নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

(https://www.facebook.com/Sadia53)

উর্বি

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

উর্বি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেহা চরিত- ১২

১২ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৩৫


২০০১, নেহা সবেমাত্র ক্লাস ফোরে উঠেছে। গুটু গুটু পায়ে সকালে স্কুলে যায়। মা চুলের বেণী করে দেয়। স্কুল থেকে ফিরেই গানের ম্যাডাম আসে। খেয়ে নেয়ে বসে পড়ে। বিকালে বাসার সামনের মাঠে খেলা করতে নামে। সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে আসে। আবার পড়া। ঘুম।
সব কিছু ঠিকই চলছিল। তারপর হঠাত একদিন রাতে খবর এলো নেহার আব্বু অসুস্থ।ক্লিনিকে এডমিট করা হয়েছে। সাইট ভিজিটিং এ যেয়ে প্রেশার বেড়ে গেছে। বুকে পেইন। সারা গা ঘামছে। ডাক্তাররা প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করছে হার্ট এট্যাক। নেহার আম্মু হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলেন ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে। ছোট্ট নেহা চুপচাপ একলা বাসায়। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে নেহার আব্বুকে নিয়ে এলেন আম্মু। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। আব্বুর খাটের পাশে বসেছিল নেহা। বসে থাকতে থাকতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টেরই পায় নাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আম্মু বললেন- "বাবু! চটপট রেডি হয়ে নাও। আমরা ঢাকা যাচ্ছি"। নেহা অবাক হলেও কোন কথা বলল না।আস্তে আস্তে উঠে রেডি হল। নিজের কাপড় গুছাতে গিয়ে দেখল আম্মু আগেই বাঁধাছাঁদা করে ফেলেছেন। সকাল ১০ টার দিকে রওনা হলো তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে।
নেহার আব্বু ইসলাম সাহেব ঢাকায় ছোট বোনের বাসায় উঠলেন। উনার ছোট বোন তো যারপরনাই বিরক্ত। উঠতে বসতে কথা শোনাতে শুরু করলেন ভাইয়ের বউকে। অনেকটা এমনভাবে- "ভাবী। কতদিন থাকবেন? ভাইয়ের চিকিৎসা তে কিরকম কি লাগবে? আমার বাপু টানাটানির সংসার। আমাকে যেন বইলেন না টাকাপয়সা দিয়ে হেল্প করতে।"
নেহার আম্মু চুপচাপ কথা শোনেন। তারপরের দিনই ডাক্তারের কথামতো নেহার আব্বুকে সোহরাওয়ার্দিতে এডমিট করানো হয়। নেহার বিভীষিকাময় টানা দেড় মাসের দিনগুলো এভাবেই শুরু হয়। ফুপুর বাসায় এমন কোন কাজ নেই যা তাকে দিয়ে ফুপু করান নাই। ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাথরুম সাফ করা কোন কিছু বাদ নেই। নেহার আব্বু আম্মু হাসপাতালে চলে যাবার পর তার শোবার জায়গা হয়েছিল কাজের লোকের সাথে। তারপরেও নেহা চুপচাপ থাকত। যদি কিছু বলাতে আব্বু আম্মুকে দেখতে যেতে না দেয়? এমনিতেই ছোট ফুপা খ্যাঁচম্যাচ করেন-
"এতবার বাপ মাকে দেখতে যাবার কি আছে? সপ্তাহে একবার গেলেই তো যথেষ্ট। শুধু শুধু এগুলা আজাইরা ঝামেলা গায়ে উড়ে আসে। রোজ রোজ খাবার দেয়া লাগে। এত টাকা নষ্ট। যত্তসব! "
নেহা ছোট্ট করে একবার উত্তর দিয়েছিল- "ফুপা! আমাকে খাবার গুলা দিলে আমি নিজেই দিয়ে আসতে পারব। কাউকে যেতে হবে না।"
উফফফ। এই উত্তর শুনে সেদিন কি মাইর টাই না জুটেছিল কপালে। গায়ে কালশিটা দাগ পড়ে গেছিল গায়ে মারের চোটে।
একদিন ফুপু বাসায় ছিলেন না। কাজ শেষ করে নেহা বিকালে ঘুমাচ্ছিল। এদিকে কাজের মেয়ে হাসু মুদি দোকানে গেছে টুকটাক জিনিস কিনতে। ঘুমের মধ্যে নেহার মনে হল কে যেন গায়ে হাত দিয়ার চেষ্টা করছে। বার বার। প্রথমে ভাবল স্বপ্ন। তারপর ধড়মড় করে উঠে বসল। অন্ধকার ও হয়ে এসেছে। চেহারাও তেমন বুঝা যাচ্ছে না।
এমন সময় লোকটা বলে উঠল- "ভয় পেয়েছ আম্মু! ভয় নাই। আসো। তোমার সব ভয় দূর করে দেই।"
গলা শুনে নেহা বুঝল এটা ছোট ফুপার গলা। নেহা ছটফট করছে ফুপার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য।
বার বার বলছে- "ফুপা। গায়ে হাত দেন কেন? ছাড়েন... আমার ভয় করছে না। আপনি আমার গা ছাড়েন।" তারস্বরে নেহা চেঁচিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু না। একসময় ফুপার আংগুল গুলো সাড়াশির মত গায়ে চাপ দিয়ে ধরার চেষ্টা করল। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ফ্রকের ঝুল ছিড়ে গেল। এমন সময় পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ- "কুত্তার বাচ্চা! মাইয়াডারে ছাড়। নাহলে অহনি কোপ দিয়া কল্লা ফালাই দিমু।" কথাটা শেষ হবা মাত্রই রূমের লাইট জ্বলে উঠল। নেহা দেখল হাসু বটি নিয়া দাঁড়ায় আছে। ফুপা চিবায় চিবায় বলল- "বাচ্চাটা ভয় পাচ্ছিল। তাই আসছিলাম। "
হাসু গর্জে উঠল- "খা*কির পোলা. তোর খাইচলত মুই জানি। ওরে ছাইড়া দে। নাহলে..." বলে বটি নিয়া এগিয়ে আসতেই নেহার ফুপা পড়িমরি করে দৌড় দিল।
হাসু আস্তে করে এগিয়ে এলো নেহার কাছে। চোখ মুছে দিতে দিতে বলল- "আপু! আপনি কালই চলে যাবেন। আমি ব্যাগ গুছায়ে দিচ্ছি। আপনে সকালেই মা বাপের কাছে চলে যাবেন। এই বাসায় থাকবেন না। আল্লাহ্‌ র কাছে হাজার সুকরিয়া যে বাইচ্যা গেছেন। কালই সকালে হাসপাতালে মায়ের কাছে চলে যাবেন। কিছুতেই থাকবেন না"
পরেরদিন সকালে নেহার ফুপু যখন ড্রাইভারের হাতে খাবার পাঠাচ্ছিল তখনই নেহা ব্যাগ নিয়া দরজার কাছে হাজির। ফুপু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন " কি রে! কই যাস? " নেহা মাথা তুলে বলল- "মায়ের কাছে যাই"
ফুপু খেঁকিয়ে উঠল- "কিসের মায়ের কাছে যাওয়া? কার মা? কোথাকার মা? ওইসব ভুলে যাও। যাওয়া হবে না"
এমন সময় হাসুও তার কাপড়ের ব্যাগ নিয়া হাজির। সে বলল- "শুধু আপাই যাইবো না। আমিও যাইমু। আর না অনেক হইসে।"
নেহার ফুপু চিৎকার শুরু করলেন - "মানে কি? তোদের এত্ত বড় সাহস। আমার মুখের উপরে কথা কস। মাইরা ফাটায়ে ফেলমু। "
হাসু ও বলে বসল- "আপনার স্বামী রে সামলান। যে কিনা একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারে না,নোংরা হাত বাড়ায়; সে যে আমার সাথে কি করসে তা যেয়ে থানায় বললে কি হবে বুঝতেছেন?"
নেহার ফুপু পুরাই তব্ধা খেয়ে গেল;ড্রাইভার, দারোয়ান,প্রতিবেশি সবার সামনে। হাসু আস্তে করে নেহার হাত ধরে বের হয়ে রওনা দিল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে.....

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:০৭

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: হাসু'র প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখে যাচ্ছি ভাই।

খুব সুন্দর গল্প, ভালো লাগলো।

এমন অনেক পশুত্ব মন নিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষের মুখোশ পড়ে ঘুরছে! তাদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রাখি না।

শুভকামনা আপনার জন্য।

১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:১২

উর্বি বলেছেন: ধন্যবাদ।
তবে হাসুও কিন্তু নির্যাতিতাই ছিল। নেহায়েত পেটের দায়ে পড়ে ছিল সেই বাসায়।তাই জীবনের প্রথমবার সে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

২| ১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:৪২

কানিজ রিনা বলেছেন: পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এসব দেবতারা বাস
করে যারা কাজের বেটি কাজের ছেরিকেও
ছেরে দ্যায়না। আর মেয়েরা বাঘের মত গর্জে
উঠা দোশ। ধন্যবাদ,

১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:৪৪

উর্বি বলেছেন: না দেয় না তো।
পাচ বছরের শিশুও তাদের চেতনা খাড়াইবার কারন

৩| ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ৩:১৩

শান্তি শকট বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.