নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো বলতে পারার মতো জানা হয়নি...

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা, তার অনেক কিছু দেখা চোখটা স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তার স্বপ্ন সত্যি হয় সে কি কিছুটা তোমার সে কি কিছুটা আমার মতো নয়…

শেগুফতা শারমিন

এখানে মৃত্যু দড়িতে নাড়া শাড়ির মতো হালকা হাওয়ায় ওড়ে, এখানে মৃত্যু জানলার কাঁচে কুয়াশার মতো ঝরে

শেগুফতা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিধায় রাঙা রংধনু

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫০

যত সময় যাচ্ছে, বয়স বাড়ছে, ক্রমেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ছি। জানিনা, দ্বিধাটা আমার একার না অন্যদেরও। খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে জীবনাচার। বিশেষ করে প্রগতিশীলতা বা আধুনিকতার অজুহাতে যে নতুন নতুন বোধের জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি তার একটার সঙ্গে আরেকটা মেলাতে পারিনা। কেমন যেন পরস্পরবিরোধী লাগে। যেন আজ যেটা মিষ্টি কাল সেটা ঝাল।
কয়েক বছর যাবৎ ‘অধিকার’ নিয়ে কাজ করি। এই সময়ে অধিকার বিষয়ে সামান্য যেটুকু বুঝেছি, তা হলো একটা আইনসঙ্গত দলিল অধিকার আদায়ের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। যেকোন দাবীর স্বপক্ষে যৌক্তিক ভিত্তি দাঁড় করায়। সেই হিসেবে বলতে পারি, বিয়ে নামক সামাজিক যে আচার, যে দালিলিক আনুষ্ঠানিকতা তা আসলে মানুষের অধিকার আদায়েরই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি। মূলত: নারীর সুরক্ষার চাবিকাঠি এই রকম একটা চুক্তি। জানি এখানেই দ্বিমত করবেন কেউ কেউ। পরিস্কার করি, নারী মানে এখানে শুধু আমাকে বা আপনাকে বোঝানো হয়নি। নারী মানে বোঝানো হয়েছে বাংলাদেশের সব শ্রেণী পেশার নারীদের। আমাদের কৃষক নারী, শ্রমিক নারী আমাদের গরীব নারী যারা সংখ্যায় বেশি, সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে। সেই নারীদের পারিবারিক অধিকার রক্ষায় অবশ্যই প্রয়োজন বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের। অথচ আধুনিকতার দোহাইয়ে অনেকে মনে করি বিয়ে ছাড়া সংসার আমার অধিকার। এখানেই আমি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। বিষয়টা যদি সার্বজনীন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে পিছিয়ে পড়া নারীদের অধিকার যাবে কোন পথে ? পশ্চিমা দেশে বিয়ে বহির্ভূত সংসার সার্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ ওখানে রাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে প্রায় সব মানুষের মোটামোটি একই ধরণের সামাজিক অবস্থান। সেই সমাজে, সেই রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে যেটা সহজে করা যায়, আমাদের মতো দেশে যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জায়গাতেই আকাশ পাতাল তফাৎ, সেই সমাজে সেই একই কাজ করতে দুইবার ভাবা প্রয়োজন। না, লোক লজ্জার ভয়ে নয়। বরং যে ট্রেন্ডটা সেট করতে চলেছি, সেটা আরেকজনের উপর কি বিরুপ প্রভাব ফেলবে, সেটা ভাবাটা আমাদের দায়িত্ব।
আবার দ্বিধা জাগে, যখন দেখি আমেরিকায় সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ হলো তো আমাদের একটা অংশ দারুন খুশী হয়ে গেল। এই একই মানুষদের অনেকেই নারী পুরুষের বিয়েটা অপ্রয়োজনীয় মনে করলেও সমলিঙ্গের বিয়েকে সমর্থন করছে। বিয়ে ছাড়া যদি নারী পুরুষের একত্র বাসকে স্বাভাবিক ভাবে দেখার চেষ্টা করা হয়। তাহলে দুইজন পুরুষ বা দুইজন নারী ভালোবেসে একসঙ্গে থাকবে, সংসার করবে বিয়ে নামের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপারটা কেন দরকার? দরকার, কারণ ঘুরেফিরে সেই পুরান জায়গাতেই যেতে হবে। যে কারণে অনেক বছর আগে একবার সমাজই নির্ধারন করেছিল, নারী পুরুষ সংসার করবে একটি সামাজিক প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে। এতদিন পর এত নতুন নতুন ধারণা, বিতর্কের পর সমলিঙ্গের বিয়ের অনুমতি প্রাপ্তি এটাই কি প্রমাণ করে দিলো যে আমাদের পূর্বপুরুষরাই সঠিক ছিলেন?
সে যাই হোক, গত ২৬ তারিখে ঘটনা ঘটলো আমেরিকায় আর দশটা হুজুগে মাতোয়ারা হওয়ার মতোই আমাদের জাতি মেতে গেল রংধনুর রঙ নিয়ে। এটা ঠিক ভিন্ন মত, ভিন্ন রুচি অনুযায়ী চলার অধিকার মানুষের আছে। আমি নিজেও এতটা সংকীর্ণমনা নই যে অন্যের ভিন্ন রুচি, ভিন্ন মতকে অশ্রদ্ধা করবো। আবার একই সঙ্গে এতটা উদারও নই যে নিজের কাছের মানুষ , প্রিয় মানুষ, আপন মানুষদের চরম মাত্রার ভিন্ন রুচি খুব সহজে মেনে নিতে পারবো। আর দশজন মানুষের মতোই এখানেও আমি খুব সাধারণ। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গেলে দেখি আমি কোনদিনই কোন একটা পক্ষের নই। আমি না নারী পক্ষ না পুরুষ পক্ষ। নারী পুরুষ মিলে সমতায় গড়া যে দল আমি তাদের পক্ষে। নারী পুরুষ দুজন মিলেই একটি র্পূণাঙ্গ ছবি। দুজন মলিইে সভ্যতা, দুজনে মিলেই প্রকৃতি। আমার মাতাও আমার, আমার পিতা্ও আমার। আমার বিশ্বাস দুজনায়ই।
এর বাইরে যদি কেউ তার মতো জীবন যাপন করতে চায়, সেটা তার ইচ্ছা, তার স্বাধীনতা। কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা সেই জায়গায়, যেটা হলো তোমার ভিন্ন রুচি আমার পরিবারে কোন বিরুপ প্রভাব ফেলছে কিনা। তুমি চলবে তোমার মতো, কিন্তু সেই তুমিই আমার আপন জনকে তোমার পথে টানছো কিনা। সেটাই আমাকে ভাবায়। আমার মধ্যবিত্ত গতানুতিক চিন্তা ধারায় নাড়া দেয়। এবং একই সঙ্গে আমার ভেতর প্রশ্ন তৈরি হয়, আজ যারা সমলিঙ্গের বিয়ের অধিকারে উচ্ছসিত, আধুনিক মন মানসিকতার পরিচয় দিতে নিঃসংকোচ। কালকে যদি তার ছেলে বা মেয়ে নিজেকে সমকামী পরিচয় দিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি দাবি করে, তখন তিনি বা তারা এতটাই নিঃসংকোচে মেনে নেবেন, নাকি আমার মতোই কুন্ঠা বোধ করবেন? নিত্য নতুন এইসব পরিবর্তনে সমর্থন করা বা না করার আগে কি নিজের সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকা দরকার না?
এটাও জানি, বাংলাদেশে একটা বড় সংখ্যায় সমকামী মানুষ রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট ব্যানারে তারা একত্রিত হয়েছে। তাদের দাবি তারা সংখ্যায় অনেক। কিন্তু মোট জনসংখ্যার হিসেবে তারা কত অংশ সেটাও দেখার বিষয়। একই সঙ্গে এদেশে এখনও নানারকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে, যারা এখনও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবেই স্বীকৃতি পায় নাই সমাজে। এদেশের দলিতরা এখনও দোকানের কাপে চা খেতে পারেনা। এদেশের হাওড় অঞ্চলের শিশুরা এখনও স্কুল যেতে পারেনা। এদেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না, তারা পায়না ভূমির অধিকার। এদেশের শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে নিন্মমুখী। অর্থাৎ উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে অকর্ষিত। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু কিছু দাতা গোষ্ঠী উৎসাহী হয়ে উঠেছে সমকামীদের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে। সমকামীরা ক্যাম্পেইন করবে, রাত জেগে এক সঙ্গে বসে মুভি দেখবে, সুইমিংপুলে নেমে সাঁতরাবে, ফান্ড দেবে দাতারা। কোন আপত্তি নাই, কারণ কে না জানে যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প তৈরিই হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে। কিন্তু সংশয় সেখানে, তাদের এই প্রচেষ্টায় না জেনে না বুঝে যোগ দিচ্ছে কিনা আমাদের উঠতি তরুন দল। এমনিতেই আমাদের তরুনদের পথভ্রষ্ট হওয়ার নানা উপাচার ছড়িয়ে আছে এখানে ওখানে। সেখানে আবার নতুন একটা অনুষঙ্গ যুক্ত হলো কিনা, সেটাও ভাবতে হবে।
সমকামীদের যে অভিযান, তা শুধু সমকামীদের নামে নয়। লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডারদের এক সঙ্গে করে এলজিবিটি নামে যে গ্রুপের অধিকার আদায়ের দাবির পক্ষে কাজ করা হচ্ছে, সেটাতেও সামান্য আপত্তি দেখি। লেসবিয়ান বা গে যারা তারা বেছে নিয়েছে একটা জীবন তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী। কিন্তু একই সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারকে যে জড়ানো হলো, তারাতো প্রকৃতির সবচেয়ে দূর্ভাগা প্রাণী। মানুষ হিসেবেই যাদের আমরা এখনও স্বীকৃতি দিতে চাইনা, তাদের জন্য করনীয় রয়েছে অনেক। অথচ এলজিবি যারা, তাদের সঙ্গে হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারদের মিলিয়ে দিয়ে আসলে কি আমরা তাদের অধিকারের জায়গাটা সংকুচিত করছি না?
আরেকটা শব্দ ইদানিং ভাবায়, তা হলো সমকামী শব্দটার পাশাপাশি উচ্চারিত হচ্ছে বিষমকামী শব্দটি। অল্প সংখ্যক সমকামীকে বাদ দিয়ে পুরো মানব প্রজাতি কে বোঝাতে বিষমকামী শব্দটা কি পুরোপুরি সম্পূর্ণ? কারণ নারী পুরুষের সম্পর্ক কিন্তু শুধু কামের সম্পর্ক নয়। নারী পুরুষের সম্পর্ক বহুমাত্রিকতার। একজন নারী এবং একজন পুরুষের সম্পর্কে শরীর ছাড়াও মন একটা বড় অংশ। তাইতো এই বিংশ শতাব্দীতেও হাতে গোনা হলেও কেউ না কেউ আছে যারা কিনা শরীর না ছুঁয়েও ভালোবেসে যেতে পারে বছরের পর বছর। কোথাও না কোথাও রয়ে গেছে নিস্কাম প্লেটোনিক প্রেম। আর এখানে শশীদের প্রশ্নও চিরন্তন থেকে যায়, তোর মন নাই কুসুম? এই মনে দোলা লাগে বলেই সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্ক এগিয়ে যায়, সৃষ্টির জন্য, কল্যাণের জন্য। এত শত দ্বিধার ভেতর থেকেও ভিন্ন মত, ভিন্ন রুচি সব কিছুর শেষেই আমি খুঁজি কল্যাণ। আপনি খুঁজেন কি?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৭

তাল পাখা বলেছেন: "তুমি চলবে তোমার মতো, কিন্তু সেই তুমিই আমার আপন জনকে তোমার পথে টানছো কিনা সেটাই আমাকে ভাবায়।"

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.