নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুপালী সিংহ

রুপালী সিংহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সায়েন্স ফিকশনঃ ডেলটা১২২

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

এই জায়গাটা সম্ভবত আমার সবচেয়ে আপন জায়গা। যখন খুব ছোট ছিলাম, প্রায় বিকেলে বাবার হাত ধরে এই জায়গায় এসে বসতাম। তিনি ছিলেন আমার শৈশবের হিরো। পদ্মার পাড়ের এই বিস্তীর্ণ বালুতীরে তিনি জীবনানন্দ দাশেরকবিতা আবৃতি করতেন, স্বর্গীয় অমৃত পানের মত আমি হাঁ করে শুনতাম। বলাবাহূল্য, কিছুই বুঝতাম না। তিনি বলতেন, “ বুঝলি গ্যাদা, খোলা জায়গায় আসলে মন পরিস্কার হয়, মনের দুঃখ ধুয়ে যায়”।

দুঃখ ধোয়া তার বড় প্রয়োজন ছিল, কারণ আমার মা জন্মের পরই বাবাকে ডিভোর্স দেন। পুরাতন প্রেমিককে ছাড়া তার জন্য বড় কস্ট ছিল।

তখন না বুঝলেও তার কস্টটা আমি আজ বেশ বুঝতে পারি। কারণ জুঁই ও আমাকে ছেড়ে গেছে।

অবশ্য জুঁইয়ের কোন পুরাতন প্রেমিক ছিল না। সে আমাকে ছেড়েছে আমার অক্ষমতার জন্য । এ সবের জন্য দায়ি যদি কেউ থাকে তো সে ঈশ্বর, আর সম্ভবত ডক্টর মাসুদ কাওসার। ঈশ্বরকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব কি না জানি না, তবে ডক্টর মাসুদকে সম্ভব।এবং তাকে আমি সেই পাওনা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছি, এবার ঈশ্বরের পালা। এ সব কিছু শুরু হয়েছিল ডক্টর মাসুদের থেকে, স্পেসিফিকালি তার ডেলটা১২২ থেকে।

সভ্য মানুষ প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয় নি বরং চেস্টা করেছে প্রকৃতিকে তার সাথে খাপ খাওয়াতে, যার ফলে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। একটা সময় মহামারীতে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত, কিন্তু মানুষ তা রোধ করেছে। মারনঘাতি অসুখের প্রতিষেধক আবিস্কার করেছে। প্রাকৃতিক দূরযোগ মোকাবেলা করতে শিখেছে। ভাল করে তাকালে, মানুষ প্রকৃতিকে বাধ্য করেছে নিজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে।

Nothing comes for nothing. কিছুই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। এই অর্জনের জন্য মানুষকে মূল্য দিতে হয়েছে, যদিও তা পরোক্ষভাবে। মানুষ দীর্ঘায়ু হচ্ছে, ফলে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য চাই বাড়তি বাসস্থান। তবে এটা প্রধান চাহিদা নয়। প্রধান চাহিদা হল মানুষের আদিমতম চাহিদা, খাদ্য। অধিক মানুষের জন্য চাই অধিক খাবার।

সেই খাবার যোগানোর লক্ষ্যে কাজ করাই ছিল আমার এবং আমার সাতচল্লিশ জন সহকর্মীর প্রধান কাজ। আমি ছিলাম মৎস্য বিজ্ঞানী, দলের অর্ধেকের বেশীই তাই। আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন ডক্টর মাসুদ, একাধারে মৎস্য বিজ্ঞানী, জলা বিশেষজ্ঞ এবং জিনতত্ব বিশেষজ্ঞ। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অত্যন্ত উচ্চ প্রজননশীল মাছ আবিস্কার। ডক্টর মাসুদ নিজে প্রায় দুই দশক আগে যুক্তরাস্ট্র থেকে পিএইচডি করেছিলেন এই বিষয়ে, পরে দেশে ফিরে বেসরকারী পৃষ্ঠ পোষকতায় গবেষণা চালিয়ে যান।

এই ধরণের গবেষণা কোন দেশেই নতুন কিছু নয়।

যা নতুন ছিল তা হল আমরা সফল হয়েছিলাম।

সফল হওয়ার জন্য আমরা রেডিয়েশনের মাধ্যমে মিউটেশনের সাহায্য নিয়েছিলাম। আমরা যে কোম্পানীর স্পন্সরে কাজ করছিলাম তারা ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করছিল কিছু একটা ফলাফলের জন্য,অন্তত সামান্য একটু সাফল্যের আভাস। কারণ বাজারে গুজব ছিল, প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানী সাফল্যের দোরগোড়ায়।

এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানীর প্রজেক্ট ডিরেক্টরের সাথে একটা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল ডক্টর মাসুদের, কি নিয়ে সেটা কেউ জানত না। তারা দুজনই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছিলেন।

অনবরত একের পর এক পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন ডক্টর মাসুদ, ফলাফল ভাল করে পরযালোচনা করার সময় না দিয়েই। কোন নমুনা ব্যর্থ হওয়আর পর তার কারণ খোঁজা বন্ধ করে নতুন আন্দাজে আবার মিউটেশন ঘটাতে লাগলেন তিনি, যা সম্পূর্ণ নীতি বিরুদ্ধ। কিন্তু এটা ডক্টর মাসুদের প্রজেক্ট, তার মুখের ওপর কথা বলা মানে প্রজেক্ট থেকে বহিস্কার।

এবং একদিন আমরা সফল হলাম।

নমুনার নাম ছিল ডেলটা১২২, একটি রুই। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় আটগুন বেশি প্রোডাক্ট পাওয়া গেল।

কোম্পানী পারলে সোনা দিয়ে আমাদের পা বাঁধিয়ে দেয়।

প্রথমে কয়েকদিন ডক্টর মাসুদকে দেখে মনে হল তিনি স্বরগে যাওয়ার টিকিট পেয়েছেন, তারপর হঠাত কেমন যেন খানিকটা মিইয়ে গেল তার আনন্দিত মুখ।

তবে সাফল্য উদযাপনে পার্টি ঠিকই দেওয়া হল। সমস্ত বিজ্ঞানীর স্বপত্নীক যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু জুঁইয়ের বান্ধবীর বিয়ে থাকায় ও যেতে পারল না।

খাবারের তালিকায় বেশীরভাগই ছিল মাছের ডিশ, রুই মাছ ছিল কি না সম্ভবত আমরা কেউই খেয়াল করি নি।

ঘোষণাটা এল পার্টি ভাঙ্গার সময়। ডক্টর মাসুদ বিজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞানীদের দেওয়া বলিদানের উপর দীরঘ বক্তব্য দিলেন। তার উক্তি এখনো আমার কানে বাজে। Science demands sacrifice.

এরপর জানালেন আমাদের সবাইকে ডেলটা১২২ রুই মাছ খাওয়ানো হয়েছে, তিনি নিজেও খেয়েছেন। তেজস্ক্রীয়তা ব্যবহারের জন্য সরকার এই জাতের অনুমোদন দিতে চাচ্ছে না। মানবদেহের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া নেই এটা প্রমাণ না হলে কোনভাবেই অনুমতি দেওয়া হবে না। আর কোম্পানী ভলান্টিয়ার খুঁজে পেতে ব্যর্থ।

যখন কোন প্রাণী তেজস্ক্রীয়তার শিকার হয় তখন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন জিন পরিবরতন করা প্রায় অসম্ভব।

কাহিনী সংক্ষেপ, আমাদের নমুনা ডেলটা১২২ অক্ষতিকারক ছিল না।

তবে প্রতিক্রিয়াটা ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের উপর। তেজস্ক্রীয়তার ফলে সমস্ত শুক্রানু উৎপাদনের শেষ ধাপে মৃত পাওয়া গেল। ওই হলে উপস্থিত সমস্ত পুরুষের দেহে স্থায়ী বন্ধাত্ব দেখা দিল। যাদের মধ্যে একজন ছিলাম আমিও।

কোম্পানী প্রজেক্ট পরিত্যক্ত ঘোষণা করার এক মাস পর অর্থাৎ গতকাল জুঁইয়ের ডিভোরস পেপার আমার হাতে এসে পৌঁছায়। এরপর প্রথম যে কাজটি আমি করেছি তা হল ডক্টর মাসুদকে খুনকরা। লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে আমার, মাত্র দুটো বুলেট লেগেছে কাজ সারতে। দ্বিতীয় যে কাজটা করেছি তা হল ল্যাব থেকে ডেলটা১২২ এর নমুনা চুরী করা।

শুনেছি ইতিমধ্যেই জুঁইয়ের বিয়ের আলোচনা চলছে। স্বামী বিপত্নীক, একটা ছেলে আছে তিন বছরের। জুঁইয়ের মাতৃত্বের স্বাধ পূরণ হবে সন্দেহ নেই।

ঈশ্বর , তুমি আমায় বন্ধ্যা করেছ, আমি তোমার পৃথিবীতে সমস্ত পুরুষ বন্ধ্যা করব। ডেলটা১২২ এর একটা বিশেষ বৈশিস্ট আছে, অন্য মাছ সংস্পর্শে আসলে সেটিও তেজস্ক্রীয়তার শিকার হয়, মানবদেহে একই প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করে।

আমার কাছে এখন তিন পাতিল পদ্মার পানিতে ভরতি ডেলটা ১২২ এর পোনা। পদ্মার পানিতে মানিয়ে নিতে সময় দিচ্ছি। তবে সম্ভবত আর সময় দেওয়া যাবে না। দূরে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা কে পুলিশ আমার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তারা আমার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিল।

সময় হয়ে গেছে......

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮

এহসান সাবির বলেছেন: শুভ হোক নববর্ষ ১৪২১।

সুন্দর পোস্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.