নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এডলপ হিটলার

এডলপ হিটলার

সত্যকে কলমের কালিতে দর্পণের ন্যায় প্রলিফলিত করি...

এডলপ হিটলার › বিস্তারিত পোস্টঃ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী \'চাঁটগাইয়া মেজবান\' প্রেমিকের এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা...

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭

⇨ চাটগাঁইয়া মেজবান
⇨ প্রথম পার্টঃঅভিজ্ঞতা

কথায় আছে,"চাটগাঁও অাইবা বদ্দা মাগার মেজ্জান ন খাইবা।" অর্থাৎ চট্টগ্রাম অাসলে বিখ্যাত চাটগাঁইয়া মেজবান খাবে না তা কিভাবে সম্ভব???মেজবান চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার।।যদি কেই জীবনে একবার চাঁটগাইয়া মেজবান খায় তাহলে মৃত্যুর অাগ পর্যন্ত তার কথা ভুলতে পারবেনা একথা নিঃসন্দেহে বলাই যায়।।চট্টগ্রামের হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলো একেক দিন একেকটাতে বিখ্যাত এই খাবারের অায়োজন করে থাকে। এবার মুল কথায় অাসা যাক,অামি এপ্রিলে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রামে এসে উঠলাম বেয়াই মোক্তার ভাইয়ের বাসায়।মোক্তার ভাই অামাকে অাপ্যায়নে কোন প্রকার ত্রুটি করল না।গরুর কালা ভুনা থেকে শুরু করে গ্রিল,শিক কাবাব,নান রুটি সাথে সুস্বাদু বোরহানি কিছুই খাওয়ানোর বাদ রাখলেন না।একদিন মোক্তার ভাই অামাকে বলল অাপনাকে একদিন মেজবান খাওয়াবো।।অামিতো মেজবানের কথা শুনে পুরাই টাস্কি খাইয়া পড়লাম,কিরে মেজবান অাবার কি??জীবনে কতকিছু খাইলাম কিন্তু চট্টগ্রামের মেজবানের কথা অাজ প্রথম শুনলাম। পরের দিন বুধবার মোক্তার ভাই অামি ও কামাল ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রামের ফাইভ স্টার হোটেল 'হোটেল অাগ্রাবাদ' এর বিপরীতে অবস্থিত বিখ্যাত একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল।অামরা তিনজন ফ্রেস হয়ে বসতেই মোক্তার ভাই তিনটা মেজবানের অর্ডার দিল।।অাদিম কালের মাটির সব বাসন পত্রে ভাত,গরুর মাংস ও ডাল দিল।৷ পরিবেশনের ধরণ দেখেই অামার খুব ভাল লাগলো।মাটির বাসন পত্রে খাওয়ার অনুভুতিই অালাদা।প্রথম দু'তিন লোকমা দিতেই মোক্তার ভাই অামাকে জিজ্ঞেস করলো ভাইজান স্বাদ কেমন হইছে??অামি বললাম ভাই সব অাইটেমই সেই রকম টেস্ট হয়েছে।সেদিন থেকে নিজে নিজে ওয়াদা করলাম যতবারই চট্টগ্রামে অাসবো যেকোন প্রকারেই হোক চট্টগ্রামের এই বিখ্যাত মেজবান খাবোই খাবো।

☞ চাটগাঁইয়া মেজবান
☞ দ্বিতীয় পার্টঃসিরিয়াস কৌতুহল

এর ঠিক চার মাস পর অামার এক চাকরির পরীক্ষার কেন্দ্র চট্টগ্রামে হওয়ায় অামি মনে মনে খুবই অানন্দিত।কারন এবার বুঝি অাবার চট্টগ্রামের সেই বিখ্যাত মেজবান খেতে পারবো।পরীক্ষার পাঁচদিন অাগে টিকেট কাঁটার জন্য দেড়শ টাকা পাঠাও ভাড়া দিয়ে রাতে অামি কমলাপুর রেল স্টেশনে যাই।কিন্তু শত চেষ্টার পরও টিকেট না পেয়ে অামাকে খালি হাতেই ফিরে আসতে হল।পরের দিন অনেক কষ্ট করে তারেক ভাইয়ার নেক্সাস কার্ড থেকে ৬০০ টাকা নিয়ে অনলাইনে ৬ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ৭.০০ টায় 'সোনার বাংলা' ট্রেনের টিকেট কিনলাম।'সোনার বাংলা' অনেক ভাল ট্রেন বলা যায় যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সবচেয়ে সেরা ট্রেন।এই ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে সময় লাগে লাগে মাত্র ৫ ঘন্টা।মনে মনে অনেক পরিকল্পনা করতে লাগলাম সাড়ে বারোটায় চট্টগ্রাম গিয়েই প্রথমে মেজবান খাবো,পতেঙ্গা,গুলিয়া খালি সি বিচ ও মহামায়া ঘুরবো অারো কত কি...।কারণ বিকাল সাড়ে তিনটার পর প্রায় হোটেল রেস্টুরেন্টে মেজবান শেষ হয়ে যায়।কিন্তু অত্যন্ত কষ্টের বিষয় ৬ তারিখ কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাতেই অামার সকাল ৭ টা ৫ মিনিট বেঁজে গেল।কি অার করা টাকা ও ট্রেন দুটোই গেল।মন অামার খুব খারাপ হয়ে গেল।পরে দেখি ৭.৪৫ মিনিটে 'মহানগর প্রভাতি' চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে প্লাটফর্ম ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছে।এটা এতটা ভাল না,এই ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে লাগে ৭ ঘন্টারও বেশি সময়।তাছাড়া প্রত্যেক স্টেশনে যাত্রাবিরতি তো অাছেই।কি অার করা,নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।তারপরও টিকিট পাবো না জেনেও ট্রেনে উঠে পড়লাম ভাবলাম যা হবার হবে।ভাগ্য অামার ভীষণ ভাল ট্রেনে উঠতেই দেখি অামার এক বন্ধু সিটে বসে আছে। সে ও চট্টগ্রাম পরীক্ষা দিতে যাবে। তার যেহেতু টিকিট অাছে সেজন্য অামি একটু সাহস নিয়ে তার পাশের সিটে বসে গেলাম।টিটির ডিস্টার্ব ছাড়া এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা পথ সিটে বসেই পাড়ি দিলাম।তারপর ভৈরব স্টেশনে একজন এসে বলল ভাই এটা অামার সিট।অামি সম্মানের সহিত উনাকে সিট ছেড়ে দিলাম।এরপর ২ ঘন্টা দাড়িয়ে দাড়িয়ে গেলাম।তারপর কুমিল্লা স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাকিপথ সিটে বসে অাড়ামেই গেলাম।মজার বিষয় হল এভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ ফ্রিতেই অামার যাওয়া হল।

এদিকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতেই বিকেল ৩টা বেঁজে যাওয়ায় অামার হার্টবিট বেড়ে গেল।মনে মনে ভাবতে লাগলাম অাল্লাহ তাহলে কি অাজ অামার মেজবান খাওয়া হবে না??অাজকে যদি না খেতে পারি কালকে তো খেতে পারবো না।কারণ অামার কাজিন অাগেই বলে রেখেছে যে,সে অামাকে কালকে জিওসি মোড়ের 'ক্যান্ডি হোটেল'এর বিখ্যাত বিরিয়ানী খাওয়াবে।তারপরও স্টেশন থেকে বের হয়ে নিউমার্কেটে কয়েক জন রিকশা,সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করলাম ভাই,অাজ কি কোন রেস্টুরেন্টে মেজবান অাছে???কেউ ঠিক বলতে পারলেন না।পরে একজন রিকশা চালক বললেন মাঝিঘাটের 'মোহাম্মদীয়া হোটেলে' অাজ মেজবান অাছে।তারপর ঐ রিকশা চালককে নিয়া রওনা দিলাম মোহাম্মদীয়া হোটেলের উদ্দেশ্যে।মাঝি ঘাট যাইয়া দেখি ওখানে মোহাম্মদীয়া নামে কোন হোটেলই নেই।রিকশা থেকে নেমে তারপরও কয়েকটি হোটেলে মেজবান ও মোহাম্মদীয়া হোটেলের অবস্থান জিজ্ঞেস করলাম।কেই অাজকের মেজবানের কথা ঠিক বলতে পারলেন না।তবে মোহাম্মদীয়া হোটেলের অবস্হানের কথা বললেন।এটি নাকি ফিরিঙ্গী বাজারে অবস্থিত।৷এসব কথা শুনে মনটা অাবার ভীষন খারাপ হয়ে গেল একে তো সকাল থেকে কিছু খাইনি তার উপর অাবার বেলা বাঁজে ৪টা।এরপরও ঐ রিকশা চালককে নিয়া অাবারও ফিরিঙ্গী বাজার মোহাম্মদীয়া হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।ওখানে গিয়ে মোহাম্মদীয়া হোটেল পেলাম ঠিকই কিন্তু অাজকে ওখানেও কোন মেজবান নেই।এ কথা শুনার পর মাথার উপর অামার যেন পাহাড় ভেঙে পড়ল।বেলা বাঁজে সাড়ে চারটা অামিতো মেজবানের অাশা ছেড়েই দিছি। এরপরও সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে মোহাম্মদীয়া হোটেলের মালিককে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আমি ঢাকা থেকে অাসছি মেজবান খাওয়া অামার অনেক শখ,অাজ কি কোথাও মেজবান পাওয়া যাবে??উনি অনেক ভাল মানুষ অার কথা বার্তায় দেখলাম অনেক নম্র ভদ্র।উনি বললেন,অাপনি চকবাজার পিপলস হসপিটালের সামনে চলে যান।ওখানে সপ্তাহের সাতদিনই অাপনি মেজবান পাবেন।তারপর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ফিরিঙ্গী বাজার থেকে সিএনজি নিয়া চকবাজার পিপলস হসপিটালের সামনের'মেজ্জান অাইলে অাঁইয়ুন'রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেজবানের কথা বলতেই সেই কাঙ্ক্ষিত উত্তর,জি স্যার অামাদের এখানে মেজবান অাছে!!একথা শুনে আমি যে কি পরিমাণ খুশি হইছি তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়!!ঐ রেস্টুরেন্টেও মেজবান একদম শেষের দিকে।অামার পর শুধু আর একটা মেজবান ছিল।এত কষ্ট অার অপেক্ষার পর অবশেষে অামার মনের ভাসনা পূর্ণ হলো।সেই দিনের মেজবান খাওয়ার স্মৃতি অামি কোনদিন ভুলতে পারবো না।যতদিন বেঁচে থাকবো এই মেজবানের কথা অামার অামৃত্যু স্বরণ থাকবে। Email:[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.