![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অত্যাচারীর মন কি সর্বদাই অত্যাচারী ? ক্রুর বা নিষ্ঠুর হবার ফর্মুলা কি ?
একজন নির্বিরোধ সাদাসিধে ভাল মানুষওকোন তাড়নায় অত্যাচারী বনে
যায় ? নাকি নিষ্ঠুর ওহন্তারক ব্যক্তি বংশ পরম্পরায় এ বৈশিষ্ট ধারণ করে ।
নাকি এটি মানুষের গোপন সত্ত্বায় লুকিয়ে থাকা সহজাত বৈশিষ্ট যা উপযুক্ত
পরিবেশে পেখম মেলে ?
আজকের বাংলাদেশে যে হানাহানি হত্যা ধংসের মহোৎসব চলছে তার
সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে কয়জন সচেতন আছি ? আগুন দিয়ে পুড়িয়ে
মারা , পিটিয়ে মেরে ফেলা, বা ঘরে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জে
বুকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া ,
গুম করে দেয়া , লুটপাট করা , বাড়ীঘর বুলডোজার দিয়ে ভুমিতে মিশিয়ে
দেয়া – এই বর্বর কাজ গুলো ক্ষমতাসীন দল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে
ব্যবহার করে করছে । ভয়ংকর ব্যাপার হল যারাএসব করছে তারা এদেশের
এসমাজেরই মানুষ ।হিটলার একা ৬০ লাখ ইহুদী নিধন করেনি। স্ট্যালিন ,
কালিগুলা , নিরো তারাও অত্যাচার নির্যাতন করেছে সঙ্গীসাথিদের সাথে
যুথবদ্ধ হয়েই ।
ক্ষমতাচর্চায় অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছে বলেই, সুরক্ষা আছে জেনেই আজ
ব্যক্তিগত শত্রুতা না থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশের লোকগুলোর উপর এমন
বল্গাহীন অত্যাচার চালাচ্ছে দ্বিধাহীনচিত্তে । কেন ? যে নিষ্ঠুরতা
অমানবিকতা বিবেক হীনতা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি সে সবই ভিন্ন
মাত্রায় ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ দেখে চলেছে বা অতীতে দেখেছে ।
যেমন আমরা দেখেছি ধর্মীয় বা জাতিগত দাঙ্গায় , স্বাধীনতাযুদ্ধে , বা
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় । এভাবেই সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মানুষই
মানুষকে নিপীড়ন করছে হত্যা করছে । কেন ? কি কারনে ?
এই সুলুক সাধনে সাইকোলজির প্রফেসর ফিলিপ জিম্বারডো ১৯৭১ সালে
অদ্ভুতভাবে এই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই ২৪ জন ছাত্র নিয়ে এক
এক্সপেরিমেন্টকরেন । স্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টটাকে
সত্যিকারের জেলখানার আদলে সাজানো হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে
তাদেরকে গার্ড ও প্রিজনার করা হয় ।বন্দীদের উপর কোন অবস্থাতেই
শারীরিক নির্যাতন নারকরতে গার্ডদের নির্দেশ দেয়া হয়। বরং বন্দীদের
মনে বিষণ্ণতা ও পরবাসী নিঃসঙ্গতা বোধ তৈরি করার অনুমতি ছিল ।
বলে নেয়া ভাল এই ২৪ জনের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিলনা, তারা
মানসিক ও শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল ।
জেল খানার কাঠামোয় বন্দীদের ৬ফুট বাই ৯ ফুট কামড়ায় তিনটি ছোট
খাটে ৩ জনকে একত্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয় । বন্দীদেরসত্যিকারের
জেলখানার মত ২৪ ঘণ্টা বন্দী রাখা হয় । নির্জনকক্ষের ব্যবস্থা ও
হাটাচলার জন্যে একটি রুম বরাদ্দদেয়া হয় । গার্ডদের রুম ছিল বন্দীদের
বিপরীতে , ৮ ঘন্টার শিফটে এবং কাজ শেষে নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যেতে
হতো পরবর্তী ডিউটির আগ পর্যন্ত। প্রথম পর্ব শেষ হলে গার্ড ও বন্দীদের
ভূমিকা অদল বদল করা হবে এমনই পরিকল্পনা নেয়া হয় । তাদেরকে না
জানিয়ে গোপন ক্যামেরা ও সাউন্ড রেকর্ডারের সাহায্যে তাঁদের প্রতি
সেকেন্ডের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হয় । এই এক্সপেরিম্যান্টের উদ্দেশ্য,
আগেই বলেছি ,হল এই দুই ভুমিকায় ক্লিন কাট মানুষ গুলোকিভাবে
কখন কোন মাত্রায়বদলে যায় তার রহস্য ভেদ করা ।
১৪ দিনের পরিকল্পনা থাকলেও এই পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে যায়
যে স্থায়ী মানসিক বিপর্যয়ের আশংকা থেকেএক্সপেরিমেন্ট মাত্র ৬ দিনের
মাথায় সমাপ্ত করা হয় । গার্ডদের শারীরিক নির্যাতন ছাড়া যে কোন প্রকার
আচরনেরঅনুমতি ছিল । তারা যে ক্ষমতা ও আধিপত্য চর্চার সুযোগ
পেল ইতিপূর্বে এরকম অভিজ্ঞতা তাদের ছিলনা । গার্ডরাবন্দীদের উপর
এগ্রেসিভ হয়ে গেল ,চরম অমানবিক মানসিক অত্যাচার করতে লাগল।
গালাগাল করা , চোখ বেঁধে রাখা, ঘুমোতে না দেয়া , অপমানজনক কথা
ইঙ্গিত সহ নানারকম মানসিক অত্যাচার করতে লাগল । আগের দিনের
চেয়ে তার পরের দিন এর মাত্রা বাড়তে লাগল । গার্ডরা এমন সব আচরণ
ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখাতে লাগল যা তারা ইতোপূর্বে কখনই করেনি ।
অন্য দিকে বন্দীরাও ক্রমাগত অত্যাচারে বিষণ্ণতায় ভুগতে লাগল , নিজেদের
উপর নিয়ন্ত্রন হারালো । ভয় ও আতংকে বন্দীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল ।
কেউ কেউ ভয়ে আতংকে কান্নাকাটি ও চিৎকার চেচামেচী করতে লাগল ।
অবস্থা সবার মনে এমন প্রভাব ফেলল যে রিসার্চারদের কেউ কেউ এই
পরিস্থিতির প্রতিপাদ্য ও বাস্তবতা ভুলে গিয়ে বদলে যেতে লাগল । প্রফেসর
নিজে ছিলেন ওয়ার্ডেনের ভুমিকায় , গার্ডদের অত্যাচারী আচরণ তিনি না
দেখার ভান করে এড়িয়ে যান । অবশেষে এক গ্র্যাজুয়েটের সাইকো লজিস্টের
আপত্তির পর এক্সপেরিম্যান্ট বন্ধ করেন ।
পরে প্রফেসর জিম্বারডো তাঁর “ THE LUCIFER EFFECT ” বইয়ে লিখেন –
"খুব কম লোক ই ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের অবাধ সুযোগ আছে এমন
পরিস্থিতিতে নিজেকে নিবৃত করে নৈতিক ও মানবিক থাকতে পারে ,
আমি নিজেও পারিনি ।"
এই এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল বা কনক্লুশান কি ? উত্তর হল ক্ষমতা ও
আধিপত্য মানুষের আচরণ বদলে দিয়ে ভিন্ন মানুষে পরিণত করে , সে
ব্যক্তিটি আগে যে রকমই থাকুক না কেন ।
আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে রাজনীতিতে প্রতি মেয়াদের পর নির্যাতিত
গোষ্ঠী নির্যাতন ও অত্যাচারের নতুন নতুন রাস্তা চিনে নেয় । আর পুনরায়
ক্ষমতার অধিকারী হয়ে সেটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায় । দেনাপাওনার
হিসেব চুকায় আরও অধিক মাত্রায় । আজ ক্ষমতাসীন দল গোষ্ঠী যে রকম
আনকোরা ইভেন্ট বুলডোজার থেরাপি বা ঘরেঢুকে গুলি করে ছাদ থেকে
ফেলে দেয়া , গুন্ডাপান্ডা ও আইনপ্রয়গকারী সংস্থার যুথবদ্ধ হত্যা ধর্ষণ লুট
ডেমোলিশান দেখিয়ে গেল তার প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবলে গা হিম হয়ে আসে ।
অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের জানায় যে আগামীর স্বদেশ অপেক্ষায় আছে
আরও রক্ত আরও হত্যা আরও ধ্বংস আর আরও প্রতিশোধের । আর আমরা
চোখ মুখ বুজে সেই রক্তবীজের আবাদ করে যাচ্ছি ঐতিহাসিক নিস্পৃহতায়।
২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১২
ড. জেকিল বলেছেন: সুন্দর পোস্ট, আমাদের এখনই সাবধান হওয়া উচিত।
৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
Adil বলেছেন: ধন্যবাদ অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট , আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে। ভাল থাকবেন ।
৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: এই ব্যাপারটা নিয়ে চমৎকার একটা জার্মান মুভি আছে Das Experiment. দেখতে পারেন। আপনার লেখাটা চমৎকার লাগলো।
৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫২
Adil বলেছেন: ড. জেকিল ধন্যবাদ আপনাকে , ভাল থাকবেন ।
৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮
Adil বলেছেন: হাসান মাহবুব দেরী হয়ে গেল জবাব দিতে , হলিউডের এই মুভিঁটা দেখব দেখব করে আর দেখা হয়ে ওঠেনি , এবার নিশ্চয়ই দেখব , আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৩
অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: চমৎকার বিষয় বস্তু। আমাদের জ্ঞানের আরেকটা চোখ দিলেন।
ধন্যবাদ।