নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া ৪১ঃ ২০২২ সালের প্রেক্ষিতে কেমন ব্লগ চাই

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২২

গতকাল রাতে এক কলিগের সঙ্গে ফোনে আলাপ হচ্ছিল। আমরা দুজনেই ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে একই রুম শেয়ার করি। আমার কলিগ আর আমি দুজনেই প্রায় সম মনমানসিকতার। ওনার পড়াশোনা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। পড়াতেন নিউইয়র্কের এক ইউনিভার্সিটিতে। কি এক সমস্যায় ট্রাম্পের আমলে উনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এসে ইস্ট ওয়েস্টে চাকরি নেন। আমার কলিগ আর আমার , দুজনেরই প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশ হচ্ছে এই বইমেলা উপলক্ষ করে।

যা হোক, ফোনে ফর্মাল আলাপ শেষে আড্ডা শুরু হল। আগে রুমে বসেই আড্ডা দিতাম, এখন তো করোনায় অনলাইন ক্লাসের কারনে সামনা সামনি দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই বললেই চলে। স্যার কথায় কথায় বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত স্যারের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডার কথা। স্যারের মতে, যদিও ঢাবির টিচার্স লাউঞ্জ, বা টিচার্স ক্লাব দেশ সেরা গবেষক - বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাখানা হওয়া উচিৎ, কিন্তু সেখানেও আড্ডা হয় চায়ের টং দোকানের মতো করেই। স্যার রিসেন্ট একখানা কাজ করেছেন আরনেস্ট হেমিংওয়ের উপন্যাগুলিতে মডার্নিজমের কি কি অনুষঙ্গ ও উপাদান আছে, তা নিয়ে। আইন অনুষদের এক শিক্ষক নাকি হেমিংওয়ের ওপর ক্রমাগত তার লেম্যান মতামত দিয়ে দিয়ে আমার কলিগকে পুরো তিতিবিরক্ত করে ছেড়েছেন।

আমার কলিগের ভাষ্যমতে, যে যে বিষয়ে স্পেশালাইজড, সে সে বিষয়ে কথা বলবে, বাকিরা শুনবে, বোঝায় সমস্যা হলে প্রশ্ন করবে। কিন্তু নিজের আনাড়ি আন্ডারস্ট্যান্ডিং নিয়ে সবাই সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়ার চেষ্টা করলে আর টং দোকানের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় গবেষক - বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার তফাৎ থাকে কই? টং দোকানে লম্বা সময় ধরে আড্ডা দিতে অভ্যস্ত হওয়ায়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি টিচার্স ক্লাবের আড্ডার সঙ্গে টং দোকানের আড্ডার তুলনা করে টিচার্স লাউঞ্জের মানহানীতে আমি খুব একটা কষ্ট পেলাম না। বরং খুশি হলাম টং দোকানের সম্মান বৃদ্ধিতে।

যাহোক, আমার এ লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় হল ২০২২ সালের প্রেক্ষিতে ব্লগে আমরা কি ধরনের লেখা, বা আলাপ চাই। এ নিয়ে কয়েকটা লেখা গত একসপ্তাহে পড়লাম। কারো মতে ব্লগ পাণ্ডিত্য দেখানোর জায়গা না, ক্যাচাল করার জায়গা না, নিজের ধ্যানধারনা নিজের মতো করে শেয়ার করার জায়গা। কারো কাছে ব্লগ ধর্ম প্রচারের জায়গা। কারো কাছে ব্লগ নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের জায়গা। কারো কাছে ব্লগ নিজের অন্যান্য আদর্শিক অবস্থান নিয়ে লেখালিখির জায়গা। কারো কাছে ব্লগ দু'দণ্ড জিরিয়ে নেয়ার ফুসরত।

ব্লগ আসলে কি?

ব্লগ উপরের প্যারাগ্রাফে যা কিছু বলা হল - এসব কিছু, এবং এসবকিছুর বাইরেও আরও অনেককিছু। এমন অনেক কিছু যা উপরের আলোচনায় আসে নি, হয়তো আমাদের ধারণাতেও নেই।

ব্লগে কি করা সম্ভব কি করা সম্ভব না, অথবা কি করা উচিৎ বা উচিৎ না - এটা নিয়ে চূড়ান্ত মতামত দেয়া মুশকিল। ভালো হচ্ছে ব্লগ এমন এমন এমন হতে হবে - এরকম ফর্দ তৈরি করে একটা আঁটসাঁট বাধনের মধ্যে কলমকে আটকে না ফেলা।

যাদের কাছে ব্লগ নিজে যা বুঝি সেটাই টং দোকানের আড্ডার মতো করে সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জায়গা, তবে তার কাছে ব্লগ সেটাই। অন্য কারো অধিকার নেই তার টেস্টকে জাজ করার। তাকে দাওয়াত দেয়া যেতে পারে যে ভাই সময় সুযোগ হলে কিছু পড়াশোনা করেন, রাজনীতি - অর্থনীতি - ধর্ম বা দর্শন ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ে চর্বিত চর্বণ না করে কিছুটা পড়াশোনা করে, ইউটিউবে দু'একটা লেকচার শুনে বা ডকুমেন্টারি দেখে নিজের আপডেটেড আইডিয়া শেয়ার করেন। কিন্তু কেউ যদি সেটা না করতে চায়, আমার আপনার অধিকার নাই এ কারনে তাকে হেয় করার।

একই সঙ্গে কেউ যদি পড়াশোনা করে জনসাধারনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর এক বা দুই স্টেপ আগানো চিন্তাভাবনা শেয়ার করে, তাকে ব্লগে পণ্ডিতি ফলাচ্ছে বলে হেয় করাও যৌক্তিক না। যদি আপনার মনে হয়, এধরনের লেখা পড়লে আপনার কিছু উপকার হবে, সে উপকারটুকু গ্রহণ করেন। যদি উপকার হয়, আর আপনার মনে হয় যে আপনার কৃতজ্ঞতাটুকু ভাগ করে নেয়া উচিৎ, একটা মন্তব্য করেন। যদি লেখা ভালো না লাগে, এড়িয়ে যান।

সত্য তো এই যে, বেশী পড়াশোনা করা, বা কোনকিছু ভেতরে ঢুকে তলিয়ে বুঝতে চাওয়াটা এই অনলাইন যুগের চরিত্র নয় আর। যারা এই যুগবিরোধী কাজ করছে, তারা মোটামুটি বোকা, এবং একা। এই একাকীত্বের যন্ত্রণাতেই, বা নিজের মতো আন্ডারস্ট্যান্ডিংওয়ালা আড্ডাবাজের অভাবেই অনেকে রিঅ্যাক্ট করে বসে নেতিবাচকভাবে। পারলে এদেরও ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখি।

সর্বোপরি লিখতে পড়তে পারাটা শিক্ষিত হওয়ার সবচে দৃশ্যমান নিদর্শন। এই ব্লগে যেহেতু আমরা লিখে নিজেদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করি, আমার মতে, সে হিসেবে ব্লগ একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্লাটফর্ম। আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাগুলি ক্রিটিকালি শেয়ার করি, তার উপর ক্রিটিকাল অব্জারভেশন - কাটাছেড়া - মন্তব্য আশা করি। এরকম হলে ব্লগিং করে এই অডিও ভিজুয়াল মিডিয়ার রমরমা যুগেও কিছু কিছু উপকার পাওয়া সম্ভব। যদি ব্লগিংকে কেবল আড্ডা মারার জায়গা হিসেবে গন্য করা হয়, তবে অবশ্যই একদিন ব্লগ বন্ধ করে দিতে হবে আড্ডাবাজের অভাবে। কারন সমমনা আড্ডাবাজ খোঁজার প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্লগ কোনদিন পেরে উঠবে না। ব্লগকে কেবলি আড্ডামারার প্লাটফর্ম হিসেবে যারা বিবেচনা করি, আমরা যেন এটাও বিবেচনায় রাখি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: যে কোন বিষয়ে সঠিক জানা জরুরী। আর জানার জন্য পড়ার কোন বিকল্প নেই ।

তবে যে কোন বিষয়ে সঠিক জানার জন্য খোলা মন জরুরী। কারন, প্রথমেই যদি যে কোন বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত স্থির করা হয়ে যায় তবে সে বিষয়ে নিজের ধারনার বাইরে অন্য কিছু বা অন্য আরো সবার মতামত গৌণ হয়ে পড়ে। এই জন্য সব বিষয়েই খোলা মন নিয়ে যে কোন বিষয়ে নিজের ধারনার সাথে সাথে অন্য আরো সাবার সাথে,এ বিষয়ে আরো তথ্য জানার জন্য আলোচনা-সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ মত সম্পর্কে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্তের ফলেই সঠিক জিনিষ জানা সম্ভব।

আবার মানুষে মানুষে যেমন ভিন্নতা আছে ঠিক তেমনি মানুষের জানা-বুঝার-পছন্দের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা আছে। যেমন - কেউ ভালবাসে কবিতা আবার কেউ গল্প । কেউ ভালবাসে রাজনৈতিক আলোচনা আবার কেউ প্রবন্ধ। আবার কেউ ভালবাসে
বিজ্ঞান কেউ ভালবাসে হয়ত সাহিত্য। কাজেই, আমার মনে হয় এ বিষয়ে সঠিক ভাবে কিছু বলা বা বিষয়বস্তুর নির্দিষ্ঠতা
সম্ভব নয় ।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার মনও তো ভাই খোলা না। আপনি শরিয়াহের ফ্রেইমওয়ার্কের বাইরে গিয়া ভালো মন্দ চিন্তা করতে পারবেন কখনো?

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৭

রংবাজপোলা বলেছেন: হক কথাই কইছেন।

"

যদি আপনার মনে হয়, এধরনের লেখা পড়লে আপনার কিছু উপকার হবে, সে উপকারটুকু গ্রহণ করেন। যদি উপকার হয়, আর আপনার মনে হয় যে আপনার কৃতজ্ঞতাটুকু ভাগ করে নেয়া উচিৎ, একটা মন্তব্য করেন। যদি লেখা ভালো না লাগে, এড়িয়ে যান।

"

র্আপনের এইকথাটা খুব মনেগাইত্যা গেলো।

ভালা টা লইতে হইবো হামাগো।

কদমবুচি লইয়েন ।
[native code]
}
[native code]
}

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: হ বাই। আপ্নেও কদমবুছি লয়েন।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:১১

গরল বলেছেন: A blog (a truncation of "weblog";) is a discussion or informational website published on the World Wide Web consisting of discrete, often informal diary-style text entries (posts).

The term "weblog" was coined by Jorn Barger on December 17, 1997. The short form, "blog", was coined by Peter Merholz, who jokingly broke the word we blog into the phrase we blog in the sidebar of his blog Peterme.com in April or May 1999. Shortly thereafter, Evan Williams at Pyra Labs used "blog" as both a noun and verb ("to blog", meaning "to edit one's weblog or to post to one's weblog";) and devised the term "blogger" in connection with Pyra Labs' Blogger product, leading to the popularization of the terms.

উইকিপিডিয়া থেকে।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আরে, উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞাটা তো দারুণ লাগলো! কে লিখসে এই বই? উইকিপিডিয়া রকমারিতে অর্ডার করলে পাওয়া যাবে?

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

জ্যাকেল বলেছেন: একাডেমিক দিক নিয়ে পড়ে থাকলে পিছিয়ে পড়াটা অবধারিত। আমি তাই বলব মেডিক্যাল এর বিষয়াদি ব্যতীত যেকোন শাস্ত্র নিয়ে পাবলিকলি আলোচনা করাটা খারাপ না। মেডিক্যাল খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার, মানুষের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হইবার চান্স আছে যদি ইহা নিয়ে সবাই ঘেটে দেখা শুরু করে।
ধর্ম, দর্শন, ফিজিক্স সহ সকল শাস্ত্রে সাধারণ মানুষের জন্য অধিকার থাকা উচিত জানার এবং চর্চা করার। তাই ব্লগে যে কেউ তার ইচ্ছেমত এইসকল/যেকোন কিছু নিয়ে পোস্ট/কমেন্ট করতে পারে। আর এটাই কাম্য।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, ব্লগার জ্যাকেল। বিষয় হচ্ছে যার যে বিষয়ে মন চায়, সে সেই বিষয়েই আলাপ শুরু করুক, পোস্টে কিংবা কমেন্টে, কিন্তু সেই আলাপ আন্দাজে টং দোকানের আড্ডার মতো না হোক, কোন কিছুর রেফারেন্সে শুরু হোক - এতোটুকু আমার আকাঙ্ক্ষা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.