![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
আমার জনৈক ছাত্র একবার জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, আপনি কি কখনও গালমন্দ করেছেন?’
আমি বললাম, ‘রাগ হলে করি তো।’
‘কী কী?’ সে কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল।
আমি বললাম, ‘এই ধরো বদমাশ, হারামজাদা ব্লা ব্লা ব্লা।’
সে হাসতে লাগল। হাসির কারণ জানতে চাইলে বলল, ‘এগুলো কোনো গালি হলো?’
তৎক্ষণাৎ মনে হলো, আসলেই তো। এগুলো তো কোনো গালিই না। কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় দেখতাম সহপাঠীদের অনেকে একে-ওকে হুটহাট গালাগাল করছে। মা-বাপ তুলেও গালি দিচ্ছে। আর ওরা এগুলো স্বাভাবিক ভাবেই নিত। আমার গা রি রি করত। এ জন্য বোধহয় দুই-চারজন ছাড়া বন্ধু জোটেনি তেমন। আমার ঘনিষ্ঠরা আমার মতোই। সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের সাথে যখন তুমি সম্বোধন করে কথা বলি, অনেকে তো বলে বসে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নাকি!
গাজীপুরে থাকতে দেখতাম গালির আরও আধুনিক ভার্সন। আট-দশ বছরের পোলাপানও মা-বাপ তুলে গালি দেয়। কী বিচ্ছিরি কাণ্ড। ঢাকায় আসার পর দেখলাম এখানে আরও আধুনিক ভার্সন। চালক গাড়ি ছাড়তে দেরি করলে তাকেও মা-বাপ তুলে গালি দেয় শিক্ষিতদের অনেকে। রিকশাওয়ালা-সিএনজিওয়ালারা তো গালি ছাড়া কথাই বলে না।
মোটামুটি আমিও কিছু গালি রপ্ত করেছি। তবে বাস্তবে প্রয়োগ তেমন করতে পারি না। গাজীপুরে প্রয়োগের চেষ্টা করেছি। পরিচিতরা গালি শুনে হাসে। বলে, ‘এগুলো হয় না।’ কয়েকদিন আগে বাড়ি গেলাম। মা কথা প্রসঙ্গে বললেন, আমার ছেলে গালাগাল করেনি কখনও।
অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। মনে হলো, নতুন শেখা গালিগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ করা হবে না। যদিও মনে মনে বা বিড়বিড় করে গালাগাল দিতেই হয়।
দুই
স্কুলের শিক্ষককে রাস্তায় বা বাজারে দেখলে দূর থেকে দৌড়ে পালাতাম। আর সামনে পড়ে গেলে আদাব-সালাম দিয়ে কোনোমতে পগারপার। দিন বদল হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের গায়ে হাতও তুলে। কোনো ছাত্রকে একটা ধমক দিলে স্কুলে মা-বাপ নিয়ে আসে। পরীক্ষায় নম্বর পর পেলে শিক্ষকের ওপর খবরদারি করে। জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনাও ঘটে। অথচ আমাদের শিক্ষকেরা অন্যায়ভাবে মারধর করলেও কখনও প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তাও করতে পারতাম না।
তিন
আপনি পিতৃসম একজনকে গালমন্দ করলেন। আপনার ভাই-ভাতিজা-ছেলে সেটা দেখল। তারাও আপনার সাথে অংশীদার হলো। আপনি মনে করলেন জিতে গেলেন। আরেকদিন বাগে পেয়ে সেই লোক আপনাকে অপমান করল, তার ছেলেপেলেরাও সঙ্গ দিল। ফলাফল ১-১? তাই না? মোটেই না। একটি প্রজন্ম তৈরি হলো, যারা বড়দের মান্য করে না। সমাজে ধ্বংসের শুরু। একজন খুনিকেও আপনি খুন করতে পারেন না। এতে দু’জনই অপরাধী হয়ে গেলেন। এ জন্য আইন আছে। আইন সচল না থাকলে সচল করতে হবে, সভ্য জগতে কোনোভাবেই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া যাবে না।
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, রাজনৈতিক কারণে অনেকে এসব প্রশ্রয় দেয়। যেমন প্রশ্রয় দেয় মব বায়োলেন্সে। ফলাফল তো চারপাশে দেখাই যাচ্ছে। যে যাকে পাচ্ছে পেটাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়েরও চেষ্টাও করে না।
চার
মা কারখানায় কাজ করেন। ভালোমন্দ রান্না করেছেন দু’জনের জন্য। এরপর নাইতে গেলেন। এসে দেখলেন খাবার সাবাড়। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী রে, আমার জন্য রাখলি না?’
‘খাবার মজা ছিল খেয়ে ফেলেছি।’
অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলের এমন উত্তরে মা বাকরুদ্ধ। কিন্তু এ দায়টা কি মায়েরও নয়? ছেলের মধ্যে মানবিকতা জাগানোর চেষ্টা তো থাকা উচিত।
অনুরূপ ঘটনা। ছেলের টাকা লাগবে। মায়ের কাছে বললে মা অপারগতা জানালেন। ছেলের টাকা লাগবেই লাগবে। কী দরকার? বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে। এই ছেলেটা বড় হয়ে কী হবে? মোটরসাইকেল কেনার জন্য মা-বাবার কাছে টাকা চাইবে অথবা নেশার টাকার জন্য মা-বাবার গায়ে হাত তুলতে পিছপা হবে না।
পাঁচ
একজন প্রকাশক সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন বইয়ের ব্যবসায় মন্দা। উনি কোনোভাবেই পেরে উঠছেন না। এটা আজকের ঘটনা না। বই না পড়া প্রজন্ম গত দুই দশক ধরেই বেড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফেসবুক আসার পর থেকে। বিশাল এক অংশ বই না পড়েই জ্ঞানী। ফেসবুক থাকতে অন্য বুক পড়ার তাগিদও নেই। মা-বাবাও চান না শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে সন্তান পড়ে থাকুক। সন্তান ডাক্তার-প্রকৌশলী হোক। মানুষ হওয়ার কী দরকার?
ছয়
আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া ভেবেছিলাম,
যার উদ্দেশে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ
প্রশস্তি লিখেছিলাম;
গতকাল বলাইবাবু বললেন, ‘ঐটি বানরলাঠি গাছ।’
অ্যালসেশিয়ান ভেবে যে সারমেয় শাবকটিকে
আমরা তিন মাস বকলস পরিয়ে মাংস খাওয়ালাম,
ক্রমশ তার খেঁকিভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
আমরা টের পাইনি
আমাদের ঝরণা কলম কবে ডট্ পেন হয়ে গেছে,
আমাদের বড়বাবু কবে হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছেন;
আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে
-তারাপদ রায়
২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সমাজ থেকে বিনয়, মান্যতা, আদব, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর থেকে মন উঠে গেলে সে সমাজে শৃঙ্খলা থাকে না। আমি-আপনি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি না আমাদের সন্তানেরা মনুষ্যত্বসম্পন্ন হবে।
২| ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চ ছাড়া কোনো গালি কে গালি মনে না করাই ভালো ।
২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি শঙ্কিত এসব গালি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেল সমাজে।
৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৬
শেরজা তপন বলেছেন: তা হোক সমস্যা নেই- ওরা ওদের মত বেড়ে উঠবে। যার যার জীবনের ঝুকি সেই নিবে আর তার ভাল কিংবা মন্দ পরিনাম তাকেই ভোগ করতে হবে
এই পৃথিবীতে আমার দায় আমাকে নিয়েই।
২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যার যার জীবনের ঝুকি সেই নিবে আর তার ভাল কিংবা মন্দ পরিনাম তাকেই ভোগ করতে হবে
এই পৃথিবীতে আমার দায় আমাকে নিয়েই। কিশোর গ্যাং কেন তৈরি হয়। সাফারার কি তাদের পরিবার একা হয়? রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এক কিশোরের সাথে ধাক্কা লাগল। বাপ-মা তুলে দিল গালি। তখন কি না শোনার ভান করা যায়?
৪| ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৮
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
গার্লফ্রেন্ড যদি বয়ফ্রেন্ডকে মামু / মাম্মা ডাকে তাহলে তাদের মাঝে কি সম্পর্ক দাড়ায়?
২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:০৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ওরা ঠিক সম্পর্কের দিকটা বিবেচনা করে না। এগুলো কেবল ন্যাকামি। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলে .ওয়ার পোলা। এগুলো সম্পর্কের সাথে যায়?
৫| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:০৪
লোকমানুষ বলেছেন: সত্যিই তাই। আপনার লেখাটা পড়ে অনুধাবন করলাম আমরা সবাই কোথাও না কোথাও এই অধঃপতনের অংশীদার। ছোটবেলায় যে সম্মান আর মানবিকতা শিখেছি, যে সব মূল্যবোধের শাসনের মাঝে বড় হয়েছি, সেগুলোর অনুপস্থিতিতে আজকের প্রজন্মে হারিয়ে যাচ্ছে অবাধ্যতায় আর বেল্লাপনায়। পরিবর্তনটা তাই শুরু করতে হবে ঘর থেকে, একটা ভালো বই হাতে তুলে দিয়ে, গালাগালির বদলে কথা বলার শিক্ষা দিয়ে। তাহলেই হয়ত প্রজন্মটার একটু লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে, সমাজটা একটু ঠিক হবে।
২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:১২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এই বেলেল্লাপনা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। মা-বাপের সামনেও ধুমসে এটাওটা বলে ফেলছে। অথচ আমরা এটাকে প্রগতি হিসেবে ধরে নিচ্ছি। অথবা ভাবি আমাদের ছেলেটা বা মেয়েটা ভালো হলেই ভালো। একবারও ভাবি না ওরা বাইরে চলে। একটা ছোট্ট বাচ্চাও সঙ্গ দোষে হিংস্রতা শিখে আসে। প্রশ্রয় দিয়ে আমরা পুলিশ অফিসার দম্পতির মেয়ে ঐশী পয়দা করি।
৬| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:২২
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
দেশে আইন আছে। আইন সচল না থাকলে সচল করতে হবে, কোনোভাবেই নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। দুঃখজনক ব্যাপার হলো রাজনৈতিক কারণে অনেকে এসব প্রশ্রয় দেয়। যেমন প্রশ্রয় দেয় মব বায়োলেন্সে। ফলাফল তো চারপাশে দেখাই যাচ্ছে। যে যাকে পাচ্ছে পেটাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়েরও চেষ্টা করে না।
- আপনার লেখায় এই তিন লাইনের জন্য আপনাকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাইছি। আপনার এই তিন লাইন লেখাতে আপনি প্রকাশ করেছেন আপনি সমাজের দেশের মঙ্গল আশা করেন। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:৩৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মব বায়োলেন্স সম্পর্কে আমি আগে থেকেই বলছিলাম। শুধু রাজনৈতিক কারণে অনেকে বিরোধিতা করেছে। সরকারিভাবেও বলা হয়েছে জনরোষ। যিনি বলেছেন তিনি নিজেও এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন পরে।
রংপুরে মেয়ের বিয়ে ঠিক করতে গিয়ে গণপিটুনিতে দু’জন নিহতের খবরটা তো পড়েছেন? এগুলো ওই আগের মব বায়োলেন্সের সাইড ইফেক্ট বলা যায়। মাঝেমাঝেই এমন ঘটনা ঘটছে। একটা সময় আসবে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
৭| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:৩১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
গালি ব্লগেও চলে, শিক্ষিত গালি। আপনি খেয়েছেন নাকি দিয়েছেন?
২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:৩৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুরুর দিকে মনে হয় একটা-দুটো দিয়েছিলাম। পরে এক ভদ্রমহিলা বারণ করলেন, পরে নিজেরও অনুশোচনা হলো। এখন গালি তেমন দেই না।
৮| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৪:৪৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
পুরান ঢাকার মানুষ কথায় কথায় বলে
- তোর মায়রে -----?
৯| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:২৫
কামাল১৮ বলেছেন: আমার জীবন এমনিতেই ঝুকির মধ্যে।গালি দিয়ে ঝুঁকি বাড়াতে চাইনি।তবে অনেক নাস্তিককে গালি দিতে দেখেছি এবং শুনেছি।
১০| ২১ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমাদের সমাজও এখানে অনেকাংশে দায়ী।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৮
শেরজা তপন বলেছেন: তারাপদ রায়ের কবিতাটা ভাল।
সমাজে এমনটা বেয়াড়া ত্যাড়া উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে মেয়ে চিরকাল ছিল, সবকিছু পালটে যাবে তার কিছু কিছু আমাদের মনমতো হবেনা তবুও এই পরিবর্তনগুলো মেনে নিতেই হবে।