![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টিক টিক করে বাজছে ঘন্টাটি।
এক বার..দুই বার.....তিনবার......ঠিক
পচিশবার বেজে শব্দটি থেমে গেল।
শব্দের ক্রমাগততায় ঘুম ভেঙে গেছে অরুপ হাসানের।
একি টেবিল ঘড়িটিতে এ্যার্লাম বেজে চলেছে এখনও।
সময় ঠিক রাত তিনটা।
হ্যাঁ,উঠার সময় হয়ে গেছে অরুপ হাসানের।
প্রতিদিন উঠে এ সময়।
সারাদিনের তথা জীবনের পাপগুলি মোচনের জন্য প্রভুর
দরবারে হাজিরা দেওয়ার এইতো সর্বোত্তম সময়।
অরুপ সেটা মিস করে না।
কাকুতি মিনতি করে জীবনের চাওয়া গুলো পেশ করে মহামনিবের
দরবারে গভীর রাতের আধারে।
এখন পর্যন্ত মন দিয়ে চেয়েছে কিন্তু মহান প্রভু সাড়া দেননি
এমনটি হয়নি অরুপের কখনও।
তাই মন খুলে সব কথা বলে ,চাই অপূর্নতার পূর্নতা মহান প্রভুর কাছে।
ওয়াসরুমে চলে যায়...অরুপ।
ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হযে আসে।
জানালা খোলা থাকায় বাইরের আসা বাতাসে দেয়ালের ক্যালেন্ডারের পাতাটা
শব্দ করে উড়ে ।অরুপ এগিয়ে গিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ বুলায়।
আজ ২৭ শে সেপ্টে্ম্বর।
মাথায় একটা বিদ্যুত খেলে যায়।
কোন একটা তথ্য খুজে পেতে চাই সে।
হ্যাঁ,আজ তার জন্মদিন।
এদিনেই কোন এক শুভক্ষণে আজ থেকে পচিশ বছর আগে পৃথিবীর আলো
দেখেছিল সে।
তাহাজ্জুদ নামায শেষে মহান প্রভুর দরবারে আজ একটু ভিন্ন ভাবেই ফরিয়াদ জানাই সে।
কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠে তার মহান প্রভুর প্রতি।
যে প্রভু অতি মেহেরবানী করে তার জীবন কানাই কানাই ভরিয়ে দিয়েছেন পূর্ণতা দিয়ে।
ফজরের আযান হতে বেডরুমে নিজের সহধর্মিনীকে উঠাতে যায়।
একি আজ আগে থেকেই উঠে আছে।
একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অরুপ......কি হয়েছে?
কোন সমস্যা?আগেই উঠে গেছো যে?
-না কোন সমস্যা নেই।আমি কি আগে উঠতে পারি না?
ওযু করে নামাযের প্রস্তুতি নেই দুজনে।
নামায শেষে প্রতিদিনের মত আজোও আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে তারা।
সকাল সকাল গোসল সেরে স্টাডি রুমে স্টাডি করতে বসে অরুপ।
অন্যদিকে নুসরাত সকাল সকাল পরিবারের সকল কাজ করে নিতে থাকে।
আজ খুব মন দিয়ে হৃদয়ের সবটুকু মমতা আর ভালবাসা দিয়ে প্রিয় মানুষটির
জন্য সকালের নাস্তা করছে সে।
কাজের বুয়াকে ছুটি দিয়েছে সে ইচ্ছে করেই।
কেননা আজ তার কাছে দিনটি খুব উৎসাহের।ভাললাগা আর ভালবাসার।
কেননা আজ প্রিয়তমের জন্মদিন।
এ দিনে তাকে একটু অন্যরকম ভাবে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করার নানান প্রয়াস।
টেবিলে সকালেই অরুপের পছন্দের খাবারগুলো দিয়ে সাজিয়েছে নুসরাত।
অরুপের বসার চেয়ারের সামনে একগুচ্ছ গোলাপ (২৫টি) রাখা।
পাশে একটি জন্মদিনের কার্ডে নুসরাতের নিজের ডিজাইনে লেখা ,,,,,,,,,,,
“শুভ জন্মদিন”
তোমার দীর্ঘজীবন কামনা করছি ।সেই সাথে সারাটি জীবন যেন তোমার সাথে থাকতে পারি
সেই দোয়া করি খোদার কাছে।”
-ইতি তোমার লক্ষী সোনা
নুসরাত হাসান।
খাবার দিয়েছি খেয়ে নাও।
অরুপ আসে খাবার টেবিলের সামনে।
দেখে তার মুখোমুখি নুসরাত বসা।
টেবিলে বসতে বসতে বলে এত খাবার কে বানালো?
কিসের জন্য এত খাবার আজকে?
-নুসরাত একটু আহ্লাদি ভঙ্গিতে বলে,অনেক খাবার তাই না?
-তোমাকেই খেতে হবে।
টেবিলে রাখা গোলাপ দেখে বলে কিসের জন্য সোনা?
পাশের কার্ডটি খুলে দেখতে বলে..নুসরাত।
দেখে প্রানখোলা হাসি হাসে অরুপ।
আরেকবার অপলক তার প্রিয়তমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
আবারো নতুন করে ভালবাসায় মন ভরে উঠে।
কি হলো........।?
খাবা নাকি খাবা না?
সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু..............
খাবার শেষ করে উঠার সময় প্রিয়তমার জন্য খোদার কাছে মন খুলে দোয়া করে।
অফিসের ব্যাগ কাধে নিতে গিয়ে দেখে ব্যাগের পাশে একটা চিঠি নীল খামে পুরা রয়েছে।
খাম খুলতেই দেখে
নুসরাত আবারো...........।জন্মদিনের শুভেচ্ছা লিখে রাখছে।
মুচকি একটু হেসে পেছন ঘুরে দেখতেই দেখে...............
লাজুক লতার মুখটি তার ভালবাসার স্বীকৃতি পেতে অবনত হয়ে দাড়িয়ে আছে।
মুখটি তুলে ধরে কপালে একটি চুমো দেয়............অরুপ।
বুকে জড়িয়ে নেই নুসরাতকে।
চিরদিন তোমাকে ভালবাসতে চাই এভাবে।
অফিসের সময় হয়ে এলো।এবার তাহলে যায়।
তাড়াতাড়ি ফিরে এসো................
আল্লাহ হাফেজ।
আজ মনটা অনেক ভালো নুসরাতের।
বিয়ের পর নিজের ভালোবাসার মানুষটার প্রথম জন্মদিন এটাই।
তাই তার জন্য স্মরনীয় কিছু কিনতে ইচ্ছে করছে তার।
কিছু একটা উপহার তো দেওয়া চাই চাই ই তার।
একটু বিশেষ কিছু।
বিকেল তিনটা।
অফিসে গা এলিয়ে বসে আছে অরুপ।
মোবাইল স্ক্রিনে চোখ মেলতেই দেখে..
“auspicious someone" নাম্বার থেকে রিং হচ্ছে।
ফোন রিসিভ করেই দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে অরুপ বলে,
this is aurup hasan speaking.how can i help u mam?
ওপার থেকে নুসরাত বলে শোন,
আমি একটু নিউমার্কেট যাবো।
অনুমতি চাই।
এমনিতে খুব একটা বাইরে যাইনা নুসরাত অরুপকে ছাড়া।
আজ কি কাজে যেতে চাইছে জানে না অরুপ......।তবুও অনুমতি দিলাম যাও।
সাবধানে যেও।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো কিন্তু।
তুমি ও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো...........আল্লাহ হাফেজ।
গাড়ি থেকে নিউমার্কেটে নামতেই একটা জটলা চোখে পড়ে নুসরাতের।
এগিয়ে যান কি হয়েছে জানার জন্য।
দেখে একটি নয় বছর বয়সি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।
মাথা ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে।
অনেক মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখছে..........।কিন্তু কেউ তুলে হাসপাতালে নিয়ে
যাচ্ছে না।
মুর্হুতেই ভাবেন সমাজ টা কতটা পাল্টে গেছে।
মানুষগুলো মনুষ্যত্ব হারিয়ে কি নির্দয় না হয়ে গেছে।
সামনে এগুতে পারছেন না।নুসরাত।
অসহায় মানবতার সামনে নিজের ইচ্ছেপূরণ কখনোই কাম্য নয় তার।
নিজেই সাহস করে এগিয়ে যান।
ছেলেটিকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন।
ছেলেটি এখন কিছুটা সুস্থ ।
হাসপাতালের রিসেপশনে বসে আছেন।
এখন চারটা বাজে।অফিস থেকে বের হয়েই নুসরাত কে ফোন দিতে যান অরুপ।
তার আগে নুসরাতের ফোন পাই অরুপ।
সালামের উত্তর দিয়েই নুসরাত বলে
একটু .............।হাসপাতালে আসতে পারবা?
জরুরী দরকার।
শঙ্কায় মনটা ছেয়ে যায় অরুপের।
না জানি কোন দুর্ঘটনা হলো নাকি?
ছুটতে থাকে হাসপাতাল অভিমুখে।
হাপাতে হাপাতে এসে নুসরাত কে দেখে বলে
এখানে কেন ডাকলে ?কি হয়েছে?
কিছু হয়নি।তুমি আগে স্বাভাবিক হও্।
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ গিফট আছে।
ভেতরে চলো দেখবে....
৪০৭ নম্বর কেবিন অভিমুখে হাটতে থাকে তারা।
আচ্ছা হাসপাতালে ডেকে কি গিফট ।বুঝছি নাতো।
৪০৭ নম্বর কেবিন।
একটা নয় বছর বয়সী বাচ্চার পাশে দাড়ায় তারা।
মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা।
ঘুমুচ্ছে ছেলেটি।
নুসরাত অরুপকে সব ঘটনা খুলে বলে।
ব্যথিত হৃদয় নাকি আনন্দের অাতিশয্যে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে অরুপের।
ফিরে তাকায় বাচ্ছাটির দিকে।
অরুপকে দেখে নির্মল মনে একটা ভরসার হাসি হাসতে থাকে ছেলেটি।
সত্যিই তো!
এতিম একটা ছেলেকে এতটা আদর দিয়ে যারা চিকিৎসার দ্বোর পর্যন্ত এনেছেন
তাদেরকেই তো ভরসা করা যেতে পারে।
চিকিৎসা শেষে তারা তিনজন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাটতে থাকে।
অরুপ এখন নুসরাতকে এমন একটা মানবিক ও জান্নাতী উপহার দেওয়ায়
জন্মদিনটা স্মরনীয় করতে যাচ্ছে একটা অভিজাত রেস্টুরেন্টের দিকে।
আজকে পেটভরে খাবে তারা তিনজন।মন যা চাই.................।
অরুপ ভাবতে থাকে এই বালকটির চওড়া মুখের হাসিটিই আজ তার জন্মদিনের বড়
পাওয়া।
প্রশান্তিতে ভরে উঠে মন।
©somewhere in net ltd.