![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হরিণ বাঘের শিকার থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে খুঁজে, সাপ গর্তে লুকায়, পাখি বাসা বুনে আর মাছ ছুটে জলের ভিতর। তবুও শিকারির শিকারে আটকা পড়ে অসহায়, অনন্যাপায় নিরীহ প্রাণী কিংবা দুর্বলতায় মূঢ় নিস্তেজ কেউ। সগোত্রের চেয়ে অন্যান্য গোত্রের বা জাতের কাছে অন্যান্য প্রাণী নিরাপদহীন কিন্তু মানুষ নামের হোমো সেপিয়েন্স গোত্রের পৃথিবী নামক গ্রহের শ্রেষ্ট জীবের দাবিদার সভ্যতার উন্নতির সাথে নিজের চরিত্র, আচার আচরণ যতই না বদলাচ্ছে তার চেয়ে বরং হিংস্র ও পাষন্ড হচ্ছে দিন দিন।
সন্তানের কাছে যেমন মা-বাবা নিরাপদ নয় তেমনি বাবা মা অনেক সময় পারছে না তাঁর ছেলে-মেয়ের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে কিংবা সমাজ ব্যবস্থার দোষ দিয়ে নিজেকে নির্বিকার ভাবছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের যুগে সমাজে একজন নারী কতটুকু নিরাপদ তার স্বচ্ছ একটা অবয়ব তুলে ধরছি।
নারী অধিকারে বলছি নারীর দৈহিক মানসিক সামজিক নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে। প্রথমে আসি শিরোনামে, প্রতিনিয়ত কতো ঘটণাতো ঘটে কিন্তু সব খবর যেমন খবর হয় না আবার সব খবর শেষ খবর নয়। অর্থাৎ গণমাধমের অজান্তে লোকচক্ষুর অন্তরালে এবং বাস্তবতার কাছে পরাজিত হয়ে অনেক ঘটনা আলোর সংস্পর্শে আসে না। বড়ই পরিতাপের বিষয় মাঝে মাঝে যে সকল হৃদয়বিদারক নৃশংস ঘটনা প্রকাশিত হয় তাও রাজনীতি কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তির সুযোগে হাওয়া হয়ে উড়ে যায় দৃষ্টির অগোচরে।
ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন পরিমল। পরীক্ষার খাতায় যারা প্রাইভেট পড়ত না তাদের আশানূরুপ নম্বর না দেওয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। অর্পিতা (ছদ্ধনাম) বারবার ভালো মার্কস না পেয়ে একপর্যায়ে বাংলাবিষয়ে বাধ্য হয়ে পরিমলের মতো গুণধর(!) শিক্ষকের বাসায় পড়তে যায়। প্রথম থেকে স্যরের লম্বা চোখ তার কাছে কেমন জানি বীভৎস ও শ্লেষ মনে হতে থাকে। সবাইকে ছুটি দিয়ে অর্পিতাকে এক্সটা টাইম দেওয়ার কথা বলে বসিয়ে রাখে। তারপর খবরের পাতা, টিভির রঙ্গীন পর্দা, অনলাইন এবং ইন্টারনেট হয়ে সারাবিশ্বের শিক্ষকদের গায়ে চুনকালি দিয়েছিল ধর্ষক পরিমল। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, তসলিমা নাসরিনকে দিয়ে যেমন বাংলাসাহিত্যে মূল্যায়ন করা যাবে না তেমনি পরিমল কে দিয়ে শিক্ষক সমাজ বুঝানো কিছুতেই সমীচীন নয় আর তা কখনও করছি না।শুধু এটুকু বলছি আমাদের সমাজে শিক্ষকেরাও কি আদৌ পারছে নারীর শরীরের নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু এও অস্বীকার করা যাবে না গৃহশিক্ষক, কোচিং শিক্ষক সর্বোপরি শিক্ষক সমাজের কাছে মেয়েরা কিছুতেই নিরাপদ নয় যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছাত্রীর উপর যৌন হয়রানির চেষ্টা বর্বব পশুসুলভ ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো খবর এখনও পত্রিকার শিরোনাম হয়। মেয়েরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হয় কিন্তু বাবাসম শিক্ষকের কাছে সে পড়তে সে লাজুকতা থাকে না।
এমতাবস্থায় তারা যদি শিক্ষকের কাছে নিরাপত্তা না পায় তবে যাবে কোথায়? কে দিবে তাদের নিরাপদ? দাসপ্রথা নাকি প্রাচীন অনার্য যুগ? হাজারো প্রশ্নের বানে থমকে যায় বিবেক? সত্যিই কি আমরা শিক্ষার আসল রস আস্বাদন করতে পারছি বা করছি? কীসের শিক্ষা? যে শিক্ষা নিজের পুরুষত্বকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না তা শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক, মানুষ হয়ে বন্য পশুর মতো।
নীল দুনিয়া(ফেসবুক) একচ্ছত্র পুরুষের দখলে। যেখানে পুরুষ নানা অঙ্গভঙ্গি করে যে-কোন ছবি আপলোড করতে পারে সেখানে নারীর আছে সীমাহীন ভয় ও উদ্রেক। স্বনামে বেনামে নারীর ফেইক আইডি ব্যবহার করে একধরণের উন্মাদনায় ভুগে কিছু উচ্ছৃখল ছেলে। বিশ্রি কমেন্টস, অহেতুক প্রেমের প্রস্তাব, ফেইক আইডির ভয় এবং যৌন হয়রানির চেষ্টা সবমিলিয়ে সাইবার ক্রাইমের গেঁড়াকলে নারী নিদস্তুণ ভুক্তভোগী।
নারী যেন আজ পণ্য! ব্যবসায়ে পণ্যর বাজারজাতকরণে তার শরীর প্রদর্শন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন। ঠিক তেমনি অনলাইন জগতে নারীর ছবি মানে হিট অযাজিত হয়রানের শিকার হওয়া। এখানেও সোজা কথায় নারী কোনভাবেই নিরাপদ নয় শুধুমাত্র আমাদের বিকৃত মানসিকাতার নোংরামী চিন্তার জন্য।
কাজী নন্তুল একটা কথা বলেছেন,‘আমরা যদি না জাগি মা,কেমনে সকাল হবে?’ আর নয় বড় কোন সেমিনার শুধু এটুকু দাবী এসো সভ্যতার উৎকর্ষের সাথে সাথে আমরাও বদলায়। নিজের বোনের অধিকার দিই, একদিন সকল নারী তাঁর অধিকার পাবে। তবেই সগৌরবে দুইয়ে মিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সোনার বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.