নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মমির ইতিবৃত্ত – পর্ব ০৩

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪৫

প্রাচীন মিশরের মমি – ০১ঃ

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মমির কথা বলতে গেলেই,আমাদের চোখে ভেসে ওঠে আগাগোড়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো অথবা অলংকার সজ্জিত বাক্সবন্দি মিশরের মমির প্রতিচ্ছবি । আর তা হবেই না বা কেন ?? গা ছমছমে কোন ভৌতিক গল্পই বলুন অথবা সিনেমাই বলুন, মমির উপস্থিতি কিন্তু তার ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে একদম শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়। আর সে কারণেই পশ্চিমের স্যার আর্থার কোনান ডয়েল থেকে শুরু করে আমাদের সত্যজিৎ রায় - গল্পে গল্পে ঘুরেফিরে হাজির হয় মিশরের রহস্যময় মমি । বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমা নির্মিত হয়েছে মমিকে কেন্দ্র করে, যার মধ্যে “The Mummy” সিরিজ সম্পর্কে কমবেশি আমাদের সবারই জানা আছে । ফারাওদের অভিশাপ, মমি খুঁড়তে গিয়ে হাজার বছর পুরানো আত্মার খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারানো আরও কতকিছু মিলিয়ে যে কত শত কল্পিত অথবা কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কাহিনী রয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রত্নতাত্বিক গুরুত্ব, প্রাচীন রহস্যভেদের উত্তেজনা, রগরগে অ্যাডভেঞ্চার, মমির সাথে রেখে যাওয়া মূল্যবান সম্পত্তি হাতিয়ে বড়লোক হওয়া – এরকম বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে মমির পিছে লেগে থাকা মানুষের কিন্তু অভাব নেই । মিশরের বহু মমির পেছনের ইতিহাস এবং অনেক অমিমাংসিত রহস্য এখনো ব্যখ্যাতীত । হাজার হাজার বছরের এ লুকায়িত সত্য কে খুঁজে পেতে এখনো তাই মমি নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই ।

প্রাচীন মিশরে মমি বানানোর ইতিহাস বেশ পুরানো , খুব সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দে। সুদীর্ঘ চার হাজার বছর যাবত এ ধারা বজায় থাকে। এরপর মিশরে খ্রিস্টান ধর্মমতের প্রসারের কারণে আস্তে আস্তে মমি বানানোর প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে মমি সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে প্যাগানদের সংস্কৃতি হিসেবে দেখা হত।

প্রথম মমি কেন বানানো হয়েছিল সেসম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়না। সম্ভবত প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট মমি থেকে মিশরীয়রা ধারণা পায় যে মানুষের মৃতদেহের পচন রোধ করা সম্ভব। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মমত অনুযায়ী, মৃত্যুর পর রয়েছে অফুরন্ত নতুন এক জীবন-যে জীবনে মানুষ বাস করবে স্বর্গোদ্যানে। প্রত্যেক মানুষের আত্মার পাঁচটি রুপ থাকে (ইব,শেউট,রেন,বা এবং কা) বলে বিশ্বাস করত তারা। “বা” হচ্ছে মানুষেড় ব্যক্তিত্ব, স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, যা মৃত্যুর পরেও থেকে যায়। মানুষের মাথা বিশিষ্ট পাখির রুপে “বা” কে প্রকাশ করা হত। আর “কা” হচ্ছে মানুষের জীবনীশক্তি। প্রত্যেক জীবিত মানুষের ভেতরেই “কা” থাকে, আর মৃত্যুর পর তা বের হয়ে যায়। “কা” কে ধরে রাখতে হলে সুস্বাদু খাবার, প্রসাধন, উপঢৌকন ইত্যাদির প্রয়োজন। আর তাই মমির সাথে রেখে দেয়া হত নানারকম খাবার দাবার, অলংকার আর বিলাস সামগ্রী। একমাত্র “কা” এবং “বা” এর সম্মেলন ঘটলেই মৃত্যুর পরে পুনর্জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব। মৃতদেহকে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত করে না রাখলে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আর সে চাহিদা থেকেই মিশরীয়রা মমি বানানো শুরু করে । ক্ষমতাবান ফারাও, জাদুকর, রাজবংশের সম্মানিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ , সবারই মমি বানানো শুরু হয় মৃত্যুর পর। মমি বানানোর বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্বে, মৃতদেহকে পুঁতে রাখা হত মরুভুমির বালুর গভীরে। মরুভুমির উত্তপ শুকনো বালিতে মৃতদেহে পচনক্রিয়া ঘটতোনা, চামড়া শুকিয়ে হাড়ের সাথে লেগে যেত অবিকৃত অবস্থায় । এর থেকেই প্রাচীন মিশরীয়রা ধারণা পায় যে দেহ সংরক্ষন করা সম্ভব । বহু গবেষণা আর নতুন নতুন পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে উন্নত হতে থেকে তাদের কৃত্তিম পদ্ধতিগুলো ।

"প্রথম মিশরীয় মমি এবং মিথ : The Cult Of Osiris "

প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত পৃথিবীর প্রথম মমি হচ্ছে ওসিরিস(Osiris/Asiri/Ausar) এর মমি। এসম্পর্কে তাদের একটি প্রচলিত মিথ আছে , যা Cult of Osiris নামে পরিচিত।
ওসিরিস ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন সম্মানিত শাসক এবং পৃথিবীর দেবতা গেব(Geb) এর সন্তান (মতভেদ রয়েছে যে,অসিরিস সূর্যদেব Ra এর সন্তান)। ওসিরিসের অগাধ জ্ঞান এবং সুব্যবহারের জন্য সবাই তাকে সম্মান করত।আর সেকারণেই ওসিরিসের প্রতি তার দুষ্ট ভাই সেথ(Seth) এর প্রবল হিংসা জন্ম নেয়। একদিন সেথ তার ভাইকে ধোকা দিয়ে একটি বাক্সের ভেতরে শোয়ায়। আসলে সে বাক্সটা ছিল একটি কফিন এবং ওসিরিস তার ভেতরে শোয়ামাত্র সেথ কফিনের ঢাকনা বন্ধ করে দেয়। এরপর কফিনটিকে ছুড়ে ফেলা হয় নীল(Nile) নদের গভীরে।
এদিকে ওসিরিসের স্ত্রী আইসিস(Isis) এ বিষয়ে জানতে পারে। পুরো মিশর তণ্ণ তন্ন করে খুঁজে নীলনদের তল থেকে ওসিরিসের কফিন বের করে আনা হয়। নিজের বাবার থেকে শেখা গোপন মন্ত্রের সাহায্যে আইসিস বাঁচিয়ে তোলে তার স্বামীকে, কিন্তু আবারো মৃত্যু ঘটে তার। এরপর সেথের চোখ ফাঁকি দিয়ে আইসিস তার স্বামীর মৃতদেহটি লুকিয়ে ফেলে মরুভুমির বালির গভীরে।

এক রাতে সেথ শিকার করতে বের হয়। হঠাৎ করে সে ওসিরিসের মৃতদেহ খুঁজে পায়। রাগের চোটে সে ওসিরিসের দেহকে ১৪ ভাগে খণ্ডিত করে এবং পুরো মিশরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেয় দেহের অংশবিশেষ। সেথ হয়তো ওসিরিসের দেহকে ধ্বংস করতে পেরেছিল, কিন্ত আইসিসের প্রকৃত ভালবাসাকে ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে কার? অবশেষে আইসিস মন্ত্রবলে নিজেকে এক বিশালাক্রিতির শিকারী বাজপাখিতে রুপান্তরিত করে । ক্লান্তিহীন ভাবে মিশরের আকাশে উড়ে খুঁজে বেড়াতে থাকে স্বামীর দেহের অংশগুলোকে। ওসিরিসের শরীরের একটি অঙ্গ (যা Medjed নামক মাছ খেয়ে ফেলেছিল) বাদে সবই সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় আইসিস।

স্বামীর শরীরের সবগুলো খন্ড একসাথে সাজিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আইসিস। অশ্রুসিক্ত আইসিস কে দেখে করুণা হয় সূর্যদেবতা রা(Ra) এর মনে। সাথে সাথে তিনি আইসিস কে সাহায্য করার জন্য দুইজন দেবতা আনুবিস(Anubis) এবং ঠথ(Thoth) কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। তারপর তারা তিনজন মিলে ওসিরিসের শরীর কে স্বাভাবিক আকৃতিতে সাজান এবং পুরো শরীরটি বিশেষভাবে মোড়ানো হয় – সৃষ্টি হয় পৃথিবীর প্রথম মমির। মমির কপালে চুম্বন এঁকে দেয় আইসিস, আর পুনর্জন্ম হয় ওসিরিসের – তবে হ্যা, সাধারণ মানুষ হিসেবে নয় ! জন্ম ঘটে মৃত্যুপুরীর রাজা, মৃত্যুদেব ওসিরিসের ।
……..(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.