নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবাই ভালো থাকুন

এ আর ১৫

এ আর ১৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই দেলোয়ার সেই দেলোয়ার নহে ( এই দেইল্লা সেই দেইল্লা নহে )

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬

যুদ্ধ অপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে জামাতীরা নিরাপরাধ বলে দাবি করছে এবং তারা এও দাবি করেছে -- তাকে নাকি প্রহসনমূলক বিচারে শাস্তি দেওয়া হয়েছে ।
এবার দেখা যাক প্রহসনমূলক মামলার ধরনটা কেমন হয় । যেহেতু মামলাটি মিথ্যা মামলা তাই মামলাকারিরা কতক গুলো পন্থা অবলম্বন করে । যেমন সাক্ষী রাখে ১ জন কি ২ জন এবং মামলা করে একটি । ঐ একজন বা দুজনকে ভালো ভাবে ট্রেন আপ করা হয় যাতে আদালতে বক্তব্যের সামজস্য থাকে এবং অপর পক্ষের উকিলের ক্রস জবানন্দিতে যেন ধরা খেতে না হয় । যেমন জর্জ মিয়ার কেস , ঐ একজনকে ধরে মগজ ধোলাই করে মামলা সাজানোর পায়তারা চলছিল । ঐ মামলার সাক্ষী একমাত্র জর্জ মিয়া ।
এবার আসা যাক দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে কয়টা মামলা ছিল ? ২২ টা এবং সাক্ষী কয়জন ছিল ৬০ এর কাছাকাছি । সাজানো মিথ্যা মামলা হলে কি এত গুলো মামলা হয় এবং এত গুলো সাক্ষী কি হয় এবং এত গুলো মানুষকে নিবিড় ট্রনিং দিয়েও কি জর্জ মিয়া বানানো যায় ?
তার মানি এই মামলা ছিল জেনুইন মামলা ।
১৯৭১ সালে যেই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে , তাকে ঐ এলাকার লোকজন দেইল্লা রাজাকার বলে ঢাকতো - তার পুরো নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন সিকদার ।
জামাতিরা দাবি করে এই বিচার নাকি প্রহসন মূলক বিচার কিন্তু জামাতি আইণজীবিরা তো মেনে নিয়েছে দেইল্লা রাজাকার অরফে দেলোয়ার হোসেন সিকদার ঐ ২২ টা অপরাধ করেছে । তাহোলে দেলোয়ার হোসেন সিকদারের বিরুদ্ধে ২২ টা মামলা কি করে মিথ্যা হয় , যখন জামাতীরা পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে দেলোয়ার সিকদার একজন যুদ্ধ অপরাধি ।
জামাতী আইণজীবিরা বার বার প্রমাণ করতে চেয়েছে এই দেলোয়ার সেই দেলোয়ার নহে । দেলোয়ার হোসেন সিকদার আর দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এক লোক নহে ।
ঐ এলাকার লোকজন তো জানে ১৯৭১ এর দেইল্লা রাজাকার অরফে দেলোয়ার হোসেন সিকদার হোল বর্তমানের নাম পাল্টানো দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ।
জামাতীরা এই দেলোয়ার সেই দেলোয়ার নহে --- এই দাবি কোন ভাবে প্রমাণ করতে পারে নি কারন এলাকার মানুষরের চাক্ষুস সাক্ষী ।
জামাতীরা একমত দেলোয়ার হোসেন সিকদার যুদ্ধ অপরাধ করেছে, তাহোলে নাম পাল্টিয়ে ফেললে কি তার অপরাধ বাতিল হয়ে যাবে এবং তার বিচার কি প্রহসন মূলক হয়ে যাবে ?

আমি এখানে প্রসিকিউসনের আইণজীবি ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজের বক্তব্য পেশ করছি --

এখন তাহলে মূল প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কি দণ্ড নিরূপিত হয়েছিল? অবশ্যই ফাঁসি এবং এই রায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সমতুল্য তিনজন বিজ্ঞ বিচারক প্রদান করেছেন। তাহলে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সেই ১০ জন প্রসিকিউটররা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার শুনানিতে সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অপরাধ প্রমাণ করতে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার প্রশ্ন আসছে কেন? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম তো তাদের সুনির্দিষ্ট দ্বায়িত্ব পালনে শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলে কেন তার ‘মৃত্যুদণ্ড’ টিকেনি সেটা অন্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এর বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই আপিল শুনানিতে অংশগ্রহণকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস আমার বা আমাদের চাইতে বেশি ভালোভাবে করতে পারবে। আমরা সব কিছুরই নির্মোহ বিশ্লেষণের আশা রাখি। কিন্তু কোনো কিছু না জেনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম বা একজন ব্যক্তি-প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা কি যুক্তি সংঙ্গত?

সবশেষে বলতে চাই, যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা নিয়ে চক্রান্ত বহু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উধাও, স্কাইপি কেলেঙ্কারি ইত্যাদি, ইত্যাদি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের অকারণ অযাচিত, নেতিবাচক প্রচারণা। আমাদের সবই মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে ঘরের ভেতরের শত্রুকেও দমণ করতে হয়েছে আমাদের। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্তকালে যখন মামলার জোগাড়কৃত সকল গোপনীয় দলিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে কর্পূরের মতো উধাও হয়ে যায় তখন আমরা নিজেরাও কি ভীত হইনি? সাঈদীর এক অতি কাছের আত্মীয় যখন তদন্ত সংস্থায় সাঈদীর মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় আর এই কাজটি করে, তখন আসলে প্রশ্নটা অনেক বড় এবং ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায় বৈকি। আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে। কিন্তু তারপরও কি সেই বিতর্কিত নিয়োগের দায়িত্ব আজ পর্যন্ত কেউ নিয়েছে? কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত কি আজ পর্যন্ত হয়েছে? আমরা ন্যায়ের পক্ষে গণ-আওয়াজ তুলতে ভালোবাসি, ছুতো পেলেই অন্যকে অভিযুক্ত করতে অসাধারণভাবে পারদর্শী হয়ে উঠি, কিন্তু প্রকৃত সমস্যা সমাধানে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এত দীর্ঘসূত্রিতা কেন করি? আমরা কি সত্যকে মোকাবিলা করতে ভয় পাই? নাকি মিথ্যার বেসাতিতে আত্মতৃপ্তির বিলাসিতায় নতুন ভোরের অলীক স্বপ্ন দেখি?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি এই বিষয়ে ইতিমধ্যে সেই পোষ্টে আলোচনা করেছেন এবং আলোচ্য ব্লগারের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করার ব্যবস্থা গ্রহন করাও হয়েছে। তাছাড়া ব্লগনীতিমালা অনুসারে এক পোষ্টের যুক্তিতর্ক নিয়ে নতুন পোষ্ট দেয়াটা ঠিক গ্রহনযোগ্য নয়, এতে প্রথম পাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়।

তাই, আশা করছি, এই পোষ্টের ব্যাপারে আপনি নিজে থেকেই ব্যবস্থা নিবেন। ধন্যবাদ।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯

এ আর ১৫ বলেছেন: আপনার কথা অনুযায়ি আমি ঐ ব্লগারের নাম বাধ দিয়ে -- জামাতীদের নাম দিয়েছি । জামাতীদের দাবির যুক্তিকে আমি খন্ডন করেছি । কোন ব্লগের লিখাকে কেন্দ্র করে এই ব্লগে পাল্টা শত শত লিখা হয়েছে । সনেট কবি, নতুন নকিব , আশাবাদি অধম, উদাসী স্বপ্ন সহ অন্য ব্লগারের আলোচনাকে কেন্দ্র করে অনেক লিখা লিখেছেন । এতে কি প্রথম পাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ?
একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক লিখা প্রতিদিন বের হচ্ছে । কে নবিকে খারাপ কথা বলেছে তা নিয়ে কিস্তির পর কিস্তি লিখা বের হচ্ছে ।
ধর্মহীন তা , নাস্তিকতা নিয়ে ভুরি ভুরি লিখা হয়েছে ।
এক পোষ্টের যুক্তি তর্ক নিয়ে যদি আরো লিখা হয়েছে কিনা সেটা যদি আপনি রেফারেন্স সহ দেখতে চান, তাহোলে আমি সেটা আমি দেখাতে পারি ।
আপনি বলেছেন --- তাই, আশা করছি, এই পোষ্টের ব্যাপারে আপনি নিজে থেকেই ব্যবস্থা নিবেন। ধন্যবাদ।---- সেই ব্যবস্থা আমি অলরেডি করেছি , ঐ ব্লগারের নাম বাদ দিয়ে জামাতী দাবি বলে উল্লেখ করেছি ।
ঐ পোস্টের ভিত্তি করেই এই লিখা পেশ করেছি কারন জামাতীদের মিথ্যা দাবিকে কিভাবে দাত ভাঙ্গা জবাব দিতে হয় সেটা সবার জানা দরকার এবং ঐ পোষ্টে আমি কি লিখছি সেটা সব পাঠকের কাছে যায় নি ।
আমার আগে ঐ পোস্টে যারা মন্তব্য করেছে তারা কোন চেলেন্জ ছুড়ে দেয় নি আমার মত করে এবং আমার মন্তব্যটি সব পাঠকের কাছে পৌছনোর আগে ঐ পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে । আপনি যদি ঐ পোস্ট ডিলিট না করতেন , তাহোলে আমাকে হয়তো এই পোস্টাটা লিখতে হোত না ।
দেলোয়ার হোসেনকে জামাতীরা ফেরেশতা মনে করে এবং নিরাপরাধ মনে করে --- সেই মনে করার দাত ভাঙ্গা জবাব আমি দিয়েছি ।
আপনি যদি মনে করেন এই পোষ্ট ডিলিট করবেন করে দিতে পারেন এবং আমাকে আনসেফ ব্লগার বানাবেন সেটা করতে পারে বা আমার আই ডি বাতিল করে দিতে পারেন । ধন্যবাদ

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২২

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: উক্ত ব্লগারের পূর্বের মন্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তার প্রতিবাদে তিনি গতকাল যে পোস্ট দিয়েছেন তাতেও তিনি বারবার তার আগের মন্তব্যের যথার্থতা প্রমান করার চেষ্টা করেছেন এবং পোষ্টে ও মন্তব্যের জবাবে উক্ত উক্তিটি বারবার করেছেন।
বিচার প্রক্রিয়ার সকল সুবিধা গ্রহণ করার পরেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত একজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে তিনি নির্দোষ প্রমান করার চেষ্টাই শুধু করেন নি, বিচারক ও বিচার প্রক্রিয়াকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
শ্রদ্ধেয় চাঁদগাজী ভাইয়ের সাথে আমিও একমত- তার মত একজন ধর্মান্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের অনুসারীর কাছ থেকে ব্লগ ও ব্লগারদের কিছুই পাওয়ার নেই।
কিন্তু তার এসব মিথ্যা অপপ্রচারের কারনে ব্লগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তাই তাকে স্থায়ী ভাবে ব্যান করা উচিৎ ও তার সকল পোস্ট ও মন্তব্য প্রতিমন্তব্য মুছে ফেলা উচিৎ।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২২

এ আর ১৫ বলেছেন: আপনার কথার সাথে আমি সম্পুর্ন এক মত। ধন্যবাদ

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: @হাসান জাকিরঃ হ্যাঁ, আমরা এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।

@লেখকঃ হ্যাঁ, অনেকেই পোষ্ট দিচ্ছে, আমরাও তা সরিয়ে দিচ্ছি। আমরা তো চাইলে আমাদের ইচ্ছেমত কিছু করতে পারি না। নীতিমালা অনুসারেই আমরা সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩

এ আর ১৫ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

কেত্তন বলেছেন: আপনার এই দাঁতভাঙ্গা জবাব যে কতটা হাস্যকর, তা মডুসহ এই ব্লগের সবাই জানে, কিন্তু এই জবাবের প্রতিউত্তর দিতে কেউ আসবেনা, কারণ তার কি পরিণতি হয়, সবাই জানে। আপনি যেসব পাঠকের কাছে সত্য পৌঁছাতে চান - তার চেয়ে বড় সত্য সবাই জানে - কিন্তু কেউ টুঁ শব্দ করবেনা। ব্যান হতে কেউ চায়না।

আপনি এখন ইচ্ছেমত ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দাঁত ভাঙ্গার বাহাদুরি করতে থাকুন। দালাল মডু আপনার সাথে আছে। চালিয়ে যান।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯

এ আর ১৫ বলেছেন: দেলোয়ার হোসেন সিকদার যে অপরাধি সেটাতো আপনারা মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু হাস্যকর দাবি করেছিলেন,,, এ দেলোয়ার সে দেলোয়ার নহে। এই দেলোয়ার যে সেই দেলোয়ার সেটা যে প্রমাণ হয়ে গেছে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭

এ আর ১৫ বলেছেন: এই কেত্তন সেই কে ত ন নহে সুতরাং কে ত নের অপকর্মের দায় কেত্তনের নহে কারন দেলোয়ার হোসেন সিকদারের অপরাধে দায় দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নহে

৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আসলাম। দেখলাম, পড়লাম। চলে গেলাম।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮

এ আর ১৫ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৩

এ আর ১৫ বলেছেন: সাঈদীর মামলা: নেপথ্য কথা

ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় উচ্চ আদালতে ফাঁসির আদেশ বহাল না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আশাহত হয়েছে এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বহুদিন ধরে যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করার কারণে আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি বৈকি। কিন্তু গণমাধ্যমে ও সামাজিক মাধ্যমে এই বিচারের ব্যর্থতার দায় যখন প্রসিকিউশনের ওপর আরোপ করা হয় তখন বিস্মিত না হয়ে পারি না। আরও বেশি স্তম্ভিত হই বেশ কয়েকটি সূত্রে যখন দেখি মানুষ অভিযোগ করছে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাতে ফাঁসি না হওয়ার অন্যতম কারণ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের ব্যর্থতা। আমার আজকের এই লেখার সূত্রপাত ঠিক এখানেই।

আমি তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদান করি ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে। সুতরাং এই তারিখের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো যুদ্ধাপরাধ মামলার শুনানির জন্য আমাকে দায়ী করা কি করে সম্ভব? আর যদি করতেই হয়, তবে তা প্রকৃত তথ্য-নির্ভর কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আসুন যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঠিক কবে শুরু হলো আর কবে শেষ হলো সেটা বিশ্লেষণ করে আসি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি অফিসিয়াল ওয়েব সাইট রয়েছে। অফিসিয়াল ওয়েব সাইটটির ঠিকানাটি হোল । এই ওয়েব পেজে গেলে দুটি ট্রাইব্যুনালে এই পর্যন্ত নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর তালিকা ও একই সঙ্গে ওইসব মামলার সম্পূর্ণ রায় খুঁজে পাওয়া যায়। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটির রায় খুঁজে পেতে গেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ক্লিক করে ‘Judgments & Orders’- এ যেতে হবে। এর তালিকার ২২নং মামলাটিতেই যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সম্পূর্ণ রায়টি খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, নতুন মামলা আসলে তালিকা নম্বরটি পরিবর্তন হয়। তবে খুঁজে পেতে সব চাইতে সহজ উপায় হলো যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রথম মামলা। সেই অনুযায়ী দেখলেই মামলার রায়টি পাওয়া যাবে।

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়টির প্রথম পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ করা আছে যে, ওই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোন্ কোন্ প্রসিকিউটরের সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়েছে। ওখানে মোট দশ জন প্রসিকিউটরের নাম রয়েছে। তুরিন আফরোজ নামটি কিন্তু সেখানে নেই। আর থাকবেই বা কেন? যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্ত ও শুনানি কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের ২০ জুলাই তারিখে (যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়, পৃষ্ঠা ২১, অনুচ্ছেদ ৩৩)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির শুনানি শেষ হয় ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখে। এর বহু পরে অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার শুনানি শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই মাস পরে আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদান করি। তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার শুনানির দায়ভার ঠিক কি করে আমার ওপর বর্তায়? আমি তো যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা চলাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তই হই নাই।

এটা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষিত হয় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে আমি কাজে যোগ দানের মাত্র ৮ দিন পরে। কিন্তু এই ৮ দিনের মধ্যে যখন নাকি মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় চূড়ান্ত করছিলেন তখন আমার মতো একজন ব্যক্তি-প্রসিকিউটর কি তাদের সঙ্গে তাদের চেম্বার-কক্ষে গিয়ে রায় নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার রাখি? নাকি আমাদের গোটা প্রসিকিউশন টিম সেটা করতে পারত? তাহলে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় বিপর্যয়ের কারণ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ কি করে হলো বোধগম্য হচ্ছে না।

এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অপরাধের দণ্ড ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন করা হয়েছে কিন্তু সেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নয়, বরং তা করা হয়েছে উচ্চ আদালতের আপিলে। এখন কথা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম যুদ্ধাপরাধী মামলার শুধুমাত্র ট্রায়াল পর্যায়টিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা কেউই আজ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধাপরাধী মামলার আপিল শুনানিতে অংশগ্রহণ করেননি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম আর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধী মামলার আপিল শুনানি পরিচালনা করেন বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। আজ পর্যন্ত এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে তিন বিচারক যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় দিয়েছেন তারা তিনজন-ই কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সমতুল্য বিচারক।

এখন তাহলে মূল প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কি দণ্ড নিরূপিত হয়েছিল? অবশ্যই ফাঁসি এবং এই রায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সমতুল্য তিনজন বিজ্ঞ বিচারক প্রদান করেছেন। তাহলে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সেই ১০ জন প্রসিকিউটররা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার শুনানিতে সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অপরাধ প্রমাণ করতে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার প্রশ্ন আসছে কেন? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম তো তাদের সুনির্দিষ্ট দ্বায়িত্ব পালনে শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলে কেন তার ‘মৃত্যুদণ্ড’ টিকেনি সেটা অন্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এর বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই আপিল শুনানিতে অংশগ্রহণকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস আমার বা আমাদের চাইতে বেশি ভালোভাবে করতে পারবে। আমরা সব কিছুরই নির্মোহ বিশ্লেষণের আশা রাখি। কিন্তু কোনো কিছু না জেনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম বা একজন ব্যক্তি-প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা কি যুক্তি সংঙ্গত?

সবশেষে বলতে চাই, যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা নিয়ে চক্রান্ত বহু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উধাও, স্কাইপি কেলেঙ্কারি ইত্যাদি, ইত্যাদি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের অকারণ অযাচিত, নেতিবাচক প্রচারণা। আমাদের সবই মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে ঘরের ভেতরের শত্রুকেও দমণ করতে হয়েছে আমাদের। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্তকালে যখন মামলার জোগাড়কৃত সকল গোপনীয় দলিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে কর্পূরের মতো উধাও হয়ে যায় তখন আমরা নিজেরাও কি ভীত হইনি? সাঈদীর এক অতি কাছের আত্মীয় যখন তদন্ত সংস্থায় সাঈদীর মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় আর এই কাজটি করে, তখন আসলে প্রশ্নটা অনেক বড় এবং ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায় বৈকি। আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে। কিন্তু তারপরও কি সেই বিতর্কিত নিয়োগের দায়িত্ব আজ পর্যন্ত কেউ নিয়েছে? কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত কি আজ পর্যন্ত হয়েছে? আমরা ন্যায়ের পক্ষে গণ-আওয়াজ তুলতে ভালোবাসি, ছুতো পেলেই অন্যকে অভিযুক্ত করতে অসাধারণভাবে পারদর্শী হয়ে উঠি, কিন্তু প্রকৃত সমস্যা সমাধানে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এত দীর্ঘসূত্রিতা কেন করি? আমরা কি সত্যকে মোকাবিলা করতে ভয় পাই? নাকি মিথ্যার বেসাতিতে আত্মতৃপ্তির বিলাসিতায় নতুন ভোরের অলীক স্বপ্ন দেখি?
– লেখক : আইনজীবী ও আইনের শিক্ষক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.