নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখকের অনুমতিক্রমে লেখাগুলো ব্লগে প্রকাশ করা হচ্ছে।লেখকের এফবি আইডি http://www.facebook.com/muhammad.toimoor
part1 Click This Link
part 2 Click This Link
part3 Click This Link
১২
ঘটনার পর এমডি সাহেবের সাথে আমার ভাব হলো গলায় গলায়। একসাথে লাঞ্চ করি, ডিনার খাই, পার্টিতে যাই। এখন মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে যেসব জিনিস ইম্পোর্ট করা হয়, সেসব জিনিসের কথা চিন্তা করলেই একটা আইটেমের নাম পেয়ে যাই। যদিও তখনো আমি একই বাসায় থাকি, মুকুলের মায়ের রান্না খাই, তবু আমার ভেতর একটা বড় পরিবর্তন এসে গেল। মেয়েদের প্রতি হয়ে পড়লাম ভীষণ দুর্বল। আজেবাজে মেয়েদের প্রতি যতখানি না হলাম, তার থেকে বেশি হলাম ভদ্রঘরের মেয়েদের প্রতি। যেকোনো উপায়ে তাদের বিপথগামী করা আমার কাছে হয়ে উঠল নেশার মতো। আমার প্রথম শিকার হলো আমাদেরই অফিসের রিসেপশনিস্ট মেয়েটি। ভদ্রঘরের গ্র্যাজুয়েট মেয়ে, যুদ্ধের আগে এর বাবা যথেষ্ট ধনী ছিল। এখন অভাবে পড়ে চাকরি করছে, আশায় আছে ভালো একটা বিয়ের। এই মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজারে কুরবানি ঈদের চার দিন ছুটি কাটিয়ে এলাম। এরপর নজর দিলাম এমডি সাহেবের পরিচিত বৌ-ঝিদের দিকে। তবে এতেও আমার শান্তি হলো না। আমি চাইলাম, আমার পরিচিত পুরুষেরা সবাই আমার মতো চরিত্রহীন হোক। অফিস থেকেই শুরু করলাম। এমডি সাহেবকে বোঝালাম, অফিসের অন্য কর্মচারীদেরও লাভের একটা হিস্যা দেওয়া দরকার। তা না হলে, কে কখন ঝামেলা বাধাবে কে জানে? আসলে এসব বাকওয়াজ, মূল উদ্দেশ্য ওদেরকে আমার কাছাকাছি নিয়ে আসা। ছুটির দিনগুলোতে সহকর্মীদের নিয়ে মদ-জুয়ার আড্ডা বসিয়ে দিতাম হোটেল পূর্বাণী অথবা ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন)। ভদ্রঘরের শিক্ষিত বিবাহিত-অবিবাহিত মেয়েরা আমাদের সঙ্গ দিত। এসব সহকর্মীর স্ত্রীরা সচ্ছলতার মুখ দেখল ঠিকই, তবে ঘরের শান্তি হারাল চিরতরে। কলিগদের অনুপস্থিতিতে নিয়মিত তাদের বাসাতেও আমি যেতে শুরু করলাম।
১৩
এত কাণ্ডের ভেতরও রাতে বাসায় ফিরলেই আমি মোম জ্বেলে মূর্তির সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম। মাঝেমধ্যে একটি গোলাপ কিংবা গন্ধরাজ ফুল রাখতাম ওটার পায়ের কাছে। তবে একটা প্রশ্ন সব সময়ই আমার মনে উঁকি দিত; মূর্তিটা কিসের, আর ওটা ওখানে রাখলই বা কে? এরই ভেতর আরও একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম। আমার হাত, পা, গাল ফুলে যেতে লাগল। দেখলে মনে হতো, পানি জমেছে ওই জায়গাগুলোতে। চোখের নিচের মাংসপিণ্ড দুটো পোঁটলার মতো হয়ে ঝুলতে লাগল। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে মনে হয়, সামনে রাবণের মা দাঁড়িয়ে আছে। অল্প শ্রমেই হাঁপিয়ে যেতে লাগলাম। আগে এক ঘুমে রাত পার করতাম; এখন ঘুমালেই ভীষণ নোংরা সব স্বপ্ন দেখে ঘেমে নেয়ে উঠি। সারা রাতে ঘুম হয় ছাড়া ছাড়া। সব সময় অস্থির লাগে। মেজাজ চড়ে থাকে সপ্তমে। আমার অনেক টাকা, অন্যেরাও টাকা বানিয়েছে আমাকে দিয়েই। কার ঘাড়ে কয় মাথা আমাকে কিছু বলে? ফেরিঅলা, রিকশাঅলা, ভিখিরি, হোটেলের বয়-বেয়ারাদের সাথে মানবেতর ব্যবহার করতে লাগলাম আমি। তবে ভালো-মন্দ জ্ঞান তখনো আমার সম্পূর্ণ লোপ পায়নি।
১৪
তখন ফাগুন মাস। রোববার সকাল এগারোটার দিকে বাসা থেকে বের হলাম এমডি সাহেবের সাথে ঢাকা ক্লাবে মেজবানির দাওয়াতে যাওয়ার জন্য। ঘর থেকে বেরোতেই মুকুলের মা’র সাথে দেখা। কী রান্না হবে জানতে চায়। দুপুরে বাইরে খাব, ফিরতে রাত হবে বলে বিদেয় করলাম তাকে। বাসার সামনে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি, এমন সময় শুনতে পেলাম, কে যেন ‘ভাইয়া ভাইয়া’ করছে। তাকিয়ে দেখি, নারায়ণ আমাকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে। তার দোকানে বসা এক হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নারায়ণ।
‘ভাইয়া, উনার নাম জীবন চৌধুরী। খুলনা থেকে এসেছেন। এই বাড়িতে থাকে, এমন কারও সাথে দুটো কথা বলতে চান।’
জীবন চৌধুরীর দিকে তাকালাম। পঞ্চাশের কাছাকাছি ওই ভদ্রলোককে কৌন্দর্পকান্তি বললেও কম বলা হয়। চওড়া কপালের ওপর ঢেউখেলানো পাতলা চুল, টিকালো নাক, ফরসা ধবধবে গায়ের রং, ফিনফিনে ধুতি-পাঞ্জাবি পরনে। পায়ে পামশু, গলায় চন্দন কাঠের ছোট মালা, কপালে চন্দনের টিপ।
নারায়ণের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একজন অপরিচিত লোকের সাথে ফালতু আলাপ করার প্রশ্নই ওঠে না। তার পরও আমি দাঁড়ালাম। আসলে ভদ্রলোককে দেখে এক রকম মুগ্ধই হয়েছিলাম। ভাবলাম, দু-একটা কথা বললে ক্ষতি কী? মেজবানি শুরু হতে এখনো ঘণ্টা খানেক বাকি। খুলনা তো আর সাভার, নারায়ণগঞ্জ না। এত দূর থেকে যখন এসেছে, বলিই না দু-চারটে কথা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্রেফ ভদ্রতার খাতিরে চৌধুরীকে বললাম,
‘চলুন না বাড়ির ভেতরে। আমার ঘরে গিয়ে বসি?’
‘ভাই শুনুন, সময়ের মূল্য আমি বুঝি। বের যখন হয়েই পড়েছেন, ফিরে আর কী হবে? তার চেয়ে বরং যেদিক যাচ্ছিলেন, সেদিকেই চলুন। যেতে যেতেও তো কথা বলা যায়। অবশ্য আপনার যদি কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে ভিন্ন কথা।’
‘না না, অসুবিধা আর কী। দুপুর বারোটায় দৈনিক বাংলার মোড়ে আমাদের এমডি সাহেবের সাথে দেখা করার কথা। ওখান থেকে আমরা অন্য আর একখানে যাব।’
‘তাহলে রিকশা নিয়ে ওদিকেই যাওয়া যাক, কী বলেন?’
‘সিওর।’
(চলবে)
[email protected]
©somewhere in net ltd.