নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আ গেম অফ থ্রোনস (সিরিজঃ আ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার #১)

১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫১

লেখকঃ জর্জ আর আর মার্টিন
রুপান্তরঃ আমি এবং আদনান আহমেদ রিজন
সম্পাদনাঃ Md Fuad Al Fidah ভাই, আদী প্রকাশন

প্রারম্ভঃ
‘ফিরতি পথ ধরা উচিৎ।’ চারপাশের জঙ্গল ঘন হয়ে আসতে শুরু করলে জোরের সাথে বলল গ্যারেড। ‘ওয়াইল্ডলিংগুলো অনেক আগেই মরে সাফ।’
‘মৃতদের ভয় পাও নাকি?’ স্যর ওয়াইমার রয়েস মুচকি হেসে জানতে চাইল।
ফাঁদে পা দিল না গ্যারেড। বয়স ওর কম হয়নি, পঞ্চাশ পেরিয়েছে অনেক আগেই। বহু লর্ড-তনয় ওর চোখের সামনে দিয়ে এসেছে-গিয়েছে। ‘মৃতরা মৃত,’ বলল সে। ‘তাদের সাথে জীবিতদের আবার কীসের লেনদেন?’
‘ওয়াইল্ডলিংগুলো যে মরে সাফ,’ এবার নম্র রয়েসের কণ্ঠ। ‘তার প্রমাণ আছে কোন?’
‘উইল নিজের চোখে দেখে,’ উত্তর দিল গ্যারেড। ‘যদি সে বলে যে ওয়াইল্ডলিংগুলো মৃত...তাহলে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।’
উইল জানত, আগে হোক বা পরে, এই ঝগড়ায় ওকে অবশ্যই টেনে আনা হবে। তবে সময়টা আরও পরে এলেই খুশি হতো ও। ‘আমার মা বলতেন, মৃতরা কথা বলে না।’
‘আমার দাই-ও একই কথা বলত।’ প্রত্যুত্তর করল রয়েস। ‘মহিলা মানুষের কথা শোনা যায়, বিশ্বাস করা যায় না। মৃতদের কাছ থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’ গোধূলির আলোতে ঢাকা জঙ্গলে প্রতিধ্বনিত হলো ওর কণ্ঠ।
‘সামনে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে,’ গ্যারেড সবাইকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস পেল। ‘আট...হয়তো নয় দিনের পথ। রাতও নামছে।’
নিঃস্পৃহ ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকাল স্যর ওয়াইমার রয়েস। ‘রাত জিনিসটাই একগুঁয়ে, প্রতিদিন এই সময়টায় তাকে নামতেই হবে। আচ্ছা গ্যারেড, অন্ধকারে তোমার পা কাঁপে নাকি?’
গ্যারেড শক্ত হয়ে আসা চেহারা পরিষ্কার দেখতে পেল উইল। আলখাল্লার কালো টুপিতে আংশিক ঢাকা পড়া চোখের রাগটাও নজর এড়াল না। নাইট’স ওয়াচে চল্লিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছে লোকটা। বাচ্চা থেকে বুড়ো হয়েছে। হাসি-তামাশার পাত্র হওয়াটায় অভ্যস্ত নয় সে। তবে হ্যাঁ, আহত অহংকারের সাথে আরও কিছু মিশে আছে এখন গ্যারেডের ভেতরে। ভয় বলা যায় না হয়তো, তবে অনুভূতিটা ভয়ের কাছাকাছিই।
উইলের নিজের মনও কু ডাকছে। দেয়ালে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হয়েছে চার বছর হতে চলল। প্রথমবার যখন দেয়ালের ওপাশে পাঠানো হয়েছিল ওকে, তখন বিচিত্র আর ভয়ঙ্কর সব গল্প শুনে হাত-পা পেটের ভেতর সেঁধিয়ে যেতে চাইছিল। এরপর থেকে অবশ্য আর সমস্যা হয়নি। এখন শতবারের অধিক অভিযানের অভিজ্ঞতা ওর ঝুলিতে। ‘ভূতুড়ে বন’ বলে যাকে দক্ষিণবাসীরা বোঝায়, সেখানে পা রাখতে একটুও ভয় লাগে না...
...অন্তত আজ রাতের আগে লাগেনি।
আজকের রাতটা একটু আলাদা। আজকের অন্ধকারের যেন নিজস্ব একটা ধার আছে, গায়ের সব পশম মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। নয়দিন হলো চলছে ওরা, প্রথমে উত্তরে...এরপর উত্তর-পশ্চিমে আর এখন আবার উত্তরে। দেয়াল এখান থেকে অনেক দূরে, এক ওয়াইল্ডলিং রেইডারদলের পিছু নিয়ে চলে এসেছে। প্রতিদিন যেন আগেরদিনের চাইতেও বেশি বিপদে ফেলছে ওদের। আজকের দিনটার মতো বাজে দিন আর আসেনি। উত্তর থেকে শৈত্য-প্রবাহ হচ্ছে। বাতাসের দমকায় গাছগুলো এমনভাবে নড়ে উঠছে যেন প্রাণ আছে ওগুলোর! পুরোটা দিন ধরেই উইলের মনে হচ্ছিল, কিছু একটা বুঝি নজর রাখছে ওর উপরে। ঠাণ্ডা চোখের ঘৃণাভরা চাহনি দিয়ে দেখছে ওকে। গ্যারেডেরও যে একই অনুভূতি হয়েছে, তা নিজেই বলেছে। উইলের মন চাইছে, সব ছেড়ে-ছুড়ে এক ছুটে দেয়ালে ফিরে যায়। কিন্তু মনের এই চাওয়াটা তো আর কমান্ডারকে জানানো যায় না!
আর যদি কমান্ডার হয় স্যর রয়েসের মতো, তাহলে তো প্রশ্নই আসে না।
স্যর ওয়াইমার রয়েস এমন এক সম্ভ্রান্ত বংশের কনিষ্ঠ সন্তান, যাদের উত্তরাধিকারীর সংখ্যা একটু বেশিই। বয়স মাত্র আঠারো, চোখ ধূসর আর চলাফেরায় ছুরিকে হার মানানো তীক্ষ্মতা। বিশাল এক কালো ডেসট্রিয়ার ঘোড়ার পিঠে বসে আছে সে, উইল আর গ্যারেডের ছোট ছোট গ্যারুন ঘোড়া যার সামনে কিছুই না। কালো চামড়ার বুট, কালো উলের প্যাণ্ট, কালো দস্তানা আর কালো রঙা বর্ম তার পরনে। স্যার ওয়াইমার মাত্র অর্ধ-বছর আগে শপথ গ্রহণ করে নাইট’স ওয়াচের ব্রাদার হয়েছে। আর কিছু না হলেও, লোকটার পোশাক-আশাক দেখে মনে হয় যে সে খুশি মনেই করেছে কাজটা।
পরনের আলখাল্লাটা তার গর্বের বস্তু। হরিণের চামড়ার; পুরু, কালো আর নরম। ‘ওই ছোট ছোট প্রানিগুলোকে মনে হয় নিজ হাতে মেরে আলখাল্লা বানিয়েছে।’ মদ খেতে খেতে প্রায়শই ব্যারাকের বন্ধুদেরকে বলত গ্যারেড। ‘আমাদের বীর সেনানী।’ হাসিতে ফেটে পড়ত সবাই ওর কথা শুনে।
যাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করা হয়, তার আদেশ মানাটা কষ্টকরই বটে। ভাবতে ভাবতেই শীতে কেঁপে উঠল উইল। গ্যারেডের ভাবনাও ওর মতোই হবার কথা।
‘মরমন্ট আদেশ দিয়েছিল দলটার পিছু নেবার জন্য,’ বলল গ্যারেড। ‘আমরা তাই করেছি। দলের সবাই মৃত, আর ঝামেলা পাকাতে পারবে না। অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে ফেরার জন্য। আবহাওয়াটাও ঠিক পোষাচ্ছে না। যদি তুষারপাত শুরু হয় তো ফিরতে দুই সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। কখনও তুষারঝড় দেখেছেন, মহামান্য?’
গ্যারেডের অনুসন্ধান মেটাতে খুব একটা আগ্রহী দেখা গেল না লর্ড-তনয়কে। আগের মতোই কিছু অন্যমনস্ক আর কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিমায় চারপাশের দৃশ্য দেখতে থাক ও। উইল এই কয়দিনে বুঝে গিয়েছে যে লর্ড রয়েসকে এই অবস্থায় বিরক্ত না করাই ভালো। ‘আচ্ছা, উইল। কী দেখেছ তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলো তো। কিচ্ছু বাদ দেবে না।’
নাইট’স ওয়াচে নাম লেখাবার আগে উইল ছিল শিকারি, আসলে ঠিক শিকারি না। চোরা-শিকারি বললেই কথাটা সত্যের কাছাকাছি যায়। একবার ম্যালিস্টারের জঙ্গলে, ম্যালিস্টারের হরিণ জবাই করে খাওয়ার সময় ম্যালিস্টারেরই লোকজন পাকড়াও করেছিল ওকে। এরপর সামনে পথ খোলা ছিল দুটোঃ হয় নাইট’স ওয়াচে নাম লিখিয়ে কালো আলখাল্লা গায়ে চড়াও...আর নয়তো, বিদায় দিয়ে দাও একটা হাতকে। সেই জীবনের অভিজ্ঞতা দারুণ কাজে আসে এখন উইলের। নিঃশব্দে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ওর মতো দক্ষভাবে আর কেউ যাতায়াত করতে পারে না।
‘ওয়াইল্ডলিংদের ক্যাম্পটা আরও মাইল দুয়েক সামনে, একটা ঝর্ণার পাশে।’ জানাল উইল। ‘যতটুকু সম্ভব কাছে গিয়েছিলাম আমি। দলে মোট নারী-পুরুষ মিলিয়ে আছে আটজন। বাচ্চা দেখিনি কোন। পাথরের দেয়ালকে ব্যবহার করে একটা ছাউনি মতো টাঙিয়েছিল তারা, এতক্ষণে মনে হয় সেটা তুষারে ভালোভাবেই ঢাকা পরে গিয়েছে। তবে চাইলে খুঁজে বের করতে পারব। আগুন জ্বালায়নি, কিন্তু ছাইগুলো গরম ছিল। নড়ছিল না কেউ, অনেকক্ষণ নজর রেখেও কাউকে নড়তে দেখিনি। কোন জীবন্ত মানুষ সেভাবে স্থির হয়ে থাকতে পারে না।’
‘রক্ত দেখেছিলে?’
‘নাহ, তা দেখিনি।’ মেনে নিল উইল।
‘কোন অস্ত্র-শস্ত্র?’
‘কয়েকটা তলোয়ার, অল্প কয়েকটা ধনুক। এক লোকের হাতে অবশ্য কুড়াল ছিল, ভারী আর দু-ধারী। মনে হয় লোহার তৈরি। লোকটার হাতের পাশেই, মাটিতে ছিল ওটা।’
‘দেহগুলোর অবস্থান মনে আছে?’
শ্রাগ করল উইল। ‘কয়েকজন পাথরে হেলান দিয়ে বসে ছিল। তবে অধিকাংশ ছিল মাটিতে শুয়ে...মড়ার মতো।’
‘অথবা ঘুমন্ত মানুষের মতো।’ রয়েস মন্তব্য করলেন।
‘না, মড়ার মতোই।’ জোর দিল উইল। ‘এক মহিলা গাছে উপর চড়ে বসেছিল। ডাল-পালা দিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই ঢেকে রেখেছিল নিজেকে। খুব সাবধানে তার কাছে গিয়ে দেখলাম, সে-ও নড়ছে না।’ হালকা একটা হাসি দেখা গেল ওর মুখে। পরক্ষণেই কেঁপে উঠল...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.