নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বসে আছি অন্ধকারে, \nআমাকে বুঝতে দাও \nমানুষ কেন আলোর \nপ্রত্যাশা করে!

আসোয়াদ লোদি

জীবন ও যন্ত্রণার মরুচরে আমি প্রপাতের ধারা ।

আসোয়াদ লোদি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবরুদ্ধ আকাশ ।। পর্ব- ১২

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৬


পর্ব ১১ লিঙ্ক- Click This Link
পর্ব ১১ এর পর

জিনাত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। রাগে তার শরীর কাঁপতেছিল। আকমল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আসলে আমাদের নেপাল যাওয়াটাই উচিৎ হয়নি। সোসাইটিতে আমি মুখ দেখাব কেমনে। সবাই ছিঃ ছিঃ করবে। রশিদ চৌধুরীর ছেলে ফয়সাল ব্যারিস্টারি পাস করেছে। ওর সাথে তোর বিয়ে দেব বলে আমি তাদের জানিয়ে রেখেছি। আর তুই কিনা একটা বাউন্ডুলে ছেলেকে বিয়ে করলি !

মণিকা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। ব্যারিস্টার কেন মা, তুমি যদি বৃটেনের রাজকুমারকে নিয়ে এসে বল একে বিয়ে কর, মণিকা তো বিয়ে করবে না। আমার আফসোস হয় কী জান মা, তুমি মা হয়ে মেয়েকে চিনতে পারলে না ।
আকমল চৌধুরী বললেন, জিনাত সজল তো ছেলে হিসেবে খারাপ না। ওরা যদি প্রস্তাব নিয়ে আসত আমরা বিষয়টা ভেবে দেখতাম। কী বল ?
জিনাত অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।
বাবা ওরা প্রস্তাব নিয়ে আসতে চেয়েছিল। আমি না করে দিয়েছি। মাকে আমি বিশ্বাস করতে পরি নি। মা হয়ত তাদের অপমান করে তাড়িয়ে দেবে, এরকম ভয় আমার ছিল। তাদের কাছে আমি লজ্জিত হতে চাইনি।
গোল্লায় যাও বলে জিনাত গজ গজ করতে করতে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। আকমল বললেন, তোর সব কথাই তো শুনলাম। কিন্তু সুজানগরের মত অজপাড়াগাঁয়ে নিজেকে এডজাস্ট করে নিতে পারবি ?
আমি পারব বাবা। তোমার দোয়া এবং সহযোগিতা আমার দরকার। এটি আমার স্বপ্ন এবং চ্যালেঞ্জ। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, It`s good to desire because ambition is a fuel. But never desire before deserving . এখন আমি শুধু সজলের ডিসারভিং নিয়ে ভাবছি ।

আমি সবসময় তোর পাশে আছি। ভয়ের কোন কারণ নেই। গো এহেড।
তুই কী এখন যেতে চাস ?
হাঁ বাবা।
আচ্ছা আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। আমি তোকে দিয়ে আসব।

আকমল চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে সজলের শান্তি নগরের বাসায় পৌঁছতেই বিলকিস অবাক হয়ে বললেন-আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো !
আকমল হেসে উঠলেন। সজল স্বপ্ন দেখে, মণিকা স্বপ্ন দেখছে, এখন দেখছি মণিকার শ্বাশুড়িও স্বপ্ন দেখছে। নিশ্চয় আপনাদের ঘরটা ড্রিম হাউস।
বিলকিস মুখে আঁচল চাপা দিলেন যাতে তার হাসি নিয়ন্ত্রনে থাকে।

বাবা তুমি বস, আমি চা করে আনছি। মণিকা রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

ইয়াহিয়া পত্রিকা হাতে বারান্দা থেকে ছুটে এলেন। বললেন, বাঃ! আমার কী সৌভাগ্য! সকাল সকাল হাতি দর্শন।
হাঁ খান সাহেব, একটু আগে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে এসেছি।
বিলকিস মুখ থেকে আঁচল সরালেন। বেয়াই সাহেবের মধ্যে দেখি রসবোধও আছে।
আকমল হাসতে হাসতে বললেন, তা তো আমার উনি বুঝেন না। সব সময় সিরিয়াস মুডে থাকেন। মাঝে মাঝে আমি হাসতে এখানে চলে আসব। কী বলেন খান সাহেব ?
ইয়াহিয়া গলায় জোর এনে বললেন, অবশ্যই আসবেন। এখানে হাসতে মানা নেই বিলকিস তো শুধু শুধু হাসে।
মণিকা ট্রেতে করে চা ও মিষ্টি নিয়ে এলো। বিলকিস বললেন, বেয়াই সাহেব মিষ্টি খান। আকমল আস্ত মিষ্টি মুখে দিয়ে বললেন, সজলকে দেখছিনা যে ?

বিলকিস চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। সকালে বেরিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ যাবে বলেছে। সেখানে নাকি আজ শ্রমিক সমাবেশ।
আকমল চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রাখলেন। বিলকিসের দিকে তাকেলেন। বেয়াইন সাহেবা, মণিকাকে দিয়ে গেলাম। আশা করছি ও সুখি হবে ।

মণিকা আমার ঘরের আলো। ওকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। কথা বলার সময় বিলকিসের চোখ খুশিতে উজ্জল হয়ে উঠল।
দুপুরে খাওয়ার পর মণিকা সুজানগরের প্ল্যান নিয়ে বসেছে। সে প্ল্যানের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় চিন্তা করছিল। কারণ সে জানে একটি দুর্বল প্ল্যান কখনও সাফল্যের মুখ দেখবে না। মাঝপথে মুখথুবড়ে পড়ে যাবে। সুতরাং সে ভাবছে শুরু থেকে সতর্কদৃষ্টিতে আগানো প্রয়োজন। ব্যর্থতার কাছে সে নতি স্বীকার করতে রাজী নয়। পুরো বিষয়টা তার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। তাই প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়ার পূর্বে কাঁটা উপড়ে ফেলা জরুরী।

কী করছ মণিকা ? বিলকিস মণিকার কাছে এসে বসলেন ।

মা সুজানগরের প্ল্যান নিয়ে ভাবছিলাম। মণিকা কলম দিয়ে মাথা চুলকাল। বিলকিস ঝুলে থাকা আঁচল কোলের উপর টেনে মণিকার ডায়েরির দিকে ঝুঁকে রইলেন। তুমি কী সেখানে বড় কিছু করার কথা ভাবছ ?
হাঁ মা, প্রজেক্টটা হবে লার্জ স্কেলের।
কিন্তু সে তো অনেক টাকার ব্যাপার !
টাকার জন্য ভাবতে হবেনা মা। টাকা দেবে জনগণ।
তোমার কথা বুঝতে পারলাম না ?

পরিকল্পনা এখনও সম্পূর্ণ করতে পারিনি। কিছু লেখালেখি বাকি থেকে গেছে। তারপরও বিষয়টা নিয়ে তোমার সঙ্গে আলাপ করি। তোমার কোন মতামত থাকলে জানাবে। আমি টোটাল বিষয়টার পরিকল্পনা করেছি সমবায় ভিত্তিতে। প্রথমে আমাদের জমির উপর একটা অফিস ঘর নির্মাণ করব। পরিচিতির জন্য একটা সাইনবোর্ড থাকবে। নাম হবে আইডিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি। সরকারের কাছ থেকে নেব রেজিস্ট্রেশন। এটা হচ্ছে প্রথমিক কাজ। তারপর চলবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। সদস্যগণ সাপ্তাহিক নির্দিষ্ট অংকের সঞ্চয় জমা করবে সমিতিতে। সদস্য সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে মূলধন ও তত বড় হয়ে উঠবে। সে মূলধন থেকে একটার পর একটা প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। সদস্যরা বাৎসরিক ভিত্তিতে লভ্যাংশ পাবে। যারা শ্রম দেবে তারা মজুরীও পাবে। প্রফিটের একটা অংশ ব্যয় হবে শিক্ষা খাতে, একটা অংশ চিকিৎসা খাতে, অসহায় দুস্থ মানুষকে সাহায্য করার জন্য একটা ফান্ড থাকবে।

আর্থিক প্রকল্পের মধ্যে থাকছে হাস-মুরগির খামার, পশু পালন, ডেইরি ফার্ম, হ্যাচারি ও মৎস খামার, হল্টিকালচার ফার্ম। শুধু নারীদের জন্য থাকছে প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচী। সেবামূলক প্রকল্পের মধ্যে থাকছে বিদ্যালয় স্থাপন, বিনা মূল্যে শিক্ষা দান, চিকিৎসা দান এবং আরও অন্যান্য, যেগুলো নিয়ে এখনও ভাবছি। সুজানগরের সাফল্যকে আমরা পার্শ্ববর্তী গ্রামে ছড়িয়ে দেব। এভাবে একটার পর একটা গ্রাম আমাদের নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসব। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মীরা সজলের পক্ষে জনমত গঠন করবে। আমাদের কাজের সুফল যখন জনগণ পাবে, তখন সজলের পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ করা কঠিন হবেনা।
এতকিছু তোমরা সামলাতে পারবে ? একটা দুশ্চিন্তা বিলকিসকে ঘিরে ধরল।

না মা। সব কাজ আমাদের করতে হবে না। প্রত্যেকটা প্রকল্প হবে ইন্ডিভিজুয়েল। প্রত্যেক প্রকল্পে একজন প্রকল্প ম্যানেজার থাকবে। তিনি হবেন ঐ প্রকল্পের রেসপন্সিবল পার্সন। ওভার অল তদারকির জন্য মনিটরিং সেল থাকবে। আমরা করব টোটাল ম্যানেজম্যান্ট।

মণিকা তার খাতার পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে কথা বলে যাচ্ছিল। তুমি জান মা, আমাদের দেশে সম্ভাবনা প্রচুর। কেবল উদ্যোক্তা ও সরকারি সহযোগিতার অভাব প্রকট। মা তোমার কোন সাজেশান থাকলে বল।
বিলকিস একটু ভেবে বললেন, তোমাদের প্রকল্পে একটা ফুলের নার্সারি আর এতিম ছেলেমেয়েদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পার।
ওয়ান্ডারফুল ! তোমার দুটো প্রস্তাবই আমি নিলাম।
তুমি কী এসব বিষয় নিয়ে সজলের সাথে কথা বলেছ ?
না মা, এখনও বলিনি। আমি বিষয়টা আর একটু গুছিয়ে নিই। সে আমাকে বলেছিল সুজানগরে একটা খামার করার ইচ্ছে তার আছে। তখন তাকে ঢাকা সুজানগর ঢাকা এভাবে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকতে হবে, এ কথাও বলেছিল। তখন থেকে বিষয়টা নিয়ে আমি ভাবতে ভাবতে এতদূর আসলাম।
তোমার প্ল্যানটা চমৎকার। তুমি খুব গুছিয়ে ভাবতে পার। আমি দোয়া করছি তুমি সফল হবেই।

নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরার পথে গাড়িতে মহসিন ভাই বললেন, আজকের সমাবেশে সজলের বক্তব্য বেশ ভাল হয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লবের জন্য ছাত্র-শ্রমিকের ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে যে বক্তব্য দিয়েছ সেটা।
মনির সম্মতি দিল। হাঁ আমারও বেশ ভাল লেগেছে।
কিন্তু সজলের কন্ঠে হতাশার সুর । ঐক্যটা হবে কীভাবে মহসিন ভাই। ছাত্ররা বহুদলে বিভক্ত আর শ্রমিকদের মধ্যেও হাজারটা সংগঠন ।
বুর্জোয়া রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে ব্যবহার করে নিজেদের স্টাবিলিশ করা। বৃটিশরা আমাদের দিয়ে গেছে যে উপহার, ডিভাইডেড এন্ড রুলস, ভাগ কর এবং শাসন কর; এসব হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতা। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে প্রলেতারিয়েত যারা তাদেরকে। আমাদের কাজ হচ্ছে পরিস্থিতি তৈরি করা। সময় ঐক্য গড়ে দেবে।
কিন্তু মহসিন ভাই, মণিকা বলেছে বাংলাদেশে আর কোন বিপ্লবের সম্ভাবনা নেই।
মণিকাটা কে ? সাম্প্রতিক কোন দার্শনিক ? আমি কিন্তু ওর লেখাটেকা পড়িনি। তোমার কাছে বই থাকলে আমাকে দিও তো ।
সজল নড়েচড়ে বসল। সে কী বলবে বুঝতে পারছিল না। একটা চাপা হাসি তার গলায় এসে আটকে আছে। এসব ক্ষেত্রে হেসে ফেলাটাই উত্তম। কিন্তু মহসিন ভাইয়ের জাগায় অন্য কেউ হলে সজল হেসে ফেলত। সে হাসিটি গিলে ফেলে ঘাড় বাঁকা করল। আমার স্ত্রী।
মহসিন আশ্চর্য হলেন। তোমার স্ত্রী ! তুমি বিয়ে করলে কবে ? দাওয়াত দিলে না তো ?
হঠাৎ হয়ে গেল। কোন ধরনের অনুষ্ঠান হয়নি।
ওঅ বুঝতে পেরেছি। মহসিন মাথা দোলাল। চোরি চোরি চুপকে চুপকে।
সজল হাসল। ঠিক তাই।
এখন থেকে তাহলে তোমাকে আরও একটি নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে-বিপ্লব ও নারী, শত্রু-মিত্র’। মহসিন পাঞ্জাবির হাতা উল্টিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নিল।
সে শত্রু নয়। বরং পরামর্শ দেয়।
তাহলে তো তোমার একজন কর্মী বাড়ল। সজল কিছু বলল না। শুধু হাসল।

মণিকা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। ঝড়ো হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ার মত তার মনটা অস্থির। বিকেলে সে বেরিয়েছিল। দূরে কোথাও যায়নি। শান্তিনগর চৌরাস্তা পর্যন্ত গিয়েছিল। সেখানকার একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনে সে বাসায় ফিরছিল। গলিতে এসেই কথাটা তার কানে এলো। গলিতে দাঁড়িয়ে দুইজন মহিলা কথা বলছিল। মহিলা দুইজনকে মণিকা আগেও দেখেছে। কিন্তু কখনও কথা হয়নি। একজন থাকে সামনের বিল্ডিঙের দুতলায়, অপরজন মণিকাদের পাশের বিল্ডিংয়ে। মণিকা তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে আসার সময় কথাটা শুনে তার কান গরম হয়ে উঠেছিল। এক মহিলা অপর মহিলাকে বলছে, ভাবী দেখেন এই মেয়েটা একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে। অপর মহিলা বললেন, বিয়ের তো কোন অনুষ্ঠান হল না। মনে হয় কোর্ট ম্যারেজ। প্রথমজন আবার বলল, আরে ভাবী বেকার ছেলেরা তো কোর্ট ম্যারেজই করে। মনে হয় কোন গরীব ঘরের মেয়ে-টেয়ে হবে। ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে আর কি। মণিকার ইচ্ছে হয়েছিল দাঁড়িয়ে জবাব দেবে। কিন্তু নিজেকে সংযত করে সে দৃঢ় পায়ে চলে এসেছে।
ঘরে এসেই মণিকা দুই গেলাস পানি খেয়েছে। কিন্তু তার অস্থিরতা কমেনি। সে যুক্তি খুঁজে, সজলকে তো বেকার বলা যাবে না। সে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করছে। তার তো সুনির্দিষ্ট একটা কাজ আছে। বরং ঐ মহিলাদ্বয়ের অজ্ঞতা সম্পর্কে তার আর কোন সন্দেহ রইল না। সে বুঝতে পারল, বাঙালি মহিলারা দুইজন একত্রে হলে যে অপরের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে, কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। মণিকা মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, কথাই নয় কাজের মাধ্যমে এর জবাব দিতে হবে। সে বাথরুমে ঢুকে টেপ ছেড়ে অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিল। আয়নাতে বারবার মুখ দেখে পরীক্ষা করে নিচ্ছে যাতে দুশ্চিন্তার কোন চাপ না থাকে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে টাওয়েলে মুখ মুছে। মুখে হাল্কা পাউডারের প্রলেপ লাগিয়ে মাথা আচড়িয়ে চুল পিঠে ছড়িয়ে দিল।

তারপর সে রান্নাঘরে এসে ঢুকল। গরম তেলে পাকোড়া ভাজল। চা বানিয়ে টি-পটে ভরে নিল। ট্রে সাজিয়ে বারান্দায় এসে মোড়াতে বসল মণিকা।

ইয়াহিয়া ও বিলকিস বারান্দায় বসে গল্প করছিলেন। অবসর মুহূর্তগুলো তারা বারান্দায় বসে কাটান। মণিকা বাটি থেকে প্লেটে টমেটো ক্যাচাপ তুলে নিল চামশ দিয়ে। ইয়াহিয়ার সামনে প্লেট রেখে বলল, বাবা পাকোড়া খাও। এখন বানিয়েছি। মা তুমিও নাও। সেও পাকোড়া একটাতে কামড় বসাল। ইয়াহিয়া বললেন, ক্যাচাপটা নতুন মনে হচ্ছে। আগে তো বাসায় এরকম ক্যাচাপ খায়নি বিলকিস। বাজারে কী নতুন এসেছে ?
বিলকিস পাকোড়া চিবাতে চিবাতে মাথা নাড়ল। ওটা হ্যান্ড মেড। দুপুরে মণিকা বানিয়াছে। ও বলে দোকানের ক্যাচাপে নাকি রঙ মেশানো থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

মণিকা তো ঠিকই বলেছে। আমারা প্রতিদিন কত ভেজাল খাচ্ছি। চালে ভেজাল, ডালে ভেজাল, তেলে ভেজাল, মাছে ভেজাল। খাসীর মাংস বলে ভেড়ার মাংস বিক্রি তো এখন ওপেন সিক্রেট।

বিলকিস মণিকার দিকে তাকালেন। আসলে মেয়েটার অনেক গুণ। মাঝে মাঝে আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। মণিকা মৃদু হাসল। কী যে বল মা। তোমার এক টুকরো হাসির গুণও কী আমার আছে। মণিকা টি-পট থেকে কাপে চা ঢালছে।
তোমার মা তো তোমার প্ল্যানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মনে হচ্ছে তুমি দারুন কিছু করতে যাচ্ছ। ইয়াহিয়া বললেন।
দোয়া কর বাবা যাতে ভাল ভাবে শুরু করতে পারি।
অবশ্যই। ইংরেজিতে বলে Well begun is half done . তোমাকে অবশ্যই ভাল ভাবে শুরু করতে হবে।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর সজল মণিকার নোট খাতা খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছিল। মণিকা রাতের পোশাক পরে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দাঁত ব্রাশ করে বেরিয়ে আসল। সে চেয়ারের পিছে দাঁড়িয়ে সজলের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল, তোমাদের সমাবেশ কেমন হল ?
সজল খাতা থেকে মুখ না তুলে বলল, ভাল।
দুপুরে কোথায় খেয়েছ ?
নারায়ণগঞ্জে আমাদের পার্টির এক নেতার বাসায়।
সকালে বাবা এসেছিল। তোমাকে খুজেছিল। মা বলেছে নারায়ণগঞ্জ গেছ।
তাহলে ম্যানেজ করতে পেরেছ ?
মা এখনও আগের মতই। মনে হয় মায়ের জন্য আরও সময় লাগবে। তোমার চুলে অনেক ময়লা। সকালে শ্যাম্পু করে নিও।
সজল মাথা দোলাল। তুমি দেখছি অনেক পরিশ্রম করেছ প্ল্যান নিয়ে।
চূড়ান্ত করতে আরও দুয়েক দিন সময় নেব। তারপর কম্পিউটারে প্রিন্ট করে আনবে। কাল তোমার কোন প্রোগ্রাম থাকলে তাদেরকে সরি বলে দিও। তোমাকে নিয়ে আমি একটু বের হব।
সজল খাতা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মণিকার কাঁধে হাত রাখল। কোথায় যাবে ?
সেটা কাল বলব।
আমাকে রহস্যের মধ্যে রাখতে চাও ?
মোটেও নয়। আমার মধ্যে কোন রহস্য নেই। আমি তো হাওয়ার মত ছলনা শিখি নি।
সজল মণিকাকে বুকে টেনে নিল। মণিকা বলল, বাতি নিবাও।

চলবে---------


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.