নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখনো বলতে পারার মতো জানা হয়নি...

সেই অদ্ভুত ভালো লোকটা, তার অনেক কিছু দেখা চোখটা স্বপ্ন দেখে সে যদি কোন দিন তার স্বপ্ন সত্যি হয় সে কি কিছুটা তোমার সে কি কিছুটা আমার মতো নয়…

শেগুফতা শারমিন

এখানে মৃত্যু দড়িতে নাড়া শাড়ির মতো হালকা হাওয়ায় ওড়ে, এখানে মৃত্যু জানলার কাঁচে কুয়াশার মতো ঝরে

শেগুফতা শারমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নৌ ভ্রমন ও কিছু বিচ্যুতি

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

অবসর। আক্ষরিক অর্থে অবসর নয়। বলছিলাম, এম ভি অবসরের কথা। আরও সহজ করে বললে গাইড ট্যুরসের বড় জাহাজটা, অবসর। গত ১৯ বছরে অবসরের আতিথ্য নিয়েছেন বা দেখা হয়নি তবে গল্প শুনেছেন এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এখন পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণে এদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভরসা দি গাইড ট্যুরস লিমিটেড এবং তাদের জাহাজ অবসর বা ছুটি। শুধু সুন্দরবন নয়, নদীপথে রিভার ক্রুজে যেতে চাইলেও সবচেয়ে পেশাদারি বাহন এই অবসর। গত তিনদিনের ছুটির অবসর কাটানোর সুযোগ মিলে গেল সেই অবসরেই। তবে কোনো পূর্বপরিকল্পিত ভ্রমণ নয়, একেবারেই একটা ঘরোয়া পারিবারিক ভ্রমণের আমন্ত্রণÑ স¦য়ং মিলন ভাই আর তপতী ভাবীর কাছ থেকে। মিলন ভাই মানে হাসান মনসূর। বাংলাদেশে যারা ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, তাদের কাছে মনসূর দম্পতিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। শুধু এটুকু বলি, অনেক বছর আগে, বহুপথ ঘুরে, বহু ক্রোশ দূরে এক সন্ধ্যায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম আসামের কাজিরাঙায়। আশ্রয় মিলেছিল চা-বাগানের ভেতর এক ট্যুরিস্ট বাংলোর কাঠের ক্যাবিনে। যার তিনদিকে বন। পেছনে পাহাড় থেকে নেমে আসা একটা ঝিরি। ঘরে টিমটিমে আলো। জনমানুষ নেই। অথচ কেমন একটানা একটা ঝিরঝির ঝিরঝির শব্দ। শব্দের সন্ধানে পেছন বারান্দার দরজা খুলতেই ছলাৎ করা সেই ঝরনা। নুড়ি পাথরের খাঁজে খাঁজে আছড়ে পড়ছে রুপালি পানি। সন্ধ্যাটা ঘন হয়ে একটু রাত নামতেই বের হয়েছিলাম খাদ্য এবং মানুষের সন্ধানে। চা বাগান থেকে বের হয়েই গাড়ি-ঘোড়াবিহীন পিচঢালা পথ বেয়ে কিছুক্ষণ যাই। যাত্রাপথে এক বিরাট হাতি রাস্তা পার হয় হেলেদুলে। দীপাবলির পরের রাত অন্ধকার, রাস্তায় জনমানুষ নেই, হাতি! সব মিলিয়ে ভয় ভয়, গা ছমছম। অচেনা, অদেখা। হঠাৎ একটা বাজারের সন্ধান। বাজার মানে কয়েকটা ছোট ছোট দোকান। দু’তিনটি মুদি দোকান। চিপস, চানাচুরের রঙিন প্যাকেট চকচক করছে। একটা দোকানে চুলো জ্বালিয়ে পরোটা আর ডিম ভাজি চলছে। নানারকম দেশি লিকারের ছোট একটা দোকান। আর একটা ফোনের দোকান। মানে এসটিডি, আইএসডি বুথ। তখনো মোবাইল ফোনের এত রমরমা দিন শুরু হয়নি। কোথাও গেলে দেশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার উপায় মানে সেই এসটিডির দোকান। সেই দোকানের ছোট্ট টেবিলের কাঁচের নিচে একটা ভিজিটিং কার্ড। কার্ডের ওপর নাম লেখা হাসান মনসূর! ঘটনাটা হয়তো ছোট। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় আমাদের জন্য দারুণ অর্থবহ। আমরা বেরিয়েছিলাম মানুষের সন্ধানে। মানুষ মিলুক বা না মিলুক। সেই কার্ডটা যেন আমাদের সঙ্গ দিল। মনে হলো মিলন ভাই আছেন কোথাও আমাদেরই আশেপাশে। কোথায় গেল সেই গা ছমছম ভাব!
এভাবেই সুন্দরবন হোক বা বান্দরবান। দেশ কিংবা বিদেশ। প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ দেশি বা বিদেশি ট্যুরিস্টদের কাছে প্রিয় মুখ, নির্ভরযোগ্য মানুষ সত্তরোর্ধ্ব তরুণ মিলন ভাই। আগেই বলেছি উনার ডাকেই এবার আবার অবসরে। একবারেই তাদের কিছু কাছের মানুষ, বন্ধুবান্ধব। প্রথমদিন সাত সকালে সদরঘাট থেকে শুভযাত্রা। পরেরদিন বিকেল পাঁচটায় পাগলা ঘাটে শেষ। মাঝখানে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, মেঘনা, পদ¥া, শীতলক্ষ্যা। দুদিন দুপুরেই পদ¥া আর মেঘনার পানিতে তিন থেকে তিয়াত্তর সব বয়সীর মাতামাতি। সাঁতার জানা থাক বা না থাক। হাবুডুবু খেতে কারও কোনো বাধা নেই। বিকেলবেলা নদীর চড়ে গড়ে ওঠা গ্রামে গিয়ে দৌড়ঝাঁপ। স্থানীয় জেলে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে পথ চলতে ভাব বিনিময়। আপাতত তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা। জেলে গ্রামগুলোতে তাই হাহাকার। কাজ নেই। নেই সরকারি ভাতা। এই তিন মাস যে ভাতা পাওয়ার কথা, এরা শুধু তা কানেই শুনেছে। একজনও নেই যে একবারও পেয়েছে। অভাব আছে, ঘরে খাবার নেই কিন্তু মুখে হাসি আছে। একদল ছেলেমেয়ে আমাদের সঙ্গ দেয়, পুরো গ্রামে। বড় চর পেরিয়ে যখন আমরা স্পিডবোটে উঠি তখনও সেই দলের ২২ জন আমাদের সঙ্গী। হাত নেড়ে বিদায় জানায় শেষ বিন্দুতে মিলে না যাওয়া পর্যন্ত।
সেদিন সারারাত অবসর নোঙর করেছিল ষাটনলে। ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগেই স্পিডবোট নিয়ে বের হওয়া। উদ্দেশ্য, নদীর তীরে মাছের আড়ৎ থেকে মাছ কেনা। পৌঁছতে পৌঁছতে সূর্য উঠে গেছে। ততক্ষণে এদের বেচা-বিক্রিও প্রায় শেষ। আমাদের ভাগ্যে মেলে কিছু তরতাজা ছোট মাছ। বাঁচা, কাজলী, তপসে। আর দেখি চাপিলার নামে বিক্রি হচ্ছে জাটকা, দেদার। জাটকা ধরা এবং বিক্রি নিষেধ। কিন্তু কে শোনে, কে মানে নিয়ম? কোথাও যেন কোনো শৃঙ্খলা নেই।
অবসরে খাওয়া-দাওয়া, লুডু ক্যারম সঙ্গে ম্যারাথন আড্ডা। সামনে বা পেছনের খোলা ডেকে বসে পাখি দেখা। পানকৌড়ি, জলপিপি, মাছরাঙা, ফিঙে আরও কত পাখি নাম জানি না। যখন কিছু করার নেই, জানালার ফোকর দিয়ে আকাশ দেখি, ষাটনলে। বিস্তীর্ণ আকাশ। দুটো দিন, কয়েকটা ঘণ্টা সত্যিই সুন্দর। এক কথায় দারুণ মনে রাখার মতো।
এরপরও বলি এত সুন্দর অভিজ্ঞতাও আজকাল শেষ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে সুন্দর থাকে না। ভালো থাকতে গেলে, ভালো রাখতে গেলে কিছু বিচ্যুতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। দিনে দিনে যে বিচ্যুতির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমেই ভালোটাকে, সুন্দরটাকে হারিয়ে দিয়ে জিততে বসেছে বিচ্যুতিগুলো। পরিষ্কার করেই তবে বলি। যাবার দিন ভোর সকালে উঠে গেছি। রাস্তা ফাঁকা। মোহাম্মদপুর থেকে সদরঘাট মাত্র আধাঘণ্টায় হাজির। ফুরফুরে মন। নদীর ধারে তরমুজ আর বাঙ্গির পাইকারি বাজার ভেদ করে নদী চোখে পড়ছে। বাঙালি আমরা পানি দেখলেই মাথা ঠিক থাকে না। তাই নদী দেখেই দৌড়ে গেলাম পানির কাছে। কিন্তু কি আশ্চর্য! যাওয়া যায় না। পানির কি দুর্গন্ধ। কি ঘন কালো রং। সেই পানিতেই স্পিডবোটে করে চললাম মাঝনদীতে অবসরে। টেকা যায় না গন্ধে! সবাই আসার পর জাহাজ ছাড়ল, তখন স্বস্তি। বুড়িগঙ্গা ব্রিজ পার হওয়ার পর নদীর দু’দিকে শুধু ইটভাটা। শত শত ইটভাটা। ময়লা পানি, তখনো হাল্কা দুর্গন্ধ। মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে যাওয়ার পরও মনে হয় না এটা নদী। মনে হয় বড়সড় পুকুর। দুই পাড়ের দূরত্ব কত কম! ছোট ছোট ড্রেজিং মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তুলছে ইচ্ছেমতো। নদী নয়, যেন যত্রতত্র বালুর খনি।
তারপরও রাত্রে যেখানে নোঙর করা হলো, সেই ষাটনলে গিয়ে পাওয়া গেল নদীর ঘ্রাণ, নদীর বাতাস। সুন্দর ঠাণ্ডা মিষ্টি ভোর। সোনা রঙের নদী। স্বচ্ছ পানি। ঠিক প্রত্যাশার মতোই। সেই প্রাপ্তি, সেই আনন্দ, সেই হরিষ বিষাদে ভরলো, বিকেলবেলা শীতলক্ষ্যায়। আবার নোংরা কালো পানি। পেট উল্টে আসা দুর্গন্ধ। নদীর পাড়ে সারি বেঁধে এদেশের প্রথম সারির সবচেয়ে ক্ষমতাবান, অর্থশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর কলকারখানা। তাদের ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে সিমেন্ট, তেল আরও কত কি! বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নতি হচ্ছে। অথচ তাদের বর্জ্য পড়ছে সরাসরি নদীতে। নদীর নাভিশ্বাস উঠে গেছে। নদী তীরে একপাশে বন্দর আরেক পাশে নারায়ণগঞ্জ। উন্নয়নের জোয়ার বইছে। শত শত নতুন পাঁচ-ছয়তলা আবাসিক ভবন। কিন্তু সব ভবনের জানালা বন্ধ। বোঝা যায়, নদী দখল করে অথবা দখল করা জমি কিনে নদী তীরে বাড়ি করেছে ঠিকই কিন্তু দুর্গন্ধে জানালা খুলতে পারে না।
মৃতপ্রায় নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে ততক্ষণে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে। আমার একার নয়, সব্বার। হঠাৎ একটা গান মনে পড়ে, আমার খুব প্রিয় একটা গান। খান আতার লেখা শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা, তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।’
ঋণ শোধ তো দূরের কথা। সেই পবিত্র রক্তের দাম ভুলে আমরা আমাদের নদী ভরিয়ে দিয়েছি বর্জ্য।ে জানিনা, এরকম এক নদী বর্জ্য পেরিয়ে আমরা কোন ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি! যারা এইভাবে নদী দূষণ চালিয়ে যাচ্ছে, শুধু জানি তাদের এই পাপ কোনোদিন মোচন হবে না।
দোহাই লাগে, নদীর কথা শুনুন, নদী বাঁচান।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৮

বিজন রয় বলেছেন: নদী বাঁচানো কঠিন! তার চেয়ে বরং মানুষ ভাল হোক।

সুন্দর পোস্ট।
+++

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯

জুন বলেছেন: নদী পথে দক্ষিনে ভ্রমনে যাবার আগে আর ফিরে এসে বুড়ীগঙ্গার কষ্টকর পথ চলা দেখলে মনটা ভারী হয়ে আসে ।
দুবার গাইড ট্যুরসের মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমন আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে আছে ।
এই নিন এম ভি অবসরের একটি ছবি কটকায় :)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ছবিটা সুন্দর। ধন্যবাদ ।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩

অপূর্ব আফজাল বলেছেন: ভাললাগল পড়তে :)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫

পুলহ বলেছেন: 'ভালো থাকতে গেলে, ভালো রাখতে গেলে কিছু বিচ্যুতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। দিনে দিনে যে বিচ্যুতির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমেই ভালোটাকে, সুন্দরটাকে হারিয়ে দিয়ে জিততে বসেছে বিচ্যুতিগুলো। '
'সেই পবিত্র রক্তের দাম ভুলে আমরা আমাদের নদী ভরিয়ে দিয়েছি বর্জ্য।ে জানিনা, এরকম এক নদী বর্জ্য পেরিয়ে আমরা কোন ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি! যারা এইভাবে নদী দূষণ চালিয়ে যাচ্ছে, শুধু জানি তাদের এই পাপ কোনোদিন মোচন হবে না।
দোহাই লাগে, নদীর কথা শুনুন, নদী বাঁচান। ' -- কি আর বলবো, কিছু বলার নাই...
ভালো থাকুক এদেশের নদীরা- শুধু এই প্রার্থনা।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৬

শেগুফতা শারমিন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.