![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অণু । বাবা - মা ডাকে অনিক বলে । নিজের সম্পর্কে বড় করে পরিচয় দেবার মতো কোন যোগ্যতা এখনো তৈরি করে উঠতে পারি নাই । কিছুদিন অনুরাগ ছদ্মনামে সামাজিক মাধ্যমে লেখালিখি করেছি , এখন নিজের প্রকৃত নামেই লিখছি । সঙ্গতকারণে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় , পরিবারের সদস্যদের তেমন খুব একটা কাছে পাওয়ার সুযোগ হয় না আর ব্যক্তিগত জীবনেও খুব একটা ভালো কোন বন্ধু- বান্ধব বন্ধু নেই; যে বা যার যা যাদের সাথে নিজের কথা গুলা বলে হালকা হতে পারি । খুব একা থাকতে থাকতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি । তাই সেই চিন্তাবোধ - বিবেক তাড়না থেকেই নিজেকে হালকা সহজ করার প্রয়াসে ব্লগ লেখার চেষ্টা শুরু করা মাত্র । অবসর সময়ে কবিতা লিখে সময় কাটাই নয়তো একাই নিজে নিজের ম তো করে দূর দূরান্তে পায়ে হেঁটে ঘুরতে বেরিয়ে পরি ।
( যতবারই পড়ি বুকটা ধু ধু করে ওঠে)
প্রিয়তমা মিলি,
একটা চুম্বন তোমার পাওনা রয়ে গেলো.. .সকালে প্যারেডে যাবার আগে তোমাকে চুমু খেয়ে বের না হলে আমার দিন ভালো যায় না। আজ তোমাকে চুমু খাওয়া হয় নি। আজকের দিনটা কেমন যাবে জানি না... এই চিঠি যখন তুমি পড়ছো, আমি তখন তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। ঠিক কতোটা দূরে আমি জানি না। মিলি, তোমার কি আমাদের বাসর রাতের কথা মনে আছে? কিছুই বুঝে উঠার আগে বিয়েটা হয়ে গেলো।বাসর রাতে তুমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে যখন কাঁদছিলে,আমি তখন তোমার হাতে একটা কাঠের বাক্স ধরিয়ে দিলাম।তুমি বাক্সটা খুললে... সাথে সাথে বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকী বের হয়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে গেলো।মনে হচ্ছিলো আমাদের ঘরটা একটা আকাশ... আর জোনাকীরা তারার ফুল ফুটিয়েছে! কান্না থামিয়ে তুমি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে,"আপনি এতো পাগল কেনো!?" মিলি,আমি আসলেই পাগল. ..নইলে তোমাদের এভাবে রেখে যেতে পারতাম না। মিলি, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন প্রিয় কন্যা মাহিনের জন্মের দিনটা। তুমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলে। বাইরে আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি... আমি বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কষ্টে পুড়ে যাচ্ছি।অনেকক্ষণ পরে প্রিয় কন্যার আরাধ্য কান্নার শব্দ... আমার হাতের মুঠোয় প্রিয় কন্যার হাত!
এরপর আমাদের সংসারে এলো আরেকটি ছোট্ট পরী তুহিন.... মিলি, তুমি কি জানো...আমি যখন আমার প্রিয় কলিজার টুকরো দুই কন্যাকে এক সাথে দোলনায় দোল খেতে দেখি, আমার সমস্ত কষ্ট - সমস্ত যন্ত্রণা উবে যায়। তুমি কি কখনো খেয়াল করেছো, আমার কন্যাদের শরীরে আমার শরীরের সূক্ষ একটা ঘ্রাণ পাওয়া যায়?মিলি... আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার কন্যারা যদি কখনো জিজ্ঞেস করে,"বাবা কেনো আমাদের ফেলে চলে গেছে?" তুমি তাঁদের বলবে, "তোমাদের বাবা তোমাদের অন্য এক মা'র টানে চলে গেছে...যে মা'কে তোমরা কখনো দেখো নি। সে মা'র নাম 'বাংলাদেশ'।
মিলি...আমি দেশের ডাককে উপেক্ষা করতে পারি নি।আমি দেশের জন্যে যুদ্ধে ছুটে না গেলে আমার মানব জন্মের নামে সত্যিই কলঙ্ক হবে। আমি তোমাদের যেমন ভালোবাসি,তেমনিভালোবাসি আমাকে জন্ম দেওয়া দেশটাকে। যে দেশের প্রতিটা ধূলোকণা আমার চেনা। আমি জানি... সে দেশের নদীর স্রোত কেমন... একটি পুটি মাছের হৃৎপিন্ড কতটা লাল, ধানক্ষেতে বাতাস কিভাবে দোল খেয়ে যায়....! এই দেশটাকে হানাদারের গিলে খাবে,এটা আমি কি করে মেনে নিই? আমার মায়ের আচল শত্রুরা ছিড়ে নেবে... এটা আমি সহ্য করি কিভাবে মিলি?আমি আবার ফিরবো মিলি... আমাদের স্বাধীনদেশের পতাকা বুক
পকেটে নিয়ে ফিরবো। আমি, তুমি, মাহিন ও তুহিন... বিজয়ের দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়াবো সবাই। তোমাদের ছেড়ে যেতে বুকের বামপাশে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে... আমার মানিব্যাগে আমাদের পরিবারের ছবিটা উজ্জ্বল আছে... বেশি কষ্ট হলে খুলে দেখবো বারবার।
ভালো থেকো মিলি... ফের দেখা হবে। আমার দুই নয়ণের মণিকে অনেক অনেক আদর।
ইতি,
মতিউর।
২০ আগস্ট, রোজ শুক্রবার, ১৯৭১
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৪
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তাার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫৯
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক সুন্দর
৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার একটি চিঠি।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৩৬
একজন অশিক্ষিত মানুষ বলেছেন: পত্রটি বেশ বেদনা দায়ক। ধন্যবাদ । শুভ সকাল।