নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদাসিদে মানুষ

যে ঘুড়ি উড়তে জানে না........

নীল কথন

হারিয়ে যাওয়া চশমার খোঁজে হাঁটছি........

নীল কথন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাগজের নৌকা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭





একপাতা কাগজ নিয়ে ভাঁজের উপর ভাঁজ বসানোর পর তৈরি হয়ে গেল নৌকা। হতবাক হয়ে আলতো হাতে নৌকার মাঝের পাল ধরে পানিতে ভাসলাম। ঐ নৌকাটা এই পদ্ম পুকুরেই ভাসিয়েছিলাম। আমার বুবু নৌকাটা বানিয়েছিলেন। মোবাইলে সংবাদটা শোনার সময় মা আমার পাশেই ছিলেন। আমি কিছুই বলিনি। তবুও মা বুঝতে পারেন। হতভম্ব হয়ে মাটিতে বসে পড়েন। একটুকু শব্দ না করে মাটির দিয়ে চেয়ে থাকেন। রসুই ঘর থেকে আমার ছোট বোন ইলা দৌড়ে এসে মাকে ঝাপটে ধরে। পুরো ঘরটায় বিষাদের ধোঁয়া ছড়িয়ে আমি বের হয়ে আসলাম। একটু আগে আমার বুবু আত্মহত্যা করেন।



জাদুর হাসি ছিল বুবুর। কৃষ্ণবর্ণের গাত্র কিন্তু গালের ছোট্ট টোল হাসিকে স্নিগ্ধ করে তুলছে। শেষবার শশুর বাড়ির দরজার কড়া নাড়লে বুবু দুয়ার খুললেন। আমাকে দেখেই বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে মুখে সেই জাদুর হাসি টানলেন। বুবুর শশুর বাড়ির নাম ‘দীঘির পাড়ের বাড়ি।’ বেশ বড়সড় দীঘি। প্রায় বিঘা পঞ্চাশের মত হবে। চারপাড়েই মানুষের বসবাস। দীঘিতে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য কয়েকটা ডিঙি নৌকা আছে। বুবু দীঘির ঘাটের সিঁড়িতে বসে মাছ কুটতেছিলেন। আমি দীঘিতে খেয়া বেয়ে ঘাটে এসে বুবুর মুখ দেখি। বুবু শত বিষাদ ঢেকে রাখতে জানেন। চোখ তুলে বুবু বললেন, ‘আব্বা কবে আইবো?

-‘এইতো মাস দুয়েকের মইধ্যে।’

-‘এরা খুব জ্বালায়! খুব খোটা মারে! আর....’

বুবু চুপ রেখা টানেন।

বৈঠা ডুবিয়ে দীঘির গভীরে যেতে যেতে জল ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাই – ‘আর গায়ে হাত তোলে’।

সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বাবা। নানান জনের কাছে ধার করে মাঝ বয়সে বাবা ওমানে পাড়ি দিয়েছেন। বুবুর বিয়ের সময় কয়েক ভরি স্বর্ণ আর ছেলের বাড়ির দালান তুলতে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এমনিতে ধার দেনায় আমরা প্রায় ডুবু ডুবু। তবুও বুবুর জন্য ওখানে কিছু স্বর্ণ কিনে রাখে বাবা। দেশে আসলেই বিয়ের পণ দিলে বুবুর সংসারে হয়ত একদন্ড শান্তি মিলবে।



জোছনা নেমেছে। থকথকে জোছনা। জোছনার শুভ্র আলোয় কেমন যেন গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তবুও পদ্ম পুকুর পাড়েই জিম ধরে সারারাত বসে থাকি। সকালে ইলা এসে বলে গেল, ময়না তদন্ত শেষে বুবুকে বাড়িতে আনা হয়েছে। বাদ জোহর জানাজা হবে। বুবুকে শেষ বারের মত দেখতে যেতে আমার ইচ্ছে করছে না। আমার চোখে লেগে আছে হাসি ভরা মায়াবী এক মুখ। নিথর পড়ে থাকা হলদে মুখখানি সারা জীবন আমাকে পোড়াবে। যাবার বেলায় ইলা বলল, ‘ঐ বাড়ির পাশের লোকজন জানালো, বুবুকে প্রহারের পর বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয়। এরপর গলায় ওড়না বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। শশুর বাড়ির সবাই এখন নিরুদ্দেশ।’



রোজ রাতে চাঁদের বুড়ির গল্প বলতেন বুবু। আর থাকত আমার রাজকুমার ও পঙ্খীরাজ ঘোড়ার গল্প। পঙ্খীরাজ ঘোড়ার জন্য বায়না ধরলে বলতেন, ‘আমার যখন লাখ খানিক টাকা হবে তোকে একটা পঙ্খীরাজ ঘোড়া কিনে দিব।’ রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বসে বাবা এক লাখ টাকা আমার হাতে তুলে দিলেন। একটু আগে বুবু হত্যার বিচার কার্য সম্পন্ন হয়েছে। বিচারক ছিলেন সব দলীয় নেতা কর্তা। তিন লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য হয়। নগদ উশুল এক লাখ। আমি টাকা নিয়ে পদ্ম পুকুর পাড়ে এসে বসি। হাজার টাকার বান্ডেল থেকে একটা নোট বের করে ভাঁজ করি। ভাঁজ বসিয়ে নৌকার বানাই। দুহাতে আলতো করে পুকুরে নৌকা ভাসাই। একে একে অনেকগুলো নৌকা বানিয়ে ফেলি। আর বলতে থাকি, ‘দেখ বুবু! আমি এখন নৌকা বানাতে পারি।’



১৮০৯১৪

মন্তব্য ৩৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
সহজিয়া ভাষায় মন ছোঁয়ে গেল গল্পে ৷

স্বল্প কথায় অনেক অভিব্যক্তি প্রকাশ ৷

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫২

নীল কথন বলেছেন: মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো ।
শুভকামনা ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫২

নীল কথন বলেছেন: ধন্যবাদ। আমার ব্লগবাড়িতে স্বাগতম।

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫২

সুমন কর বলেছেন: সাবলীল বর্ণনা। ভাল লাগল। যদিও অারো একটু বড় করার সুযোগ ছিল।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

নীল কথন বলেছেন: বহু ডালাপালা গজিয়েছিল। কেটে ফেলছিলাম। পঠনে ধন্যবাদ।

৪| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: নীল কথন ,




চমৎকার শেষেরটুকু ।
নৌকা ভাসানোর দৃশ্যকল্প, গালে টোল খাওয়া সেই হতভাগিনীর জন্যে শ্রেষ্ঠ এক উপহার ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

নীল কথন বলেছেন: ধন্যবাদ। সতত ভালো থাকুন।

৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
শীতল শান্ত এক জীবন ঘনিষ্ট ঝলকানি দেখলুম, নীল কথন।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৪

নীল কথন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে প্রীত হলাম ভ্রাতঃ।

৬| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমাদের ক্ষয়িঞ্চু সমাজের বাস্তবরূপ।
আশায় আছি কবে "দেখ বুবু! আমি এখন নৌকা বানাতে পারি" না বলে বলবো দেখ বুবু ঐ জগদ্দল ব্যাবস্থাকে আমি ঐ নৌকাতেই ভাসিয়ে দিলাম।।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

নীল কথন বলেছেন: সেই আশায় বুক বাঁধি....ধন্যবাদ ভ্রাতঃ।

৭| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০১

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: ভাল লিখেছনে কিন্তু লেখাটি পড়ে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। আসলে এভাবে কত প্রানশিখা নিভে যায়!!কাগজের নৌকা ---ঠিক তাই
ভাল থাকবেন।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০

নীল কথন বলেছেন: আরো কত কিছু ঘটে। বিচারের রায় পক্ষে থাকে, তাই বিচারকদের কিনে ফেলে। এমনও দেখেছি।

আমার ব্লগ বাড়িতে স্বাগতম। পাঠে ধন্যবাদ। ভালো থাকা হোক অহর্নিশ।

৮| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২২

এম হাবিব আহসান বলেছেন: এভাবে আমাদের পল্লীর বুবুরা খসে পড়া তারার মত নিভে যাচ্ছে। কারন একটাই, আমাদের মধ্যে আর মুল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব নেই।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

নীল কথন বলেছেন: এই মূল্যবোধ বা মনুষ্যত্ব কবে আসবে তারও কোন ঠিক নেই।

পঠনে ধন্যবাদ ভ্রাতা। সতত ভালো থাকুন।

৯| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

সমানুপাতিক বলেছেন: সহজ ভাষায় সুন্দর গল্প । অনেক ভালো লাগলো ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২

নীল কথন বলেছেন: ধন্যবাদ সমানুপাতিক ভাই।

১০| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সহজে সুন্দর ভাষায় বাস্তবিক লেখা । সমাজে এইসব নির্মম ঘটনা অহরহ ঘটে । পড়ে ভাল লাগল ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

নীল কথন বলেছেন: হুম, চোখ মেললেই এই সব দেখা যায়। গল্পে বিষাদ তেমনভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তার গল্পটা লেখার পর মন খারাপ হয়েছিল। যাই হোক, গল্পটা বাতিল কাগজের মত পড়ে থাকবে ভাবছিলাম। এখন দেখি অনেকেরেই ভালো লাগছে। ধন্যবাদ ভ্রাতা।

১১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ভীষণ ভাল লাগলো ------- শুভকামনা রইল -----

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

নীল কথন বলেছেন: পাঠে আন্তরিক ধন্যবাদ। পাঠে ভালো লাগায় আমারও আনন্দ লাগলো।

১২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫

পার্থ তালুকদার বলেছেন: শেষের দিকে মন ছুঁয়ে গেল ভাই-----
শুভকামনা ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭

নীল কথন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা। ভালো লাগায় ভালো লাগলো। সতত ভালো থাকুন।

১৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৬

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: আপনার কাজলাদিদি বুবু ভালো থাকুক যেখানেই থাকুক।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৫

নীল কথন বলেছেন: পৃথিবীর সব কাজলা দিদিই ভালো থাকুক।

১৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

ডি মুন বলেছেন: বাহ, বর্ননার স্নিগ্ধতায় নিষ্ঠুর বাস্তবতার গল্প।

ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। আর আপনাকেও অনুসরণে নিলাম।
আশাকরি আরো চমৎকার চমৎকার লেখায় আমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন।

শুভেচ্ছা।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৬

নীল কথন বলেছেন: প্রীত হলাম ভাই। লেখতে ভালোবাসি। চমৎকার হয়ত হয়, হয়ত না।
নিরন্তর শুভেচ্ছা।

১৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৩

জুন বলেছেন: মন ছুয়ে গেল । এই হলো আমাদের সমাজ । গ্রামীন পটভুমি বলে আর আলাদা করতে চাইনা
খুব সুন্দর তুলে ধরেছেন গল্পটি সাবলীল ভাবে।
+

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৪

নীল কথন বলেছেন: আমার ব্লগ বাড়িতে স্বাগতম আপু। মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো। দিবানিশি ভালো থাকা হোক।

১৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭

নীল কথন বলেছেন: আমার ব্লগ বাড়িতে স্বাগতম আপু। মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো। দিবানিশি ভালো থাকা হোক।

১৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৮

সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: খুব সুন্দর শুরু। চলতে চলতে ধাক্কা। বেশ হয়েছে। কিন্তু তুমি এত ছোট লিখছো কেন? ভাষার সুন্দর গঠন অথচ লেখা পড়ে অতৃপ্তি থাকে।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০২

নীল কথন বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
মেদ বাড়বে তাই সেই ভয়ে লেখা হয় নি।

১৮| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৪৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সহজ সাবলীল ভাষায় বলা অতি পরিচিত কাহিনী আবার পড়তে ভালো লেগেছে, পাঠ রুদ্ধ হয় নাই।

ঈদের শুভেচ্ছা রইল, ভালো কাটুক সময়গুলো।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০২

নীল কথন বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৯| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৩০

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর, বিষাদী।

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০৩

নীল কথন বলেছেন: আপনার মন্তব্য উৎসাহ যোগায়। কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.