নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অ্যা সান অফ দ্য গুড আর্থ

হয়তো একদিন হারাবো ঐ মেঘের দেশে , হয়তো শ্রাবণের কোন এক সন্ধ্যায় , বারি হয়ে ঝরবো তোমাদের এ আঙিনায় ।

অ্যা সান অফ দ্য গুড আর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই তো সেদিন.....

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭

তখন গোধূলী লগ্ন , দমকা হাওয়া বইছে । রাজপথে যানবাহনের প্রচন্ড চাপ আর ঘরে ফেরা মানুষের কোলাহল ।

পাবলিক বাসগুলো রিজার্ভ থাকায় সাধারণ মানুষ লোকাল বাসগুলোতে ঠাঁই পাবার আশায় রীতিমতো অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে যেন ।

এক বৃদ্ধ তার ১৬/১৭ বছরের মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল ।

হাতে ছিল মাঝারি আকৃতির একখানা পুঁটলি । বৃদ্ধ যখন রাস্তার মাঝখানটায় ঠিক তখনি তার হাত থেকে অসাবধানতা বসত পুঁটলিটা পরে যায় এবং পুঁটলি থেকে অর্ধেকটা চাল রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

তখন প্রচন্ড গাড়ির চাপ । বাস , ট্রাক , মাইক্রোবাস ......... বিরতিহীন ভাবে একের পর এক ছুটে যাচ্ছে আর সেগুলোর চাকার তলে পিষ্ট হয়ে চালগুলো ছড়িয়ে পড়ছে প্রায় ২০/২৫ ফুট জায়গা জুড়ে ।

ততক্ষণে বৃদ্ধ তার মেয়েকে নিয়ে দুই রাস্তার মাঝখানটায় পৌঁছে গেছে । অসহায় দৃষ্টি মেলে তারা রাস্তার পানে চেয়ে রইল অনেকক্ষণ ।

বৃদ্ধ আবার রাস্তার মাঝে ফিরে এলো এবং ছড়িয়ে পড়া চালগুলো দুমুঠো ভরে সংগ্রহ করতে চেষ্টা করলো ।

কিন্তু যখনই সে মুঠো ভরে চাল তুলে পুঁটলিতে রাখতে চায় ঠিক সেই মুহূর্তেই কোনো না কোনো গাড়ি এসে তার প্রয়াসকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে আর এভাবেই কেটে যায় অনেকটা মুহূর্ত ।

হঠাত্‍ বৃদ্ধের মেয়েটা রাস্তায় নেমে আসে । কোনোদিকে না তাকিয়েই সে ছড়িয়ে পড়া চালগুলো জড়ো করে পুঁটলিতে ভরতে থাকে ।

একে একে যানবাহন এসে হর্ণ বাজিয়ে মেয়েটার পাশ দিয়ে চলে যেতে থাকে । মাঝে মাঝে বিশাল আকৃতির ট্রাক গুলো আসে । তবু মেয়েটা তার কাজেই মগ্ন থাকে । সবকিছু তুচ্ছ করে পুঁটলিতে চাল ভরাই যেন সেই মুহূর্তে তার জীবনের একমাত্র পাথেয় ।





যাই হোক , অবশেষে মেয়েটা তার সাহসিকতায় অনেকখানি সফল হয় , বৃদ্ধের মুখে হাসি ফিরে আসে ।

মেঘের বুকে জমে থাকা কষ্টগুলো যেন সেই মুহূর্তে বৃষ্টি রূপে ঝরে পরে উষ্ণ আলিঙ্গনে সিক্ত করে তৃষ্ণার্ত রাজপথকে ।







আসলে সময়ের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে এই সব মানুষের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । বেঁচে থাকার জন্য তাদের কঠোর সংগ্রাম করতে হয় । আর তাই তো সামান্য কিছু চালের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না । পরিস্থিতি তাদের নির্ভীক করে তুলেছে ।





ঘটনার স্থায়ীত্বকাল ১৫ মিনিটের বেশি ছিল না । কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল সেটা যেন অনেক অনেক সময় নিয়ে ঘটেছিল ।

আমি আমার চোখের পলক আর হৃদস্পন্দনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম , ভুলে গিয়েছিলাম আমার সময় আর চারপাশের কোলাহলের কথা ।





যখন নিজেকে ফিরে পেলাম তখন আমার চোখের সীমানায় ঐ বৃদ্ধ মানুষ আর তার ১৬/১৭ বছরের মেয়েটা ছিল না , ছিল শুধু বহু মানুষের কৌতুহল ভরা চাহনী আর কিছু মানুষের পরিহাস ভরা মুখের হাসি . . . . .



(প্রেক্ষাপট-২০১১)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.