নিঝুম সন্ধ্যা -১

২২ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৮

সাইকেল চালাচ্ছি খুব ঝড়ের গতিতে । আকাশ আজ নিকোশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন । সন্ধ্যার পরপরই যেন পাল্টে গেলো সকল আবহাওয়া । শীতল বাতাসের পরশ নিতে প্রায় ২১ কিলো রাস্তা পেরিয়ে এসেছিলাম প্রিয় বন্ধু জাকিরের বাড়ীতে । কিন্তু সবশেষ করে দিলো কাল বৈশাখী ঝড়ের আগমনী বার্তা । সাইকেল চালাচ্ছি আর মনে মনে বিড় বিড় করে ভাবছি কিভাবে বাড়ী যাবো ???
কোন দিন বাড়ী নিয়ে এতো চিন্তা করিনি । কিন্তু আজ করতে হচ্ছে । আজি সকালে হাটঁ হতে এক জোড়া ঘিয়া চুল্লি কবুতর কিনেছি । অনেক সখের কবুতর । জাকিরের বাড়ী হতে আমার বাড়ীর দিকে প্রায় ৪/৫ কিলো এগিয়েছি মাত্র । ঠিক এমন সময় ঝুপ করে আকাশ হতে নেমে এলো তুমুল বর্ষণ । তার উপর দিয়ে আমি আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সাইকেল বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে চালাচ্ছি ।
কিছুই তে বৃষ্টির সাথে পেরে উঠতে না পেরে ঠিক করলাম যা হওয়ার হবে আস্তে আস্তে সাইকেল চালিয়ে বাড়ী যাবো । একই সাথে আম্মুর হাতে বকা খাওয়ার মানসিক প্রস্তুতী নিতে লাগলাম ।
যতদূর এগিয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ততই যেনো বাড়ী হতে পিছিয়ে যাচ্ছি । চারপাশে তুমুল বৃষ্টি চলছে তবু যেনো মনে হচ্ছে চারপাশ আজ খুবই নিরব । জোনাকী পোকার আলো দেখা যাচ্ছে না, শোনা যাচ্ছে না সন্ধ্যায় বাড়ী ফেরা পাখিদের কোলাহল । কিছুটা অবাক হচ্ছি আজকের পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে । কেমন জানি খুবই অচেনা লাগছে আজকের “পানতুমাই”র আকা বাকাঁ পথ । যে পথ ধরে এতোদিন চলা ফেরা করেছি আজ তা যেন বৃষ্টির সাহচার্য পেয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে ।

বৃষ্টির টুপুর টাপুর আওয়াজের সাথে আমার সাইকেল চলছে তাল মিলিয়ে । একা পথে কত কথা যে আমার মাথায় উপড়ে পড়ছে তার কোন হিসেব নাই । যখন একা থাকি কিংবা রাস্তায় একা চলি তখন আমার মনে হাজারো স্বপ্ন দোল খেয়ে যায় । যার কোন বাস্তবতা নাই সেই রকম স্বপ্ন মনে আমি বেশী দেখি বা কল্পনা করি ।

বাড়ী এখনো ৭/৮ কিলো পথ বাকি । হঠাৎ খেয়াল করলাম শিমুল গাছের নিচে একটি যুবতী মেয়ে সাদা কামিজ পড়ে ছাতা হাতে দাড়িয়ে আছে । দু হাত দিয়ে শক্ত করে সাইকেলের ব্রেক কষে ধরলাম । খেয়াল করলাম মেয়েটি এক নাগাড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । কোন নড়াচড়া বা কথা নেই ।

বুকটা যেনো ধড়ফড় করে উঠল । ভূত বা পেতœী হলে সর্বনাশ । বারবার বাড়ীর কথা মনে হচ্ছিল । যতো রকম সূরা-দোয়া জানা ছিল সব পড়ে বুকে ফু দিচ্ছিলাম । পিছে ও তাকাচ্ছি না শুধুমাত্র চিন্তা করছি এই রকম ঝড়ের রাত্রে মেয়েটি এখানে দাড়িয়ে কি করছে ??
আতঙ্কের বিষয় এই রকম শান্ত পরিবেশে সাদা কামিজ পড়ে একটি যুবতী মেয়ের দাড়িয়ে থাকার কথা নয় । এই কথা ভাবার সাথে বুকের হার্টবিট অতিদ্রুত উঠানামা করছে । এক এক করে ঘড়ির কাটা প্রতিটি সেকেন্ড পেরিয়ে কালের গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে । আমি জায়গায় স্থির অবস্থায় দাড়িয়ে আছি । কি করব বুঝতে পারছিনা । আবারও ২১ কিলো পেরিয়ে জাকিরের বাসায় উঠব না কি সাহস করে সামনের দিকে চলবো ??

অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম আমি যদি পিছনে ফিরে যাই আর মেয়েটি যদি অশরীরি আত্মা হয় আমাকে ধরা তার পক্ষে ব্যাপার না । সুতরাং আমাকে সাহস কে সঙ্গী করে সামনে এগিয়ে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ । তাছাড়া কোথায় যেন শুনেছিলাম ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষে থাকে । সুতরাং যা হওয়ার হবে, আমি পিছনে ব্যাক করবনা........................................

২ টি +১/-০