নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেয়ার প্লে

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৭

ষাট সেকেন্ডের একটা বিজ্ঞাপন বিরতি শেষে আবারও টেলিভিশনের পর্দায় ফিরে এলো লোকটা। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলোচনার ইতি টানল। “অবশেষে, ‘চায়ের কাপের খুনী’ নামে পরিচিত সেই কুখ্যাত খুনী মিস হ্যাস্কিন্সকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আগামী সপ্তাহে আরও অদ্ভুত সব খবর নিয়ে আসছি আপনাদের জন্য।”
চশমাটা ঠিক করে নিলাম। পাশ থেকে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে উঠল আমার স্ত্রী, “বেকুব মহিলা কোথাকার! এই যুগে কেউ আর্সেনিক ব্যবহার করে নাকি? ময়না তদন্তের সময় খুব সহজে ধরে ফেলা যায় ওটা।”
টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে জিজ্ঞেস করলাম আমি, “তুমি হলে কী ব্যবহার করতে, জান?” রিমোটে কিছুক্ষণ গুঁতোগুঁতি করে আবার আমার আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো, এডনা আমার প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি। মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম ওর দিকে, একমনে সেলাই করে যাচ্ছে। হাতগুলো ব্যস্ত, কিন্তু ঠোঁটে এক চিলতে ক্রূর হাসি ফুটে উঠেছে। কেমন যেন অস্বস্তি হলো আমার। “তুমি ঠিক আছ তো, এডনা?”
হঠাত সম্বিত ফিরে পেল ও। ভ্রু কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “আমার সাথে এসবের কি সম্পর্ক? কিসব যা তা বল না তুমি!” আমার দৃষ্টি ফিরে গেল টেলিভিশনের পর্দায়। গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বিবৃতি সম্প্রচার করা হচ্ছে। আড়চোখে আবারও তাকালাম এডনার দিকে, বিয়ের পনের বছর পরেও অচেনাই রয়ে গিয়েছে মেয়েটা। এই মূহুর্তে নিবিষ্ট মনে, সেলাইয়ের সুতোর হিসাব করে চলেছে। আমার মনে হলো, শুধু এই সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত নয় ও। বড়সড় কোনও একটা পরিকল্পনা আঁটছে।
গোয়েন্দার সাক্ষাৎকারের দিকে মনোযোগ দিলাম। শহরে এক অজ্ঞাত মহিলার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। মরার আগে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তার ওপর। মহিলার স্বামীর কোন নাম গন্ধও পাওয়া যাচ্ছেনা। খুনের ঘটনা হবে হয়তো। আমি একটু সামনে ঝুঁকে বসলাম।
“টিভিতে কি ভালো কিছু খুঁজে পাও না?” এডনা রাগত স্বরে বলল। আমি একটু রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে চেষ্টা করলাম, “আহ হা! মহিলা মানুষ খুন হয়েছে বলেই এমন ক্ষেপতে হবে? আমার মনে হয় না...”
শীতল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ও। “আমি চ্যানেল পাল্টাতে বলেছি। এক্ষুনি।”
আর কথা বাড়ালাম না। বিশালদেহী এডনার পাশে আমাকে বলতে গেলে একটা শুটকি মাছের মতো দেখায়। চ্যানেল পাল্টে একটা কুইজ অনুষ্ঠান চালু করে দিলাম, কিছু জ্ঞান আহরণ করা যাক।
কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটল। “হেনরি,” গম্ভীর কণ্ঠে আমাকে ডাকল এডনা। “এই মাসে তোমার বীমার প্রিমিয়ামের টাকা দেয়া হয়েছে?”
“হ্যা, জান। তোমারটাও দিয়ে দিয়েছি।”
“আমার এখনও মনে হয়, টাকাটা পুরোপুরি পানিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আমার নামে জীবন বীমা রাখার দরকার কি, বলতো?”
“নাহ। টাকা নষ্ট হবে কেন?” আমি আনমনে বললাম, “কখন কি হয়ে যায়, তা কি কেউ বলতে পারে?” এডনা আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকালো।
উঠে দাঁড়ালাম আমি। “আমার চুরুট শেষ। মিলারের দোকান থেকে নিয়ে আসি দাঁড়াও। এখুনি আসছি।”
রাস্তায় হাঁটার সময় মাথার ভেতর অনেক চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল। নানারকম সন্দেহ আর আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল মনের ভেতর থেকে। মিলারের দোকানে পৌঁছানোর পর আমার পছন্দের চুরুট কিনে নিলাম। আমার দিকে লাইটার বাড়িয়ে দিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার বাড়িতে ইঁদুরের উপদ্রব কমেছে তো, নাকি?”
“কিসের ইঁদুর?”
“ওমা। সেদিনই না আপনার স্ত্রী ইঁদুরের উপদ্রবের কথা বলে আমার কাছ থেকে বিষ কিনে নিয়ে গেলেন!”
সিগারেটে জোরে টান দিয়ে ফেলে বিষম খেলাম আমি। মিলার টিপ্পনি কাটলেন, “ভয়ের কিছু নেই, হেনরি সাহেব। ওই বিষে কুকুর, বিড়াল আর মানুষের কোনও ক্ষতি হয় না,” একপাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললেন তিনি, “অবশ্য একথা শুনে আপনার স্ত্রীকে খানিকটা হতাশ হতে দেখেছিলাম।”
আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। কাউন্টারের ওপর ঝুঁকলেন মিলার। “আর তাছাড়া আপনাকে বিষ খাওয়াতে চাইলে, আমার থেকে নেয়ার দরকার কি? এডনা ম্যাডামের ভাই তো আছেই। জেরাল্ড সাহেবের মতো এমন নামকরা কেমিস্ট থাকলে, যে কোনও রাসায়নিক বস্তুই হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব।”
মাথার ভেতর জেরাল্ডের বিশ্রী মুখটা ভেসে উঠলো। প্রতিদিন প্রায় আট নয় ঘণ্টা সময় ওর সাথে ল্যাবরেটরিতে কাটে আমার।
বাসায় ফেরার পর এডনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার ক্ষুধা লাগেনি? ফ্রিজের ভেতর কাগজে মোড়ানো দু’টো স্যান্ডউইচ রাখা আছে। বের করে আনো ওগুলো।”
ওর কথায় কিছুটা সন্দেহ হলো আমার। রান্নাঘরের ফ্রিজ থেকে স্যান্ডউইচ দুটো বের করে টেবিলের ওপর রাখলাম। পাউরুটির টুকরা সরালাম একটা স্যান্ডউইচের ওপর থেকে। যা ভেবেছিলাম! পনিরের আস্তরণে সাদা সাদা পাউডারের গুঁড়োর মতো দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় স্যান্ডউইচটারও একই অবস্থা। রাগে গা জ্বলে গেলো। এই সপ্তাহের আগে ওর কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা চিন্তা করিনি। এখন পরিকল্পনা বদলাতে হবে দেখছি!
এডনার স্যান্ডউইচগুলোকে পেছনের জানালা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলাম। নতুন করে বানাতে হবে আবার। লেটুস পাতা আর টমেটো করলাম ফ্রিজ থেকে, ইদানিং আবার ও ওজন কমানোর জন্য ক্যালরি হিসাব করে খাচ্ছে।
সুন্দরভাবে নতুন দুটো স্যান্ডউইচ বানালাম। আনমনে হেসে ফেললাম, দেখো এবার কে কাকে বিষ খাওয়ায়! রান্নাঘরের ওপরের তাকে, ছোট একটা বাক্সের ভেতর একটা শিশি লুকিয়ে রেখেছিলাম আমি। সেখান থেকে কিছুটা পাউডার ছিটিয়ে দিলাম একটা স্যান্ডউইচে। আমি জানতাম, এডনা সন্দেহ করবে। খেতে বলবে আমাকেও। তাই, আরেকটা নিরাপদ স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখেছি।
পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে এডনা। চট করে শিশিটা আগের জায়গায় লুকিয়ে ফেললাম আমি।
স্যান্ডউইচের দিকে তাকিয়ে ওর কপালে ভাজ পড়ল। “কি করছ তুমি?”
আমি মৃদু হাসলাম। “তোমার জন্য স্যান্ডউইচ বানাচ্ছি, জান।”
“কেন???”
“হায়রে,” আমি কপট দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। “এমন ভাব করছ যে, আমি কোনওদিন তোমাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াইনি!”
এডনা সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। “এতো আগ বাড়িয়ে কাজ করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তোমার জন্য যেগুলো বানিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলো খেয়েছ?”
“হ্যা।”
“এতো দ্রুত খেলে যে,” গলা নামিয়ে বলল ও। “কেমন লেগেছে খেতে?”
“দারুণ,” হাসিমুখে উত্তর দিলাম। “ ধাতব স্বাদটাও মন্দ লাগেনি কিন্তু...”
“ফালতু কথা বলবে না,” এডনার চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠলো। “আগেই বলেছি, বেকুব না হলে কেউ আর্সেনিক...”
কথা শেষ না করে ডাস্টবিনের দিকে এগিয়ে গেলো ও। কপাল কুঁচকে তাকাল আমার দিকে। “স্যান্ডউইচ মোড়ানোর কাগজসুদ্ধ খেয়ে ফেলেছ দেখা যায়।”
সরে এসে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ালো এডনা। একটা স্যান্ডউইচের ওপর থেকে পাউরুটির টুকরা সরিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করল। জানি, ও আমাকে বিশ্বাস করে না। তবে আমি খুশী, আমার পাউডার গলে গিয়ে খুব সুন্দরভাবে স্যান্ডউইচের সাথে মিশে গিয়েছে।
এডনা আমার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। “তুমিও একটা খাও, হেনরি।”
জানতাম এ কথাটা বলবে। নিজের জন্য বানিয়ে রাখা নিরাপদ স্যান্ডউইচটা মুখে পুরতে যেতেই একটা হাত এসে আমাকে থামিয়ে দিল। “ওটা আমাকে দাও।”
স্যান্ডউইচটা আমার হাত থেকে কেড়ে নেয়ার পড় ধূর্ত একটা হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে। আমিও হাসলাম, আতঙ্ক মিশ্রিত হাসি। এডনা অবশ্য সেটা বুঝতে পারল না।
কি মনে করে যেন কামড় না দিয়েই স্যান্ডউইচটা নামিয়ে রাখলো ও। “একদম ক্ষুধা নেই। তার চেয়ে বরং এগনগ পান করা যাক,” ওর চোখে কৌতুক খেলা করে গেলো। “দু’জনের জন্যই বানাচ্ছি। খেয়াল রেখো কি কি মেশাই, আমি চাই না তোমার বদহজম হোক।”
এগনগ বানিয়ে আমার দিকে একটা নীল রঙের পোর্সেলিনের কাপ বাড়িয়ে দিল এডনা। ছোট্ট করে চুমুক দিয়ে আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ও। এগনগ শেষ করতে দশ মিনিটের মতো সময় লাগলো আমাদের। তারপর বেশ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে দুজনেই ফিরে গেলাম বসার ঘরে।
টিভিতে একজন পুলিশ অফিসারকে দেখা যাচ্ছে। এক নিশ্বাসে বলে যাচ্ছে লোকটা, “একই কেতলি থেকে চা পান করেছিলেন দু’জন। স্যার আন্থনি বিষক্রিয়ায় মারা গেলেন, অথচ লরেন্স সাহেবের কিছুই হলো না। অদ্ভুত শোনালেও এ ঘটনার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কয়েক মাস ধরে একটু একটু করে বিষ গ্রহণ করতেন লরেন্স। তার শরীরে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা নির্দিষ্ট সহনশীলতার মাত্রা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তারপর..”
বাকিটুকু শুনতে দিল না এডনা। “অনেক রাত হয়েছে, ঘুমানো উচিৎ এখন।” টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়াল ও।
কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম আমি। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে, চোখে ঘুম নেই। জানালা দিয়ে ভেসে আসা চাঁদের আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খেতে লাগল মাথার ভেতর, আমাদের মাঝে শুধু একজনই বেঁচে থাকবে। বুদ্ধি যার, বল তার।
শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, আর কোনও উপায় আছে কি না। ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করব? নাহ, ওর শক্তি আমার চেয়ে অনেক বেশী। হাত থেকে কেড়ে নিয়ে উল্টো আমাকেই মেরে বসবে। ভাড়াটে খুনী লাগিয়ে দেব? কোথায় পাব এমন লোক? আর তাছাড়া, এতো টাকাই বা পাব কোথায়? তবে লাশ লুকিয়ে ফেলার ব্যপারে আমি নিশ্চিন্ত। কাজটা খুবই সহজ। গভীর রাতে গাড়ি চালিয়ে গ্রামের ভেতর ঢুকে যাব। তারপর নির্জন কোনও জায়গা বেছে নিয়ে পুঁতে ফেলব মাটির গভীরে। কাক পক্ষীও টের পাবে না। পুলিশ হয়তো এডনার আচমকা অন্তর্ধানের ব্যপারে সন্দেহ করবে। কিন্তু, শরীর খুঁজে না পেলে কিছু করার সাধ্য নেই তাদের।
বিষটা ওকে খাওয়াব কিভাবে? ভোর পাঁচটার দিকে হঠাত করেই সমাধান পেয়ে গেলাম আমি। খুশিমনে উঠে বসলাম সাথে সাথে। এডনা পাশ ফিরল, ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে বললো, “রাত বিরাতে কি শুরু করলে আবার?অসহ্য!”
আদর্শ স্বামীর মতো সোজা হয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। এবার আর ঘুমাতে দেরী হলো না।
ঠিক সাতটায় ঘুম ভাঙ্গল আমার। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলাম। গত চৌদ্দ বছরে একদিনও নাস্তা বানায়নি এডনা। সংগত কারণেই, এতো সকালে ও বিছানা থেকে উঠবে না। যাক, কিছুক্ষনের জন্য নজরবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া গেলো তাহলে।
ঘুম ভাঙ্গার পর, নিশ্চয় বিছানায় শুয়ে নিজের মনে হাসবে এডনা। ভেবে নেবে, আমি কোনও খাবারে বিষ মিশিয়ে রেখেছি। বাড়িতে থাকা কোনও খাবার বা পানীয় স্পর্শ করবে না ও। মনে মনে হয়তো কল্পনা করে নেবে, ওর ফাঁদে পা দিয়ে বিষাক্ত কিছু খেয়ে নিয়েছি আমি।
উৎফুল্ল চিত্তে একটা দ্রবণ বানিয়ে ফেললাম। যত্ন করে পুরোটা ঢেলে দিলাম ট্রেতে। ব্যস, এতেই চলবে।
ঠিক সাড়ে সাতটায় প্রিয় গানের সুরে শিস বাজাতে বাজাতে ল্যাবরেটরির দিকে রওয়ানা হলাম। ক্যান্টিনে খুব দ্রুত নাস্তা সেরে নিয়ে কাজে লেগে গেলাম। সারাদিনে দু’বার জাহিদের সাথে দেখা হলো। মিষ্টি করে হাসলাম দু’বার-ই।
অফিস থেকে যখন বেরোচ্ছি, ঘড়ির কাঁটা তখন পাঁচের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। কিছুক্ষনের ভেতর বাসায় পৌঁছে গেলাম। দরজার তালা খোলার সময় বিচিত্র এক অনুভূতি হলো আমার। চারদিক কেমন যেন নীরব নিশ্চুপ। শান্তির আবেশ ছড়িয়ে আছে আমার পুরো ঘর জুড়ে।
বসার ঘরে পা দেওয়া মাত্র এডনার দিকে চোখ পড়ল। সোফার ওপর সোজা হয়ে পড়ে আছে ওর নিষ্প্রাণ দেহ। বিস্ফারিত চোখে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে, প্রাণহীন চোখে রাজ্যের বিস্ময়। টেবিলের ওপর রাখা সোডার বোতলটা আমার নজর এড়ালো না। এই ব্র্যান্ডের সোডা আমাদের ফ্রিজে ছিল না সকালে, বাইরে থেকে কিনে এনেছে নির্ঘাৎ। আফসোস, বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হলো না।
রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম আমি। ফ্রিজ থেকে বরফের ট্রে বের করে বেসিনে ঢেলে ফেললাম সবকিছু। এডনার মোটা মাথায় এই চিন্তা কখনোই আসেনি যে, এই এক টুকরা বরফের সাথে মিশে থাকা বিষ দুই তিনজন মানুষকে অনায়াসে পরপারে পাঠিয়ে দিতে পারে। মুক্তি, অবশেষে মুক্তি মিলল আজ।
খুশীতে হয়তো একটু বেশীই উন্মত্ত হয়ে ছিলাম, কখন মাঝরাত গড়াল টের পেলাম না। এখন ভালোয় ভালোয় কাজটা সারতে পারলে হয়। এডনার ভারী শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে উঠাতে ঘাম ছুটে গেলো আমার। গ্রামের ভেতর যখন একটা নির্জন জায়গায় পৌছালাম, তখন প্রায় ভোর রাত। মাথার ওপর তারা ভরা আকাশ, দূর থেকে ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। কোদাল দিয়ে বড় একটা গর্ত খুঁড়ে লাশটা পুঁতে ফেললাম আমি। বোঝামুক্ত হয়ে ওপরে তাকিয়ে দেখি, পূবের আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে।
একটানে গাড়ি ছুটিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। সবরকম খাবার আর পানীয় ছুড়ে ফেলে দিতে হবে এখন। মরে গিয়েও আমাকে মারার অনেক রকম সুযোগ রেখে গিয়েছে ও।
পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে হবে একবার। গুছিয়ে বলতে হবে, গতকাল রাতে বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বেরিয়েছিল ও। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ খবর নেই। খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে, আজ সকালের আগে ওর অনুপস্থিতি টের পাইনি আমি। পরিকল্পনা গুছিয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। দু’চোখ জুড়ে নেমে এলো সুখনিদ্রা।
অ্যালার্মের শব্দে ঠিক সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙ্গল। গান গাইতে গাইতে গোসল সেরে নিলাম আমি। তারপর বাথরুমের আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম, দাঁড়ি কামাতে হবে।
বেচারী এডনা! বরফের ট্রেতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার বুদ্ধিটা আসলেই দুর্দান্ত ছিল। দাঁড়ি কাটতে কাটতে বিভিন্ন রকম বিষ আর তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে লাগলাম আমি। ধাতব, ক্ষারীয়, উদ্ভিজ্জ – কতো রকম বিষই না পাওয়া যায়। এমন বিষও আছে, যা কোনওভাবে রক্তের সাথে মিশে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। আর সেটা এতোই শক্তিশালী যে, কোনও দ্রবণের সাথে মিশিয়ে দিলেও অনায়াসে কাজ করতে সক্ষম। এডনা খুব সহজেই ওর ভাই, জাহিদের কাছ থেকে এমন একটা বিষ জোগাড় করে নিতে পারতো। ভাগ্যিস, কাজটা আগেভাগে সেরে ফেলেছি!
উল্টোপাল্টা চিন্তা করতে করতে, বেখেয়ালে চিবুকের কাছে একটু কেটে গেল। তাকের ওপর রাখা আফটার শেভের বোতল থেকে খানিকটা হাতে ঢেলে নিলাম। কাঁটা জায়গাটায় সাবধানে মালিশ করলাম তারপর।
আয়নার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। হাত কাঁপতে লাগল থরথর করে, ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছি না। তখনই বুঝতে পারলাম ব্যপারটা।
“নাহ...এডনা,” আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলাম আমি। “এতো নির্মম রসিকতা আশা করিনি তোমার কাছ থেকে!”
স্বপ্নেও ভাবিনি যে জিনিসটা এতো দ্রুত কাজ করতে পারে।
“সত্যিই...খুব....খুব বেশী...নোংরা পরিকল্পনা... .... ...”

মূলঃ জ্যাক রিচি
রুপান্তরঃ ওয়াসি আহমেদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: ভালো লেগেছে।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৬

ওয়াসি আহমেদ বলেছেন: মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা -
ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.