![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাউন্ডুলের অশ্রু
আবদুল হাকিম নাহিদ
রনু সারাদিন এ বাড়ী ও বাড়ী টোঁ টোঁ করে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে। স্কুলে যায় না। বড্ড বাউন্ডুলে ছেলেকে নিয়ে তার মা টেনশনে থাকেন। কখন কার সাথে মারামারি করে , কার টিনের চালে ঢিল মারে তার হদিস নেই। গোসল, দুপুরে খাবার ঠিক মতো কিছুই করা হয় না রনুর। পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়লে রনু পুকুরে সাঁতার কেটে সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ভেজা কাপড়ে বাড়ী এসে দেখে তার মা লাঠি হাতে উঠোনে বসে আছে। রনুর মাকে তার পাঁড়ার দাদী, চাচী, খালা, ফুফুরা নানান নালিশ দিয়ে যায়। এ নিয়ে তার মা ভীষণ অতিষ্ঠ ! কারও শশা নেই, কারও নারকেল নেই, কারও টমেটো কাঁচা মরিচ থাকে না। কোনো একদিন শুনে মিষ্টি আলু নেই, গাছে আম নেই, ক্ষেতের রবি শস্য ক্ষেতে থাকে না রনু ও তার বন্ধুদের জ্বালায়। দুপুরের খাওয়া দাওয়া ভুলে অন্যর অনিষ্ঠ করে রীতিমত মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে তারা! দিনার হাজ্বী তাকে খুঁজছে, জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে পেলবে। ছেলেপুলে নিয়ে তাঁর পুকুরে হইচই করে পানি ঘোলা করেছে রনু। তাঁর ধারণা, রাতের মধ্যে মাছ মরে পুকুর সাদা হয়ে যাবে। সকালে মাছ পঁচার গন্ধ ছড়াবে। পরদিন থেকে তাঁরা বাড়ীতে থাকতে পারবে না। নিশ্চয় রনু তাঁর বিরুদ্ধে গোপন কোনো ষড়যন্ত্রে করেছে। রনুর মা বলল,“ পাগল ছেলে, কোথায় যায়, কি করে ঠিক ঠিকানা নেই, মোটেও আপনাকে খেঁপানোর জন্য এমন কান্ড করেনি। আমি বরং ও বাড়ীতে ফিরলে মারব।” হাজ্বী আরও ক্ষেপে গেল, বাম হাত দিয়ে লুঙ্গি উপরের দিকে তুলে ডান হাতে লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে “আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব! সব দোষ তোঁর বদমাইশটার। ও এলে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসবি।”
মুয়াজ্জিনের কন্ঠে এশার আযান শুনে রনুর মায়ের উৎকন্ঠা বেড়ে গেল। ছেলেতো কোনো দিন রাতে বাড়ীর বাইরে থাকে না। আজ ঘরে ফিরছে না কেন ? তবে কি হাজ্বীর ভয়ে ! কেরোসিনের একটা কুপি নিয়ে ছেলেকে খুঁজতে বের হলেন। আম বাগান, জাম বাগান,ধান ক্ষেতের আইল, শুকনো খড়ের স্তুপে সবই ভালো করে দেখলেন, কিন্তু রনুকে খুঁজে পেলেন না। তিনি ভাবছেন রনু অদৃশ্য মানব আতœার মতো অভাগী মাকে ভুলে হাজ্বীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সমবয়সী সবাই ঘুমিয়ে গেছে, কেউ রনু কোথায় আছে তা বলতে পারল না। বন্ধুরা সবাই বাড়ীতে এলেও শুধু ত্রিশোর্ধ্ব বিধবার বুকের মানিক রতন তাঁর দু’চোখের আড়াল ফিরে নি। একবার ভাবছে, হাজ্বীকে রনু না ফেরার কথা বলে আসবে। পরক্ষণে মনে হলো, পাশের ঘরের রহিমা খালাকে হাজ্বীর কালো রগচটা কুকুর কামড়ানোর পর চিকিৎসা করলেও এখনো মহিলা অমবস্যা-পূর্ণিমার সময় ব্যাথা পায় , বিছানায় ছটপট করে প্রলাপ বকতে থাকে ! ছেলেকে খুঁজে না পাওয়ার বেদনা প্রচ্ছন্ন হয়ে নিজের প্রাণ বাঁচানো প্রকট আকারে উঁকি দিল।
ছোট্ট চনের ঘরের দাওয়াই বসে ছবুরা বানু ছেলেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করল। বিয়ের দু’বছর পরে স্বামী যক্ষা রোগে মারা গেল, এই ছেলেকে বুকে পিঠে বড়ো করে আজ ফিরছে না দেখে ভেতরটা আগুনের ফুলকির মতো কষ্ট বারবার বি”ছুরণ করছে। শত অন্যায় অবিচার করলেও এতিম ছেলের গায়ে হাত তুলতে তাঁর মনে সায় দেয় না। রনু যে তাঁর সাত রাজার ধন, অভাগীর একমাত্র সম্পদ।
চাঁদের জোৎ¯œায় আবছা একটা ছায়া ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রনুর মা ঘুমে টলছে, দাঁতের টনটন শব্দ শুনে তিনি ভয়ে চমকে ওঠলেন। মাথা তুলে দেখে রনু আখ চিবা”েছ। মুহূর্তে তাঁর কলিজাটা প্রশান্ত মহাসাগরের মতো বড় হয়ে গেল। হু হু করে কেঁদে ওঠে রনুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,“কোথায় গেলি,বাছাধন, তুই ছাড়া কে আছে বল?”
মায়ের বারণ সত্ত্বেও ডাহুক পাখির পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে হাজ্বীর পুকুর পাড়ে চলে আসল, সেদিকে রনুর খেয়ালই ছিল না। চতুর্দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, ঝোপের আড়ালে হাজ্বী মাঝে মাঝে লুকিয়ে থাকে ! পুকুর ঘাটে বিকট একটা শব্দ তার দৃষ্টি সেদিকে গেল। কাতল মাছের মতো কি যেন লাফা”েছ! পরনে কি ছিল তা না ভেবে লাফ দিল পুকুরে। পেট ফুলে গেছে, চোখ বন্ধ, ধবধবে শাদা চামড়ার তুলতুলে দেহ বির্বণ হয়ে ফ্যাকাশে রূপ নিয়েছে হাজ্বীর ছোটো নাতীর। রনুর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হ”েছ না। বুক ধড়পড় করছে, হাত পা কাঁপছে, পা কোনো রকম সামনের দিকে টানছে। হাজ্বী ওযু করছে, রনুর দু’হাতের কনুইয়ে নাতীকে দেখে, লাঠি না ভার দিয়ে দৌড় দিলেন।
হাজ্বী বাড়ীতে কারণে অকারণে রনু এখন আসা যাওয়া করে। হাজ্বী রনুকে স্কুলে ভর্তি হতে বলে, মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেও রনুর তাতে মোটেও মন নেই। ইদানীং সে খেয়াল করেছে, নারকেল গাছের ভেতর গর্ত করে টিয়া বাসা বেঁধেছে। দুপুরে ভাত খেয়ে হাজ্বী ঘুমায়। রনু এই ফাঁকে টিয়ার বা”চা নিয়ে গাছ থেকে নেমে এলো। নিচে দেখে হাজ্বীর বড় ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। রনু মাথা নীচু করে একটু হেঁটে তারপর দিল ভৌ-দৌড়। অন্যসময় হলে দু’হাতের তালুতে থুতু ছিটিয়ে রনুর কান টানতেন। কিš‘ আজ নিছক ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য কিছুই বলেনি মনে হ”েছ আর রনুকে দেখলে কেমন জানি তাঁর মায়া হয়।
রনুর নামে তার মায়ের কাছে এখন কেউ বিচার দিতে আসে না। রনু ছোট্ট টিয়া বা”চা নিয়ে ব্যস্ত। টিয়ার নাম রাখলো ‘রাজ’। তার বন্ধু দুলালের কাছ থেকে লোহার খাঁচা ধার নিয়েছে। বিকালে মরিচ ক্ষেত থেকে ঘাস ফড়িং ধরে আনে, ভাতে হলুদ মেখে খাওয়ায়। কলা নিজে অর্ধেক খেয়ে বাকীটুকু রাজের জন্য রাখে। রাত-বিরাতে রনু এখন পাড়ার ছেলেদের সাথে হাটে উঠে না, অন্যর ক্ষেতের শস্যে ছুরি হয় না। বাউন্ডুলে জীবনের সমস্ত দুরন্তপনা শৈশব ঐ খাচার ভিতর আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।
গোসল শেষে ঘরে ফিরে গরম ভাতে হলুদ মেখে রাজের খাঁচার কাছে এলো। খাঁচায় রাজ নেই, পালিয়েছে! রনুর হাত থেকে মাটির বাসন পড়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। গালে হাত দিয়ে রনু বসে আছে, চোখ বেয়ে টলটল করে জল পড়ছে। ছবুরা বানু ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,“ যা চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে তা নিয়ে দুঃখ করা ঠিক নয়। ভালোবাসা কখনো একপক্ষ থেকে হয় না আর তোমার এ আবেগ মোথিত ভালোবাসা রাজের কাছে বিষের মতো লাগত কারণ স্বাধীনতাহীন কোনো জীবন প্রকৃত জীবন নয় !
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৫
নাহিদ হাকিম বলেছেন: ভাই ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভাল লিখেছেন +++
৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬
সোহানী বলেছেন: অনেক ভালো লাগা। +++++
৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
নাহিদ হাকিম বলেছেন: অনুপ্রেরণা পেলাম
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গল্পটি ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ, ভাই নাহিদ হাকিম।