নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো বলতে পারার মতো জানা হয়নি...

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা, তার অনেক কিছু দেখা চোখটা স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তার স্বপ্ন সত্যি হয় সে কি কিছুটা তোমার সে কি কিছুটা আমার মতো নয়…

শেগুফতা শারমিন

এখানে মৃত্যু দড়িতে নাড়া শাড়ির মতো হালকা হাওয়ায় ওড়ে, এখানে মৃত্যু জানলার কাঁচে কুয়াশার মতো ঝরে

শেগুফতা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিমানটাও তাঁর কাছেই শেখা

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৫

যখন প্রথম দীপু নাম্বার টু পড়ি, তখন আমার বয়স দীপুর চেয়ে কম। বই পড়ে নিজেকে মনে হলো দীপু হতে হবে। আর কিছুতে না হোক দীপুর মতো অন্তত প্রতিবছর স্কুল পাল্টাতে হবে। সেই থেকে অনেকটা দীপু স্টাইলেই ১০ বছরে ৯ টা স্কুলে পড়া। সাধারন এক শিশু পাঠকের উপর একটা বইয়ের প্রভাব কতটা! এরপর একদিন এলিফেন্ট রোডের মল্লিকা সিনেমা হলে সপরিবারে সিনেমা দেখলাম, দীপু নাম্বার টু। তখন আমি সিনেমার দীপুর চেয়ে একটু বড়। স্বাভাবিকভাবে সিনেমা দেখতে গিয়েই হাপুস নয়নে কান্না। দীপুর জন্য মায়া, কষ্ট, সমবেদনা। তীব্র রাগ তখন দীপুর মায়ের প্রতি। মনে মনে ভাবি কেমন খারাপ মানুষ! ভেবে আরো কান্না পায়। এক কিশোর দর্শকের উপর সিনেমা এবং তার কাহিনীর কি প্রভাব! এখন আমার বয়স প্রায় দীপুর মায়ের কাছাকাছি। এখন আর গল্পের দীপুর মাকে অতটা খারাপ বলে মনে হয় না, তার উপর রাগ হয় না। এখন বুঝি কখন কোন পরিস্থিতিতে কোন মানুষের কত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারো একটা সিদ্ধান্তই প্রমাণ করেনা সে আদৌ ভালো মানুষ না খারাপ! এই যে এই বুঝতে পারার সক্ষমতা, এটা একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উপর জীবনের প্রভাব।

এক জীবনে আমরা কত কিছুই দেখি, কত ভালো কত মন্দ। কত মানুষের কত রুপ, কত চেহারা। প্রতিটা অভিজ্ঞতাই এক একটা শিক্ষা। নিজের জীবন ছাড়াও এই শিক্ষা যাত্রায় প্রভাব রাখে আরো মানুষ। বড় মানুষ, ছোট মানুষ, কাছের মানুষ, দূরের মানুষ, শিল্পী মানুষ, লেখক মানুষ। জেনে না জেনে। সেরকমভাবে আমাদের দেশের কয়েক প্রজন্মের জীবনকে প্রভাবিত করেছেন, করতে পেরেছেন এরকম কিছু মানুষের একজন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। হাত কাটা রবিন বা আমার বন্ধু রাশেদ বা টুকুনজিলকে ভালোবাসা মানেই মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা সন্মান করা। ক্ষেত্রবিশেষে অন্ধ অনুসরন। একটা সময় এমন হয় যে, এইসব প্রিয় মানুষদের সব কিছুই আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে। তখন জন্মায় কিছু প্রত্যাশা।

এই প্রত্যাশা গুলো কিন্তু এমনি আকাশ থেকে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কথা, লেখা আমাদের অনুপ্রাণিত করে বলেই, আমাদের মনের কথাটা তাদের মুখে শোনার প্রত্যাশা করি, তাদের কলমে পড়ার প্রত্যাশা করি। আর এই প্রত্যাশা থাকে বলেই তাদের যেকোন কাজ বা কথাকে আমরা সাধারণ মানুষরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি, যার যার নিজের অবস্থান থেকে।

এই অবস্থান আবার একেকজনের একেক রকম। দীপু বা বকুলাপ্পুর বয়সে বা পারিপার্শ্বিকতায় যেরকম। শাঁওলী বা শফিক ভাইয়ের বয়সে আরেক রকম। আবার অন্যরকম দীপু বা তপুর মায়ের বয়সে। যে কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখে পড়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা মোহাব্বত আলীর একদিনের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিলে যায় আহমেদ ছফার অনেক আগে লেখা গাভী বৃত্তান্ত বইটি। মজার ব্যাপার হলো জাফর ইকবালের বই পড়ে পড়ে আমাদের বই পড়ার অভ্যাস হয়েছে বলেই আমরা আহমেদ ছফার বইও হাতে নিয়ে পড়ি আগ্রহ ভরে। আবার আমার জন্মের আগে মুক্তি পাওয়া একটা সিনেমা এ্যলিয়েনের সঙ্গে মিলে যায় ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম নামের বইটি। ম্যাটিল্ডার সঙ্গে নিতু ও তার বন্ধুরা। কিংবা বেবিজ ডে আউটের সঙ্গে মেকু কাহিনী। অদ্ভুতভাবে মিলে যায়। বুঝিনা হয়তো গ্রেটম্যানরা সবাই একরকম ভাবে।

কিন্তু অবাক লাগে যখন মনে হয়, স্যারের বাসায় টিভি নেই। উনি টিভি দ্যাখেননা। সেজন্য হয়তো উনার চোখে পড়ে না যে প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন মুভি চ্যানেলে এই সিনেমাগুলো দেখানো হয়! একসময় হয়তো এটা বোঝা কঠিন কিছু ছিল। কিন্তু এখনকার সময়ে এই মিল খুঁজে পাওয়ার বিষয়টা মোটেই কঠিন কিছু না। তারপরেও আমরা স্যারের বই পড়ি। নিজে পড়ি। কাউকে উপহার দিলে স্যারের বইই উপহার দেই। গত বইমেলায় যতজন পিচ্চি পাচ্চাকে বই কিনে উপহার দিয়েছি, তার একটা অবশ্যই গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।

মনে হয় বছর দুয়েক আগে স্যারের একটা কলাম পড়েছিলাম। স্যার লিখেছিলেন আত্মহত্যার বিরুদ্ধে। পড়ার পরে মনে হয়েছিল, ইশ সব মানুষ যদি লেখাটা পড়তো! বিশেষ করে যারা আত্মহত্যাপ্রবণ তারা। অথচ, আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই স্যারই বললেন, তার গলায় দড়ি দিয়ে মরতে ইচ্ছা করছে! আবারো বলি আমি দীপুর মায়ের বয়সে, বুঝতে পারি, এটা অভিমানের কথা। কিন্তু তপুর বয়সী একটা ছেলের জন্য কিন্তু এটা অনুপ্রেরণা হয়েও যেতে পারে। কারণ আগেই বলেছি এদেশের লক্ষ দীপু, তপুরা মুহম্মদ জাফর ইকবালকে অনুসরন করে।

আমাদের দেশে এরকম অনুসরন বা অনুকরণের যোগ্য মানুষের নিতান্ত অভাব। তাদের মধ্যেই একজন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সেই মানুষটার তাই একটু উনিশ বিশ আমাদের অনেক বেশি ভাবায়।

আমি জানি আমার মতো এরকম একজন নিতান্ত পাঠক, ছোট পাঠক, অনেক দূর থেকে প্রভাবিত একজন ক্ষুদ্র মানুষ কি ভাবলো, কি বললো তাতে দীপু, রবিন, রাশেদের স্রষ্টা প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ মুহম্মদ জাফর ইকবালের তাতে কিছু যাবে বা আসবে না। কিন্তু এ সময়ের কঠিন বাস্তবতার পৃথিবীতে কিছু বিষয় বিচার করতে হয় যুক্তি দিয়ে, সেই ছোটবেলার আবেগ এখানে কাজ করেনা। আবেগের জায়গাগুলোতে দিনরাত প্রশ্ন করে নানারকম যুক্তির বেড়াজাল। খুব প্রিয় মানুষ, পছন্দের মানুষদের কোন কোন আচার আচরণ সেই যুক্তির মুখে পড়ে। কষ্ট হয়, তোলপাড় করে ভেতরটা, উত্তর মিলেনা। উত্তর মিলবে না জেনেও ভাবনাগুলো মাথায় আসছিল। কারণ আমার অনেক রঙিন স্মৃতির দিন রয়ে গেছে তার বইয়ের পাতায় পাতায়। সর্বশেষ ছাত্রলীগের ‘অবুঝ বাচ্চা ছেলেদের’ গল্পটা শোনার পর থেকে মনে হচ্ছে কেমন হয়, প্রিয় লেখক, গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রিয় মানুষটাকে যদি নিজের কাছে একসময়ের সুখ স্মৃতিই বানিয়ে ফেলি। আজ থেকে যদি আর কোনদিন আমি আর তার কোন লেখা না পড়ি, কোন বক্তব্য না শুনি।

আমার ভেতর আলো কম থাকুক, সেও ভালো। তবুও আলো ভেবে আলেয়ার পিছে ছুটতে চাই না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

নিশাকর বলেছেন: কারো একটা সিদ্ধান্তই
প্রমাণ করেনা সে আদৌ ভালো মানুষ না
খারাপ! সহমত

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: তাকে অনুসরণ করার মত কিছু মনে হয়নি কখনও!

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৪

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: আমার চিন্তা কিছুটা আপনার মত আপু। পড়তে পড়তে ছোটবেলার পড়া সেইসব বইয়ের কথা মনে পড়ছিল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.