নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাচ্ছেতাই

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু

সিদ্দিকী শিপলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির অপালাপ-৩ রিক্সা ভ্রমণ-২

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৬

স্মৃতির অপালাপ-৩ রিক্সা ভ্রমণ-২
বছর আট/নয় আগের কথা।

একদিন আমার এক পিচ্চি কালের বন্ধু, সদ্য মালয়েশিয়া ফেরত জালালের সাথে রিক্সায় কোথাও থেকে শনির আখড়া যাচ্ছিলাম। সে মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন নারী সংক্রান্ত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলো। কিছু বিষয় নিয়ে তার সাথে তর্ক হচ্ছিল। বন্ধু বলছিলো যে, স্পর্শ বা সৌন্দর্য উপভোগ বিনে ভালোবাসা অর্থহীন এবং ভঙ্গুর। রসাত্বক আলাপে আমার ভূমিকা ছিলো নজরুল টাইপ প্রেমের সমর্থক হিসেবে। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা চলার পরও আমার বন্ধু তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলো। গল্প আর তর্ক করতে করতে রিকশা শনির আখড়া এসে থামলো। ১৭/১৮ বছরের রিকশাওয়ালা ছেলেটা ভাড়া নেয়ার সময়ে বেশ জোর গলায় বললো "স্যার, আপনার কথা একটুও ঠিক না। প্রেম এমন না। ভালোবাসা এমন না। ভালোবাসা গায়ের রং বা ফিগার দেখে হয় না।"

একজন রিক্সাওয়ালার সাথে প্রেম ভালোবাসার সংঙ্গা নিয়ে আলোচনা করার কোন ইচ্ছা আমাদের থাকার কথা ছিলো না। আমার বন্ধু হয়তো একটা ধমকই লাগাতো। কিন্তু ছেলেটা হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে দিলে হতচকিত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কাউকে ভালোবাসে কি-না।

ছেলেটা খুব অভিমানের সাথে আঞ্চলিক ভাষায় জানালো যে সে গ্রামে একটা মেয়েকে ভালোবাসতো। কিন্তু মেয়ের বাবা তার সাথে বিয়ে দিতে চায় নাই।
- মেয়ের বাবা কি করে?, প্রশ্ন করলাম।
- ভিক্ষা করে, কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটা জবাব দিলো।
মেয়ের বাবাকে বিয়ের কথা বলাতে মেয়ের বাবা তাকে শর্ত দিয়েছিলো উপার্জন করে দেখাতে হবে, এবং কিছু টাকা দিতে হবে। পুরাই সিনেমার কাহিনীর মতো টাকা জোগাড় করার জন্য ছেলেটা ঢাকায় আসে প্রায় ৬ মাস আগে। আসার আগে মেয়ের বাবার কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছে যে সে না ফেরা পর্যন্ত যেন মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে না দেয়। মেয়ের বাবাও তাকে কথা দিয়েছিল যে তারা অপেক্ষা করবে।
ছেলেটা ঢাকায় এসে রিক্সা চালিয়ে টাকা জমিয়ে মাসখানেক আগে যেয়ে দেখে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ের বাবা শুধু বলেছে এর মধ্যে অন্য কারো কাছ থেকে টাকা পেয়েছে, এই ছেলেটা যে ফিরে আসবে সেই বিশ্বাসটা মেয়ের বাবার ছিলো না।
এসব বলে রিক্সাওয়ালা ছেলেটা কাঁদতেছিলো।
সান্তনা দেয়ার মতো কিছু না পেয়ে বললাম-
-যাই হোক এমনতো হতে পারে যে মেয়েটা এখন যেখানে আছে, সেখানে ভালোই আছে, যেহেতু তাকে ভালোবাসো সেহেতু তার ভালোর জন্য দোয়া করো।
ছেলেটা উত্তর দিলো
- না, না, মাইয়াটা আর কোথাও ভালো থাকবে কি করে, কারো কাছে ভালো থাকবে না।
- কেন? কেন?তুমি কেমন করে বুঝলে?
- ওই তো চোখে দেখতে পারে না। জন্মান্ধ।

চলে আসতে আসতে একবার পিছন ফিরে দেখি ছেলেটা নিঃশব্দে কানতেছে আর দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতেছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪৫

হুমায়রা হারুন বলেছেন: সত্যিই কি অদ্ভুত জীবন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.