নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Adil

Adil › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্য লুসিফার ইফেক্টঃ যুগে যুগে দেশে দেশে

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৪

অত্যাচারীর মন কি সর্বদাই অত্যাচারী ? ক্রুর বা নিষ্ঠুর হবার ফর্মুলা কি ?

একজন নির্বিরোধ সাদাসিধে ভাল মানুষওকোন তাড়নায় অত্যাচারী বনে

যায় ? নাকি নিষ্ঠুর ওহন্তারক ব্যক্তি বংশ পরম্পরায় এ বৈশিষ্ট ধারণ করে ।

নাকি এটি মানুষের গোপন সত্ত্বায় লুকিয়ে থাকা সহজাত বৈশিষ্ট যা উপযুক্ত

পরিবেশে পেখম মেলে ?



আজকের বাংলাদেশে যে হানাহানি হত্যা ধংসের মহোৎসব চলছে তার

সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে কয়জন সচেতন আছি ? আগুন দিয়ে পুড়িয়ে

মারা , পিটিয়ে মেরে ফেলা, বা ঘরে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জে

বুকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া ,

গুম করে দেয়া , লুটপাট করা , বাড়ীঘর বুলডোজার দিয়ে ভুমিতে মিশিয়ে

দেয়া – এই বর্বর কাজ গুলো ক্ষমতাসীন দল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে

ব্যবহার করে করছে । ভয়ংকর ব্যাপার হল যারাএসব করছে তারা এদেশের

এসমাজেরই মানুষ ।হিটলার একা ৬০ লাখ ইহুদী নিধন করেনি। স্ট্যালিন ,

কালিগুলা , নিরো তারাও অত্যাচার নির্যাতন করেছে সঙ্গীসাথিদের সাথে

যুথবদ্ধ হয়েই ।



ক্ষমতাচর্চায় অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছে বলেই, সুরক্ষা আছে জেনেই আজ

ব্যক্তিগত শত্রুতা না থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশের লোকগুলোর উপর এমন

বল্গাহীন অত্যাচার চালাচ্ছে দ্বিধাহীনচিত্তে । কেন ? যে নিষ্ঠুরতা

অমানবিকতা বিবেক হীনতা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি সে সবই ভিন্ন

মাত্রায় ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ দেখে চলেছে বা অতীতে দেখেছে ।

যেমন আমরা দেখেছি ধর্মীয় বা জাতিগত দাঙ্গায় , স্বাধীনতাযুদ্ধে , বা

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় । এভাবেই সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মানুষই

মানুষকে নিপীড়ন করছে হত্যা করছে । কেন ? কি কারনে ?



এই সুলুক সাধনে সাইকোলজির প্রফেসর ফিলিপ জিম্বারডো ১৯৭১ সালে

অদ্ভুতভাবে এই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই ২৪ জন ছাত্র নিয়ে এক

এক্সপেরিমেন্টকরেন । স্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টটাকে

সত্যিকারের জেলখানার আদলে সাজানো হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে

তাদেরকে গার্ড ও প্রিজনার করা হয় ।বন্দীদের উপর কোন অবস্থাতেই

শারীরিক নির্যাতন নারকরতে গার্ডদের নির্দেশ দেয়া হয়। বরং বন্দীদের

মনে বিষণ্ণতা ও পরবাসী নিঃসঙ্গতা বোধ তৈরি করার অনুমতি ছিল ।

বলে নেয়া ভাল এই ২৪ জনের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিলনা, তারা

মানসিক ও শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল ।



জেল খানার কাঠামোয় বন্দীদের ৬ফুট বাই ৯ ফুট কামড়ায় তিনটি ছোট

খাটে ৩ জনকে একত্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয় । বন্দীদেরসত্যিকারের

জেলখানার মত ২৪ ঘণ্টা বন্দী রাখা হয় । নির্জনকক্ষের ব্যবস্থা ও

হাটাচলার জন্যে একটি রুম বরাদ্দদেয়া হয় । গার্ডদের রুম ছিল বন্দীদের

বিপরীতে , ৮ ঘন্টার শিফটে এবং কাজ শেষে নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যেতে

হতো পরবর্তী ডিউটির আগ পর্যন্ত। প্রথম পর্ব শেষ হলে গার্ড ও বন্দীদের

ভূমিকা অদল বদল করা হবে এমনই পরিকল্পনা নেয়া হয় । তাদেরকে না

জানিয়ে গোপন ক্যামেরা ও সাউন্ড রেকর্ডারের সাহায্যে তাঁদের প্রতি

সেকেন্ডের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হয় । এই এক্সপেরিম্যান্টের উদ্দেশ্য,

আগেই বলেছি ,হল এই দুই ভুমিকায় ক্লিন কাট মানুষ গুলোকিভাবে

কখন কোন মাত্রায়বদলে যায় তার রহস্য ভেদ করা ।



১৪ দিনের পরিকল্পনা থাকলেও এই পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে যায়

যে স্থায়ী মানসিক বিপর্যয়ের আশংকা থেকেএক্সপেরিমেন্ট মাত্র ৬ দিনের

মাথায় সমাপ্ত করা হয় । গার্ডদের শারীরিক নির্যাতন ছাড়া যে কোন প্রকার

আচরনেরঅনুমতি ছিল । তারা যে ক্ষমতা ও আধিপত্য চর্চার সুযোগ

পেল ইতিপূর্বে এরকম অভিজ্ঞতা তাদের ছিলনা । গার্ডরাবন্দীদের উপর

এগ্রেসিভ হয়ে গেল ,চরম অমানবিক মানসিক অত্যাচার করতে লাগল।

গালাগাল করা , চোখ বেঁধে রাখা, ঘুমোতে না দেয়া , অপমানজনক কথা

ইঙ্গিত সহ নানারকম মানসিক অত্যাচার করতে লাগল । আগের দিনের

চেয়ে তার পরের দিন এর মাত্রা বাড়তে লাগল । গার্ডরা এমন সব আচরণ

ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখাতে লাগল যা তারা ইতোপূর্বে কখনই করেনি ।

অন্য দিকে বন্দীরাও ক্রমাগত অত্যাচারে বিষণ্ণতায় ভুগতে লাগল , নিজেদের

উপর নিয়ন্ত্রন হারালো । ভয় ও আতংকে বন্দীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল ।

কেউ কেউ ভয়ে আতংকে কান্নাকাটি ও চিৎকার চেচামেচী করতে লাগল ।

অবস্থা সবার মনে এমন প্রভাব ফেলল যে রিসার্চারদের কেউ কেউ এই

পরিস্থিতির প্রতিপাদ্য ও বাস্তবতা ভুলে গিয়ে বদলে যেতে লাগল । প্রফেসর

নিজে ছিলেন ওয়ার্ডেনের ভুমিকায় , গার্ডদের অত্যাচারী আচরণ তিনি না

দেখার ভান করে এড়িয়ে যান । অবশেষে এক গ্র্যাজুয়েটের সাইকো লজিস্টের

আপত্তির পর এক্সপেরিম্যান্ট বন্ধ করেন ।



পরে প্রফেসর জিম্বারডো তাঁর “ THE LUCIFER EFFECT ” বইয়ে লিখেন –

"খুব কম লোক ই ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের অবাধ সুযোগ আছে এমন

পরিস্থিতিতে নিজেকে নিবৃত করে নৈতিক ও মানবিক থাকতে পারে ,

আমি নিজেও পারিনি ।"



এই এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল বা কনক্লুশান কি ? উত্তর হল ক্ষমতা ও

আধিপত্য মানুষের আচরণ বদলে দিয়ে ভিন্ন মানুষে পরিণত করে , সে

ব্যক্তিটি আগে যে রকমই থাকুক না কেন ।



আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে রাজনীতিতে প্রতি মেয়াদের পর নির্যাতিত

গোষ্ঠী নির্যাতন ও অত্যাচারের নতুন নতুন রাস্তা চিনে নেয় । আর পুনরায়

ক্ষমতার অধিকারী হয়ে সেটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায় । দেনাপাওনার

হিসেব চুকায় আরও অধিক মাত্রায় । আজ ক্ষমতাসীন দল গোষ্ঠী যে রকম

আনকোরা ইভেন্ট বুলডোজার থেরাপি বা ঘরেঢুকে গুলি করে ছাদ থেকে

ফেলে দেয়া , গুন্ডাপান্ডা ও আইনপ্রয়গকারী সংস্থার যুথবদ্ধ হত্যা ধর্ষণ লুট

ডেমোলিশান দেখিয়ে গেল তার প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবলে গা হিম হয়ে আসে ।

অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের জানায় যে আগামীর স্বদেশ অপেক্ষায় আছে

আরও রক্ত আরও হত্যা আরও ধ্বংস আর আরও প্রতিশোধের । আর আমরা

চোখ মুখ বুজে সেই রক্তবীজের আবাদ করে যাচ্ছি ঐতিহাসিক নিস্পৃহতায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৩

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: চমৎকার বিষয় বস্তু। আমাদের জ্ঞানের আরেকটা চোখ দিলেন।
ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১২

ড. জেকিল বলেছেন: সুন্দর পোস্ট, আমাদের এখনই সাবধান হওয়া উচিত।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯

Adil বলেছেন: ধন্যবাদ অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট , আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে। ভাল থাকবেন ।

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই ব্যাপারটা নিয়ে চমৎকার একটা জার্মান মুভি আছে Das Experiment. দেখতে পারেন। আপনার লেখাটা চমৎকার লাগলো।

৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫২

Adil বলেছেন: ড. জেকিল ধন্যবাদ আপনাকে , ভাল থাকবেন ।

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

Adil বলেছেন: হাসান মাহবুব দেরী হয়ে গেল জবাব দিতে , হলিউডের এই মুভিঁটা দেখব দেখব করে আর দেখা হয়ে ওঠেনি , এবার নিশ্চয়ই দেখব , আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.