নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ উপন্যাস \'গুহা\' ~ সিরাজুল ইসলাম

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৩১



১।
আমাদের '৭১এর মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাসগুলো মোটামুটি লিনিয়ার। কোন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে লেখা হবে, চরিত্র কে কে থাকবে, তাদের সঙ্গে কি কি ঘটবে, ইমোশনের কোন কোন জায়গায় চাড় দেয়ার চেষ্টা করা হবে সূক্ষ্মভাবে, বা অদক্ষতার সঙ্গে - স্বাধীনতার ৫০ বছরের দূরত্বে দাঁড়িয়ে, বেশ কিছু টেক্সট হাতে থাকায়, আমরা তা এখন আন্দাজ করতে পারি সহজেই। প্রাজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম রচিত 'গুহা' উপন্যাসটির (বেঙ্গল পাবলিশার্স, ফেব্রুয়ারি ২০২১) প্রেক্ষাপটও একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কিন্তু যে পারস্পেক্টিভ, বা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি উপন্যাসের গল্প শুরু করেন, এবং সামনে বাড়ান - তা এই উপন্যাসটিকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে রচিত অন্যান্য উপন্যাস - কথাসাহিত্য থেকে আলাদা করে দেয়। উপন্যাসটি শেষ করে আমার সর্বপ্রথম মনে পড়ে যায় ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কায়সার হক স্যারের একটি সাক্ষাৎকারের কথা। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত ঐ সাক্ষাৎকারে স্যার চমকে দেয়ার মতো একটি হেডলাইনার দেন - It was an existential choice to join the Resistance!

স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষের যে ভিন্ন ভিন্ন আবেগের বহুমুখী স্ফুরণ পুরো বছর জুড়ে কাজ করেছিল '৭১ সালে, খুব বেশী সাহিত্যকর্মে তা দেখানো হয় নি। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কায়সার স্যারকে যেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল - আপনার জীবনে ও সাহিত্যকর্মে আপনি ঐ যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন কি, পরবর্তীতে? স্যার উত্তরে বলেছিলেন, জানি না অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন, আমি যেটা জানি, যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল, এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্যেই পাকিস্তানীদের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। এই যুদ্ধ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই আমি পুনরায় আমার পড়াশোনায় পুনঃ মনোনিবেশ করি।

অর্থাৎ, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে যে রোম্যান্টিক ন্যারেটিভ সাক্ষাৎকারগ্রহীতা স্যারের কাছে আশা করেছিলেন, স্যার তাঁর ধারকাছ দিয়েও হাঁটেন নি। সিরাজুল ইসলামের গুহা উপন্যাসের মূল চরিত্র, ৭১ সালের যুদ্ধের সময়কালে যার জীবনের উত্থান পতন নিয়ে উপন্যাসটি রচিত, মশিউল, আমাকে খুব অদ্ভুতভাবে যেন কায়সার হক স্যারের ঐ বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আক্ষরিক অর্থে নয় যদিও, স্যারের বক্তব্যের যে ভাইব, জাতিবাদ, ধর্ম, লিঙ্গকে অতিক্রম করে যুদ্ধাক্রান্ত মানুষের অস্তিত্বের যে প্রবল সংকট, স্রেফ টিকে থাকার জন্যই যে লড়াই, তা এ উপন্যাসের প্রতি পৃষ্ঠায় উপস্থিত। উপন্যাসটি ইন্টারেস্টিং এ কারনেও যে, উপন্যাসটির লেখা হয়েছে ৭১ এর ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে, এবং মূল চরিত্র, এখনকার বুয়েট - তখনকার আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির কায়েদে আজম (বর্তমানে তিতুমির) হলের ছাত্র মশিউল কিন্তু অংশগ্রহন করে না মুক্তিযুদ্ধে। যা হোক, সূচনায় সব বলে দিতে চাই না। উপন্যাসের ভেতরে প্রবেশ করা যাক।

২।
উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ মোটামুটি এরকম - কোম্পানিগঞ্জে কাঠালের কোয়ার মতো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকা এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান উপন্যাসের মূল চরিত্র মশিউল। কোম্পানিগঞ্জের গলিঘুঁজিতে বড় হওয়া মশিউলের মাথা "গাছপাকা পাউপা" বা পেঁপের মতো পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ার কথা না, তবুও কীভাবে কীভাবে তাঁর সুযোগ হয়ে যায় আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি (বুয়েট)এ পড়বার। ঘরে তখন তাঁর বাপ ফকির চান, মা বিলকিস, 'ভাদাইম্মা' মেঝভাই জয়নুল, এবং ছ' বছর বয়েসি ছোটবোন ঝিনুক। আরও আছে বড় হওয়ার সঙ্গী দেলোয়ার, উন্নতমানের বইপত্র ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার অধিকারী তরুণ। মশিউল বুয়েটে চান্স পেলেও দেলোয়ারের জীবন আটকে থাকে জগন্নাথ কলেজে। আর থাকে শরতগুপ্ত রোডের মিনি নামের কিশোরী, যার বাড়ির বারান্দায় মশিউলের মন বাঁধা থাকে সর্বদা।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মশিউল হল ছেড়ে কোম্পানিগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফেরত যেতে চায় না। কারন, একে তাঁর পরিবারের প্রতি দুর্বল টান, দ্বিতীয়ত, বকশীবাজারের কায়দে আজম হল (তিতুমির হল) এর পূর্ব সীমানার গোসলখানা। "কোম্পানিগঞ্জের বড় গামলার খোলা পায়খানা আর কুয়ার পানি বালতিতে তুলে খোলা জায়গায় ভেজা লুঙ্গি জড়িয়ে বাজারের ভরা বেগুন বস্তার মতো ঢোল হয়ে আধখেঁচড়া গোসল" - এর বদলে হলের গোসলখানা, হলকক্ষের বাকিদের ছেড়ে যাওয়া বিছানা দখল করে ঘুমানোর যে বাদশাহী সুযোগ - এসবকিছুর মায়া তাকে যুদ্ধের মাঝেও আটকে রাখে হলেই। মাঝেমাঝে বন্ধু দেলোয়ারের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে চোখে দেখে পাক বাহিনীর হাতে জ্বলে ছাই হয়ে যাওয়া একটা বাজার বা লোকালয়ের মাঝে গুলিতে মানুষের খুলি ফুটো হয়ে উপচে পড়া মগজ, বা বেয়নেটের খোঁচায় বেরিয়ে আসা ভুঁড়িসমৃদ্ধ লাশ। জীবন এগোতে থাকে আশায় আশায় যে - একদিন ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা শুরু হবে, সে পরীক্ষা একদিন শেষ হবে, মিনির পরিবারের সামনে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হওয়া ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মিনির পাণিপ্রার্থী হয়ে দাঁড়াবে সে। জীবন এভাবেই চলতে থাকে, যে পর্যন্ত না পাকমিলিটারির স্তূপীকৃত লাশের মধ্যে তাঁর বাবার লাশ খুঁজে পায় একদিন। তারপর কি হয়? প্রতিশোধের নেশায় উদ্বেল মশিউল ঝাঁপিয়ে পড়ে অস্ত্র হাতে, সশস্ত্র যুদ্ধে? মশিউল বরং পাকিস্তানী মিলিটারির ভয়ে আরও কুঁকড়ে পড়ে। বাবার লাশ পর্যন্ত দাফন করতে সাহস পায় না, পাছে মিলিটারি এসে লাশের সদ্গতি করার দায়ে আরও মানুষের সঙ্গে তাকেও পরপারে পাঠিয়ে দেয়। মশিউলের ছোটভাই জয়নুল এসে যখন বাবার লাশ দাফন করতে চায়, মশিউল আঁতকে ওঠে।

৩।
বাবা মারা যাওয়ার পরিবর্তিত বাস্তবতায় মশিউলের জন্যে বিশাল বোঝার মতো মনে হয় তাঁর মা এবং বোনকে। তাঁর নিজের উপার্জনের কোন পথ নেই, বাড়িওয়ালা বদিউলের বাকি পড়া বাড়িভাড়ার ক্রমাগত চাপ তাকে মুহুর্মুহু পীড়ায় আক্রান্ত করছে, সে মুক্তির পথ খোঁজে খুব সরু এবং কুটিল একপন্থায়। সে জানে তাঁর সদ্য বিধবা মায়ের প্রতি বাড়িওয়ালা বদিউলের আকর্ষণের কথা। সে বদিউলের কাছে সরাসরি গিয়ে প্রস্তাব দেয় তাঁর মাকে বিয়ে করার। বাড়িওয়ালা বদিউল মশিউলের চাচার বয়সী, কিন্তু তাঁর পরিবার, বৌ বাচ্চা সে গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছে পাক মিলিটারির ভয়ে। মশিউলের প্রস্তাবে বদিউল রাজি হলে বিয়ে সংঘটিত হয় এবং মশিউল মোটামুটি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু দুর্দশা আরও দ্বিগুণ হয় যখন দুলাভাইয়ের দ্বিতীয় বিয়ের খবর গ্রামে পৌঁছে গেলে শ্যালক বশির উল্লাহ শহরে এসে প্রবল শাসানি দেয় বদিউলকে। ভাগ্যের ফেরে বদিউলের পরিবার থেকে ত্যাজ্য হয়ে মশিউলের মাকে ঝিয়ের কাজ নেয়া লাগে অবস্থাসম্পন্ন মিনিদের বাড়িতেই।

উপন্যাস এরপর দ্রুত গতিতে পরিনতির দিকে গড়ায়। মশিউল, এবং মশিউলের ভাই জয়নুলের নেতৃত্বে আরও কিছু তরুণ ছেলেপেলে এক পরিত্যক্ত হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নেয়। জয়নুল এবং ঐ তরুণরা ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কারনে পাক আর্মিরা শরতগুপ্ত রোডে আক্রমন চালাতে পারে, আক্রান্ত হতে পারে মশিউলের প্রাণপাখি মিনি। তাই মশিউল চূড়ান্ত স্বার্থপরের মতো এক ফন্দি আঁটে। সে তাঁর প্রাক্তন বাড়িওয়ালা , এবং মায়ের দ্বিতীয় ঘরের স্বামী বদিউলকে গিয়ে বলে, তাঁর ভাই জয়নুলসহ মুক্তিযোদ্ধাদের এই ছোট দলটিকে পাক মিলিটারির কাছে ধরিয়ে দিতে। মিনিদের পাড়া তাহলে পাক বাহিনীর আক্রমন থেকে বেঁচে যাবে। মহল্লায় পাক মিলিটারিদের কাছে বদিউলের একটা গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি হবে। তখন বদিউল তাঁর শ্যালক বশির উল্লাহকে খেদিয়ে পুনরায় মশিউলের মায়ের সঙ্গে সংসার শুরু করতে পারবে। এভাবে একঢিলে স্বার্থপরের মতো দুই পাখি মারতে গিয়ে মশিউলের হিতে বিপরীত হয়। মিনির অসুস্থতার নামে তাকে আক্রান্ত মাতৃভূমি থেকে লুকিয়ে সরিয়ে নেয় তাঁর পরিবার, মিলিটারির হাতে শহীদ হয় তাঁর ভাই, এবং বুয়েট ক্যাম্পাসের এসে 'মিসক্রিয়েন্ট মুক্তি' জয়নুলের বড়ভাই হিসেবে মশিউলকেও হত্যা করে পাক মিলিটারিরা।

৪।
এ উপন্যাস ভালো লাগে তাঁর ভিন্ন আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কে তুলে ধরার জন্য। সাধারনত দু' ধরনের মানুষের উপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ফিকশনাল / নন ফিকশনাল টেক্সটগুলিতে আমরা দেখি। একদল জানপ্রাণ বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়, অথবা অন্তত মনেপ্রাণে সাপোর্ট করে; অন্যদল আগাপাছতলা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার। এই উপন্যাসের মুখ্যচরিত্র মশিউল এই দুই ধরনের স্টেরিওটাইপ থেকে ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়। সে প্রাণের ভয়ে ভীত। প্রবল শক্তিশালী,পাশবিক পাকআর্মির ভয়ে সে সর্বদাই কাতর। মাঝ '৭১ এ ঢাকার বুকের মাঝখানে পাকিস্তানি মিলিটারির ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে বসে সে তাদের পরাজয়ের কোন লক্ষণ বা সম্ভাবনা দেখে না। বরং এই অবস্থার ফায়দা নিয়ে সে নিজের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করে। সরাসরি দেশ বিরোধী কারনে না হলেও নিজের স্বার্থে সহায়তা করার পরিকল্পনা হাতে নেয় পাক মিলিটারিকে। তাঁর সে স্বার্থ হচ্ছে মিনির প্রতি তাঁর প্রেম। যে কিশোরীকে সে ভালবাসে, তাকে বাঁচানোর জন্যে সে নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাই এবং বন্ধুদের ধরিয়ে দেয় পাক মিলিটারির কাছে। পাক মিলিটারির হাতে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর অদ্ভুত কূট কৌশলে বাড়িওয়ালার সঙ্গে নিজের মায়ের বিবাহ সম্পন্ন করে। ঢপ দিয়ে দোকান থেকে বাকির সদাইপাতি এনে বাড়িতে ভুরিভোজ করে। এ সমস্ত কিছু মশিউলকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ট্র্যাডিশনাল ন্যারেটিভের বাইরের একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে।

তবে এসমস্ত কূটকাচালির জন্যে শেষমেশ মশিউল যখন নিজেও পাক আর্মির হাতে মারা যায়, আমাদের কোন আফসোস জাগে না মনে। এই মশিউল বরং খুব অস্বস্তিকর একটা প্রশ্নের সামনে আমাদের ফেলে দেয় - মশিউলের মতো এক স্বার্থপর চরিত্র কি আমাদের মধ্যেও আছে খানিকটা? থাকলে কি নিজেকে সেজন্য ঘৃণা করা উচিৎ, নাকি মানুষ আদতে এমনই? মশিউলের মিনির প্রতি আকর্ষণ, ভালোবাসার অংশটুকু লেখক দরদ দিয়ে চিত্রিত করলেও, নিজের পরিবারের প্রতি মশিউলের অদ্ভুতরকমের নিঃস্পৃহতার ফলে তাঁর ভালোবাসাও আসলে অমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হয় না। বরং প্রশ্ন জাগে, যাদের সংস্পর্শে জন্মের পর থেকে এতোগুলো দিন, তাদের প্রতি এতোটা দায়সারা আচরন যার, তাঁর ভালোবাসা আদতে কতোটা গভীর হতে পারে? আর, মিনি - মশিউলের পরিবারের অবস্থান ও সংগতির পার্থক্যও মশিউলের মিনির প্রতি ভালোবাসাকে গোঁড়া থেকে ইম্প্রাক্টিক্যাল মনে হয়।

এই উপন্যাসের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল সাবঅল্টার্নদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ইতিহাস ন্যারেট করা। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সময় তাদের সাইকোলজি কীভাবে কাজ করে, তাঁর একটা ম্যাপিং আছে এ উপন্যাসে।

৫।
উপন্যাসটা আদ্যোপান্ত পড়া শেষ করে উঠার পর মনে হতে পারে যে কিছুটা তাড়াহুড়া করেছেন কি ঔপন্যাসিক, উপন্যাসটি লিখবার সময়? ভূত নামে একটি চরিত্র থাকে উপন্যাসে, যার সঙ্গে মশিউল নিজের কায়েদে আজম হলের রুমে শুয়ে শুয়ে আলাপ করে। এই অশরীরী চরিত্রটির আগমন - প্রস্থানকে আরও বিশ্বাসযোগ্যভাবে, আবহ সৃষ্টির মাধ্যমে উপস্থাপন করা যেতো। জায়গায় জায়গায় বর্ণনার কিছু প্রলেপ বাকি থেকে যায়, ইমোশন ভরাট করবার দায়িত্বও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। পুরো উপন্যাসটি মশিউলের ন্যারেটিভে হওয়ার কারনে বাদবাকি চরিত্রগুলির মনস্তত্ত্ব বোঝা সমস্যা হয়ে গেছে, ফলে প্রশ্ন থেকে গেছে যে - এই যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মশিউলের যে অপরিচিত এক স্বার্থপর মানসিকতা, তা কি কেবল তারই একক বৈশিষ্ট্য - নাকি সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সকল মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও চাচা আপন প্রাণ বাঁচা মানসিকতা নিয়েই বাস করেছেন সে সময়টায়।

ইলিয়াস ধাঁচের লেখার ভক্তরা পছন্দ করবেন এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু ও ভাষা।

সুলেখক সিরাজুল ইসলামের 'গুহা'য় , পাঠক, আপনাকে স্বাগতম!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৫৪

মোল্লা সাদরা বলেছেন: মৌলভি ছাজেদ, আপোনার এক অঙ্গে আর কতোগুলিন রূপ দেখিবো? দিনোমান এছলাম নিয়া জঙ্গ করিয়া বেড়ান, আবার সাহিত্য নিয়া পোস্টও দেখি টপকাইয়া পড়ে আপোনার কলম হইতে। পূর্বের লেখাপত্র দেখিয়া যাহা বুঝিলাম, আপোনার আকাঙ্ক্ষা দাস্তানগো হইবার। তা সাহিত্য বাদ দিয়া এছলাম নিয়া অধিক কথা কহিলে বঙ্গদেশের মানুষ আপোনাকে এছলামিস্ট ট্যাগ দিয়া আল মাহমুদের মতো সাইড লাইন করিয়া দিবে, সে ব্যাপারে ওয়াকেফহাল হউন সময় থাকিতে থাকিতে। সাহিত্য লইয়াই থাকুন। এছলামের পক্ষে বিপক্ষে চিন্তা করিবার বান্দার অভাব হইবে না এইখানে। মঙ্গল হউক ভ্রাতঃ! :)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনারও মঙ্গল হউক। মুতা বিবাহের পক্ষে জনমত গড়ার চেষ্টা কইরেন না আবার। যে একখানা নিক নিছেন।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৭

লেখোয়াড়. বলেছেন: হুম!!!!!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আরে বিজন রয় দাদা! কতোদিন পর! হুমাচ্ছেন কেন?

৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সুন্দর রিভিউ++++
রিভিউটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার এক চিত্র পেলাম। একদিকে দেশপ্রেমিক ভুক্তোভুগীদের যেমন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন ইতিহাস অন্যদিকে কায়েমি স্বার্থবাদীদের রাজাকার হিসেবে স্বদেশী যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা বা পাকিদের স্বার্থে চলার সঙ্গে নানান সামাজিক অবক্ষয়ের নজির স্থাপন। এহেন পরিস্থিতিতে প্রেমেরও চূড়ান্ত উত্থানপতন হবা স্বাভাবিক। যে কারণে মশিউলের প্রেম পূর্ণতা পায় নি। হাজারো মশিউল এভাবে পাকিদের বর্বরতায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।
সবশেষে আপনার প্রশ্নের সঙ্গে জিজ্ঞাসা রেখেও শেষ অংশকে অর্থাৎ সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাচা আপন প্রাণ বাঁচা মানসিকতাকে এক্ষেত্রে প্রধান কারণ বলে আমার মনে হয়।
যাইহোক পরিশেষে আবারও বলবো দারুণ একটা রিভিউ পাঠ করলাম।
শুভকামনা আপনাকে।


০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় পদাতিক ভাই, খুব খুশি হলাম আপনার বিস্তারিত মন্তব্য পেয়ে। ভালো থাকবেন। অনেক শুভকামনা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.