নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আন্ডারগ্রাউন্ড ~ মাসরুর আরেফিন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:০০



মাসরুর আরেফিন সাহেবের তৃতীয় এ উপন্যাস, আজ আমার পড়া শেষ হবে। অর্ধেকের বেশী ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছি। ভাবলাম, এটাই এ বই পড়বার অভিজ্ঞতা নিয়ে দুই কলম লেখার উপযুক্ত সময়। পুরো উপন্যাস শেষ হয়ে গেলে দেখা যায় সামারি লিখতে গিয়ে উপন্যাসের প্লট টুইস্টগুলো সব শেয়ার করে দিচ্ছি। ওটা আবার যে পাঠক আগে বইটা পড়ে নাই, তার জন্যে ক্ষতিকর।
.
ওনার প্রথম উপন্যাস 'অগাস্ট আবছায়া' র ন্যারেটিভ টেকনিক নিয়ে সমালোচনা শুনেছিলাম। প্রথম ১০০ পাতাই নাকি মাথা ধরিয়ে দেয়, এমন বিরক্তিকর ভঙ্গীতে লেখা। ঐ উপন্যাস সংগ্রহ করতে পারি নি তার দামের জন্যে (মুদ্রিত মূল্য ৮০০ টাকা)। ফলে পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করা মুশকিল ছিল। কিন্তু অর্থ এবং প্রভাব খাটিয়ে তার উপন্যাসের পক্ষে "লেখক সমালোচক" দের একত্র করা নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে তার ব্যাপারে আমার বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল একটা, সন্দেহ নেই।
.
যাহোক, আমি সাধারণত না পড়ে পূর্ব ধারনা থেকে, বা আন্দাজে মন্তব্য করি না কারো ব্যাপারে। কাজেই মাসরুর সাহেবের অন্তত একটা বই পড়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তার তৃতীয় উপন্যাস আন্ডারগ্রাউন্ড, যেটা আগেই বললাম, এখন পড়ছি, এবং ওনার লেখনীর ব্যাপারে আমার মতামত ইতিবাচক।
.
খুব প্রস্তুতি নিয়ে ভদ্রলোক লিখছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। ওনার লেখার ভেতরে অন্যান্য লেখকের লেখাপত্রের যে রেফারেন্স ঘনঘন আসে, তাতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। নিজের লেখার স্টাইলের ব্যাপারে ওনার কনফিডেন্স মারাত্মক। কেউ বুঝবে, না কি বোর হয়ে যাবে (অনেকেই হয়, অগাস্ট আবছায়ার ব্যাপারে যে সমালোচনা ছিল) - এ নিয়ে মনে হয় না তার কোন মাথাব্যাথা আছে। প্লট হিসেবে তিনি যে ক্ষেত্রটি বেছে নিয়েছেন তার 'আন্ডারগ্রাউন্ড' উপন্যাসে, তা বেশ ইউনিক। এক বাংলাদেশী রাশিয়ায় যায় - ২৬ বছর ধরে রাশিয়ায় নিখোঁজ তার বড় ভাইয়ের খোঁজে। রাশিয়ায় তার খুঁটি এক বাল্যবন্ধু, যে রাশিয়ার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং ধনকুবের, পুতিনের ৩৫ নং সার্কেলের লোক। রাশিয়ায় এসে পৌঁছানোর পর সেই বন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশী ভদ্রলোক রাশিয়ার "আন্ডারগ্রাউন্ড" এ ট্যুর দেয়, এবং ধারনা লাভ করে, কীভাবে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রন করে গুটিকয় ক্ষমতাসীন মানুষ।
.
আন্ডারগ্রাউন্ডের ট্যুরের অংশটুকু আমাকে বার বার হ্যারলড পিনটারের অ্যাবসার্ড ড্রামার (বার্থডে পার্টি, উদাহরণত) মনে করিয়ে দিচ্ছিল। লেখায় যৌনতা খুব প্রাসঙ্গিকভাবে আসে। সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুও উপস্থিত যথাযথভাবে। ঘটনা ঘটছে রাশিয়ায়, ব্যকড্রপে বাংলাদেশ বরাবর উপস্থিত। রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের পতন, এবং ধনতন্ত্র কীভাবে বৈশ্বিক ভাষায় পরিণত হোল, তা নিয়ে লেখকের খুব স্পষ্ট বোঝাপড়া লেখক উপন্যাসের চরিত্রগুলির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।
.
একটা অংশ উদ্ধৃত করা যাক -
.
" কামাল বলল , ইউ মাস্ট হ্যাভ অ্যান ওপেন মাইন্ড। সংকীর্ণ চিন্তা দিয়ে এই আন্ডারগ্রাউন্ড তুই বুঝতে পারবি না। গরিবের জন্যে হাহুতাশ থেকেও এই আন্ডারগ্রাউন্ড তুই বুঝতে পারবি না। তোকে বিগ পিকচারটা বুঝতে হবে। কেন ক্ষমতা সবার কাছে থাকা ভালো নয়, কেন সামান্য কিছু লোকের কাছেই তা থাকা ভালো, তোকে সেইটাও বুঝতে হবে। রাশিয়া এইসব এক্সপিরিমেন্ট করে ফেলেছে রে দোস্ত। কমিউনিজমের পতন এই জন্য হয় নাই যে, ঐ সিস্টেম অটোক্রেটিক, ইত্যাদি। ঐটা এইজন্যে হইছে যে, কমিউনিজম দিনমজুরকে শক্তিশালী করতে চাইছিল। সেইটা হয়না, সেইটা কোনদিন হয় না। দিনমজুর শুধু মিছিলে আর রাস্তায় ক্ষমতাশালী হয় রে, প্রেসিডেন্ট প্যালেসে দিনমজুর ক্যামনে ক্ষমতাশালী হবে? প্রেসিডেন্ট প্যালেসের বাথরুমে তো ওরা মুততেই পারবে না, ওইখানে গোসল করতে গেলে তো ওরা গরম পানিতে গা পুড়ায়েই ফেলবে। কারন, কারন, কারন ওরা সুইচগুলি কোথায় তা-ই তো জানে না...পৃথিবীতে ইভিল থাকবেই, খারাপ থাকবেই। কমিউনিজম সেইটা তাড়াইতে চাইছিল। কিন্তু তার বোঝার ভুল ছিল যে, খারাপ কোন ইটের টুকরা না যে, ওইটা আমি ছুড়ে ফেলে দিলাম।" (পৃষ্ঠাঃ ৬৯)
.
সমালোচনার তেমন কিছু পাই নি এখন পর্যন্ত, এটুকু ছাড়া যে, এই উপন্যাস অধিকাংশ বাংলাদেশীর জীবনেই প্রাসঙ্গিকতা বহন করে না। লেখক সমাজের যে অংশের মানুষের জীবনআখ্যান বর্ণনা করছেন, তা লেখকের ব্যক্তিজীবনের এলিট লাইফস্টাইল থেকে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আসলে জানতে চাইবে না যে দৈবক্রমে একজন বাঙালি কীভাবে রাশিয়ার প্রধানতম ধনকুবেরে পরিণত হয়ে রাশিয়ান আন্ডারগ্রাউন্ড ডিসিশনমেকিং এর পার্ট হয়ে গেলো। অথবা, হয়তো এ বিষয়ে আরও নিখুঁত ধারনা পাওয়ার জন্যে সে কোন রাশান লেখকের লেখা পড়তে চাইবে এ ব্যাপারে। এছাড়াও, লেখকের ভাষা বা ন্যারেটিভ স্টাইল আরোপিত মনে হয়। মনে হয় এক বা একাধিক পাশ্চাত্য লেখকের স্টাইল থেকে ধার করা। তা ঠিক অর্গানিক নয়, যেমনটা কিনা একজন কথা সাহিত্যিক দীর্ঘদিন নিজের বাংলা নিয়ে এক্সপিরিমেন্ট করে করে অবশেষে এসে একটা স্টাইলে থিতু হন।
.
লেখকের উপন্যাসে রুশ এবং জার্মান ভাষার অহরহ ব্যবহার এ উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রুশ রমণী ভ্যালেন্তিনার প্রতি প্রেমভাব, এবং যৌনতার দৃশ্যপটগুলি ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারেও লেখক ছিলেন চূড়ান্ত যত্নশীল।
.
যত্ন নিয়ে, দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে বাংলা কথাসাহিত্যের চর্চায় আসার জন্যে মাসরুর আরেফিন সাহেবের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। সেলে পাইলে তার প্রথম দুটো উপন্যাসও পরবর্তীতে কিনে পড়বো। কিনে পড়বো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:০২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মাঝে মাঝে মন চায় - আমার যে ভ্যারাইটি রকমের জিনিসপত্র পড়ার অভ্যেস, তা থেকে কিছু কিছু লিখি। ধারাবাহিকভাবে একটা দর্শনের সিরিজ করি। সাহিত্যতত্ত্বের উপর একটা সিরিজ রান করি। আমার বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস সংক্রান্ত যে ধারাবাহিক সিরিজ ১২ পর্ব পর্যন্ত লিখবার পর থেমে আছে, সেটা শেষ করি। তখন দমে যাই এই ভেবে যে, কে পড়বে, কার জন্যেই বা লিখবো। পাঠ প্রতিক্রিয়া সিরিজে দেশের একদম কনটেম্পোরারি গুরুত্বপূর্ণ লেখক কথাসাহিত্যিকদের বই নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখছি। এ সমস্ত বুক রিভিউ ব্লগে ক্লিক পড়ে ৪০টা। তারমধ্যে ১০টা ক্লিক হয়তো আমারই। এই ব্লগে যারা লেখালিখি করে, মন্তব্য করে, বুঝি - ধর্ম , রাজনীতি এসমস্ত বিষয় ছাড়া অন্য তেমন কোন আগ্রহ নেই। যে ক্যাচালগুলো হয় হচ্ছে ইদানীং - এগুলোও এতো নিম্নমানের বিষয় নিয়ে যে হতাশ হয়ে যাই। যারা নিজেদের "আধুনিক" দাবী করে, তারা নিজেদের এক্সপার্টাইজের বিষয় নিয়ে না লিখে সাধারণ মানুষকে সে দিকে আকৃষ্ট করার বদলে দিন কাটায় ধার্মিকদের ধর্ম সংক্রান্ত পোস্টে কপাকুপি করে। যারা ধার্মিক, তারা ক্লাস ৯ - ১০ এর ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষার উত্তর লেখার মতো লম্বা লম্বা পোস্ট লেখে। জনপ্রিয় পোস্ট বলতে ফিচার টাইপের পোস্ট যারা লেখে, তাদের পোস্টগুলোও পূর্বপর সম্বন্ধ ছাড়া। ধারাবাহিকভাবে একটা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং ভাগ করে নেয়া, তা নিয়ে ক্রিটিকালি চিন্তা করার যে প্রসেস, তা আর চর্চা করে না কেউ। এই ব্লগ মরে গেছে। আমরা এখনও খেয়াল করি নাই খালি, এতটুকুই। আমরা খেয়াল করি নাই, কারন ইন্টেলেকচুয়ালি আমরাও মরে গেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.