নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মমির ইতিবৃত্ত – পর্ব ০২

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

#জলজ ভূমির মানুষ (Bog Bodies):

জলজ ভূমির মানুষ (Bog Bodies) নিয়ে কথা বলার আগে প্রথমে বলে নিচ্ছি , কি এই জলজ ভূমি বা peat bog ?? পিট হচ্ছে পানিতে ডুবে পচে যাওয়া ও আংশিক অঙ্গারিভূত উদ্দিজ্জ পদার্থ । কোন জলাশয়ে অনেকদিন ধরে জমে থাকা পিট আস্তে আস্তে peatbog বা জলজ ভূমি এর জন্ম দেয়। এই পিট বগে পতিত মৃতদেহ প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক নানা জটিল বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিকৃত থেকে যায়। যেমন ধরা যাক অক্সিজেনের অভাব , খনিজ লবণের প্রাচুর্য অথবা পচনশীল ব্যাক্টেরিয়ার কার্যক্ষমতায় বাধাপ্রাপ্ত হওয়া । হাজারো বছরের রহস্যময় এ মানবদেহ গুলো জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের , বিজ্ঞানীদের বাধ্য করে নতুন করে ভাবতে ।

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বগ বডিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হচ্ছে ডেনমার্কে পাওয়া কোয়েলবার্গ নারী (Koelbjerg woman), যার জন্ম কিনা খ্রিস্টের জন্মেরও ৮ হাজার বছর আগে!! সবচেয়ে বেশি বগ বডি পাওয়া গেছে উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে জার্মানি, ডেনমার্ক, হল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে। এ বগ বডিগুলো বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এরা সবাই লৌহযুগের মানুষ। বহুল আলোচিত কিছু বগ বডির মধ্যে আছে টোলান্ড মানব (Toulland man), গ্রাউবল মানব (Grauballe man) আর লিন্ডাউ মানবের (Lindow man) মতো অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত বিখ্যাত সব বগ বডি। এর চেয়েও বড় মিলটি হচ্ছে এদের প্রায় সবারই মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিক এবং সহিংস উপায়ে। বেশির ভাগ প্রত্নতত্ত্ববিদ ধারণা করেন- বগ মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে পিট বগে ফেলে রাখা হয়েছিল। তখন হয়তো কেউ জানতোই না এখানে ফেলে রাখলে মৃতদেহ সংরক্ষিত থেকে যায়। কিন্তু কী কারণে হত্যা করা হয়েছিল এদের? কারও কারও মতে হয়তো দেবতাদের উদ্দেশে বলি দেওয়া হয়েছিল। আবার কারও মতে কোনো অপরাধের কারণে এদের হত্যা করা হয়েছে। বগ বডির মধ্যে সাম্প্রতিক সংযোজন হচ্ছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের হাতে নিহত রুশ সৈন্যরা।

টোল্যান্ড মানব (Toulland Man):

১৯৫০ সালে ডেনমার্কের টোল্যান্ডে পাওয়া বিখ্যাত “টোলান্ড মানব” জন্ম দেয় নানাবিধ জল্পনা-কল্পনার । রূপালি-ধূসর শরীরের এই মানুষটির শরীরকে যেন খোদাই করা হয়েছে গ্রাফাইট দিয়ে। দেখে মনে হবে এইমাত্র মৃত্যু হয়েছে তার। অথচ প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, তার বয়স কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর! পিট বগের প্রাকৃতিক সুরক্ষা তার মৃতদেহটিকে এতই সুরক্ষিত রেখেছে যে,তার চোয়ালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আজও অবিকৃত! তার গলায় জড়ানো চামড়ার ফাঁস থেকে ধারণা করা হয় তার মৃত্যু ঘটেছিল শ্বাসরোধের মাধ্যমে । মাথা জুড়ে চামড়া ও উলের সংমিশ্রনে নির্মিত একটি ঘো্মটাকৃতির টুপি থাকলেও তার সারা দেহ ছিল অনাবৃত । মাতৃগর্ভে সন্তান যেভাবে থাকে (Foetal Position) অনেকটা সে ভাবেই তাকে পাওয়া যায় পিটের ২ মিটারেরও গভীরে নিমজ্জিত অবস্থায় । অবস্থান আর প্রশান্ত মুখভঙ্গির কারণে ধারণা করা হয় যে , তাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল তৎকালীন দেবতাদের উদ্দেশ্যে !!!
বরতমানে এটি রয়েছে ডেনমার্কের Silkeborg যাদুঘরে ।

উইন্ডেবির দুর্ভাগা কিশোর (Windeby boy):

১৯৫২ সালে জার্মানিতে পাওয়া আরেকটি সাড়া জাগানো বগ বডি হচ্ছে উইন্ডেবির কিশোর (Windeby boy)। প্রাথমিকভাবে একজন প্রত্নতত্ববিদের মতানুযায়ী একে একটি ১৪ বছরের বালিকার মৃতদেহ মনে করা হলেও পরবর্তীতে ডি.এন.এ. পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে দেহটি ১৬ বছরের এক কিশোরের। প্রায় ১৯০০ বছর আগের এ কিশোরটির চোখ বাঁধা ছিল উলের কাপড়ে । তার মাথার অর্ধাংশ ছিল কেশবিহীন, যা হয়তো কোন অপরাধের শাস্তির নিদর্শন।

এর থেকে ধারণা করা হয় , চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোন একটি পিটের কাছে । এরপর শরীরের সাথে ভারী পাথর আর ডালপালা বেঁধে দিয়ে তাকে নিক্ষেপ করা হয় পিটের ভেতরে । আর এভাবে নিজের অজান্তেই সে তলিয়ে যায় পিটের গভীরে ... কে জানত যে হাজার হাজার বছর পরে সে নিজেই সাক্ষী হয়ে থেকে যাবে এক অন্ধকার হত্যাকান্ডের ।

লিন্ডো ম্যান (Lindow Man) :

১৯৮৪ সালে বেশ সাড়া জাগানো Lindow man নামের বগ বডি টি পশ্চিম ইংল্যান্ডে পাওয়া । এন্ডি মোল্ড সহ আরো কয়েকজন পিট উচ্ছেদনকারী চাষিরা একে খুঁজে পান লিন্ডো মস নামক এলাকায় , আর সে অনুসারেই হয় এর নামকরণ। অবশ্য “পিট মারশ (Peat Marsh)” নামেও বহুল পরিচিত এটি। বর্তমানে লিন্ডো ম্যান ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সুসংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ।

লিন্ডো ম্যান এর মৃত্যুর সম্ভাব্য ইতিহাস বেশ মর্মান্তিক ও নির্মম । DNA পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ২০ এর কাছাকাছি । তার পাকস্থলী আর অন্ত্রে পাওয়া পোড়া রূটির টুকরাই ছিল তার শেষ খাবার, যা ছিল বিষ মেশানো । তবে এটা বলা কঠিন যে এই বিষ কি আসলেই হত্যার উদ্দেশ্যে মেশানো নাকি নিছক দুর্ঘটনা বশত খাবারের সাথে খেয়ে ফেলা । তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের কাটাছেড়া চিহ্ন তার যন্ত্রনাদায়ক অন্তিমকালের নির্দেশনা দেয় । তার মাথার উপরিভাগে সাড়ে তিন সে.মি. দীর্ঘ “V” আকৃতির কাটা চিহ্ন , মাথার পেছনে ভোতা কোন অস্ত্রের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত, শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা ভেঙ্গে যাওয়া ঘাড়, চূর্ণবিচূর্ণ পাঁজরের হাড়, বুকের ডান পাশে ছুরিকাঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন তার ভয়াবহ মৃত্যুর সুস্পষ্ট প্রমাণ দেয় ।

লিন্ডো ম্যানের মৃত্যুর কারণ বিষয়ে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে তৎকালীন উৎসর্গ প্রথা। সমসাময়িক কালে, দেবতাদের সন্তুষ্টি লাভের আশায় উৎসর্গ করা হত সাধারণ মানুষকে। তার মৃত্যুর ধরণ দেখে ধারণা করা হয় , এমনই কোন একটি ঘটনার শিকার সে। বিষ মিশ্রিত খাবার খাওয়ানোর পর তাকে আঘাত করে আর শ্বাসরোধের মাধ্যমে মেরে ফেলা হয়। সবশেষে তার গলা কেটে দিয়ে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যুকে ।

লিন্ডো ম্যানের পুরো শরীর কিন্তু একবারে পাওয়া যায়নি। ১৯৮৪ সালে যখন তাকে প্রথম পাওয়া যায়, সেদিন পিট উচ্ছেদনকারী মেশিনের ধারালো অংশে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সেদিন তার শরীরের কোমর পর্যন্ত অংশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার চার বছর পরে তার বাম পা খুঁজে পাওয়া গেলেও তার ডান পাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি কখনোই । হয়তো তা লুকিয়ে আছে পিটেরই গভীর কোন অংশে সাক্ষী হয়ে হাজার বছরের নির্মমতার।

গ্র্যাবল ম্যান (Grauballe Man):
১৯৫২ সালে ডেনমার্কে পাওয়া আরেকটি বিখ্যাত বগবডি এই Grauballe Man। ২৩০০ বছরের পুরানো এই বগবডিটিকেও তৎকালীন “মানব উৎসর্গ করণ” প্রথার শিকার বলে ধরা যায় । অঞ্চল অনুযায়ী ধারণা করা হয় জার্মান প্যাগানগোষ্ঠির বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে তাকে উৎসর্গ করা হয় দেবতাদের সন্তুষ্টিলাভের আশায় ।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ত্রিশের কাছাকাছি। তার মৃতদেহ টি পাওয়া যায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়, অর্থাৎ রীতি অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হয়েছিল নগ্ন করে । তার মাথাকে শরীর থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে ফেলা হয়েছিল ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে । প্রচুর রক্তপাতে খুব অল্প সময়েই মৃত্যু ঘটে তার, আর তা লুকিয়ে ফেলার জন্য তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয় পিটের গভীরে!

আয়-ডে গার্ল (ay-de / yde girl):

উৎসর্গ কৃত আরেকটি বগ বডি হচ্ছে এই আয়-ডে গার্ল । প্রায় ১৯০০ বছর আগে মারা যাওয়া এই ১৬ বছরের কিশোরীর মৃতদেহ পাওয়া যায় নেদারল্যান্ডের একটি জলজ জমিতে । কোন বিশেষ প্রথা অনুযায়ী মৃত্যুর আগে কেটে নেওয়া হয় তার রক্তিম বর্ণের দীর্ঘ কেশ। ধারলো অস্ত্র দ্বারা আঘাত আর শ্বাসরোধ – এভাবেই মারা হয় তাকে । বেঁচে থাকলে কেমন হত তার চেহারা? আবিষ্কারের পর yde girl এর মুখের কাঠামো অনুযায়ী তার আদলে বানানো হয় একটি কিশোরীর প্রতিরুপ, যা দেখলে কেমন যেন হাহাকার বোধ হয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.