নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবাই ভালো থাকুন

এ আর ১৫

এ আর ১৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আচ্ছা ভাই মাথার হিজাব হারাম না হালাল ?

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০

আচ্ছা ভাই মেয়েরা মাথায় হিজাব পড়ে , এটা হালাল না হারাম ? তাজ্জব কথা তুই কি কাফের না মুরতাদ ? আরে না না চেতিয়েন না হঠাৎ আমার মাথায় এ চিন্তা আসিল , মাথার হিজাব পড়াটা যদি ধর্মীয় শর্ত হয় তাহা হইলে মাত্র ২০ বৎসর আগে এই পর্দার বিধান আমাদের দেশে আসিল কেন ? হাজার বৎসর আগে যখন এদেশের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিল , সেই দিন হতে প্রথমে মহিলাদের শরিয়ত মাফিক পর্দা করানো হইলো কিন্তু তাহারা বোরকা পড়িল, ঘোমটা মাথায় দিল, তাহা হইলে কেন মাথায় হিজাব পড়িল না ! ?

কোরান ঘাটিয়া দেখিলাম মাথার চুল ঢাকিয়া হিজাব পড়ার কোন নির্দেশ কোথাও নাই ,সুরা আল নূরে ৩১ তম আয়াতে খিমার দিয়া বক্ষ ঢাকিতে বলা হইয়াছে কিন্তু কোথাও এই মাথার চুল ঢাকিয়া হিজাব পড়ার নির্দেশ নাই । এটা যদি পর্দার বিধান হয় , তাহা হইলে মাত্র ২০ বৎসর আগে কেন এর আমদানি হইলো ?
আমি জানতে পারলাম বাইবেলে নাকি মাথার চুল ঢেকে হিজাব পড়ার আদেশ আছে এবং খৃষ্টান নান রা মাথায় হিজাব পড়ে এবং এক কালে বেশির ভাগ খৃস্টান মহিলারা মাথায় হিজাব পোরতো । অন্য ধর্মের আচার অনুসরন করা নাকি হারাম, এই কথা হুজুরা সব সময়ে বলিয়া থাকে তাই হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের মত মুসলমান মেয়েদের মাথায় সিদুর পড়া হারাম । এখন আমি বুঝিতে পারিতেছি না খৃষ্ঠানদের মাথার হিজাব মুসলমানদের জন্য হারাম নহে কেন ? হুজুররা তো সব সময়ে বলে থাকে অন্য ধর্মের আচার অনুসরন করা মুসলমানদের জন্য হারাম !!!
ব্লগের মমিন ভাইরা কি জানেন কিছু এই বিষয়ে ?

কোন মুসলমান মহিলা যদি মাথায় ঘোমটা বা কাপড় দিয়ে ঢাকতে চায় তাহোলে সেটা সে করতে পারে ( যদি ও কোরানে চুল ঢাকার কোন নির্দেশ নেই ) । সে ঘোমটা দিতে পারে শাড়ির আচল দিয়ে বা ওড়না দিয়ে , সে ভাবে গত ১০০০ বৎসর ধরে অনেক মুসলমান মহিলা ঘোমটা দিচ্ছে । এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে ভেইলিং মাথার হিজাব নিয়ে ( ২০ বৎসর আগে আমদানীকৃত ) । এই ভাবে ভেইলিং করার কোন উপদেশ আমরা গত হাজার বৎসরে দেখিনি, কারন এই ভাবে ভেইলিং করা খৃষ্ঠানদের রিচুয়াল । যদি খৃ্ষ্ঠানদের রিচুয়াল গ্রহন যোগ্য হয়, তাহোলে হিন্দুদের রিচুয়াল মাথায় সিদুর পড়া , কপালে তিলক আকাকে কেন গ্রহন যোগ্য হবে না ।

মন্তব্য ২৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ইহা একটা ফ্যাশন। সম্প্রতি চালু হইয়াছে।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

এ আর ১৫ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ? এটা যদি পর্দার বিধান হয়ে থাকে তাহোলে কেন এর চর্চা মাত্র ২০ বৎসর আগে শুরু হোল ?

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি দুঃখিত।
ফালতু পোষ্ট।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

এ আর ১৫ বলেছেন: আপনাকে আনন্দ দেওয়া জন্য আমি পোষ্ট লিখি না । ফালতু পেচাল না পেড়ে বলুন এই ধরনের একটা ধর্মীয় রীতি কেন ২০ বৎসর আগে শুরু হোল ? হিন্দুদের রিচুয়াল বিবাহিত মহিলাদের মাথায় সিদুর যদি মুসলমানদের জন্য হারাম হয়, তাহোলে খৃষ্ঠানদের রীতিটা কেন হালাল ?
মনে রাখবেন-- এখন শুধু খৃষ্ঠান নান রা মাথায় হিজাব পড়ে কিন্তু আগের জামানায় সাধারন খৃষ্ঠান মহিলারা মাথায় হিজাব পোরতো এবং পুরান আমলের আলেমরা মুসলমান মেয়েদের বোরকা, নিকাব পড়তে উপদেশ দিলেও খৃস্ঠানদের রিচুয়াল মাথায় হিজাব পড়তে উপদেশ দেয় নি কারন অন্য ধর্মের আচার অনুসরন করা হারাম, তাই । বর্তমান জামানায় শুধু খৃষ্ঠান নান রা মাথায় হিজাব পড়ে ।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

স্বপ্নীল ফিরোজ বলেছেন:

সুন্দর পোস্টে প্রথম ভালো লাগা।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫

এ আর ১৫ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য ।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০০

মীর সাজ্জাদ বলেছেন: ভাই খৃষ্টান ধর্মের লোকেরা মানুষকে দান করে, তাহলে মুসলমানদের দান করা হালাল হবে কেনো, বিষয়টা এরকম, এমন কোন কাজ যেটা কিনা সমাজ ও মানুষের জন্য কল্যানকর ইসলাম সেসকল কাজকে হালাল করেছেন। আর যেগুলো অকল্যান বয়ে আনে সেগুলোকে হারাম করেছেন। এমন সব রীতিনীতি যেগুলো অন্য ধর্মের লোকেরা অকারণেই তাদের ধর্মের নিদিষ্ট চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে, কেবলমাত্র সেসকল রীতিনীতি ইসলাম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১২

এ আর ১৫ বলেছেন: ভাই অন্য ধর্মের রিচুয়াল অনুসরন করা হারাম সে কারনে মুসলমান মেয়েদের মাথায় সিদুর দেওয়া হারাম । আমাদের আগের আমলের হুজুরা বোরকা নিকাব ঘোমটা দিতে বলেছে কিন্তু মাথার হিজাবের কথা কখনো বলেন নি কারন তখন সাধারন খৃষ্ঠান মহিলারা ও মাথায় হিজাব পোড়তো ( যেটা এখন শুধু নান রা পড়ে থাকে ) । এখন কার জামানার হুজুররা খৃষ্ঠান মহিলাদের হিজাব পড়তে দেখেনি এবং এটা যে বাইবেলে বলা হয়েছে সেটা তারা জানে না তাই তারা এটাকে হালাল মনে করছে । এই ভাবে মাথায় হিজাব পড়ার নির্দেশ কোরানে নেই ।
খৃষ্ঠানরা দান করে সেটা তাদের বাইবেলে বলা আছে এবং দান করার উপদেশ কোরানে ও বলা আছে তাই দান করা হালাল ।

৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০১

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আপনি বিরাট বুদ্ধিজীবী.....X(

এসব নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন, বাঙালীরা অনেক দিন নোবেল পায় না....:zp

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৫

এ আর ১৫ বলেছেন: দেখুন এটা ঠাটটার বিষয় নহে । শুধু বলুন -- এটা যদি পর্দার বিধান হয়ে থাকে তাহোলে কেন ২০ বৎসর আগে এর চর্চা শুরু হোল ?

৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৭

ঢাকার লোক বলেছেন: Click This Link

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৬

এ আর ১৫ বলেছেন: আপনি নিকাব বিষয়ক লিংক দিয়েছেন । আমার টপিকস শুধু মাথার হিজাব । নিকাব বিষয়ে ঐ ব্যাখা গ্রহন যোগ্য নহে বরং অপব্যাখা । মনে রাখবেন কোন কিছু ব্রাকেটের ভিতরে দেওয়া আছে , সেটা কোরানের আয়াতের অংশ নহে , ওটা অনুবাদকের ব্যক্তিগত মতামত । ধন্যবাদ

৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৬

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: কোরআনে শালীন পোষাক পরতে বলা হয়েছে। এখনকার বেশিরভাগ বোরকাওয়ালীরা ফ্যাশনের জন্যই শুধু বোরকা ব্যবহার করেন। হিজাবও তাই। নাক-মুখ চেপে বেধে রেখে টাইট বোরকা পরে পেছনে ভূমধ্যসাগরের ঢেউ তোলা নিশ্চই ইসলামিক রীতি নয়?

উদ্দ্যেশ্যর চেয়ে আজ উপলক্ষ বড়। পাশের বাড়ির লোক খেতে পায়না তা দেখার সময় নেই অথচ হাটে বাজারে ভিক্ষা করে মসজিদে টাইলস করতে হবে এমন হাদীস কোথা থেকে আসল?

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

এ আর ১৫ বলেছেন: ভাই আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে আমি একমত । দিন কাল পাল্টাচ্ছে তাই সব কিছু পাল্টাচ্ছে এবং পাল্টাচ্ছে মানুষের রুচিবোধ , মূল্যবোধ ।

৮| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৭

দিগন্তে হাসি বলেছেন: "কোরান ঘাটিয়া দেখিলাম মাথার চুল ঢাকিয়া হিজাব পড়ার কোন নির্দেশ কোথাও নাই ,সুরা আল নূরে ৩১ তম আয়াতে খিমার দিয়া বক্ষ ঢাকিতে বলা হইয়াছে কিন্তু কোথাও এই মাথার চুল ঢাকিয়া হিজাব পড়ার নির্দেশ নাই । " -------
সত্যিই কি আপনি কুরআন ঘাটিয়া দেখার চেষ্টা করেছেন !!! নাকি ইসলামের সংস্কৃতির ভুল ধরাই আপনার উদ্দেস্য ??? যদি সত্যিই কুরআন ঘাটতেন তাহলে এই আয়াতও পেতেন । দরকার হলে এ আয়াতের ব্যাখ্যাটাও দেখে নিতে পারতেন ।

হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাবের) প্রান্ত তাদের ওপর টেনে নেয়৷ এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেয়া যায় এবং কষ্ট না দেয়া হয়৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ (৩৩-৫৯)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩

এ আর ১৫ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য । সত্য কথা বলতে কি সূরা আহযাবের ৫৯ তম আয়াতে মাথার চুল ঢাকার হিজাব , যার আমদানি মাত্র ২০ বৎসর আগে আমাদের দেশে হয়েছে , তার কোন নির্দেশ নাই । এই আয়াতে জিলবারে প্রান্ত শরিরের দিকে টেনে নিবার নির্দেশ আছে । এই আয়াতে আরো বলা হয়েছে যাতে তাদেরকে চিনে নেয়া যায় --- এর অর্থ হোল তারা নিকাব পড়ে চেহারা আড়াল করতে পারবে না কারন নিকাব পোড়লে তাদের চেনা যাবে না । ধন্যবাদ

৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১২

দিগন্তে হাসি বলেছেন: সুরা আযহাবের ৫৯ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি শব্দ তাজালবাবা থেকে এসেছে। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরব’ –এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে।
জালাবিব হচ্ছে জিলাবাবের বহুবচন। জিলাবের মানে হচ্ছে মহিলাদের ঢিলা ঢালা বহিরাবরণ। যা খিমারের চেয়ে দীর্ঘ এবং ড্রেসিং গাউনের চেয়ে ছোট মহিলাদের পোশাক বিশেষ। দেখুন লিসানু ই আরব মাজমা উল বাহরাইন অথবা আল মুঞ্জিদ।
অতএব জিলবাব এবং খিমার যে এক নয়, সেটি যে মহিলাদের স্বাভাবিক পরিধেয় সেমিজও ইজারের উপরে অতিরিক্ত পরিধেয় যা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে সে পরিধেয়কে জিলবাব বলে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮

এ আর ১৫ বলেছেন: জিলবাব অর্থ চাদর বা বড় চাদর , তা দিয়ে নিজেকে আবৃত করা যায় । এই আয়াতে বলা হয়েছে নিজের দিকে মানে শরিরের দিকে জিলবাব টেনে নিতে । এখানে স্পেসিফিকাল্লালি মাথা ঢাকার কোন আদেশ নেই ।
আপনি বলেছেন --- [[[ যা খিমারের চেয়ে দীর্ঘ এবং ড্রেসিং গাউনের চেয়ে ছোট মহিলাদের পোশাক বিশেষ ]]]]

খিমার এর অর্থ কি ? জিলবাব টাও তো এক ধরনের খিমার ।
খিমার শব্দের সঠিক বাংলা অর্থ হতে পারে -- আচ্ছাদক ( যাহা আচ্ছাদন করে বা ঢেকে রাখে ) --- সেই হিসাবে পর্দা, টেবিল ক্লথ, বেড কাভার , ওড়না , ভেইল , জিলবাব (চাদর) , শাড়ী , ব্লাউজ , শার্ট , পেন্ট, পায়জামা, সেলোয়ার-কামিজ ইত্যাদি সব কিছুই খিমার বা আচ্ছাদক ।
যারা মাথার হিজাব পড়ার পক্ষে তারা তো কখনো সুরা আহযাবের ৫৯ তম আয়াতকে মাথার হিজাবের পক্ষের আয়াত হিসাবে ব্যবহার করে না , তারা ব্যবহার করে সুরা আল নূরের ৩১ তম আয়াতকে ---- যেখানে খিমার দিয়ে বুক ঢাকতে বলা হয়েছে , এই খিমার শব্দের অর্থ অনেক অনুবাদ করেছে মাথার ওড়না এবং মাথার ওড়না দিয়ে বুক ঢাকলে হয় মাথা ঢাকার হিজাব ( যেটার প্রচলন মাত্র ২০ বৎসর আগে আমাদের দেশে হয়েছে )
এখন খিমার শব্দের অর্থ শুধু মাত্র মাথার ওড়না নহে , অনেক কিছু । আপনি বলতে পারেন মাথার ওড়নাটা তো এক ধরনের খিমার তাহোলে মাথার ওড়না দিয়ে বুক ( মাথা ঢাকার হিজাব ) ঢাকলে অসুবিধা কোথায় ?
অসুবিধা অবশ্যই আছে , আমাদের পূর্ব কালের কোন স্কলার ও ইসলামী আলেম মাথা ঢাকার হিজাব পড়ার উপদেশ দেন নি , কারন ওটা খৃষ্ঠানদের রিচুয়াল এবং আগের আমলে সাধারন খৃষ্ঠান মহিলারা ও মাথা ঢাকার হিজাব পোড়তো । বর্তমান কালে শুধু খৃষ্ঠান নানরা এই ভেইল পরিধান করে ।
এটা যেহেতু অন্য ধর্মের রিচুয়াল তাই হাদিস অনুযায়ি এটা মুসলমানদের জন্য হারাম যেমন মাথায় সিদুর পড়া মুসলমান মহিলাদের জন্য হারাম । ধন্যবাদ

১০| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৮

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: আমার কাছে মনের পর্দাই আসল। তবে একজন মুসলিম হিসেবে আমি অবশ্যই মেয়দের বাহ্যিক পর্দাটিকে সাপোর্ট করব। এখন কার মেয়েরা পর্দা নয় বরং ফ্যাশনই বুঝে। এবংকি আমিও পর্দা করিনা। আফসোস হয় অনেক নিজের উপর।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৪

এ আর ১৫ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য । আপনি যেহেতু মহিলা তাই আপনার কাছে হয়ত অনেকে মাথার হিজাব পড়ার উপদেশ দিয়েছে ধর্মের নামে । এই বিষয়টি সম্পর্কে আসলে ধর্ম কি বলে সেটা বেশির ভাগ মানুষই জানে না । আবারো ধন্যবাদ আপনাকে ।

১১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫০

দিগন্তে হাসি বলেছেন: আজকের দুনিয়ায় হিযাব, পর্দা, বোরকা ব্যবহারের রীতি রেওয়াজকে ইসলামের প্রতিভূ বলে চিহ্নিত করা হলেও দুনিয়াতে এই প্রথা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাঃ আবিষ্কার করেননি এবং ইসলামও প্রথম নারীদের উপর তা চাপিয়ে দেয়নি। হাজার হাজার বছর পূর্ব থেকে যে এই প্রথা দুনিয়ার জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত বিভিন্ন দেশে, সমাজে প্রচলিত ছিলো। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো যেমন প্রাচীনতম মানব সভ্যতা ছিলো, তেমন করে মেসোপটেমিয়া নামে আরেকটি মানব সভ্যতা ছিলো, খৃষ্টপূর্ব ৫ হাজার অব্দ থেকে সূচনা হয়ে সে সভ্যতা খৃষ্টপূর্ব ৩ হাজার অব্দে পূর্ণতা লাভ করেছিলো। মেসোপটেমিয়া সভ্যতা বর্তমান উত্তর ইরাকের দজলা এবং ফোরাত নামক দুই বিষম উর্বরা নদীর মধ্য ভূখণ্ডে অবস্থিত ছিলো। এই সভ্যতা অ্যাসিরিয়া নামক জাতিদের সময়ে এসে তখনকার দুনিয়ায় জ্ঞানে বিজ্ঞানে চরম উন্নতি বিকাশ করেছিলো। সে সময়ে জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত আসিরিয়ানগণ যুদ্ধ বিগ্রহে লব্ধ পরাজিত পুরুষ মানুষকে দাস এবং নারীদের তারা দাসী বাদী রক্ষিতা করে রাখতো। দাস দাসীর এত পর্যাপ্ততা থাকায় অভিজাত নারীদের জন্য খাওয়া দাওয়া ঘুমানো আর আমোদ ফুর্তি করা ছাড়া কোন কর্ম করার দরকার ছিলোনা। এ সময় নারীদের অভিজাত শ্রেণী হিসাবে মর্যাদাবান রাখতে বাইরের চলাচলরত দাসী,বাদী,পতিতা,রক্ষিতাদের থেকে আলাদা করে রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। এই প্রয়োজনীয়তা থেকে তারা নারীদের বাইরে যাবার বিষয় আইন করে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলো।
এই সব অভিজাত শ্রেণীর নারীরা কালে ভদ্রে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পেলেও- বাইরের দাসী বাদী রক্ষিতা এবং গণিকাদের থেকে পার্থক্য প্রকাশ করতে, তাদের বিশেষ পোশাক পরে মাথা এবং মুখ ঢেকে বের হতে হতো। যদি কেউ কোন কারণে মাথা মুখ না ঢেকে বাইরে বের হয়ে পড়তো তখন তাঁকে আইন অমান্য করার অপরাধে শাস্তি দেয়া হতো। এই প্রথা শুধু অ্যাসিরীয়দের মধ্যে ছিলো তা নয়, এই প্রথা সুমেরীয়, ব্যাবেলিয় পরে পার্সিদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো।
৫৩৯ খৃষ্টপূর্ব অব্দে যখন প্রথম বারের মত পার্সি জাতি অ্যাসিরীয়দের রাজধানী মেসোপটেমিয়া দখল করে বিজয়ীর বেশে নগরে প্রবেশ করে, তখন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ বেশভূষা পরিহিত নারীদের মধ্যে ২/১ জন নারীকে বিশেষ পোশাক পরা এবং মাথা, মুখ ঢেকে চলাচল করতে দেখে। তখনই তারা জানতে পারে যে, অ্যাসিরীয়দের অভিজাত নারীরা ঘরের বাইরে আসেনা, কোন কারণে আসলে তারা যে অভিজাত পরিবারের নারী তা পথচারীদেরকে জ্ঞাত করতে তারা তাদের মাথা এবং মুখ ঢেকে রাখে। পার্সিরাও আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে তাদের নারীদের মধ্যেও এই প্রথাকে গ্রহণ করে।
কালক্রমে পার্সি সাম্রাজ্য বিস্তার এবং বর্ধিত আকার ধারণের সাথে সাথে নব বিজিত এলাকার অভিজাত শ্রেণীর লোকেরাও এই প্রথাকে গ্রহণ করে নেয়। পরবর্তীতে পার্সিদের হাত ধরে এই প্রথা ভূমধ্য সাগরের পূর্ব পাশের দেশ সমূহ সিরিয়া, লেবানন ও উত্তর আরবে ছড়িয়ে পড়েছিলো, কিন্তু বিস্তীর্ণ মরুময় দুর্গম বালিয়াড়ি টিলা-টক্করের জন্য জাজিরাতুল আরবের এই অংশ অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম থাকার কারণে এই এলাকার মানুষ তখনকার সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো, এই জনপদের মানুষেরা বিষণ বুনো স্বভাবের ছিলো। আংগুলে গোনা কয়েক বিত্তমান পরিবার ছাড়া আরবের সর্বত্র নারীর কোন সম্মান ছিলোনা, নারীকে পোষা জন্তু জানোয়ারদের মত হীন মনে করা হতো। কাজেই এই জনপদের অভিজাত নারীদের আলাদা করার জন্য এই পোষাক পরার প্রচলন এখানে প্রসার লাভ করতে পারেনি, যারা জাজিরাতুল আরব তথা মক্কা মদিনা এলাকা থেকে ব্যবসাবাণিজ্যের কারণে সিরিয়া বা লেবাননের মত অঞ্চলে আসা যাওয়া ছিলো, কেবল মাত্র সেই সব আরব সেখানকার অভিজাত মহিলাদেরকে এই ধরণের পোশাক পরতে দেখে থাকবে। রাসুল সাঃ মদিনায় আসার পর রাসুল সাঃএর নিজের পরিবার আপন সম্মানিত সাহাবিদের পরিবারের নারীদের প্রতি যখন হিযাব আর মুখ ঢাকার ব্যবস্থা করেছিলেন তখন প্রথম বারের মত মক্কা মদিনার মানুষ জন এই প্রথার সাথে পরিচিত হয়ে উঠে। পরবর্তিতে খলিফায়ে রাসিদুনের আমলে ইসলাম যখন পার্সি সাম্রাজ্যের অংশ বিশেষ দখল করে তখন থেকে আরবের এই এলাকার মানুষজন ব্যাপক ভাবে এই প্রথার সাথে পরিচিত লাভ করেছিলো।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

এ আর ১৫ বলেছেন: ভাই আপনি জিনিসটা সম্পুর্ণ গুলিয়ে ফেলেছেন এবং অপ্রাংগিক বিষয় দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছেন । আমি শুধু মাত্র মাথার হিজাব ( যেটা মাত্র ২০ বৎসর আগে আমদানি হয়েছে ) , সেটা নিয়া লিখেছি । হিজাব শব্দের অর্থ পর্দা , সেই কারনে হিজাব শব্দের আগে মাথা লাগিয়ে মাথার হিজাব বা ভেইলিং কে নিয়ে আলোচনা করেছি ।

কোন মুসলমান মহিলা যদি মাথায় ঘোমটা বা কাপড় দিয়ে ঢাকতে চায় তাহোলে সেটা সে করতে পারে ( যদি ও কোরানে চুল ঢাকার কোন নির্দেশ নেই ) । সে ঘোমটা দিতে পারে শাড়ির আচল দিয়ে বা ওড়না দিয়ে , সে ভাবে গত ১০০০ বৎসর ধরে অনেক মুসলমান মহিলা ঘোমটা দিচ্ছে । এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে ভেইলিং মাথার হিজাব নিয়ে ( ২০ বৎসর আগে আমদানীকৃত ) । এই ভাবে ভেইলিং করার কোন উপদেশ আমরা গত হাজার বৎসরে দেখিনি কারন এই ভাবে ভেইলিং করা খৃষ্ঠানদের রিচুয়াল । আপনি যদি খৃ্ষ্ঠানদের রিচুয়ালকে গ্রহন করতে চান তাহোলে হিন্দুদের রিচুয়াল মাথায় সিদুর পড়া , কপালে তিলক আকাকে কেন মানবেন না ? ধন্যবাদ

১২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

দিগন্তে হাসি বলেছেন: হিযাবের আভিধানিক অর্থ: দেখতে বাধা দেয়া,আড়াল সৃষ্টি করা। পর্দার দ্বারা তা করা যায়। তাই কোন কিছুকে আড়াল করাকে হিযাব বলা হয়। যা কিছু দুটো বস্তুর মধ্যে আড়াল তৈরি করে দেয়, তাই হিযাব। নৈতিক অর্থেও শব্দটি ব্যবহার করা হয় । যেমন, অবাধ্যতা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে হিযাব, তেমন আল্লাহর আনুগত্য বান্দাহ ও জাহান্নামের মধ্যে হিযাব।
হিযাব শব্দটি আলকোরানের যে আয়াতে দেখা যায়ঃ- আল কোরানের ৩৩ নং সুরার ৫৩ নং আয়াতে এই হিযাব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে- হে ঈমানদারগণ! নবী গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করো না, ——– নবীর স্ত্রীদের কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও ৷
উপরের আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ মুমিন পুরুষদেরকে নবী সাঃ এর অন্তঃপুরে তার স্ত্রীদের কাছে কিছু চাইতে গেলে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাই হিযাবের অর্থ শুধু নারীকে গৃহবন্দি করা এবং বিশেষ পোশাক পরতে বাধ্য করা নয় তার চেয়েও বেশী কিছু আছে।
ইসলামের হিযাব আর অ্যাসিরীয়দের অভিজাত নারীদের অন্তঃপুরবাসিনী করার মধ্যে আদর্শ এবং উদ্দেশ্যগত ব্যবধান আছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো নিছক রাজপরিবারের নারীদের আভিজাত্য প্রকাশ করা আর ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত সকল মুসলিম নারীকে বিশেষ আভিজাত্য মর্যাদা দান করা, সাথে সাথে নর-নারী আচার ব্যবহার এবং পোশাকে শালীনতা শোভনতা রক্ষা করা। মানব সমাজ থেকে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার এবং এর থেকে উদ্ভূত না না প্রকার সামাজিক এবং আইনি সমস্যা থেকে রক্ষা করা।
অতএব মরক্কোর নারীদের জিলাবা, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নারীদের আবাইয়া, ইরানী নারীদের চাদর এবং আফগান নারীদের বোরকার নাম হিযাব নয়। মূলতঃ পর পুরুষের চোখ থেকে নারীর শরীরকে পূর্ণ আড়াল করে রাখে, এমন পোশাক পরাকে হিযাব বলে।
যারা নিছক নিকাব আর বোরকাকে হিযাব বলে ভেবে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে – হিযাবের পোশাক সম্পর্কে ডঃ ইউসুফ আল কারযাভী বলেন- হিযাব নিজেই একটি উদ্দেশ্য নয়, বরং শরীরের শরীয়ত নিষিদ্ধ অংশগুলো শালীন ভাবে আবৃত করার উপায় মাত্র। এই অর্থে সময় ও স্থানভেদে এর ধরন (জিলাবা, শাড়ি, বোরকা, আবাইয়া/সেমিজের সাথে উড়নি,স্কার্ফ, রুমাল, চাদর) বিভিন্ন রকম হতে পারে।
তিনি আরো বলেন- কুরআনুল করীমে কখনো কখনো ওহী নাজিলের সমসাময়িক অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে উপায়ও পদ্ধতি বাতলে দেয়া (ঐ সময়ে আজকের মত সেলাই বিজ্ঞান এত উন্নত ছিলোনা, তদুপরি সে সময়ের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব করুণ ছিলো তখন দুবেলা পেট ভরে খাবার ক্ষমতা ছিলোনা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ ঘরে)হয়েছে। ঐ সময়ের চেয়ে উত্তম বা অনুরূপ অন্য কোন উপায় উদ্ভাবিত হলে ঐ পুরানো পদ্ধতি স্থায়ী ভাবে মানতে হবে এমন ধরা বাধা তাৎপর্য ঐ আয়াতে নিহিত নেই।
আল কোরানে দু’টি সুরাতে পর্যায়ক্রমে পর্দার বিধান নিয়ে আয়াত নাজিল হয়েছিল। সে সুরা দুটি হচ্ছে ৩৩ নং সুরা আযহাব এবং ২৪ নং সুরা নুর। আল-কোরানে সুরা নুরের অবস্থান ২৪ নং এবং সুরা আযহাবের অবস্থা ৩৩নং এ সঙ্কলিত করা আছে।
আমাদের উলামায়ে কেরামদের মধ্যে অনেকে যখন হিযাবের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন তখন তারা হিযাবের প্রথম নির্দেশ হিসাবে সুরা নুরের ৩০ নং আয়াত –
হে নবী মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জা স্থানসমূহের হেফাজত করে ৷ এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি ৷ যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন ৷- উল্লেখ করে থাকেন, যার ফলে হিযাব সংক্রান্ত সকল আয়াতের ধারাবাহিকতা উলট পালট হয়ে যায় এবং এর জন্য হিযাব বিধি বিধানের সার্বিক প্রায়োগিক মূল্যও উলটো হয়ে যায়।
আমরা যখন হিযাব সংক্রান্ত সকল আয়াতের নাজিলের ক্রমধারা অনুসারে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারবো কেবল মাত্র তখন ঐসকল আয়াতের ঐতিহাসিক পটভূমিকার দ্বারা হিযাব বলতে কি বুঝায় তা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে। তখন দেখা যাবে যে সুরা নুরের হিযাবের বিধি বিধানের আয়াত নাজিলের ২ বছর পূর্বে সুরা আযহাবে হিযাবের বিধিবিধানের আয়াত নাজিল হয়েছিলো। সুরা আযহাবের হিযাব সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়েছিলো হিজরি পঞ্চম বছরে, আর সুরা নুরে বর্ণিত হিযাব সংক্রান্ত আয়াত হিজরি সপ্তম বছরে নাজিল হয়েছিল। ৩৩:৫৩ আয়াত এসেছিলো খন্দকের যুদ্ধের ঠিক পরবর্তী সময়ে । আর ২৪:৩০ আয়াত আয়েশা রাঃ এর ইকাফের ঘটনার পর পর ।

১৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৫

দিগন্তে হাসি বলেছেন: পর্দার বিধান নাজিলের পটভূমি- মদিনার মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ সাঃ এর আলাদা কোন হুজরা ছিলোনা, তাই তিনি পালাক্রমে এক একদিন এক এক স্ত্রীর হুজরায় থাকতেন। জাজিরাতুল আরবে মদিনা রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠায়, মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীগণের হুজরা জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। ক্রমবর্ধমান হারে লোকজন তাদের ধর্মীয়,রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত সমস্যা ইত্যাদির জন্য মুহাম্মদ সাঃ এর কাছে আসতো। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাসুল সাঃ এর অধিকতর মনোযোগ লাভের জন্য তারা নবী পত্নীদের শরণাপন্ন হতেন। সে কারণে একদিকে নবীর পারিবারের ব্যক্তিগত জীবন যাপন দারুণ ভাবে বিঘ্নিত যেমন হচ্ছিলো, তেমন করে সব ধরনের মানুষের অবাধ প্রবেশের সুযোগে নবী-পত্নীদের পবিত্র চরিত্রের উপর মুনাফিকদের দ্বারা গুজব ছড়িয়ে দেবার সুযোগ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিলো। যা উম্মাহর মধ্যে বিভক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারতো।
এই ধরণের সমস্যা দেখে ঘনিষ্ঠ সাহাবীয়ে কেরামদের মধ্যে কেউ কেউ এই উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছিলেন। এইরূপ অবস্থা ঠেকানোর উদ্দেশ্যে স্বয়ং উমর রাঃ নবী পত্নী কন্যাদের প্রতি পর্দা করা প্রস্তাব মুহাম্মদ সাঃ এর কাছে উপস্থাপন করিয়েছিলেন।
হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসে তা আমরা জানতে পারি, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার কাছে ভালো-মন্দ লোক আসে, আপনি যদি উম্মুল মুমিনিনদের জন্য পর্দার নির্দেশ দিতেন। এরপরই আল্লাহ তা’আলা পর্দার আয়াত নাজিল করেন। হাদিস নং ১১৪৪ বুখারী শরীফ।
উমর রাঃ এর ভাষ্য পড়ে মনে করার অবকাশ নাই যে, উমর রাঃ কথা শুনে মুহাম্মদ সাঃ হুট করে করে নারীদের প্রতি পর্দার বিধান জারী করেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠা কালীন ইতিহাসে দেখা যায় যে যখন আল্লাহর দ্বীন প্রচারকারী নবী সাঃ এর জীবনে নতুন কোন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে বা হবার আশংকা হয়েছে তখনই আল্লাহ তা’আলা সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কখনো ওহী মারফত কখনও সাহাবীদের মারফতও নির্দেশনা দিতেন।
মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু করতে চাইলে সে বিষয়ে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ মাত্র তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে সম্পাদন করার ক্ষমতাবান হওয়া স্বত্বেও তিনি এই ভাবে কিছু করেনি, নিয়ম নীতি এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি তাঁর মখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। এক আল্লাহর উপাসনা যা দ্বীন ইসলাম, সে দ্বীনও একদিনে প্রতিষ্ঠা করেননি, আল কোরআনকেও এক মুহুর্ত্যে সকল নির্দেশনা লিপিবদ্ধ কিতাবের মতো মুহাম্মদ সাঃ হাতে ধরিয়ে দেননি, তেমন করে ইসলামের কোন হুকুম আহকাম মুসলিমদের উপর হঠাৎ করে একদিনে চাপিয়ে দেননি। ইসলামের অন্যান্য হুকুম আহকামের মত পর্দার হুকুমটি এক মুহুর্ত্যে নাজিল হয়ে যায়নি।
আল্লাহ যে কোন হুকুম প্রথমতঃ মুহাম্মদ সাঃ কে পালন করতে নির্দেশন দেন এরপর তাঁর ঘরের মানুষদেরকে সে নির্দেশের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ করেন এবং পরবর্তীতে সারা মুসলিম সমাজকে সে নির্দেশের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ করেন। সে নির্দেশ আবার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য ইসলামকে মানব বান্ধব জীবন ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে।

১৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৭

দিগন্তে হাসি বলেছেন: নিম্নে দুই সুরার পর্দা সংক্রান্ত আয়াত নাজিল ক্রমানুযায়ী তোলে ধরছি, আশাকরি পাঠক পর্দার বিধান কি ভাবে ধাপে ধাপে নাজিল হয়েছিলো এবং ইসলামী সমাজে কার্যকর হয়েছিল বুঝতে সক্ষম হবেন।

প্রথম ধাপে পর্দা ব্যবস্থায় প্রবেশের আগে পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে নবী সাঃ পত্নীগণকে জানিয়ে দেয়া হলো –
১। হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও ৷ যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাকো, তাহলে মিহি স্বরে কথা বলো না, যাতে গলদে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে, বরং পরিষ্কার সোজা ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলো ৷ ৩৩-৩২
২য় ধাপে নবী সাঃ এর পত্নীগণের প্রতি নির্দেশ দেয়া হলো তারা যেন ঘরের মধ্যে অবস্থান করেন, এবং কোন কারণে ঘরের বাইরে যেতে হলে জাহেলী যুগের মত সাজসজ্জা না করে বের হোন।
২। নিজেদের গৃহ মধ্যে অবস্থান করো এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বেড়িও না ৷ ৩৩-৩৩
৩য় ধাপে সাধারণ মুসলিমদেরকে চূড়ান্ত ভাবে নির্দেশ দেয়া হলো- তারা যাতে নবীর সাঃ পারিবারিক জীবন বিঘ্ন ঘটাতে বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ না করেন।
৩। হে ঈমানদারগণ ! নবী গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেনা না, ——– নবীর স্ত্রীদের কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও ৷ (৩৩-৫৩)
এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আমরা হযরত আনাস ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানতে পারি যে-
“নবী করিম সাঃ এবং জয়নাব বিনতে জাহাশের(বিবাহোত্তর) বাসর যাপনের পর কিছু গোস্তের ব্যবস্থা করে আমাকে পাঠানো হলো লোকদের দাওয়াত করার জন্য। একদল এসে খেয়ে চলে গেল, আবার অন্যদল এসে খেয়ে চলে গেল। পুনরায় ডেকে কাউকে পেলাম না। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাঃ) বললেন, তোমাদের খাবার উঠিয়ে রেখো। তখন তিন ব্যক্তি ঘরে বসে আলাপ- আলোচনা করছিলো। নবী সাঃ বের হয়ে আয়েশা রাঃ এর ঘরে গেলেন এবং বললেন, “আসসালামু আলাইকুম আহলাল বাইতি ওয়া রাহমাতুল্লাহি উত্তরের আয়েশা রাঃ বললেন, ওয়ালাইকুমুস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে বরকত দিন। আপনার (নব) বধূকে কেমন পেলেন? এমনি ভাবে পরপর সব স্ত্রীর(সওদা রাঃ আয়েশা রাঃ হাফসা রাঃ এবং উম্মে সালমা রাঃ) হুজরায় গেলেন এবং আয়েশা রাঃ যা বলেছিলেন, তাদেরকেও অনুরূপ বললেন এবং তারাও তাঁকে তাই বললেন,যা আয়েশা রাঃ বলেছিলেন। পুনরায় নবী সাঃ এসে সে তিন ব্যক্তিকে ঘরে কথাবার্তায় মশগুল দেখতে পেলেন। নবী সাঃ অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ছিলেন বিধায়( তাদেরকে উঠে যাবার কথা বলতে না পেরে) আবার তিনি আয়েশা রাঃ কক্ষে চলে গেলেন। অতঃপর আমি বা অন্য কেউ তাঁকে ওদের চলে যাবার সংবাদ দিলে তিনি ফিরে এলেন এবং দুয়ারে চৌকাঠে এক’পা এবং বাইরে একপা রাখা অবস্থায় আমারও তাঁর মাঝে পর্দা টেনে দিলেন। আর এ সময়ই পর্দার আয়াতটি নাজিল হলো”। হাদিস ১১৪৬ বুখারী শরীফ।

এন্টি ইসলামিস্ট গোষ্ঠী তারা পর্দার বিধান মুহাম্মদ সাঃ এর ব্যক্তি স্বার্থে বিঘ্ন ঘটার প্রেক্ষিতে হয়েছিলো বলে তারা শুধু মাত্র সুরা আযহাবের ৫৩ নং আয়াত এবং আনাস মালিক রাঃ বর্ণিত হাদিসটি উল্লেখ করে থাকে কিন্তু একই সুরার ৩২-৩৩ আয়াত উল্লেখ করেনা। উল্লেখ করেনা পর্দার বিধান নাজিলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কারণ ৩২-৩৩ আয়াত এবং প্রেক্ষাপট উল্লেখ করলেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে উপরে বর্ণিত একক একটি সমস্যার জন্য আল্লাহ তা’লা হুট করে এমন বিধান জারি করে দিলেন এমন নয় ।

১৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৯

দিগন্তে হাসি বলেছেন: ৩য় ধাপে ৩৩-৫৩ নং আয়াত নাজিলের মাধ্যমে হিযাব করা কার্যকর করেছিলেন যাতে নবী সাঃ পারিবারিক জীবন অসুবিধা মুক্ত হয় এবং ইসলামের শত্রুরা যেন সে সুযোগে মুহাম্মদ সাঃ এর পত্নীদের উপর অশোভন গুজব দ্বারা মুহাম্মদ সাঃকে অমর্যাদা করে পরিস্থিতিকে কাজে না লাগাতে পারে।
উপরের আয়াত গুলো দিয়ে নবী পত্নীদের পারিবারিক জীবনকে সুরক্ষিত করার পর প্রয়োজনে নবী পরিবারের নারী সদস্যদের বাইরে চলার পথ কি ভাবে সুরক্ষিত করা যাবে তাঁর পথ নির্দেশনা দিতে পরবর্তী ধাপের নির্দেশ এলো –

৪। হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের (জিলবাবের) প্রান্ত তাদের ওপর টেনে নেয়৷ এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেয়া যায় এবং কষ্ট না দেয়া হয়৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ (৩৩-৫৯)
‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিনদের (এখানে মু’মিন বলতে বিশেষ বিশেষ সাহাবীদের পরিবারের নারী সদস্যদের কথা বলা হয়েছে, কারণ তারা নবী সাঃ আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন।) নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের( পাঠক লক্ষ্য রাখবেন, এই আয়াতে জিলবাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আর সুরা নুরের ৩১ আয়াতে খিমারের কথা বলা হয়েছে, দুই আয়াতে দুই ধরণের পোশাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ) কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’

(এখানে নবী পরিবারের নারী সদস্যদের যাতে অন্যদের চেয়ে আলাদা করা যায় সে কথা বলা হয়েছে। এই ভাবে পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে মন্দ লোকেরা নবী পরিবারের নারীদেরকে আর উত্যক্ত করতে পারবেনা।)

১৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০১

দিগন্তে হাসি বলেছেন: তাহলে আসুন আমরা দেখি এই আয়াত নাজিলের পটভূমি কি ছিলো?
প্রাক ইসলামি যুগে মদিনার অধিবাসীদের প্রাকৃতিক ডাকে ভারমুক্ত করার জন্য আজকের মত বাসা বাড়িতে কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিলোনা। কাজেই তাদেরকে শহরের উপকণ্ঠে নির্জন জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে যেতে হতো। পুরুষগণ যখন প্রয়োজন তখন সে যায়গায় গিয়ে তা সারতে পারলেও নারীগণদের শুধুমাত্র রাত্রিকালে তাদের প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হতো।
মদিনার পতিতারাও (এই সব কাজে দাসী শ্রেণীর নারীরা নিয়োজিত থাকতো) রাত্রে তাদের খদ্দরের সন্ধানে নির্জন স্থানে ঘোরা ফেরা করতো। তখনও আরবের এই অংশের দাসী,বাদী, রক্ষিতা, যুদ্ধ-বন্দিনী, পতিতা এবং অভিজাত মহিলারা এক রকম পোশাক গায়ে চড়িয়ে বাইরে বের হতো, রাত্রির আধো অন্ধকারে কে দাসী কে বারবনিতা আর কে অভিজাত মহিলা তা শনাক্ত করা সম্ভব ছিলোনা, যার কারণে প্রাকৃতিক ডাকে বের হওয়া এই সব অভিজাত মহিলারা কোন না কোন সময় অবাঞ্ছিত অবস্থার মুখে পড়তেন।

মদিনার অন্যসব নারীদের মত নবীর পত্নীগন,কন্যাগণ রাত্রিকালে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যেতেন, মুনাফিকগণ যাতে নবীর পত্নীগণ, কন্যাগণের উপর কোন মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর সুযোগ না পায় সেই জন্য আল্লাহ তা’আলা সমস্যার সমাধান কল্পে উক্ত আয়াত নাজিল করে নির্দেশনা দান করেন।

১৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৬

দিগন্তে হাসি বলেছেন: ১। খুমুর বলতে কি বোঝাচ্ছে?
খুমুর হচ্ছে খিমারের বহুবচন, খিমার হচ্ছে সেই খণ্ড কাপড় যার দ্বারা আরবের নারীরা তাদের মাথাকে ধুলো বালি শীত তাপ থেকে রক্ষা করতে ঢেকে রাখতো। দেখুন আরবি অভিধান- লিসানু ই আরব, মাজমা উল বাহরাইন অথবা আল মুঞ্জিদ।
উপমহাদেশীয়রা উড়নি, দোপাট্টা বলতে বুঝতে পারে তা হচ্ছে নারীদের মাথা এবং বক্ষ ঢাকার জন্য বিশেষ কাপড়খণ্ড। সে ভাবে জুতা শব্দ শুনলেই সবাই বুঝে যায় সেটি কি এবং সেটি কোথায় ব্যবহার করে।
ঠিক সেই ভাবে আরবরা খিমার বলতেই নারীদের মাথা ঢাকার কাপড়খন্ডকে বুঝতে পারে। যা সাধারণতঃ ভৌগলিক ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী পরিধেয়ের সাথে মহিলারা ব্যবহার করে থাকে। উপরের আয়াত অনুযায়ী খিমার দিয়ে মাথার উপর থেকে বুকের নীচ পর্যন্ত ঢেকে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খিমারের ঝুলন্ত দু’ প্রান্ত দিয়ে যখন বুক ঢাকা হয় তখন সাথে সাথে চুল কান গলা ফেলা হয়। আর এই প্রথা এখন হিযাবের প্রতিভূ হিসাবে গণ্য হচ্ছে।

২। জালাবিব-
সুরা আযহাবের ৫৯ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি শব্দ তাজালবাবা থেকে এসেছে। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লিসানুল ‘আরব’ –এ লেখা হয়েছে, ‘জিলবাব’ ওই চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে। [১/২৭৩]
জালাবিব হচ্ছে জিলাবাবের বহুবচন। জিলাবের মানে হচ্ছে মহিলাদের ঢিলা ঢালা বহিরাবরণ। যা খিমারের চেয়ে দীর্ঘ এবং ড্রেসিং গাউনের চেয়ে ছোট মহিলাদের পোশাক বিশেষ। দেখুন লিসানু ই আরব মাজমা উল বাহরাইন অথবা আল মুঞ্জিদ। Ibid. al-Munjid, p. 96; at-Turayhi, Majma‘u ’l-Bahrayn, vol. 1, p.384.
অতএব জিলবাব এবং খিমার যে এক নয়, সেটি যে মহিলাদের স্বাভাবিক পরিধেয় সেমিজও ইজারের উপরে অতিরিক্ত পরিধেয় যা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে সে পরিধেয়কে জিলবাব বলে।

৩। জাইয়্যুব বলতে কি বোঝাচ্ছে?
জাইয়্যুব হচ্ছে জাইবের বহুবচন, বাংলায় অনেকে সার্টের পকেটকে জেব বলে থাকে। এই বাক্যের সরল অর্থ করলে দাঁড়ায় মহিলাদের পকেটকে ঢেকে রাখার নির্দেশ। কিন্তু মহিলাদের শরীরে তো পকেট থাকেনা, পকেট থাকে জামায়! তাহলে পকেট শব্দকে কেন উলামায়ে কেরামগণ মহিলাদের বক্ষের প্রতিশব্দ হিসাবে অনুবাদ করে থাকেন?
সেই রহস্য জানতে হলে আমাদেরকে রাসুল সাঃ এর জামানায় লোকেরা যে সব পোশাক পরত সে সব পোশাকের বিভিন্ন অংশের ব্যবহৃত নাম জানতে হবে। রাসুল সাঃ এর সময় লোকেরা যে সব জামা পরতো তাতে মাথা ঢুকানোর জন্য জামার ফ্রন্টপার্টসের নেক লাইনের ঠিক মধ্যে থেকে বুকের উপর পর্যন্ত চিরে রাখা হতো, যাকে এখন সেলাই বিজ্ঞানে সেন্টার ফ্রন্ট ওপেনিং বলা হয়। এখনো টিসার্ট বা পলো সার্টে এই ভাবে রাখা হয়, তবে এখন মানুষ বুতাম বা জিপার ব্যবহার করে ইচ্ছামত খোলা বা বন্ধ করে রাখতে পারে, সেই সময় সে প্রযুক্তি ছিলোনা বিধায় তা খোলা রাখতে হতো। তখন জামার সেই সেন্টার ফ্রন্ট ওপেনিংকে জেব বলা হতো। সেই সেন্টার ফ্রন্ট ওপেনিং বুকের মধ্য বরাবর থাকতো।

আল কোরানের বাক্য প্রয়োগের রীতি দেখলে বুঝা যায় যে আল কোরানে অশ্লীল ভাব প্রকাশ করে এমন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা পরিহার করে সে যায়গায় শ্লীল বা শোভন শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এখনো আমরা কেউ কোন মহিলাকে এই ভাবে বলিনা যে, এই তোমার স্তন ঢেকে রাখো। শোভন ভাষায় বলা হয় বুক ঢেকে রাখো। আল কোরানেও সেই ভাবে সরাসরি স্তন ঢেকে রাখার উল্লেখ না করে শোভন ভাষায় স্তনের প্রতিশব্দ হিসাবে জাইয়্যুব উল্লেখ করেছে। তখনকার মানুষ জাইয়্যুব বলতে বুকের নির্দিষ্ট স্থান বুঝতে পারতো।

৪। যিনা বা জিনাত বলতে কি বোঝাচ্ছে?
জিনাত বলতে নারীর নারী সুলভ বিশেষ সৌন্দর্যকে যেমন বলে তেমন করে নারীর নারী সুলভ সাজগোজ করার জন্য কানে, গলায়, হাতে, বাহুতে, আঙ্গুলে, পায়ে, কোমরে মাথায় (আরব নারীরা নাকে কোন অলংকার ব্যবহার করেনা তাই নাক এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছেনা) যে সব সোনা রূপার অলংকার ব্যবহার করা হতো এবং হাতে পায়ে মেহেন্দির আলপনা ও চোখে ব্যবহৃত সুরমাকে বলা হয়।
মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরজ তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোন দ্বি-মত না থাকলেও মহিলাদের মুখমণ্ডল এবং হাত ঢাকা থাকা ফরজ কিনা তা নিয়ে মত পার্থক্য দেখা যায়। কাজেই এই নিয়ে আলোচনা করার জন্য উপরে উল্লেখিত ৪টি শব্দকে বিবেচনায় রেখে আমাদের আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
যারা মুখমণ্ডল ও হাতের কিছু অংশ খোলা রাখার পক্ষে দাবী করে থাকেন, তার তাদের যুক্তি হিসাবে প্রথমে বলে থাকেন যে, যদি মুখমণ্ডল এবং হাতের কিছু অংশ আল্লাহ তা’লা ঢেকে রাখার নির্দেশ দিতেন তাহলে তা আল্লাহ তা’লা সুস্পষ্ট ভাবে মূখমণ্ডলকে ঢেকে রাখার নির্দেশ ঐ আয়াতে উল্লেখ করে দিতেন। কোন ফরজকে অস্পষ্ট ভাবে রাখা মহান আল্লাহ তা’লার ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
যারা মুখমণ্ডল এবং হাতকে ঢেকে রাখা ফরজ বলে দাবি করেন তারা খোলা রাখা পন্থীদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করেন যে, এই আয়াতে তো আল্লাহ তা’লা মাথা, চুল, কান গলা ঢেকে রাখার স্পষ্ট নির্দেশ দেননি তাহলে মুখমণ্ডল ও হাতের কিছু অংশ খোলের রাখার দাবী-কারীগণ মহিলাদের মাথা, চুল, কান গলা ঢেকে রাখাকে ফরজ বলেন কোন দলিলের ভিত্তিতে?
সুরা ২৪-এর ৩১ নং আয়াত পোশাক সংক্রান্ত নির্দেশ বুঝতে হলে আমাদেরকে চলে যেতে হবে ১৪শত বছর আগে আরবের নারীরা কি ধরনের পোশাক পরতো তা জানতে হবে।

১৮| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১০

দিগন্তে হাসি বলেছেন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে, পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ তাঁর নিজ নিজ অঞ্চলের আবহাওয়া গত বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে তাদের পরনের পোশাক বাস করার ঘর, খাবার ধরন নির্ধারণ করত।
আরবের মত রুক্ষ মরুভুমিময় এলাকার বসবাস কারী বেদুঈনদের মধ্যে স্বল্প কিছু সংখ্যক তাবুতে বাস করলেও বৃহত্তম সংখ্যক বেদুঈন খেজুর শাখা দিয়ে তৈরি ছাদওয়ালা এবং দরজা জানালা দেয়াল ছাড়া কুড়ে ঘরে বাস করতো। এই অবস্থায় তাদেরকে প্রকৃতির সকল বৈরিতাকে মোকাবেলা করে জীবন ধারণ করতে হতো, তারা গরম কালের সূর্যের প্রচণ্ড দাবদাহ এবং ভয়ংকর বালু ঝড় যেমন মোকাবেলা করতে হতো তেমন করে শীত কালে প্রচণ্ড শীত এবং মরার উপর খাঁড়া ঘায়ের মত প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতকেও মোকাবেলা করতে হতো। আর প্রকৃতির সকল বৈরিতা মোকাবেলা করতো তারা তাদের পরনের কাপড় দিয়ে। সেই জন্য আবহমান কাল থেকে আরব নারী পুরুষ উভয়ে মাথায় মোটা কাপড় পেঁচিয়ে রাখতো এবং মোটা কাপড়ের লম্বা জামা শরীরে পরে থাকতো। সেই থেকে আরবের নারী পুরুষের মাথায় কাপড় রাখা তাদের সংস্কৃতির অংশ ছিলো।

এখন যদি কেউ বলেন যে, মুখ ঢাকা এবং মাথার চুল ঢাকা যেখানে অত্যাবশ্যক সেখানে সে বিষয়ে কেন কোরানের আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট করা হলো না। তাহলে তো এই নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকতোনা। এখানে মুখ এবং মাথার চুল দুটি মানব দেহের ভিন্ন স্থানের অংশ বিশেষ, কাজেই দুটি স্থান নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করার প্রয়োজন।

প্রথমে মাথার চুল ঢাকা নিয়ে আলোচনা করছি- কোরানে যখন বুক ঢাকার আয়াত নাজিল হয়েছিলো তখন আলাদা করে মাথার চুল ঢাকার নির্দেশের দরকার ছিলোনা। এই মাথার চুল ঢাকার কাপড়কে তখন আরবরা খিমার বলতো আমরা যে ভাবে উড়নি বলি। উড়নি বললেই যেকোনো উপমহাদেশীয় মেয়েদের মাথার চুল এবং বুক ঢাকার কাপড় বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। ঠিক সে ভাবে খিমার বলার সাথে সাথে আরবের লোকেরা তা যে মেয়েদের মাথার চুল ঢাকার কাপড় তা বুঝে নিতো। তাই যখন খিমার দ্বারা বুক ঢাকতে নির্দেশ এলো তখন বুঝে নেয়া হলো যে খিমার দ্বারা মাথার চুল ঢেকে ঝুলে থাকা তাঁর অবশিষ্ট দুই প্রান্ত দিয়ে বুক ঢেকে রাখার কথা।
বিষয়টিকে আরো সহজ করে বুঝা জন্য একটি উদাহরণের সাহায্য চেষ্টা করছি। যিনি এই আয়াতের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারছেন না তিনি যদি এই উদাহরণ থেকে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন। মনে করুণ কোন যায়গায় নারীদের মাহফিল হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত সকল নারীদের মাথা উড়নি দিয়ে আবৃত করা, তখন যদি সে সব নারীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা যেন তাদের উড়নি দিয়ে তাদের বুককে আবৃত করে নেয়। তখন কি উড়নি দিয়ে মাথা আবৃত্তাদেরকে কি আবার বলা যেতে পারে যে তারা যেন মাথার উড়নি দিয়ে মাথা আবৃত করে? কারণ উপরে আমি উল্লেখ করেছি যে কাপড় দিয়ে মাথা বা মাথার চুল ঢেকে রাখা আরব নারী পুরুষদের অভ্যাস ছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.