধা লেগেছে।
— খাবে কিছু? বাস ছাড়তে মনে হয় কিছু দেরী আছে।
— না।
— স্ন্যাকস টাইপ কিছু?
এবার সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে মিস্টি একটা হাসি দিল। ‘ডোন্ট ওরি, আই অ্যাম ফাইন’ টাইপ। এর আরও একটা মানে হচ্ছে, ও এখন খাবে না, আমার সাথেই খাবে।
প্রশ্নটা না করলেও, উত্তরটা আমার রেডি রাখা উচিৎ, আই থিঙ্ক। আর তাই নিজের অজান্তেই আমার মাথায় তখন এক্সকিউজ তৈরির ফ্যাক্টরী চালু হয়ে গেছে। দুজনের জন্য টিকিট কেটে কেন একা একা এসে হাজির হয়েছি, এর একটা যুতসই ব্যাখ্যা তৈরির চেস্টা করছি।
— স্যুটকেসে কিন্তু তোমার লাগেজও নিয়েছি।
আমার স্যুটকেসের দিকে ইঙ্গিত করে জানাল। এটা কি কেবল তথ্য? না কোন ইঙ্গিত? ব্যাখ্যা যেহেতু এখনও তৈরি করে উঠতে পারিনি, তাই এড়িয়ে যাওয়াই সেফ অপশান মনে হল। বললাম
— আই সি।
— মোবাইল সুইচড অফ দেখে তোমার অফিসে ফোন করেছিলাম।
ব্যাখ্যা? না ইঙ্গিতে কৈফিয়ত চাইছে? ঘুরিয়ে কিছু জানতে চাওয়া টাইপ মেয়ে নীলা না। ইনফ্যাক্ট নীলা যতটা চিনেছি, ওকে অ্যাভয়েড করছি এমনটা বুঝতে পারলে ও নিজেই আমাকে সুযোগটা করে দেয়। আর এখানেই নীলা যেন আজকে ঠিক নীলা নেই।
তথ্যটা দেয়াতে একটা সুবিধা হল। নিজের অজান্তেই যে চিন্তাটা কাজ করছিল, ‘নীলা জানল কিভাবে?’ সেটার এমনই কিছু একটা উত্তর ভেবেছিলাম। সেটা কনফার্ম হল।
বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে সম্ভবতঃ টিকিট গুলো পেয়ে যায়। এরপরে অফিসে ফোন করার পরে ওখান থেকে সম্ভবতঃ জানায়, আমি পাচ দিনের ছুটি নিয়েছি। অ্যান্ড দেন, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে। আমার এই ধারণা সঠিক কি না, এই তথ্যটা জানা খুব জরুরী না। যেটা জানা জরুরী তা হচ্ছে, হাউ ডিড শি ফিল।
এখানে এসেছে মানে এই না যে, ব্যাপারটায় ও রিয়াক্ট করেনি। বাট অ্যাজ ইউজুয়াল, আসল রিয়াকশানটা দেখাচ্ছে না। নকল স্বামীর সাথে কেনই বা ঝগড়া করা? কিন্তু ওর কথা শুনে কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো…।
যদি সত্যিই স্কোর সেটেল করতে এসে থাকে তবে সেটা কখন ঘটবে? আমার মন বলছে, কক্সবাজারে কিছু একটা ঘটবে। এনিওয়ে, আপাততঃ বর্তমান সামলানো জরুরী। মোবাইল কেন সুইচড অফ রেখেছিলাম, একা কেন এসেছি এমন সব প্রশ্নের উত্তর এখনও রেডি হয়নি। কি উত্তর কি দিব ভাবছিলাম এমন সময় আমাদের ট্যুর গাইড আমাকে উদ্ধার করল।
— স্যার লাগেজগুলো লকারে দিয়ে দিই?
সুযোগটা নিলাম। উঠে দাড়ালাম। গাইড মশাই, ‘আপনাকে আসতে হবে না’ টাইপ কিছু একটা বলছিল। না শোনার ভান করে লাগেজগুলোসহ বাইরে বেরিয়ে এলাম।

এরপরের কাহিনীতে উল্লেখযোগ্য তেমন আর কিছু নেই। দ্যাটস দ্যা বিউটি অফ নীলা। আমি অস্বস্তি বোধ করছি, ব্যাপারটা ও বুঝে গেছে। আই থিঙ্ক আর জানতে চাইবে না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই বোধহয় আলাপ পাল্টে ফেলল।
— লাস্ট কবে গিয়েছ?
সেফ টপিক। আলাপ এগিয়ে গেল। শুরু হল স্মৃতি রোমন্থন। 'লাস্ট কবে এসেছিলাম’, ‘কেন এসেছিলাম’, 'সেসময় কি হয়েছিল' টাইপ সিলি সব আলাপ গড়্গড় করে বলতে লাগলাম। গল্পগুলো খুব মজার হচ্ছিল কি না জানি না, বাট নীলা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছিল। আই থিঙ্ক, পরিস্থিতি ইজি করবার জন্য। কিছুটা ইজি হলও। যথারীতি স্টপেজে খাওয়া দাওয়াও সারলাম। এরপরে? নাহ, আর তেমন কিছু হয়নি। কম্বল মুড়ি দিয়ে দারুণ একটা ঘুম দিলাম। নীলার খবর বলতে পারব না। অ্যান্ড দেন? ভোর বেলা নীলার ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গল।
— উঠো, এসে গেছি।

হোটেলে পৌছে গাইড মশাই জানালেন, এখন চাইলে একটু রেস্ট নিতে পারেন, বিকেলে আমরা…
আর কি কি বলেছিল শুনিনি। দ্রুত নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। অ্যান্ড নাও ওয়েটিং ফর দ্যা ক্লাইম্যাক্স, নীলার রিয়াকশান। ইন দ্যা মিন টাইম, আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। অনেস্ট কনফেশান করব। নো বাহানা, জাস্ট দ্যা ট্রুথ। সরাসরিই স্বীকার করব, ‘তোমাকে অ্যাভোয়েড করতে চেয়েছিলাম।’
— সাওয়ারটা সেরে ফেল।
নীলা সেরে ফেলেছে। টাওয়েলে চুল মুছছে। আমার কাপড়ও বের করে রেখেছে। একবার নীলার দিকে তাকালাম। আজকে কি ওকে একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে? না আমি একটু বেশি ওর দিকে তাকাচ্ছি? মুখ ভর্তি ঝলমলে হাসি।
— দেখা শেষ?
শিট। সম্ভবতঃ একটু বেশি সময় নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইউজুয়ালি এমনটা হয় না। আজ মনটা একটু এলোমেলো ছিল বলেই হয়তো। বাট নীলার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানো এটাই তো প্রথম না। আগেও তাকিয়েছি। আর এমন বিহেভিয়ার নীলা সাধারনতঃ ইগনোর করে এসেছে। স্মিত হেসে সরে যেত। আজ করল না। ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল
— আরও কিছুক্ষণ দেখবে? দাড়িয়ে থাকব?
নীলার চোখে দুস্টামী। হেসে ফেললাম। কেন যেন বলে ফেললাম
— অফিসিয়ালি তো এখনও দেখতে পারি, আই থিঙ্ক।
বলেই বুঝলাম, বাজে কাজ করে ফেলেছি। নীলা কিছুটা ম্লান হয়ে গেল। জানতে চাইল
— এরপরে কি আর সম্পর্ক রাখবে না?
‘না' উত্তরটা দিতে গিয়েও দিতে পারলাম না। নীলার দিকে তাকালাম। ইজ শী সিরিয়াস? নীলা কি চায় সম্পর্ক রাখি? না অন্য কিছু বলতে চাইছে? নীলার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, সামথিং ইজ রং। ও নতুন কিছু বলতে চাইছে। রিথিংকিং অ্যাবাউট আওয়ার রিলেশানশীপ? আনলাইকলি, বাট… নট সিওর। টপিক চেঞ্জ করাটাই বেটার হবে।
— বেরোবে?
নীলা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপরে স্মিত হেসে বলল
— বেরোব। তোমার সাথে।
'আমি টায়ার্ড’ টাইপ কিছু একটা বলতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার ইচ্ছে করছে। ডিসগাস্টিং। আর সপ্তাহ খানেক পরে যেখানে ডিভোর্স হতে যাচ্ছে… । আই স্যুড কন্ট্রোল মাইসেলফ। অ্যান্ড দেন, সম্মতি জানালাম, বেরোব।

শীতটা বেশ জোরাল না। আবার হালকাও না। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না সোয়েটারের ওপর জ্যাকেটটা পড়ব কি না। নীলা বোধহয় আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার এই স্বভাব ওর চেনা। ঝট করে জ্যাকেটটা উঠিয়ে নিল। আমাকে আর কিছু ভাববার সুযোগ না দিয়ে বলল
— চল।
নীচে নেমে আবিস্কার করলাম আমাদের ট্যুর পার্টির বেশ কিছু সদস্য জড়ো হয়েছে। প্ল্যানে না থাকলেও সম্ভবতঃ সবার অনুরোধে গাইড মশাই সবাইকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। এই দঙ্গলের সাথে বেরোবার কোন ইচ্ছে নেই। কি করব ভাবছি এমন সময় দেখলাম নীলা এগিয়ে গিয়ে গাইড মশাইকে কিছু একটা বলে আসল। এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— লেটস মুভ।
— ওরা কোথায় যাচ্ছে?
— জানা জরুরী?
— না।
— দেন?
নীলার এই রুপ আগে দেখিনি। এর আগে কখনো আমার ওপর এমন করে অধিকার চাপায়নি। কি করব, না করব তার সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিতাম। অ্যান্ড আই থট, দ্যাটস দ্যা বেস্ট ওয়ে টু ডিল এভ্রিথিং। আজকে কেমন যেন অন্যরকম লাগল। আমাদের দুজনের জন্য ওর এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা বেশ এঞ্জয় করলাম।
— বলে এসেছি, আমরা খেয়ে আসব।
— দুপুরের খাওয়া তো ওরা দেবে।
— তো?
এটাও ভাল লাগল। কি হচ্ছে আজকে?
মনে হচ্ছে, নীলা আজকের দিনটা নিজের মত কাটাবে। আর আমি যদি ভুল না করি, তাহলে, আমার ধারণা পুরো ট্যুরটাতেই অনেক নতুন ঘটনা ঘটবে। কেন যেন, ‘দেখি না কি হয়’ টাইপ একটা মানসিকতা ভর করল আমার ওপর। নিজেকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম। ঠিক করলাম, মন যা চায়, তাই করব। নো সেলফ রেগুলেশান।
— আমি হাটব। আপত্তি আছে?
আড় চোখে নীলার দিকে তাকালাম। টিপিক্যাল তিন এজ প্রেমিকার মত বিহেভ করছে। টিপিক্যাল প্রেমিকার মত ওর এই প্রেমিকের ওপর নিজের অধিকার প্রয়োগ টাইপ ব্যাপারগুলোর কেন যেন খারাপ লাগছে না।
আমাদের হোটেলটা সি বীচের বেশ কাছেই। হেটে হেটেই বীচে যাওয়া যায়। আবিষ্কার করলাম, ওর পাশে পাশে হাটতে ভালোই লাগছে। কেন লাগছে? আমি কি সত্যিই প্রেমে পড়েছি? শিট।
হাটতে হাটতে কখন বীচের কাছে চলে এসেছি লক্ষ্যই করিনি। নিজের অজান্তেই কখন সমুদ্রের ঢেউ দেখা শুরু করেছি তা ও বলতে পারব না। সম্বিত ফিরল নীলার স্পর্শে।
আবিস্কার করলাম পিচ্চি এক ক্যামেরা ম্যানকে ইতিকধ্যেই নীলা ম্যানেজ করে ফেলেছে। সে চুক্তি ভিত্তিক ছবি তুলে দিবে। আর সেই ছবির জন্য নীলা আমার গায়ের সাথে ঘেষে দাড়িয়েছে। আমার বাহুর ভেতর দিয়ে ওর একটা হাত ধুকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মিস্টি করে হাসি দিয়ে ঘোষণা করল।
— হ্যা, এবার তুলো।

— চলবে

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গল্পটা এত বড় না করলেও পারতেন।

আমি যখন কিছু লিখি 'নীলা' নামটাই ব্যবহার করি।

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: চিমটি

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: ধূর ভাই! এতো বড় লেখার পরও বলছেন চলবে???
বিরক্ত হলাম:(:(

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: সরি

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: চলুক।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি ভাল লেগেছে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
তবে অনেক দিন পর এলেন? আগের গল্পটির শেষ করেননি কিন্তু।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মনে আছে, ওটাও করব। সাথে থাকবার জন্য ধন্যবাদ

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১১

আল ইফরান বলেছেন: বেশ সুন্দর লিখেছেন। বেশ টানটান একটা উত্তেজনা আছে প্লটের মধ্যে। পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম :)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৭:০৮

কোলড বলেছেন: Excessive use of English and that too in Bengali script has ruined this story.

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:২২

সোহানী বলেছেন: চলুক সাথে আছি...............

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আছেন এখনও?

৮| ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

আজিজার বলেছেন: পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এসে গেছে পরের পর্ব।

৯| ১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১:১৭

রাফীদ চৌধুরী বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগেছে, অনেক দিন পর লগ ইন করে কমেন্ট করলাম। ভালো থাকবেন! নীলা ও কেরেক্টারের জন্যে শুভ কামনা!

পুনশ্চঃ মনে হচ্ছে এন্ডিং টা টিপিকালই হবে ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.