নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো বলতে পারার মতো জানা হয়নি...

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা, তার অনেক কিছু দেখা চোখটা স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তার স্বপ্ন সত্যি হয় সে কি কিছুটা তোমার সে কি কিছুটা আমার মতো নয়…

শেগুফতা শারমিন

এখানে মৃত্যু দড়িতে নাড়া শাড়ির মতো হালকা হাওয়ায় ওড়ে, এখানে মৃত্যু জানলার কাঁচে কুয়াশার মতো ঝরে

শেগুফতা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারিয়ে গিয়েছে যে মধ্যবিত্ত সময়

২৪ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩

অনেক অনেক বছর পরেও দুটো বাক্য অথবা দুটো নাম হঠাৎ করে মনে পড়ে বা কেউ মনে করিয়ে দেয়। ‘ধান শালিকের দেশ’ এবং ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা’। এই নাম দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শৈশব যাদের, কৈশোর যাদের তারা জানে কি অদ্ভুত মাদকতা জড়ানো একটা কিশোর ম্যাগাজিন আর একটা বই। অথবা মালাকাইটের ঝাঁপি। সম্প্রতি নিরুদ্দেশে হারিয়ে যাওয়া এদেশের মফস্বলীয় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে বছর কয়েক আগে বেড়ে ওঠা শিশুদের সোনার কাঠি রুপার কাঠি, একেকটি বই। যে সময়টার কথা বলছি সে সময় পরিবারগুলোর ঐশ্বর্য ধনে ছিলনা ঐশ্বর্য ছিল জ্ঞানে। জ্ঞান মানে শুধু পুঁখিগত বিদ্যা না, সকাল দুপুর কোচিং সেন্টার দৌড় নয়। জ্ঞান ছিল নানারঙের বইয়ে। বইগুলো আবার রঙিন ছিলনা, কিন্তু রঙ ছড়াতো শিশুদের মনে মননে। সেরকম একটা সময় থেকে বেড়ে ওঠা এই আমি এখনও কারো দামি পোষাক বা হাল ফ্যাশনের কোন অনুষঙ্গ দেখে মুগ্ধ হইনা, হিংস্বে জাগেনা। বরং চিনচিনে একটা হিংস্বে লাগে যখন শুনি কেউ হুমায়ূন আজাদের লেখা ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা’ প্রথম পড়েছিল ‘ধান শালিকের দেশ’ নামের ম্যাগাজিনে। মনে হয় কি এক মহান ঐশ্বর্যর সন্ধান সে পেয়েছিল কি দারুন একটা সময়ে! আর কটা দিন আগে হলে আমারও কি থাকতে পারতো না এমন একটা অমূল্য মূহুর্ত, আমার শিশুবেলার?
এতো গেল এক টুকরো আনন্দের ঘটনা। এরকম আরো কত শত আনন্দ, বেদনা নিয়ে কেটে গেছে এদেশের একসময়ের মেরুদন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো। এই আনন্দ, বেদনা, অনেক না পাওয়ার ভীড়েও অসাধারণ কিছু পাওয়ার মধ্যে দিয়ে কেটেছে যে শৈশব, কৈশোর কোন ছোট শহর বা শহরতলীতে। যেখানে পরিবার মানে মা বাবা ভাইবোন ছাড়াও দুয়েকজন কাজিন বা কারো ছোট মামা, খালা, কাকা বা ফুপু নিয়ে একবাড়িতে থাকা। কখনো বা আরো দূর সম্পর্কর কেউ এসে দিব্বি হয়ে গেছে পরিবারের অংশ। যে সমষের কথা বলছি তখন পরিবার মানে শুধু এক ছাদের নিচে থাকা কয়েকজন মানুষ নয়, পরিবার মানে ছিল প্রতিবেশিরাও। তাদের হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা ছুঁয়ে যেত এক পাড়া বা কলোনীতে থাকা সব গুলো মানুষকে। তখনও প্রতি বাড়িতে দরজা থাকতো ঠিকই কিন্তু সে দরজা দিনে বা সন্ধ্যায় কখনো বন্ধ হতো না। হয়তো খুঁজতে গেলে দেখা যেত যতগুলো বাড়ি আছে যতগুলো দরজা আছে ততগুলো তালা নেই পুরো মহল্লায়। তখনকার মায়েরা কম শিক্ষিত ছিলেন কিন্তু তাদের শিক্ষা ছিল উচ্চ। তখনকার বাবারা অল্প পয়সার চাকুরি করতেন কিন্তু তারা মানসিকতায় ছিলেন ধনী। তখন এত টিভি, পত্রিকা ছিলনা, ছিলনা নানা মুনির নানা মত, নানা বিভাজন। তাই সহজেই সেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো একত্রিত হতে পারতো। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ছিলনা কিন্তু আকাশেও রঙ দেখেই তারা অনেক কিছুই আঁচ করতে পারতেন, তাইতো তাদের একটা নিজস্ব অবস্থান ছিল।
সে সময়ের তুলনামূলক বড় পরিবার গুলোতে ভাইবোনের সংখ্যা ছিল বেশি কিন্তু ভরা ছিল মধ্যবিত্ত সুখে। এবং এ সুখের সূচক ছিল বই বা পাঠাভ্যাস। তাদের হয়ত পয়সা ছিল কম, খাবার ছিল হিসেবের, আলমারিতে কাপড় থাকত মাথা গুনে, কিন্তু বাসায় বই থাকত অগুনতি। বই কিনে যে কেউ দেউলে হয়না তার প্রমান ছিল সেই পরিবার গুলো। বিকাল পাঁচটার আগে টেলিভিশন চলত না। পাঁচ টাতেও শুরু হতো মুখস্থ অনুষ্ঠানমালা। পবিত্র কোরান থেকে তেলায়াত, তর্জমা ও তাফসির। তারপর পবিত্র গীতা, বাইবেল বা ত্রিপিটক থেকে পাঠ। এরপর ধরাবাঁধা একটা কার্টুন ছবি। সপ্তাহে একদিন ছোটদের অনুষ্ঠান। তারপর গানের অনুষ্ঠান পল্লীগীতি, রবীন্দ্র, নজরুল মিলিয়ে একেকদিন একেক সঙ্গীতানুষ্ঠান। আটটায় বিখ্যাত আটটার সংবাদ (আসলে হতো এরশাদ সংবাদ) । এরপর নাটক। প্রতি মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার। বুধ বার হতো ইংলিশ সিরিয়াল। আবার রাত দশটায় ইংরেজি খবর। সুতরাং আমাদের জন্য টিভিতে বিনোদন ছিল সব মিলিয়ে দিনে বড় জোর দুঘন্টা। বন্ধুর সঙ্গে ফোনে গল্প করার মতো ফোন বা বন্ধু কোনটাই খুব বেশি ছিলনা। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ফেরার অলিখিত নিয়ম ছিল প্রায় সব বাড়িতে। অতএব আমাদের সেইসব চাকুরিজীবি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিনোদন বলতে ছিল বই, বই আর বই। পরিবারের বড় ভাইবোন দুয়েকজন পড়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকায় বা অন্য কোথায়। তাদের তারুন্যও ছিল গেম অব থ্রনময় নয় বরং বই কেন্দ্রিক। ছোটদের কাছে মূলত তারাই ছিল বইয়ের সবচেয়ে বড় যোগানদার। শুধু নিজের ভাইবোনের জন্য না প্রতিবেশি ভাইবোনদের জন্যও। তাদের হাত ধরেই আমরা হয়ে উঠতাম একেকজন পড়ুয়া। বইয়ের কালো অক্ষরে আমরা বিশ্ব দেখতাম, জীবন চিনতাম। আমাদের বন্ধু হতো অপু দূর্গা, আমাদের বন্ধু হতো সেরিওজা, তিমুর। আমরা এ্যানা ফ্রাঙ্কের প্রেমে পড়তাম। আমরা টুটুল নামে এক কিশোরের স্বপ্ন দেখতাম। আমরা কেউ ললি হতাম, কেউ টুনি। সে সময় আমরা সবাই জানতাম আমাদের বড় হতে হবে। আমরা বুঝতাম, আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে আমাদের পরিবার, আমাদের প্রতিবেশিরা, আমাদের দেশ। পরিবারের জন্য অক্লান্ত খেটে যাওয়া মা বাবা বড় ভাইবোনরা কোনদিন মুখে না বলেও আমাদের জানিয়ে দিতে পেরেছিলেন আমাদের কর্তব্য, পরিবারের প্রতি, দেশের প্রতি। কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আমরা ভালোবাসতে শিখেছিলাম দেশ। আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলাম। খুব ছোট ছোট মধ্যবিত্ত স্বপ্ন, কিন্তু ঠুনকো নয়। আমাদের সেই বইয়ের পাতার মতো নিরবিচ্ছিন্ন মধ্যবিত্ত জীবনেও হঠাৎ চেনা পৃষ্ঠাটা, পড়া পৃষ্ঠাটা উল্টে গেল, খুব দ্রুত এবং প্রায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই। আগের পৃষ্ঠাটা খুব ভালোমতো আত্মস্থ করার আগেই দেখি আরেকটি নতুন পৃষ্ঠা, একেবারে আনকোড়া।
নব্বইয়ের দশকের বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তন, সোভিয়েতের পতন এবং আমাদের নব্য গণতন্ত্র প্রথম যে জিনিসটি উধাও করে দিয়েছে তা হলো মধ্যবিত্ত পরিবারপ্রথা। মধ্যবিত্ত চেতনা। নতুন শ্রেণী বিন্যাস হয়েছে। এক সময়ের সমবিত্তের কেউ হয়ে গেছে আকাশ ছোঁয়া ধনী। তৃতীয় প্রজন্মের চাকুরীজীবি পরিবারগুলোর পাশাপাশি প্রথম প্রজন্মের স্কুল পাশ পরিবারগুলো একই কাতারে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করছে। টেকনোলজির মাঠে চাইনিজ আধিপত্য খুব সহজেই সব আধুনিক ডিভাইস ধরিয়ে দিতে পেরেছে সব ধরনের মানুষের হাতে। জীবন এখন ডিভাইস কেন্দ্রিক। সেই সুখে দুখে সত্যি সত্যি পাশাপাশি থাকার সমাজ হারিয়ে বন্ধুত্ব চলে গেছে সোশ্যাল সাইটে। আমরা সবাই এখন ছুটছি। আমাদের স্বপ্ন মিলিয়ে গেছে কিন্তু আকাঙ্থা হয়েছে সীমাহীন। আমাদের চারপাশে তৈরি হয়েছে অনেক চোরাগোলি, সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি। এইসব পথ পদ্ধতির চালু ব্যবহারকারীরা সহজেই হয়ে উঠেছে কেউকেটা। তারাই কখনো আমাদের দিক নির্দশনা দেয়। একই রাষ্ট্রের একটা অংশ আয় করে দেশে কিন্তু ধন সম্পদের পাহাড় বানায় বিদেশে। একটা অংশ কোনদিন যারা আগে কোন আলোকিত যাত্রায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি বিত্তহীনতার অজুহাতে। তারাও এখন তুলনামূলক আর্থিক বিবেচনায় ভালো অবস্থানে, ঘরে মজুদ হয়েছে কিছু পাশের সনদপত্র। অসংখ্য পিঁপড়ে পাখা গজিয়ে আজ পাখী হয়ে উড়ছে। হারিয়ে গেছে আমাদের বই মনস্কতা, হারিয়ে গেছে মূল্যবোধ, হারিয়ে গেছে শেকড়ের ঘ্রাণ। ধান শালিকেরা কবে কখন কোথায় চলে গেছে, আমরা জানিইনা। ঘুম না আসার মতো ফুলের গন্ধ নেই কোথাও। তবু আমাদের ঘুম আসেনা। তারপরও এই ক্ষয়ে যাওয়া গলে যাওয়া সিঁড়ির কাঠামোর একেক ধাপে দাঁড়িয়ে, গোড়া থেকে আগা আমরা সবাই স্বদম্ভে দাবি করি ‘আমরা মধ্যবিত্ত’।
কারণ আমরা জানি, ‘মধ্যবিত্ত’ শব্দটার মধ্যে একটা আভিজাত্য ছিল।

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬

লাবনী আক্তার বলেছেন: ধান শালিকেরা কবে কখন কোথায় চলে গেছে, আমরা জানিইনা। ঘুম না আসার মতো ফুলের গন্ধ নেই কোথাও। তবু আমাদের ঘুম আসেনা। তারপরও এই ক্ষয়ে যাওয়া গলে যাওয়া সিঁড়ির কাঠামোর একেক ধাপে দাঁড়িয়ে, গোড়া থেকে আগা আমরা সবাই স্বদম্ভে দাবি করি ‘আমরা মধ্যবিত্ত’।
কারণ আমরা জানি, ‘মধ্যবিত্ত’ শব্দটার মধ্যে একটা আভিজাত্য ছিল।


একদম সত্য কথা। ভালো লাগল অনেক।

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে। :)

২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

নীল আকাশ বলেছেন: সেই অসাধারন সময় গুলো আর কখন ফিরে আসবে না । আপনি আমাকে নসটালজিক করে দিলেন।

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০০

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: আহা! আশা করি অপরাধ নেবেন না। :)

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

এস কাজী বলেছেন: কারন আমরা জানি মধ্যবিত্ত শব্দটির মধ্যে আভিজাত্য ছিল। সুন্দর সুন্দর

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০২

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬

পাগলামৃদুল বলেছেন: হারিয়ে যাওয়া সময়। কি সুন্দর দিন ছিলো সেগুলো। মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০২

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: তার মানে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, তাইনা ? :)

৫| ২৪ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩

অনঢ়পাথর বলেছেন: টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়না। এখন কেউ বুঝবেন। কি অসাধারন সেই দিনগুলো ছিলো। ধন্যবাদ, সুন্দর লেখার জন্য। :)

২৪ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: সুখ টাকা দিয়েই কেনার জিনিস। আনন্দটা আলাদা বিষয়। কেউ সুখ কিনে আনন্দ পায়, কেউ কাদামাঠে জাম্বুরা খেলে।

৬| ২৪ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯

খেয়ালি দুপুর বলেছেন: ভাল লেগেছে ভিষণ। সেই মেঠোপথে ধুলো মাখামাখি, সোনাঝরা ছেলেবেলা! মনে পড়ে গেলো। শুভকামনা।

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২০

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ভাল লাগলো জেনে। ভালো থাকবেন।

৭| ২৪ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটি লেখা। খুব প্রিয় কিছু বইয়ের নাম দেখলাম। এখনকার প্রজন্মের জন্য করুণাই হয়। তারা জানেও না তারা কি হারাচ্ছে।

২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২২

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: প্রজন্মের দোষ নেই। আমরাই বঞ্চিত করছি ওদের। পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

৮| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

মিজান ঢাকা ব্লগ বলেছেন: সেই সময়ে যতদূর মনে পরে বুধবার রাতে একটা সিরিজ হত বিটিভি তে। সবেধন নিলমনি একটাই চ্যানেল। সিরিজটার নাম ছিল ম্যাকগাইভার। আহারে কি সব দজায়। দি এ টিম, টারজান, ম্যানিমেল, সাদাকাল টিভির মধ্যে আমাদের রঙিন জীবন। কই হারিয়ে গেল সেই সব দিন। কাঠের গুড়ো দিয়ে ইফতারির আগে আগে বরফের চাই বিক্রি। ১ টাকায় যেন কিনে আনা যেত তুন্দ্রা অঞ্চলের শীতলতা।

আপনার শিশু পত্রিকার কথা মনে নেই? মাসে একটাই বের হত। পাগলের মত অপেক্ষা করতাম নতুন পত্রিকার জন্য। ভাই বোনের মধ্যে রীতিমত যুদ্ধ কে আগে পরবে। একটাকা দামের হলুদ খামে করে কাউকে না জানিয়ে চুপি চুপি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম পত্রিকা অফিসে আমার একটা ছড়া। ইদ সংখ্যার সেই পত্রিকা হাতে পেয়েই দুরু দুরু বুকে খুঁজতে লাগলাম আমার সেই ছড়া। একদম প্রথমেই পেয়ে যাব কল্পনাতেও ছিলনা।

কত কথা মনে পরে। ফ্রিজ ছিলনা। কোরবানির মাংস তাই রান্না হত একবারেই বিশাল এক পাতিলে। ধীরে ধীরে সেই মাংসের টেস্ট যা হত তা বলার নয়। মাংস গুলো সব ঝুরা ঝুরা হয়ে যেত। পরটা দিয়ে যা লাগতনা.।.।.।.।.।

নাহ! আর লিখবনা.।.।.।.।.।মনটাই খারাপ হয়ে যায়।

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:২৪

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: পড়তে কিন্তু খারাপ লাগছিলো না। তুষ দেয়া বরফের গল্প প্রায় প্রতিদিনই বাসায় হয় । আর শিশুর কথা বললেন? মনে নেই আবার? বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বের হতো আসন্ন। ইসলামীক ফাউন্ডেশন থেকে সবুজ পাতা। তখন কিন্তু এত ডান বাম ছিলনা। পড়ার জিনিস যা পেতাম, সব পড়তাম আমরা। বরং মন খারাপ হয় এখনকার এত মত, এত পথের তারতম্য দেখলে।

৯| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেগুফতা শারমিন ,



ভাটার টানে ভেসে যাওয়া একটি সময়ের চালচিত্র এঁকেছেন সবাক লেখনিতে। যে ধ্রুপদী সময়ে ছিল সব ।
ছিলোনা শুধু কূপমন্ডুকতা , মানসিক চোরাগলি ; ছিলোনা পিঁপড়ের পাখা গজিয়ে পাখী হয়ে উড়ে যাওয়ার বাসনা ।
আজ বদলে যাওয়া সময়ে হাত ফসকে হাওয়া বেলুনের মতো সে দিনগুলো উড়ে গেছে আকাশে । যে আকাশে একদিন ছিলো মেঘেদের ভেলা ।
দুঃখ করে লাভ নেই - আমাদেরই ভুলে , আমাদেরই সংযমহীনতায় সে আকাশে আজ শুধু মেঘহীন রোদের খরতাপই জড়ো করে দিয়ে গেছি আমরা ।

২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:১১

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: সুন্দর বলেছেন। ধন্যবাদ।

১০| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

সাদরিল বলেছেন: আমি নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবারে বর হওয়া সন্তান। তবে আপনার কিছু কথার সাথে একমত নই।

সে সময়ের তুলনামূলক বড় পরিবার গুলোতে ভাইবোনের সংখ্যা ছিল বেশি কিন্তু ভরা ছিল মধ্যবিত্ত সুখে।

ভাই-বোনে গাদাগাদি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারকেই ঝগড়া-ঝাটি করে ছিন্ন-ভিন্ন হতে দেখেছি। এ দেশে যত সমস্যা তার মূলে রয়েছে অত্যাধিক জনসংখ্যা। তাই ভাই-বোনের সংখ্যা কমে যাওয়াটা সময়ের দাবি ছিলো।

বইয়ের কালো অক্ষরে আমরা বিশ্ব দেখতাম, জীবন চিনতাম।

এখন এটা আমরা দেখি ইন্তারনেটে। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে মানুষ ধীরে ধীরে ডিজিটাল মিডিয়ায় যাচ্ছে। তবে শত বছর ধরে প্রিন্ট মিডিয়াতে যে অসীম পাঠ উপযোগী ম্যাটেরিয়ালস এখনো ডিজিটাল মিডিয়ায় গড়ে উঠেনি। তাই ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে ছাই-পাস পড়ে সময় কাটায়। আমিও এক সময় বই-এর পোকা ছিলাম। তবে এখন পাতা উলটে পড়তে বিরক্ত লাগে। আপনার এই লেখাটি কোন ম্যাগাজিনে ছাপা হলে হয়তো জানতেও পারতাম না। অনলাইনে আরেক কাজের ফাকে চট করে পড়ে নিলাম।

যে সময়েরর কথা বলছি তখন পরিবার মানে শুধু এক ছাদের নিচে থাকা কয়েকজন মানুষ নয়, পরিবার মানে ছিল প্রতিবেশিরাও।

এই পরিবর্তন কি ভালো নয়? এখন সব বিষয়ে প্রতিবেশিদের নাক গলানো কমেছে।

আরেকটি প্রশ্ন, এখনকার যারা স্কুলগামী সন্তানের বাবা-মা তারা তো আপনার বর্ণিত সেই বই পড়ুয়া ট্রাডিশনাল মধ্যবিত্ত জেনারেশন থেকেই এসেছে। তাহলে তারা কেন সন্তানকে বই-এ উতসাহী না করে কোচিং এ ছোটাছুটি করে?

২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: বাক্সের বাইরে চিন্তা করতে পারাটা ভালো ব্যাপার। ভালো থাকবেন।

১১| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০২

অন্ধকার ছায়াপথ বলেছেন: ভাই...ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন...বিটিভিতে দেখতাম সিনবাদ বা নিনজা টারটেলস..তাও আটটার সংবাদের পর...এই একটাই চ্যানেল ছিলো..আর ছিলো বাসার সাথে হাসনা হেনার গাছ, গোলাপ , রজনীগন্ধা...সন্ধায় বা রাতে জানালা দিয়ে সেই মিষ্টি ঘ্রান...আর ছিলো বড় আপার কিশোর থ্রিলার এর কিশোর রবিন আর মূসা....আহা..!! আর আশে-পাশের বাড়ীর সমবয়সী বন্ধুরা..ভাইয়ারা.আপুরা... আসলেই কি দিন ছিলো...সোনালী দিন...

২৬ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:১৪

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: বাহ্ ! এইতো মিলে গেল অনেকের সংগে। ভালো লাগলো।

১২| ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫১

জুন বলেছেন: আফসোস আামাদের বাচ্চারা সেই মাঠে ঘাটে খেলার সুখ থেকে বন্চিত। পায়নি ঘুড়ি উড়ানোর স্বাদ, ডাংগুলি খেলা কি জানতে চাইবে অবাক নয়নে । নেই কৌটা ভরা রং বেরং এর মার্বেল । তারা বড় হচ্ছে গ্রিলের খাচায় বন্দি ঘর স্কুল আর কোচিং সেন্টারে ট্যাব আর পিসিতে অন্য সংস্কিৃতিতে তৈরি গেম খেলে। আপনার লেখা মধ্যবিত্ত এখন মনে হয় আভিজাত্য হারিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ততে বিলীন হয়ে গেছে । সহজ সরল সাধারন এখন গল্প আার কবিতায় ।
খুব ভালোলাগলো আপনার লেখাটি যাকে বলে হারিয়ে যাওয়া সেই নানা রংএর দিন গুলোতে ।

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৩

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: আহা! ভালো লাগলো। ধন্যবাদ :)

১৩| ২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: '' দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না -------'''
আহারে ! আহারে !!

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: রইলো না, রাখলামও না !

১৪| ২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ---- জীবন এখন ডিভাইস কেন্দ্রিক। সেই সুখে দুখে সত্যি সত্যি পাশাপাশি থাকার সমাজ হারিয়ে বন্ধুত্ব চলে গেছে সোশ্যাল সাইটে। আমরা সবাই এখন ছুটছি। আমাদের স্বপ্ন মিলিয়ে গেছে কিন্তু আকাঙ্থা হয়েছে সীমাহীন। আমাদের চারপাশে তৈরি হয়েছে অনেক চোরাগোলি, সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি।

-------একই রাষ্ট্রের একটা অংশ আয় করে দেশে কিন্তু ধন সম্পদের পাহাড় বানায় বিদেশে। একটা অংশ কোনদিন যারা আগে কোন আলোকিত যাত্রায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি বিত্তহীনতার অজুহাতে। তারাও এখন তুলনামূলক আর্থিক বিবেচনায় ভালো অবস্থানে, ঘরে মজুদ হয়েছে কিছু পাশের সনদপত্র।

অসংখ্য পিঁপড়ে পাখা গজিয়ে আজ পাখী হয়ে উড়ছে। হারিয়ে গেছে আমাদের বই মনস্কতা, হারিয়ে গেছে মূল্যবোধ, হারিয়ে গেছে শেকড়ের ঘ্রাণ।

++++++++++++

কষ্ট হলেও এটাই জীবনের বাস্তবতা! আর চেতনার যে মজবুত ভিত শিকড়কে আকড়ে রাখতে প্রয়োজন তা বড়ই দুর্মূল্য! কর্পোরেট প্রতিযোগীতা লাগামহীন স্বপ্ন বুনে দিয়েছে মনে- তার পূরনে ধর্ম, বিবেক, সমাজ, সামাজিকতা,রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, সব দুমড়ে মুচড়ে হলেও স্বপ্ন পূরন করা চাই!
ব্যাস দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে সব, সবকিছু।
যে মেয়েটি লজ্বায় চোখ মেলে চাইতো না- এখন অবলীলায় মাশকারা মেরে চলে যায় সহজ আয়ের পথে!
যে ছেলেটি মাথা গোজ করে থাকতো সবসময়- সীসার ধোয়ায় জীবনের মানে খোঁজে সে অর্থহীন!

এই প্রলয় কর্পোরট বানিজ্যের লোভের ফসল। আর তাদের প্রশয় দিয়েছে লোভী রাজনীতিবিদ! এই কতিপয় দুষ্টচত্রের লোভের বলি পুরা জাতি, দেশীয় চেতনা, মূল্যবোধ আর মধ্যবিত্তের সেই সূখ সুখ সময়!

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ঘটনা সত্যি । ধন্যবাদ ।

১৫| ২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভীষন ভালোলাগার একটা লেখা। নস্টালজিকও হইলাম। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। ++++

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শতদ্রু নদী :)

১৬| ২৫ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

জেন রসি বলেছেন: চেতনায় শ্রেণী সংঘাত.....এই সংঘাতের যেন কোন শেষ নেই.......

ভালো লেগেছে।

++

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :)

১৭| ২৫ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:১৬

বোকামানুষ বলেছেন: দারুণ একটা লিখা ৭ম ++++++

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: তাই নাকি!ধন্যবাদ ভাই বোকা মানুষ :)

১৮| ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:১২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: তখনও প্রতি বাড়িতে দরজা থাকতো ঠিকই কিন্তু সে দরজা দিনে বা সন্ধ্যায় কখনো বন্ধ হতো না। হয়তো খুঁজতে গেলে দেখা যেত যতগুলো বাড়ি আছে যতগুলো দরজা আছে ততগুলো তালা নেই পুরো মহল্লায়। সেই দরজাগুলো সব বন্ধ হয়ে এখন জগতটা শুধু ডিভাইস কেন্দ্রিক।

তারপরও এই ক্ষয়ে যাওয়া গলে যাওয়া সিঁড়ির কাঠামোর একেক ধাপে দাঁড়িয়ে, গোড়া থেকে আগা আমরা সবাই স্বদম্ভে দাবি করি ‘আমরা মধ্যবিত্ত’।
কারণ আমরা জানি, ‘মধ্যবিত্ত’ শব্দটার মধ্যে একটা আভিজাত্য ছিল।


চমৎকার লেখা, হাজারো হৃদয়ের গুমরে মরা কান্না'র প্রতিধ্বনি। +++

ভালো থাকুন সবসময়, অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার প্রতি।

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৯

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন :)

১৯| ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩০

নীলসাধু বলেছেন: চমৎকার লেখা।
লেখাটি পড়ে আমি ফিরে গিয়েছিলাম অতীতে।

ধন্যবাদ জানবেন।

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৯

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.