![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসাদের মনটা আজ ভীষণ রকমের ভাল । আজ তার একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রমোশন হয়েছে । অবশ্য খুশির আরও একটা কারণ আছে । ডাক্তার জানালেন আসাদ বাবা হতে চলেছে । হাসপাতাল থেকে বউকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই সে বেরিয়ে পড়েছে তার প্রিয় বাইকটা নিয়ে । মন ভাল থাকলে সে সব সময় বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । আর আজতো তার ভীষণ খুশির দিন । আজ কেন জানি খুশিতে তার উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে ।
শরতের চমত্কার ঝলমলে সোনালী মিষ্টি একটা বিকেল । সুনীল আকাশের পটভূমিতে পেঁজা তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে । এক ঝাঁক টিয়ে এসে উড়ে চলে গেল ঐ দিগন্ত পানে । হিমেল হাওয়া পরম মমতায় চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে । প্রকৃতিতে কেমন যেন একটা সাজ সাজ রব পড়ে গেছে । আসাদ অবশ্য ভাবল এটা তারই মনের প্রতিচ্ছবি । আহা কতো সুন্দর এই মায়াময় পৃথিবীটা । কতো বিচিএ তার রং-রূপ-রস-গন্ধ ।
আসাদ এগিয়ে চলছে , বলা যায় উড়েই চলছে । হঠাত্ তার দৃষ্টি পড়লো বেশ কিছুদূর সামনে ঈষত্ ডানদিকের বাইকটার দিকে । বাইক আরোহী ০৩ জন । চালক , পেছনে তার বউ আর কোলে ২/৩ বছরের ফুটফুটে মিষ্টি একটা বাবু বসে আছে । বাতাসে চালকের প্রেয়সীর ঘনকালো লম্বা চুলগুলো মুখের উপর এসে লুটোপুটি খাচ্ছে । চালকের কথার ফাঁকে ফাঁকে সে ভুবন ভুলানো হাসিতে মেতেছে । আর ছোট্ট বাবুটা যেন চঞ্চল চড়ুই পাখির মতোই এদিক সেদিক দেখছে ।
দৃশ্যটা দেখতে আসাদের খুউব ভাল লাগছিলো । সে ঠিক করেছে যে একদিন তার প্রিয়তমা বউ আর সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে বেরুবে । ইশ ! ভাবতে ভাবতে এখনি তার সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে অনাবিল আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
এমনি সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আসাদ ছুটে চলেছে । আর মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে গেল অঘটনটা।
একটা বাস এসে বেপরুয়া ভাবে ধাক্কা দিলো ঐ বাইকটাকে , যেটাতে চালক তার বউ আর ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে চালাচ্ছিল । ধাক্কাটা এতোই প্রচন্ড ছিল যে সাথে সাথেই বাইকটি ৪ মিটার দূরত্বে রাস্তার বামদিকটায় ছিটকে পড়লো । চারিদিকে হইচই পড়ে গেল । আসাদ দেখতে পেল জায়গাটা রক্তে ভেসে গেছে । আশ্চর্য !! এই অবস্থাতে কেউই আহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না । বরং মাইক্রোবাস , মিনিবাস , সিএনজি গুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে ।
আসাদ সাথে সাথেই দুর্ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল । ঠিক সেই সময়ে একটি হলুদ রঙের ক্যাব এসে থামলো । ক্যাবের চালক আহতদের নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে গেল । আসাদ দেখলো বাইকটা দুমড়ে মুচড়ে একপাশে পড়ে আছে ।
এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে আসাদ ঘাতক বাসটির পিছু নিলো । পরিস্থিতির আঁচ করতে পেরে ঘাতক বাসের চালক প্রাণপণে বাসটি ছুটিয়ে নিয়ে চলেছে । আসাদও আপ্রাণ চেস করছে । অবশেষে ৫/৬ কিঃ মিঃ দূরত্ব অতিক্রম করার পর একটা ট্রাফিক সিগনালের সামনে আসাদ বাসটিকে ধরে ফেলে ।
কর্মরত পুলিশকে সে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করল । পুলিশ চালককে ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে সরাসরি অস্বীকার করলো । পুলিশ এরপর বাসের যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলো । অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে বাসের প্রায় সবাই ঘটনাটা অস্বীকার করে । যারা স্বীকার করতে চাচ্ছিল বাকিদের চাপাচাপিতে তাদের গলা দিয়ে যেন কিছুই বেরুলো না । স্বীকার তো দূরের কথা সবাই উল্টো আসাদকেই দোষারোপ করতে লাগল অযথা হয়রানির দায়ে ।
অতঃপর পুলিশ ঘাতক বাসটিকে ছেড়ে দিলো । সেই সাথে বেশ কয়েকটা কটু মন্তব্য করতেও দ্বিধাবোধ করলো না ।
আসাদ ফিরে চলেছে । হঠাত্ করেই তার মনে হলো বাতাসটা বড্ডো বেশি বিষাক্ত । সে হাসফাস করছে বুক ভরে দম নেবার জন্য । তার শরীর অবসন্ন । মনটা বড্ডো বেশি বিদ্ধস্ত । এই তো কিছুক্ষণ আগেও কত্তো সুন্দর ছিল পৃথিবীটা , কত্তো রঙীন ছিল , স্বপ্নীল ছিল । এটাই কি তবে মায়াবী পৃথিবীর প্রকৃত রূপ ??
আসাদ জানে না ঐ বাইক আরোহী আর তার বউ-সন্তানের অবস্থা । বেঁচে আছে কি না মরে গেছে । তারা কি চলে গেছে নিষ্ঠুর পৃথিবীর সমস্ত যাতনাকে ধিক্কার দিয়ে ? বিবেকহীন মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সৃষ্টিকর্তার নিকট তারা কি কোনো অভিযোগ করবে না ? ঐ নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুটি কি অভিসম্পাত করবে না ? যারা তার প্রতি অবিচার করলো , চাক্ষুষ ঘটনাটাকে অস্বীকার করে ঘাতকের সুরে সুর মিলালো । চালক হয়তো অস্বীকার করেছিল , আর সেটা সে করতেই পারে । কিন্তু যাত্রীরা এমন বিবেবকহীন কেন ? সময় বাঁচাতে আর গন্তব্যে পৌঁছবার জন্য অন্য বাস খুঁজার মতো মহা ঝামেলা (!) এড়ানোর জন্যই এত্তো বড়ো মিথ্যা কথা বলতে তাদের হৃদয় কাঁপলো না ? ওহ ! ওদের তো আবার হৃদয়ই নেই যে কাঁপবে । আচ্ছা সবাই কি হৃদয়হীন ? বিবেকহীন ? নাহ , তা কি করে হয় ? ঐ ক্যাব চালকটা তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ।
আসাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকের পর থেকে সে আর কোনোদিনো বাইক চালাবে না । সে তার প্রাণপ্রিয় বউ আর তাদের ভালবাসার ফসলকে এভাবে মরতে দেবে না । না না না কোনোভাবেই না।
এসব ভাবতে ভাবতে আসাদ এগুতে থাকে । তার চোখের পাপড়ি কাঁপতে খাকে । চোখ মেলতে কষ্ট হয় , জ্বালা করে । আসাদ একেবারেই আনমনা হয়ে পড়েছে । কে জানে , সামনে হয়তো তার জন্যই কোনো ঘাতক বাস অপেক্ষা করে আছে..................
©somewhere in net ltd.