নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুরে ফিরে আবার ছুটে আসি তোমার কাছে...

এবিএম বাকী

কে আমি? কোথায় থেকে এসেছি? কোথায় যাবো? আমি কি জন্য এসেছি? আর কি করছি??

এবিএম বাকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৈমুর লঙ কে ছিলো? কি করেছিলো?

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৪


ভারতীয় উপমহাদেশের অমুসলিমদের আজও মনে আছে । তাই তারা আজও তাকে ঘৃণা করে, সাম্প্রতিক ঘটনা আমরা জানি ।কিন্তু আমাদেরও কি একটু মনে রাখা উচিৎ ছিলোনা!!!
কে সে, কেন ওরা আজও ঘৃণা করে???
তাঁর পুরো নাম তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস (চাগাতাই ভাষায়: تیمور - তেমোর্‌, "লোহা") (১৩৩৬ - ফেব্রুয়ারি, ১৪০৫) ১৪শ শতকের একজন তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ। তিনি পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ দখলে এনে তিমুরীয় সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৩৭০ থেকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত নেতৃত্বে আসীন ছিল। এছাড়াও তাঁর কারণেই তিমুরীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বংশ কোন না কোনভাবে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্বে আসীন ছিল। তিনি তিমুরে ল্যাংগ্‌ (ফার্সি ভাষায়: تیمور لنگ‎ ) নামেও পরিচিত যার অর্থ খোঁড়া তৈমুর। যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি আহত হন যার ফলে তাঁর একটি পা অকেজো হয়ে যায়। তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। তিনি একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করিয়ে যান যার নাম তুজুক ই তৈমুরী | তিনি মূলত ছিলেন মঙ্গোল নেতা চেঙ্গিস খানের বংশধর |
১৩৩৫ সালে ট্রান্স-অক্সিয়ানার 'কেশ' নামক স্থানে আমির তৈমুরের জন্ম হয়। ১৩৬৯ সালে তিনি চাগতাই নেতা হন এবং দেশ বিজয়ে বের হয়ে পড়েন। তৈমু্র পূর্ব দিকে পারস্য, আফগানিস্থান ও আরমেনিয়া জয় করেন। মধ্য এশিয়া জয় করার পরে তিনি ভারত বিজয় মনস্থির করেন।
তার লেখা বই ' মালফুজাত-ই-তৈ্মুরী' থেকে জানা যায় এভাবেঃ
সমরখন্দের সিংহাসনে আরহন করে তিনি পার্শ্ববর্তি রাজ্য জয় করে সাম্রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধি করেন। এবারে তিনি হিন্দুস্থান জয় করতে মনস্থির করেন। তিনি তার পুত্র ও আমীরদের অভিমত জানতে চাইলেন।
যুবরাজ পীর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বললেনঃ স্বর্ন প্রসবিনী হিন্দুস্থান জয় করে আমরা হব বিশ্বজয়ী।
যুবরাজ সুলতান হোসেন বললেনঃ আমরা যখন হিন্দুস্থান জয় করব তখন আমরা হব চার দেশের শাসক ও প্রভু।
আমীরগন বললেনঃ যদিও আমরা হিন্দুস্থান জয় করতে পারি কিন্তু সেদেশে আমরা যদি থেকে যাই, আমাদের সন্তান ও তাদের সন্তান-সন্তদিগন হিন্দের ভাষায় কথা বলবে। তারা হারাবে তাদের পূর্ব পুরুষের শৌর্য-বীর্যের ঐতিহ্য। কালক্রমে আমাদের বংশধরগন কালস্রোতে হবে লুপ্ত।
আমার হিন্দুস্থান জয়ের সংকল্প অনড়-অটল। তার থেকে আমি বিরত হব না। আমি তাদের বললাম আমি খোদা ও কোরানের নির্দেশ প্রার্থনা করব। তারা সকলেই সম্মতি জানালেন।
আমি সঠিক নির্দেশের জন্য পবিত্র কোরানের শরনাপন্ন হলাম। প্রথমে যে আয়াতটি আমার দৃষ্টিগোচর হল, তাতে বলা হয়েছে " হে মোহাম্মদ! বিধর্মী ও অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।" উলেমাগন যখন আয়াতটির তাৎপর্য আমীরদের নিকট ব্যাখ্যা করলেন তখন নীরব লজ্জায় তারা আধোবদন হলেন। তাদের নীরবতায় আমার কষ্ট হল।
এই সময়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে এক আভিযানের প্রবল বাসনা আমার হৃদয় -মনকে আলোড়িত করে। কারন আমি শুনেছি ধর্মযুদ্ধে কাফের হত্যা করলে 'গাজী' হওয়া যায় এবং নিহত হলে 'শহীদ'।
১৩৯৮ সালে কাটোর, উঃপূঃ সীমান্তের একটা ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্য আক্রমনের মাধ্যমে শুরু হয় তার ভারত অভিযান। কাটোরের অধিবাসীরা তৈমুরের বাহিনীকে প্রতিরোধ অসম্ভব জেনে পালিয়ে যায় দূর্গম পাহাড়ে। তৈমুর পরিত্যক্ত নগরী লুন্ঠন ও ধ্বংসের আদেশ দেন। তার আদেশে মুসলিম বাহিনী আল্লাহ আকবর রণ ধ্বনি দিয়ে পাহাড়ে উঠে হিন্দুদের আক্রমন করে। বহু হিন্দু নিহত হয়, বহু হত আহত ও পালিয়ে যায় অনেকে। তৈমুর আক সুলতানকে পরাজিত হিন্দু বাহিনীর নিকট পাঠান। শর্ত- ইসলাম গ্রহন করলে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত। তারা সকলেই প্রান রক্ষার তাকিদে ইসলাম গ্রহন করেন। তারপর অবাধ্য, দূর্বিনীত অবিশ্বাসীদের ছিন্নমুন্ডু দিয়ে পাহাড়ের উপরে তৈরী করা হল স্তম্ভ।
এগিয়ে চলে তৈমুর বাহিনী। এবারের লক্ষ্য রাজস্থানের ভাটনীর রাজ্য। রাজা দুল চাঁদ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু মাত্র এক ঘন্টায় দশ হাজার রাজপুত যোদ্ধা নিহত হয়। লুন্ঠিত হয় ধন -সম্পদ, ভস্মীভূত হয় দূর্গ ও সংলগ্ন অট্টালিকা সমূহ। এরপর তৈ্মুর দমন করেন জাঠদের, বন্ধী করেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের।
এরপর তৈমুর যমুনার তীরে ছাউনি ফেলেন। নদীর অপর তীরে লোদি শহর ও দূর্গ। তৈমুর বাহিনী নদি পার হয়ে দূর্গ আক্রমন করে। রাজপুতরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ঘরের মধ্যে পুড়িয়ে মারে এর পর বেপরোয়া ভাবে ঝাপিয়ে পড়ে তৈমুর বাহিনীর উপর। কিন্তু রাজপুত বাহিনী পরাজিত হয়, অনেকে হয় বন্ধী। পরদিন তাদেরও হত্যা করা হয়।
একের পর এক রাজ্য জয় করে তৈমুর দিল্লির দ্বারপ্রান্তে এসে শিবির স্থাপন করেন। বহু লক্ষ্য কাফের হত্যা করেও লক্ষাধিক হিন্দু তার শিবিরে বন্ধী। পেছনে শত্রু ফেলে রেখে যুদ্ধযাত্রা নিরাপদ নয়, প্রধান আমীরদের এমন পরামর্শ শুনে তৈমুর সেই অসহায়, শৃংখলিত লক্ষ হিন্দুকে হত্যার নির্দেশ দেন। এক সংগে লক্ষ বন্ধীর হত্যা যুদ্ধের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
তৈমুর তার আত্ম জীবনীতে লিখেছেন-দিল্লিতে আমি ১৫ দিন ছিলাম। দিনগুলি বেশ সুখে ও আনন্দে কাটছিল। দরবার বসিয়েছি, বড় বড় ভোজ সভা দিয়েছি। তারপরেই মনে পড়ল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই আমার হিন্দুস্থানে আসা। খোদার দয়ায় আমি সর্বত্রই আশাতীত সাফল্য পেয়েছি। লক্ষ লক্ষ কাফের হিন্দু বধ করেছি। তাদের তপ্ত শোনিতে ধৌত হয়েছে ইসলামের পবিত্র তরবারি--------তাই এখন আরাম-আয়েসের সময় নয় বরং কাফেরদের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করা উচিৎ।
ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট বলেন ঃ ১৩৯৮ সালে তৈমুর সিন্ধুনদ অতিক্রম করে হিন্দুস্থান আক্রমন করেন। যারা পালাতে পারেনি তাদের সকলকে হত্যা অথবা বন্ধী করেন। দিল্লির শাসক মামুদ তুঘলককে পরাস্ত করে অধিকার করেন দিল্লি। নির্বিকার চিত্তে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেন এক লক্ষ বন্ধীকে। দিল্লি নগরী লুন্ঠন করে ফিরে যান সমরখন্দে। সঙ্গে লক্ষ বন্ধী নারী ও দাস।
তৈমুর লঙ্গ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেন। তিনি একজন নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ মুসলমান ছিলেন এবং সুফি-সাধক-দরবেশদের সমাদর করতেন। তার উপদেষ্টা পরিষদে ধর্মবেত্তাদের স্থান ছিল কিন্তু তাদের দ্বারা তিনি কখনো প্রভাবান্বিত হতেন না। অসামান্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তেজোদ্দীপ্ত পুরুষ তৈমুর স্বাধীনচেতা ছিলেন এবং ধর্ম দ্বারা রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত হতে দেননি। ম্যালকম যথার্থই বলেন, তৈমুর রসুলের শরিয়ত প্রবর্তন করেন এবং চেঙ্গিস খানের প্রাক-মুসলিম রীতিনীতির বিলোপ সাধন করেন। ধর্মশিক্ষার জন্য তিনি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। গিবন বলেন, ‘প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে তৈমুরের যশ বিস্তার লাভ করে। সমালোচকরাও তার বীরত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কূটনৈতিক জ্ঞান, অবিচল ধৈর্য ও অসাধারণ ধী-শক্তির প্রশংসা করেন। তিনি বীরগাথা শ্রবণ করতে এবং আÍজীবনী অধ্যয়ন করতে ভালোবাসতেন। খোঁড়া হয়েও তিনি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বিজেতার সম্মান লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তৈমুর নিজেকে The Sword of Islam বলতেন । তাঁর কোন যুদ্ধে হারার রেকর্ড নাই , এমনকি অটোম্যানদের অপরাজেয় জেনেসারি বাহিনী ও তার সাথে পেরে উঠতে পারে নাই , পরাক্রমশালী অটোম্যান সুলতান বায়েজিদ দ্য থান্ডারবল্ট ( বায়েজিদ বজ্রাঘাত ) কে পরাজিত করেছিল একমাত্র তৈমুর বাহিনী। জেনেসারী সৈন্য- পৃথিবীর এক অপ্রতিরুদ্ধ বীর ছিল জেনেসেরিয়রা……
[তৈমুর অটোম্যান সুলতান বায়েজিদ দ্য থান্ডারবল্ট কে ধর্ম থেকে বিচ্যুত বলে ঘোষণা করেছিল , বায়েজিদ কর্তৃক খ্রিস্টান রাজকুমারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার কারণে ।]

একটা কৌতূহ‌লোদ্দীপক ঘটনা ‌ তৈমূর‌কে নি‌য়ে ।
তার সমা‌ধি‌তে লেখা অা‌ছে অামার নিদ্রায় ব্যাঘাত ক‌রো না। অা‌মার নিদ্রা ভঙ্গ হ‌লে পৃ‌থিবী‌তে সর্বনাশা যুদ্ধ শুরু হ‌বে। সো‌ভি‌য়েত রা‌শিয়ার প্রত্নতত্ত্ব‌বিদরা গ‌বেষণার জন্য তার শব‌দেহ সমা‌ধি থে‌কে উত্তোলন ক‌রে‌ছিল অার সে‌দিনই শুরু হ‌য়ে‌ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ , ‌ হিটলা‌রের রা‌শিয়া অাক্রমণ শুরু হয় শব উত্তোল‌নের দুই‌দিন পর অার শব পুনস্থাপ‌নের দিন কাকতালীয়ভা‌বে‌ স্তা‌লিনগ্রা‌ডে রা‌শিয়া জয় লাভ ক‌রে |

[ চেঙ্গিস খান যেমন মুসলিমদের উপর গণহত্যা চলাইছিল , তেমনি চেঙ্গিস খান নাতি পুতিরা মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের উপর গণহত্যা চলাইছিল। তৈমুর নিরীহ বন্দিদের ও হত্যা করেছেন ,ইসলামী শরিয়া তার এমন কাজকে সমর্থন করে না | এমনটা হয়েছিল ধর্মের সাথে রাজনীতিকে মিশতে না দেওয়ার কারণেই ,ধর্মের সাথে রাজনীতিকে মিশালে ,সে এমন গণহত্যা করতে পারতো না। কারণ ইসলাম জুলুমকে সমর্থন করে না ,মুসলিম ,অমুসলিম উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তবে যতদিন ইতিহাস থাকবে তত দিন তৈমুর এর কথা প্রচার হবে। কারণ সে এমন এক ব্যক্তি , শত্রুরা তার কথা শুনলেই যুদ্ধ করার পরিবর্তে পালিয়ে বেড়াত , তার সাথে যুদ্ধ করার সাহস কেউ দেখাত না। ]
reference : Wekipedia
মালফুজাত-ই-তৈ্মুরী
internet
[ চিত্রে তৈমুর লঙ্গের স্ট্যাচু উজবেকিস্তানের রাজধানী ]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২১

টুনটুনি০৪ বলেছেন: নতুন কিছু জানলাম।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৭

এবিএম বাকী বলেছেন: ধন্যবাদ..

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

এবিএম বাকী বলেছেন: জেনেসারী সৈন্য- পৃথিবীর এক অপ্রতিরুদ্ধ বীর ছিল জেনেসেরিয়রা……
http://www.somewhereinblog.net/blog/ABMBAKE/30184081

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.