![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“মেঘপিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা, মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা”। ঋতুপর্ণ ঘোষের “তিতলি” ছবিতে এ গানটি গেয়েছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য। তাই দিস্তা দিস্তা মন খারাপকে ছুটি দিতে আমাদের এই আয়োজন।
একঘেয়ে লাগছে জীবন? গতানুগতিক জীবনে বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন নিশ্চয়ই আপনি তাইনা? প্রায় প্রতিটি মানুষই নিজের প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবন-যাপনে বিরক্ত হয়ে যায় কোনো না কোনো সময়ে। আর প্রাত্যহিক জীবনের এই বিরক্তি থেকে নানান রকম হতাশা ভর করে বসে মনে। কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না এমন পরিস্থিতিতে। এ ধরণের পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজন কিছু পরিবর্তনের।
মাঝেমধ্যেই আপনার ওপর অনেক কাজের চাপ তৈরি হয় তাই না? এতে আপনার মন খারাপ হয়? মন রাখাপ করে প্রায় বলে থাকেন “থাকতে পারছি না” “স্টপ” বা “চলে যাও সবাই” অথবা “আমার কিছুই ভালো লাগছে না”। এ সময়ে একদমই কাজ করতে ইচ্ছে করে না। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার মন ভালো হওয়া প্রয়োজন। আপনি এ সময় যা করতে পারেন তা হলো, পাহাড়ের মতো এত এত কাজের ভিড় ঠেলে উঠে বেরিয়ে আসুন। ছাদে চলে যান, মাথা উঁচিয়ে আকাশের দিকে তাকান, তারপর আপনার হাত দুটো টান টান সোজা করে উপরের দিকে তুলে ধরুন আর জোরে শব্দ করে হাসুন। যদি নতুনত্বের স্বাদ পেতে চান, যদি চান আপনার একঘেমেয়ি থেকে একটু মুক্তি, তবে নিচের আলোচনায় মন দিন, হয়তো এই সময়টুকু পালটে দিতে পারে আপনার একঘেয়েমির যন্ত্রণা, উপশম হতে পারে আপনার মনখারাপের।
অসমাপ্ত কাজ বা শেষ করতে হবে এমন কাজ নিয়ে বেশি চিন্তা করা বন্ধ করুন বরং, যে কাজ শেষ হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা করুন। এক দঙ্গল অসমাপ্ত কাজ নিয়ে যদি প্রতিনিয়ত চিন্তা করতে থাকেন তা আপনাকে ক্লান্ত করে দিতে পারে। তাই এসব নিয়ে চিন্তা না করে সম্প্রতি যে কটি কাজ সফলভাবে শেষ করেছেন, সেগুলো নিয়ে ভাবুন আর তা কাগজে লিখে রাখুন। সফল এ সব কাজের তালিকা দেখে আপনার মনের দৃঢ়তা ফিরে আসবে যা আপনাকে প্রফুল্ল করে তুলতে সাহায্য করবে।
নিশ্চয়ই অফিস বা ব্যবসার কাজের চাপে প্রায়ই খুব ক্লান্তি অনুভব করেন, কাজ আর ব্যস্ততার জগদ্দল পাথরের ন্যায় ভারি হয়ে ওঠে আপনার বুক। কিছু সময়ের জন্য কাজে বাইরে বেরিয়ে এসে কল্পনার জাল বুনতে শুরু করুন। অর্থাৎ কাজ শেষে আপনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটাতে চান। অথচ কাজ আপনাকে সে সুযোগ দিচ্ছে না। তার ওপর ছুটি নেই, পয়সার অভাব নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। কোনো সমস্যা নেই, এ অবস্থায় আপনি হতাশ না হয়ে কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠুন আর কল্পনায় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত উপভোগ করুন যেন মনে হয় সত্যিই আপনি সেই সৈকত ধরে ঘোরাফেরা করছেন, চেয়ারে শুয়ে জুস খাচ্ছেন আর আপনার সামনে রয়েছে নীল আকাশের নিচে ঢেউয়ের তালে সমূদ্রের নাচন, হারিয়ে যায় দিগন্তের ধুসর সীমানায়। এই সুন্দর কল্পনায় আপনি নিশ্চয়ই আরাম বোধ করবেন। দূর হবে বুকে জমানো কাজের চাপ।
আপনি প্রতিদিন যে পোষাক গুলো পরে থাকেন, সেগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসুন। যখন মন খারাপ থাকে, তখন আপনার উচিত উজ্জ্বল রঙের সব কাপড় পড়া। মন খারাপ হলে অনেকে কালো আর ধূসর রঙের কাপড় পড়তে পছন্দ করেন। আসলে এ রঙের কাপড়ে আপনাকে আরও মনমরা মলিন মনে হবে। তাতে আপনার মন আরও খারাপ হবে। সেজন্য মন খারাপ থাকলে রঙিন কাপড় পড়ুন আর এ সাথে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন। নিজেকে সুন্দর দেখলে আপনার মনও প্রফুল্ল হয়ে উঠবে। লাল, গোলাপি ও হলুদসহ বিভিন্ন উজ্জ্বল রং মনে আনন্দধারা বইয়ে দিতে পারে। যারা হালকা রঙের পোশাক পরেন সব সময়, তারা নিজের সাথে মানানসই বেশ রংচঙে পোশাক পরতে পারেন। আর যারা এমনিতেই রংচঙে পোশাক পরেন, তারা পোশাকের সাথে একটি রঙিন মালা কিংবা ব্যাগ নিয়ে নিন। কিংবা কিছুদিন হালকা, নরম রঙ গুলো পরিধান করুন। সঙ্গে থাকতে পারে স্টাইলিশ জুতো। অন্যদিনের চাইতে নিজেকে একটু আলাদা ভাবে সময় নিয়ে সাজান। পারফিউমের ব্র্যান্ডও বদলে নিতে পারেন নতুনত্ব আনতে। মোদ্দা কথা, নিজেকে যখন আয়নায় দেখতে অন্যরকম লাগবে। দেখবেন মনের একঘেয়েমিও কাটতে শুরু করেছে।
চুলের স্টাইল পরিবর্তন করলে নিজের চেহারায় অনেকখানি পরিবর্তন আসে। আর চেহারায় পরিবর্তন নিয়ে আসলে প্রতিদিনের একঘেয়ে ভাব অনেকটাই কমে যায়। তাই একঘেয়েমি দূর করতে মানানসই নতুন হেয়ার কাট দিন। চাইলে চুলের কিছু অংশ রাঙিয়েও নিতে পারেন হাইলাইটস করে। ছেলেরা জেল দিয়ে এক এক দিন এক এক ভাবে চুল সেট করে নিতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাস এমন একটি বিষয় যা থেকে সহজে বের হওয়া যায় না। প্রতিদিনের একই ধরণের খাবারের মেন্যু বেশ বিরক্তিও সৃষ্টি করে। তাই প্রাত্যহিক একঘেয়েমি দূর করতে খাবার তালিকা ও খাওয়ার অভ্যাস বদলে ফেলুন। অনেক ভাজা-পোড়া খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেই অভ্যাস বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সকালে গতানুগতিক রুটি ভাজি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বদলে পাউরুটি, ডিম ও ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারেন।
মজার বিষয় হচ্ছে যদি সত্যি সত্যি আপনার মন খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারই আপনার মেজাজ ভালো করে দিতে পারে। তবে বেশি করে খাওয়ার দরকার নেই। ৩০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খাবার খেলে আপনি পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন। সেজন্য মন খারাপ থাকলে কিছু হজমে সাহায্য করে এমন বিস্কুট খান বা অর্ধেক কাপ ওটমিল খান। রাতের খাবারে ভাতের বদলে সুস্বাদু সালাদ খেতে পারেন। তাহলে প্রতিদিনের খাবারের একঘেয়েমি কেটে যাবে। আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে শরীর সুস্থ ও ঝরঝরে হয়ে উঠলে মনটাও লাগবে ফ্রেশ!
একঘেয়েমি দূর করার একটি কার্যকরী উপায় হলো নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া এবং নতুন বন্ধু বানানো। সামাজিক সাইটগুলোতে কিংবা কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিসে নতুন নতুন মানুষএর সাথে পরিচিত হোন। নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে আড্ডা দিলে একঘেয়েমী কেটে যায় এবং জীবনে নতুনত্ব আসে। জীবনটাকে অনেক বেশি একঘেয়ে মনে হলে ঘুরে আসুন দূরের কোনো সুন্দর যায়গা থেকে। আপনার অনেক প্রিয় কোনো স্থান অথবা অদেখা কোনো যায়গা থেকে প্রিয় মানুষদেরকে নিয়ে অথবা একাই ঘুরে আসুন। তাহলে জীবনের একঘেয়েমি কেটে যাবে এবং জীবনটাকে আনন্দময় মনে হবে।
যখন মন খারাপ থাকে, তখন হয়ত আপনি প্রায়ই বলে থাকেনঃ “সব কিছু এলোমেলো, ভাগ্যটাই অনেক খারাপ”। এভাবে যদি চিন্তা করতে থাকেন তো, আপনার মন আরও খারাপ হয়ে যাবে। এ রকম সময় আপনি বলার ধরনটা পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি হয়ত বলতে পারেন যে, কিছু কাজ ভালো করেছি, কিছু ভালো হচ্ছে না। এভাবে নিজেকে মূল্যায়ন করলে মন খারাপের চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।
তবে একটা বিষয় সব সময়ে মনে রাখবেন, ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নিয়েই আমাদের জীবনের সব কিছু। সব সময় ভালো মুডে থাকতে না পারাটা জীবনেরই অংশ, তবুও আমরা আশা করি সবাই প্রতিদিন ভালো থাকবো, সুন্দর থাকবো।
তখনি আমরা বলতে পারব, মন খারাপের দিলাম ছুটি!
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৪
ভিটামিন সি বলেছেন: তিতলিটা দেখেছিলাম। ভাল্লাগছিলো।